কবি সমরেন্দ্র দাশগুপ্তর কবিতা
*
সভ্যতা
কবি সমরেন্দ্র দাশগুপ্ত

এ সভ্যতায় ব্রাত্য যে আজ
শাড়ী ব্লাউস সায়া
তারই সাথে ব্রাত্য হোল
স্নেহ দয়া মায়া

জিন্সের প্যান্ট টাইট গেঞ্জির
আজব সমাহার
কর্দমাক্ত এ সভ্যতায়
বাড়ছে ব্যভিচার

লঘু গুরু সবই সমান
সমান পুরুষ নারী
যারা বড়াই করে এ সভ্যতার
তাদের বলিহারী

মদ্দা গুলো মাদী সেজে
পরছে হাতে চুড়ি
মাদীরা সব মদ্দা বেশে
দেখায় বাহাদুরী

বেনো জলের ধেনো গন্ধে
সব যে একাকার
মাথা খেয়ে বসে আছে
ঘৃণার ও লজ্জার

দেখে শুনে লজ্জাওতো
হোল শয্যাশায়ী
ওরা উড়ে উড়ে বেড়ায় ঘুরে
পাখী পরিযায়ী

.    ***************  
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আজব খেলা
কবি সমরেন্দ্র দাশগুপ্ত

করতে ধংস প্রজন্মকে
ওদের হরেক প্রজনন
মদ জুয়া আর চরস গাজার
চলছে অবাধ উত্তরণ

.                        নেশার ঘোরে মাতিয়ে রেখে
.                        কাড়ছে ওদের সত্তা সব
.                        সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্র জালে
.                        করছে সৃষ্টি কাল ভৈরব

শিক্ষা দীক্ষা শিকেয় তুলে
ছড়ার রাজনীতিরই বেনোজল
ওই নীতিরই গীতি কথায়
শিক্ষা গেল রসাতল

.                         ভিক্ষা করার দীক্ষা যে দেয়
.                         আজকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
.                         সর্ব্বত্র আজ চলছে যে তাই
.                         রাজনীতিরই কোরাস গান

রাজনীতিতে নাইকো নীতি
নাইতো কোন কান্ডজ্ঞান
আনছে ডেকে ঝগড়া বিবাদ
করছে সৃষ্টি ব্যবধান

.                          যতই শোনাক সাম্যের বুলি
.                           যতই বাজাক সাম্যের গান
.                           আত্ম সুখী আত্মা যে সব
.                           আছে কি আজ আত্মদান ?

.                    ***************  
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
প্রেক্ষাপটে
কবি সমরেন্দ্র দাশগুপ্ত

স্বাধীনতার এই হীনতা,
দেখবো কত আর |
ভ্রষ্টাচারে লিপ্ত যে আজ
মন্ত্রী মিনিষ্টার |

.                  ওরা দেশ বিকালো নাম হাসালো,
.                  ডাকলো সর্ব্বনাশ |
.                  সত্য নিষ্টা ন্যায় ধর্মের
.                  রয় ছড়িয়ে লাশ |

আত্মাহুতির আত্মারা আজ
ডুকড়ে কাঁদে তাই |
ভন্ড মেকি ষন্ডদেরই
লজ্জা ঘৃণা নাই |

                   শোষণহীন এই সমাজবাদের
.                      আদিম আষ্ফালন |
.                      কাম কামনা কদর্যতার,
.                      উগ্র আলিঙ্গন |

অবাক হয়ে ভাবছি বসে,
এ কেমন উত্তরণ |
সভ্যতার বলয় ঘিরে
আজব প্রজনন |

.             ***************  
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
নির্মম সত্য
কবি সমরেন্দ্র দাশগুপ্ত

জাতি তত্ত্বের জালিয়াতি খেলে
যারা করেছিল দেশভাগ
ক্ষমতার লোভে খেলেছিল যারা
রক্ত হোলির ফাগ

তারা হোল আজ মহানেতা
তারাই কর্ণধার
ইতিহাস জানি করবে না ক্ষমা
তাদেরই মিথ্যাচার

কত ছলাকলা কত ছেলেখেলা
আজও চলছে জানি
যে দিকে তাকাই দেখিতে যে পাই
মিথ্যার হাতছানি

কল্প লোকের মিথ্যা গল্প
শুনে যাই অবিরত
আছি মিথ্যা ভিতের উপরে দাঁড়ায়ে
এমনই ভাগ্যহত

