কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্যের কবিতা
*
কস্মৈ দেবায়
কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্য

কোন দেবতারে জানাই নমস্কার ?
মাঠ হতে ধান নিয়েছিল যারা আর
মুকুটে যাদের অনেক ধানের রঙ
সন্ধ্যার গায়ে তাদের ছায়ার সার I

নরমেদ যারা নিতে এল তারপর
লৌহবর্মে যাদের বুক পাথর
অপরাহ্ণের আকাশে তাদের ভিড়
ভেঙে গেছে বুঝি নিরাপদ খেলাঘর II

কোন দেবতারা বাজায় রুদ্রবীণ
আগুন ছড়ায় তাদের নধ্যদিন,
সূর্যের ক্ষত অবিরত ঢালে বিষ--
আছে আমাদের মৃত্যুর মহাঋণ !

এখনও তবু ঊষার আকাশ লাল
জীবনের যেন নতুন রশ্মিজাল !
কোনো দেবতার ধ্বনি কি সুনিতে পাই?--
আমাদের হবি চায় কোন মহাকাল II

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
যৌবনোত্তর
কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্য

রাত্রিকে মনে হত সমুদ্রের মত ;
আজ সেই রাত্রি নেই I
হয়তো এখনও কারে হৃদয়ের কাছে আছে সে রাত্রির মানে ;
আমার সে মন নেই
যে মন সমুদ্র হতে জানে I

একবার ঝরে গেলে মন
সেই ঝরাফুল আর কুড়োবার নেই অবসর ;
তখন প্রখর সূর্য জীবনের মুখের উপর--

তখন রাত্রির ছায়া জীবনের স্নায়ুর উপর--
জীবন তখন শুধু পৃথিবীর আহ্ণিক-জীবন II

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
নীলিমাকে
কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্য

রাত্রিতে জেগে ওঠে যে-সাগর
.          অন্ধকারের সাগর----
তুমি তাতে স্নান ক’রে এসো, নীলিমা,
তোমার চোখ হোক আরো নীল
চুল হোক ধূসর ফুলের মঞ্জরীর মতো  |

আর যদি রাত্রিকে বিদীর্ণ ক’রে ওঠে চাঁদ
তোমার আঁচলে লেগে থাকে যেন সিক্ত জ্যোত্স্না
তোমার বুকে পাই যেন জ্যোত্স্নার গন্ধ ;
বলতে পারো, সে-জ্যোত্স্না কি নীল হবে, নীলিমা,
.               নীল পাখির পালকের মতো  ?
জানি তুমি আমায় ডাকবে-----
( নীল বন কি কথা ক’য়ে উঠলো----
আর মেঘের গায়ে-গায়ে নেমে এলো স্বপ্নরা ? )
আমার চোখ নরম হ’য়ে আসবে ঘুমে, নীলিমা,
তোমাকে নয়, তোমার স্বপ্নকে পেয়ে |

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
রাত্রিকে
কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্য

রাত্রিকে কোনোদিন মনে হ’তো সমুদ্রের মতো |
আজ সেই রাত্রি নেই  |
হয়তো এখনো কারো হৃদয়ের কাছে আছে সে-রাত্রির মানে |
আমার সে-মন নেই
যে-মন সমুদ্র হ’তে জানে |

একবার ঝ’রে গেলে মন
সেই ঝরা ফুল আর কুড়োবার নেই অবসর ;
তখন প্রখর সূর্য জীবনের মুখের উপর
তখন রাত্রির ছায়া জীবনের আয়ুর উপর
জীবন তখন শুধু পৃথিবীর আহ্নিক জীবন |

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
আগন্তুক
কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্য

পৃথিবীর রং মুছে ফেলে দেয় যারা
.        তারা তো আসে নি ফিরে,
তাদের আত্মা করে অপেক্ষা ভবিষ্যতের ভ্রূণে,
যায়নি পৃথিবী সময়ের সেই মহাসমুদ্র-তীরে |

