কবি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় – প্রখ্যাত গণসঙ্গীত শিল্পী, জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত বাংলার ঢাকা
জেলার বিক্রমপুরে। পিতা নকুলেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা লীলাদেবী। শৈশবেই দেশভাগের যন্ত্রণা বুকে
নিয়ে এপার বাংলায় চলে আসেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। তিনি কর্মজীবনে
কেন্দ্রীয় সরকারের জনগণনা বিভাগে কর্মরত ছিলেন।

ছাত্রাবস্থায় বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। ছাত্র আন্দোলন, খাদ্য আন্দোলন করতে গিয়ে
কারাবরণ করেছেন। হিন্দুস্তান ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনে শ্রমিকদের পক্ষ নিয়েও কারারুদ্ধ হয়েছিলেন।
প্রথম দিকে ব়্যাডিকাল সোশালিস্ট পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও সাতের দশকের শেষ দিকে ভারতের
কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)-র আহ্বানে বহু গণসংস্কৃতি আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন। নির্বাচনেও
বামফ্রন্টের হয়ে অনেক কর্মসূচিতে শামিল হয়েছিলেন।
     
পারিবারিক সূত্রে নাটক ও গানে হাতেখড়ি হলেও তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখেন দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে।
রবীন্দ্রনাথের গানের অনুষঙ্গেই দেশবিদেশের মানুষের কথা ও সংগ্রামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সংগ্রহ করেন
অসংখ্য গণ আন্দোলনের গান। ১৯৭২ সালে স্ত্রী স্নিগ্ধা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভাই দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের
সঙ্গে মিলে শুরু করেন ক্যালকাটা পিপলস্ কয়্যার। তাঁদের প্রথম প্রযোজনা ছিল দেশ বিদেশের মুক্তিযুদ্ধের
গান ও দৃশ্যায়ন। পশ্চিমবঙ্গের বাইরেও অন্যান্য রাজ্যে তাঁরা বহু অনুষ্ঠান করেছেন।

একসময় তিনি “ঋত্বিক” নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। এখানে কবয়ঃ ও চলচি
ত্ত চঞ্চরী সহ বহু নাটকে
অভিনয় করেছেন।  তাঁর রচিত বহু গান জনপ্রিয় হয়ে মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে। যার মধ্যে রয়েছে
“একটি যুবকের কাহিনী”, “জীবনের জন্য ভালোবাসার জন্য”, “শতফুল বিকশিত হোক”, “আমরা সূর্যসেনা”,
“চারটি নদীর গল্প শোনো” অন্যতম। এছাড়া তাঁর ৫০জন শিল্পী সমন্বয়ে পালাগান “দিনবদলের পালা”, হিন্দি
নৃত্যনাট্য “বন্ধন” ও ছোটদের “ভাল্লুক ও মৌমাছি” জনপ্রিয় হয়েছিল।

তাঁর জীবনাবসানের পর শোক জ্ঞাপন করে প্রখ্যাত শিল্পী রুমা গুহঠাকুরতা বলেন যে সমরেশ ছিলেন তাঁর
ভাইয়ের মতো। তিনি শুধু দেশ বিদেশের গান ও দৃশ্যায়নে মানুষের জীবন সংগ্রামের কথা  বলতে
চেয়েছিলেন তাই নয়, তিনি মানুষকে আন্দোলনমুখী করে তুলেছিলেন। ক্যালকাটা কয়্যারের কর্ণধার কল্যাণ
সেন বরাট শোকজ্ঞাপন করে বলেন যে ভারতবর্ষে রয়্যার আন্দোলনে ক্যালকাটা ইউথ কয়্যার, ক্যালকাটা
পিপলস্ কয়্যার এবং ক্যালকাটা কয়্যার ছিল থ্রি মাস্কেটিয়ার্স। ভারতীয় গণনাট্য সংঘ এবং পশ্চিমবঙ্গ
গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের সঙ্গেও কবির সুসম্পর্ক ছিল।

আমরা তাঁর পাঁচটি গানের কথা
কবি সুব্রত রদ্র সম্পাদিত গণসংগীত সংগ্রহ থেকে পেয়েছি।

এছাড়া আমরা কৃতজ্ঞ
কবি রাজেশ দত্তর কাছে যিনি তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে আমাদের পাঠিয়েছেন
গনবিষাণ’-এর গাওয়া সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় ও সুরে “যারা কাফেতে মোড়েতে বসে আছো” গানটি।
.           
গানটি শুনতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .        
          
তিনি এ ছাড়াও আমাদের পাঠিয়েছেন সাউণ্ড-ক্লাউড ওয়েবসাইটে নিচে দেওয়া দুটি গানের লিঙ্ক।
১। শিল্পী বিমল দের গাওয়া সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় ও সুরে “চারটি নদীর গল্প”।
.           
soundcloud.com/gaanbimal/charti-nodir-galpo                

২। শিল্পী অমিতেশ সরকার ও অন্যান্যের কণ্ঠে, সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবানুবাদে, অ্যালফ্রেড হ্যায়সের
কথায় ও আর্ল রবিনসনের সুরে “জো হিল” নামক একটি ব্যালাড গান।
.           
soundcloud.com/gaanbimal/joe-hill            

আমরা
মিলনসাগরে  কবি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে
পারলে আমাদের এই প্রচেষ্টা সফল মনে করবো। এই পাতা কবির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য।


উত্স - গণশক্তি, ২৬শে সেপ্টেম্বর ২০১৪।        


কবি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন


আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     


এই পাতা প্রকাশ - ২.১০.২০১৪
...