নীতিহীন যত নেতার কন্ঠে
শুনি সাম্যবাদের গীতি
ভয়ে শঙ্কায় শিউড়ে যে উঠি
দেখে দেশের পরিস্থিতি

খুন ধর্ষণ বলাত্কারের
এ কোন পীঠস্থান
লজ্জাতো নাই তবু গেয়ে যায়
সাম্যের জয়গান

.   ***************  
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
প্রশ্ন
কবি সমরেন্দ্র দাশগুপ্ত


প্রগলভ শোষকের দেখে অবক্ষয়
দিন গুলো অতিক্রান্ত,
অবাক বিস্ময়ে ভাবি
এ কোন অধ্যায়!
দিন কাটে অবসাদে,
রাত্রি আশঙ্কায়
এ সাম্য তরণী আজ
ভিরবে কোথায় ?
কোন অজানায় ?


আশা নাই ভাষা নাই
দুর্ভেদ্য কুয়াশা
ধুলা ধুসরিত আজ
যা কিছু প্রত্যাশা
পাশব সত্তার একি
উদগ্র আষ্ফালন
দিকে দিকে শুনি তাই
মায়ের ক্রন্দন
রুধিরক্ত মাটি আজ
আদিম হিংসায়
মানুষের প্রশ্ন তাই
সমাপ্তি কোথায় ?

.   ***************  
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আরণ্যক সভ্যতা
কবি সমরেন্দ্র দাশগুপ্ত

আরণ্যক সভ্যতার
এ কোন উত্তরণ
চিত্রনাট্য জুড়ে রয়
খুন ও ধর্ষণ

শ্বাপদ সংকুল এই
অরণ্য সভ্যতায়
হিংস্র হায়নার দল
ঘুরে যে বেড়ায়

ওদের অভয়ারণ্য
এ বাংলার মাটি
অপাংক্তেয় শব্দ জানি
এখানে সাচ্চা খাটি

উদগ্র শ্বাপদের
কদর্য আষ্ফালন
গুমড়ে মরে অবসাদে
মাতৃত্ব ক্রন্দন

যোগনিদ্রায় মগ্ন থাকে
জানি প্রশাসন
শুনেও শোনে না তারা
কালের ক্রন্দন

প্রহর গুনিছ সবে
দেখে প্রহসন
সত্য কভু করেনাতো
অরণ্যে রোদন

.   ***************  
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
দর্পনে তর্পন
কবি সমরেন্দ্র দাশগুপ্ত
মিলনসাগরে প্রকাশকাল ২৬.১২.২০২০।

গড়বেতা দেখেছি আমি,
দেখেছি কেশপুর।
আবার দেখেছি আমি,
সাইবাড়ি নানুর।

.                বিজন সেতুর সেই,
.                পাশবিক খেলা।
.                ভুলিনিতো আজও আমি,
.                নৃশংশ বানতলা।

হৃদয় অলিন্দে গাঁথা,
ছোট অঙ্গারিয়া।
থমকে যাই সহসাই,
সিঙ্গুর দেখিয়া।
.                তোমাকে প্রণাম করি,
.                বীর চট্টগ্রাম।
.                নন্দিত বন্দিত আজ।
.                ক্ষুদ্র নন্দীগ্রাম।

বার বার নগ্নতার,
এ কোন অধ্যায়।
আমরা নীরব তবু,
শিখণ্ডি ভূমিকায়।

.                হায়!
.                দাঁড়ায়েছি এসে আজ,
.                আমরা কোথায়?

.           ***************  
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সৃষ্টির উৎস
কবি সমরেন্দ্র দাশগুপ্ত
মিলনসাগরে প্রকাশকাল ২৬.১২.২০২০।

বারাঙ্গনার ঐ অঙ্গনে,
যাচ্ছি যখন সঙ্গোপানে।
করছি কি তার জাত বিচার?
কোথায় ছিল জন্ম তার?