তাদের নামের অক্ষয় অক্ষর
.        মাটিতে রয়েছে লেখা
যাদে জন্য অরণ্য দূরে স’রে করেছিল ঠাঁই,
পৃথিবীতে ছিল যাদের দেবতা আর তরবারি-রেখা |

আবার যাদের তীক্ষ্ণ অশ্ব-খুরে
.        গোবির গেরুয়া ধূলি
ভূগোলের সীমা ভেঙে যাবে মিশে হিস্পানী উপকূলে,
আসছে কি ভেসে মহাসমুদ্রে তাদের স্বপ্নগুলি ?

লেগেছিল কোন্ জাহাজে অজানা হাওয়া
.        দূর দিগন্ত হতে
মিশর মিশেছে “মায়া”র মাটিতেনাইলের নীল ঢেউএ
সেই নাবিকেরা হারালো কি পথ দুঃসময়ের স্রোতে |

পৃথিবীর এই ভাঙন দেবে যে জোড়া,
.        তারা তো আসে নি ফিরে,
যায় নাই মুছে তাদের তৃষ্ণা দুরন্ত উত্সাহ,
করে অপেক্ষা তারা সময়ের মহাসমুদ্র-তীরে ||

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
মনে থাকবে না
কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্য

মনে থাকবে না !
এই আলো, এ-বিকেল,  এই বেচা-কেনা
এই কাজ----প্রেম, রাঙা জীবনের দেনা
এ-নিবিড় পৃথিবীর, নিজেদের হঠাৎ এ-চেনা
মনে থাকবে না |

তবু কিছু থাকবে কোথাও,
এই আলো এই ছায়া যখন উধাও,
বিকেলের উপকূলে বিকেলের শ্বাস ফেলে চুপচাপ ঝাউ
আলো-লাগা, ভালো-লাগা মন---- নেই তা-ও---
তখনো হয়তো কিছু থাকবে কোথাও |

তখনো থাকবে ছবি তোমার-আমার |
দেখতে পারো না একা হৃদয়ে তাকাতে তুমি আর,
যতবার
তাকাবে দেখবে কেউ আছে তাকাবার ;
অপলক চোখ যেন কার
তোমার চোখের পাশে---- হয়তো আমার |

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
আলাপ
কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্য

বিকেল-সূর্যের মুখে ঠিক যেন ভোরে-পাওয়া মন |
আমি এক মহিলাকে দেখেছি এখন |
খানিক ময়লা আলো ঘাসে গাছে পাতায় লতায়,
দু-জনের চুপ ক’রে-থাকা জিভে, হঠাৎ কথায়,
শুধু ঠোঁটে খেলছে বিদ্যুৎ,
তবু সাবধান পাছে ভবিষ্যৎ আসে রাত্রি-কালি-মাখা ভূত |

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
পূর্ণিমার জন্য
( শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-কে নিবেদিত )
কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্য

মরকত নীল আমি সমুদ্রের মতো
তোমাকে নাবাল-ভূমি ডাকছি সতত ;
এসো এসো ষোড়শী আমার, উপকূল
নারিকেল উপচার পাঠিয়েছে, ভূল
এবার হবে না আর দেবতা ফিরিয়ে |
প্রবাল-দেহের সঙ্গে হৃদয়ের বিয়ে
তুমি নেমে এলে হবে |  এসো সপ্তপদ
একবার, তারপর লোভ মোহ মদ
সব পাবে, পাবে এক সজ্জিত বাসক,
জলকন্যা, তারাদল নয় ভয়ানক
তোমারি মতন তারা মাটির শরীর
পৃথিবীর মহানীরে নীড় খুঁজে তীর
পেয়েছে পাতালে |  বাতি জলে অন্ধকারে |
সব অন্ধকারে বাতি জ্বলে সারে-সারে |

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
মুমূর্ষু
কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্য

আমরা পাই নি এসে পৃথিবীর প্রথম যৌবন ;
আকাশে হারিয়ে গেছে কত কথা তরুণ তারায়----
কত নীল অন্ধকার, ম্লান কত সূর্যের স্বপন----
জ্যোত্স্নায় জাগর রাত, রাতেরও তা মনে নেই আর |

আমরা পাই নি দেহে অরণ্যের সবুজ আঘ্রাণ ;
হয়তো ফুটেছে ফুলে কোনোদিন মৃত্তিকার মন ;
আমাদের ধমনীর ভীত রক্ত করে নি সন্ধান----
সিংহের পিঙ্গল ছায়া মিশে গেছে কোথায় কখন  !

আমরা পাই নি মনে পর্বতের অভ্রভেদী সুর ;
পার্বতীর পঞ্চতপ ভুলে গেছে বুঝি হিমাচল  ;
আমরা জানি না কিছু বয়ে নিয়ে গেছে কত দূর
উর্বশীর দেহস্বাদ সমুদ্রের লপণাক্ত জল  |

আমরা পেয়েছি শুধু পৃথিবীর অন্তিম দিবস,
নামে মৃত্যু পৃথিবীর জরাজীর্ণ ভগ্ন দেহময় ;
আমাদের পঙ্গু আত্মা পায় নিত্য মৃত্যুর পরশ,
মানুষের ইতিহাস বুঝি আর হবে না অবক্ষয় |

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
প্রেম
কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্য

.                     
মনে থাকবে না

মনে থাকবে না !
এই আলো,  এ বিকেল,  এই বেচা- কেনা,
এই কাজ----- প্রেম, রাঙা জীবনের দেনা
এ নিবিড় পৃথিবীর, নিজেদের হঠাৎ এ চেনা
মনে থাকবে না |
তবু কিছু থাকবে কোথাও,
এই আলো এই ছায়া যখন উধাও
বিকেলের উপকূলে বিকেলের শ্বাস ফেলে চুপচাপ ঝাউ,
আলো-লাগা, ভালো-লাগা মন----- নেই তা-ও
তখন হয়তো কিছু থাকবে কোথাও |

তখনও থাকবে ছবি তোমার-আমার |
দেখবে, পারো না একা হৃদয়ে তাকাতে তুমি আর,
যত বার
তাকাবে দেখবে কেউ আছে তাকাবার ;
অপলক চোখ যেন কার
তোমার চোখের পাশে----- হয়তো আমার |


.                 
আমার আকাশ নেই

আমার আকাশ নেই               তবু তারে পেতে দাও
.                 দাও এক কণা
সোনালি  সন্ধ্যায় আজ             একবার বলো শুধু
.                 বলো :   ‘ভুলব না ‘ |
তারপর ভুলে যেয়ো                তুলে নিয়ো দুই চোখে
.                 নীরব তিমির-----
তারপর মুছে যাক                  এই কথা, এই আলো
.                 এই পৃথিবীর |
তবু চোখে রাখো চোখ             ছল হোক আঁকো ছবি
.                 জলরঙ দিয়ে----
খানিক আকাশ গড়ি                ক্ষণিকের আলো-ছোঁয়া
.                 কথা-দেওয়া নিয়ে ||


.              
হৃদয় আকাশ হয়ে গেছে

হৃদয় আকাশ হয়ে আছে |
কোনো এক মৃত নাম নীলিমায় নীল
মেঘের আখর নেই, নীল অনাবিল  |
কোনো এক মৃত মন শাদা ছায়াপথ
দূরের তারার ফুল----বাসি ফুল----মনের শপথ |
কোনো মৃত হৃদয়ের স্বাদ
ভোরের আলোর জলে মুছে যাওয়া চাঁদ |

হৃদয় আকাশ হয়ে আছে
কোনো এক মৃত প্রেম ভুলে যাই পাছে |

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর