রাত হলেই আমার কবিতাগুলো একে-অপরকে ধ্বংস করতে চায় আমার কিছু করার থাকে না খাদ্যহীন প্রাণীর মতো তারা ছন্দ ও অলঙ্কার ভুলে যায়
অথচ দিনের বেলা নিষাদ ও বাল্মীকিকে প্রতিষ্ঠাহীন করতে চেয়েছিল
আর-একটু বেশি রাতে কবিতার ধ্বংসস্তূপের উপর স্বাতিনক্ষত্রের একফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়ে আমার কিছুই করার থাকে না শুধু এক গর্ভবতী উলঙ্গ পাগলি-ভিখারিনির কথা মনে আসে
আজ সারাদিন জেলখানার গেটের সামনেএকটা আর্ষ শেকড় পড়ে আছে ন্যাশনাল লাইবেরোরি থেকে ফেরার সময় তুমি কি দেখতে পেয়েছ তুমি দেখে এসো অপর্ণা
আর ওই দেখ ক্লিওপেট্রার হাত ধরে সুরদাস অমরনাথের পথে চলেছেন আর বাঁকুড়ার ঘোড়া দেখে লক্ষ্মণ সেন ক্রোচেকে সঙ্গে নিয়ে পালাচ্ছেন এই আষাঢ়েও বাঁকুড়া-পুরুলিয়ায় বৃষ্টি নেই
কেন ওই একই তরবারি হাতে নিয়ে ওদেরও শ্মশান ও ক্যাথিড্রালের প্রহরায় থাকতে হয় প্রতিদিন
নিজের অনুগত প্রজাকে কেন ওরা মাথায় রোদ্দুর বৃষ্টি শহর নিঙড়িয়ে বলে না কেন এই বন্দী আমাদের প্রাণেশ্বর প্রাণেশ্বর মহাশিশ্ন ছিঁড়ে বলে তোমার মন নাই কুসুম ওদিকে স্টেডিয়ামে ঢুকছে পুলিশেরা বিমুঢ় সরোদিয়া আমজাদ প্রতিমা ধসে পড়ে ভূগোল খসে পড়ে স্টিমার ঠেকে গেছে ব্রীজে দয়াল এইবেলা চোদ্দ ইন্দ্রিয় চূর্ণ করে দিয়ে যা
রাম কি ? বোধহয় শ্যাম, যদুর মতোই শুয়ে আছে। ফুল এক ঠোক্কোরে একটা চোখ তুলে নেয়, চাঁদ এক খাবলায় আরেকটা ; শ্যামা আর ঝাউবীথি নাক প্রথম-বৃষ্টির নোখে লটকে থাকে ; হাত-দুটো টানাটানি করে কবিতা, আর পা-দুটো মাটি।
অর্ধেক আকাশ গ্রামকে দান করে বাকি অর্ধেক নদীকে দেবে ব’লে নিজের . অধিকারে রেখেছে পূর্ণিমা বুনো কচুপাতায় চারফোঁটা শব্দ টলটল করতে-করতে ঘাসের ঠোঁটে . ভেঙে পড়লো বাতাস মেলায় তার সর্বস্ব দান ক’রে একবস্ত্রে ফিরে যাচ্ছে ওই শুধু সরস্বতী নদী থেকে উড়ে-আসা একটা ছায়া কান পেতে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কে কখন কাকে বলবে খোকা ভাত খাবি আয়
পূর্ণিমা শব্দ বাতাস ছায়া ওসব কিছুই নয় বর্ণমালার মতেন খুব ভুল গ্রাম নদীর ভিতর সারাদিন খেলা করে শব্দ সারারাত ঘাসের উপর ঘোড়া চড়ায় বাতাস মেলায় গিয়েছিল শুধু নাগা-সন্ন্যাসীর পায়ের তলায় ঘুমিয়ে . পড়বে ব’লে মায়ের মুখাগ্নি করার সময় একটি শিশুর ঠোঁটে শুধু সরস্বতী ফুটে উঠেছিলো কেউ কাউকে কখনও বলে নি খোকা ভাত খাবি আয়
এসব জেনেও ভিখিরি-বালকের বালকের গলা থেকে ঝ’রে পড়ার লোভে এর নিষাদ ক্রৌঞ্চ-ক্রৌঞ্চীর দিকে নিজের গার্হস্থ্য ছুঁড়েছিলো একটা পাখি উড়ে যায় ভিখিরি-বালকে গলা খুলে দিতে একটাকেই নিতে . হয় সম্পূর্ণ আকাশ আর ওই নিষাদ বহুক্ষণ নিজের স্বরলিপির দিকে তাকিয়ে থেকে পিছন . ফিরে হাঁটতে থাকে সেও কি গ্রামের মতো খেলেছিলো পূর্ণিমার নদীর তলায় একা-একা গৃহহীন পুত্রের মুখাগ্নি করার সময় তার ঠোঁটেও কি সরস্বতী ফুটে উঠেছিল কেউ জানে না ওই ক্ষত্রিয় পুরুষ যাজ্ঞক কৃষকরমণী ওদের কাছেও তো ভিখিরি-বালককে পাঠাবার কথা ছিলো তার
ওই নিষাদ তার ঘাতক বীণায় টঙ্কার তুলে নিজের পাথুরে বুকের ঘোর . কাছাকাছি মুখ নিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে . খোকা ভাত খাবি আয় আর সে এই প্রথম স্পষ্ট শুনতে পায়কে যেন তাকেই চারফোঁটা টলটল . শব্দে গোপন দূর থেকে বলছে
. খোকা ভাত খাবি আয় আর হঠাৎ ক্ষত্রিয়পুরুষ যাজ্ঞিক কৃষক রমণীর সামনে ভিখিরি-বালক এসে পড়ে