.                আদিম ক্ষুধার বহ্নি দাহে,
.                কেড়ে নিয়ে লজ্জা তার।
.                দিচ্ছি ছুঁড়ে আস্তা কুড়ে,
.                এই তো হিসাব সভ্যতার।

ওরা তোমার আমার ঘরের মেয়ে,
মা বোন ওতো তোমার আমার।
রক্তে মাংসে গড়া মানুষ,
এইতো জানি পরিচয় তার।

.                তবে কেন অপাংক্তেয়,
.                এই সমাজে পায়না ঠাঁই।
.                আবার ওদের ঘরেই রাত কাটিয়ে,
.                ওদেরইতো কুৎসা গাই।

ধন্য মানুষ ধন্য তোমায়,
জবাব নাইতো সভ্যতার।
ওদের এই পথেই আনছে টেনে,
তোমার আমার বলাৎকার।

.                শক্তি ওরা সৃষ্টির উৎস,
.                ওদের ছাড়া গতি নাই।
.                উৎস যদি যায় হারিয়ে,
.                ধ্বংস হবে সৃষ্টিটাই।

.           ***************  
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
রাজপথ
কবি সমরেন্দ্র দাশগুপ্ত
মিলনসাগরে প্রকাশকাল ২৬.১২.২০২০।

এখানে সৌন্দর্য্যের বিচিত্র বিন্যাস নেই,
চুড়ান্ত মালিন্যের চাপা দীর্ঘস্বাস।
আমার উন্মুক্ত মুখর জিজ্ঞাসা,
বারং বার করে যায় ব্যর্থ পরিহাস।

দেখেছি যে ফুটপাথে, অথবা পার্কের রেলিংএ রেলিংএ,
সারি সারি, মেলে দেওয়া জীর্ণ কাঁথা শাড়ী।
রাস্তার বাঁকে বাঁকে বসে আছে, খর্ব্ব দেহ নিঃস্বহায়,
বিপর্য্যস্ত ম্রিয়মান অসংখ্য ভিখারী।

দেখেছি যে সারি, সারি চুল্লি জ্বলে,
ক্লান্ত দিনের শেষে, বিষন্ন বিকেলে।
কুঁকড়ে যাওয়া নগ্ন শিশু হুঁ হুঁ করে কাঁপে,
কন্ কনে ঠাণ্ডায় সকালে বিকালে।

দেখেছি যে গভীর নিশীথে, শ্রাবণের প্রচণ্ড ধারায়,
শ্রান্তিহীন মানুষের তন্দ্রা ছুয়ে যায়,
ধীরে, ধীরে, ভিখিরীর ভিড় জমে,
রাস্তার দুধারে যত সারি সারি গাড়ি বারান্দায়।

তবুও তো ভবিষ্যৎ উপেক্ষায়, নির্লিপ্তে নির্দ্বিধায়,
পেতেছে সংসার ওরা উন্মুক্ত আকাশের নীচে।
সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, মিলে, মিশে একাকার,
গ্রীষ্মের খরতপ্ত তেজে, রাস্তার গলিত সে পীচে।

.                 ***************  
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
অহাম্মক
কবি সমরেন্দ্র দাশ গুপ্ত
মিলনসাগরে প্রকাশকাল ২৬.১২.২০২০।

আমি গোখড়ো নিয়ে করি খেলা,
কেউটে করি কণ্ঠ মালা।
কঠিন কারার গরাদ ভাঙ্গি,
ভাঙ্গি যে তার সকল তালা।
.                শঙ্খ চূড়ের ফনায় উঠে,
.                তাথৈ তাথৈ নৃত্য করি।
.                যতই ছোবল দিকনা অমায়,
.                সে বিষ আমি হজম করি।
ঢালছে যখন তীব্র গড়ল,
তখন বিষ ছাড়াবার মন্ত্র পড়ি।
তবু জর্জ্জরিত হইনা বিষে,
নামটা যে তাই বিষহরি।
.                হয়তো ভাগ্যে আছে লেখা,
.                নির্মম ওই ফাঁসির দড়ি।
.                মূত্যু আমার ভৃত্য পায়ের,
.                মুতু নিয়েই খেলা করি।
এলাম যখন ধরার বুকে,
চাইনা হোতে জরায় মরা।
যে কটা দিন রইবো বেঁচে,
জ্বালিয়ে খাবো বসুন্ধরা।

.                 ***************  
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর