কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
|
অষুধ
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
অষুধ কিসে লাগল তোমার,
অ-সুখ ছিল বুঝি ;
তাই তো আমি এখানে সেখানে –
পদ্য লেখা খুঁজি ।
লেখনী নাও হাতে,
যদি দুঃখ পাও খুব,
যদিও আমি দুখ-সাগরে
দিয়েছি অনেক ডুব ।
সুখের দিনে যা পাও ভাল
তবু,
জানবে মনে মনে ।
দুঃখ যত আঘাত করে,
ততই আলো আনে ।।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
আমরা কবির কাছে কৃতজ্ঞ কারণ এই সব কবিতাই কবি নিজে আমাদের টাইপ করে পাঠিয়েছেন।
নাম
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
একটা নাম-
গড়েছে একটা জগত
নামে কি থাকে প্রাণ!
যে শোনে সেই হাসে ।
নামের দাম,
যে জানে সেই জানে।
পাগলপারা যে জন ভালবাসে ।
চোখেতে তার জগত করে বাসা,
ভাবের ঘরে ঠাসা ,
তাকায় না সে ফিরে ।
পাখির মতন নাচে সে শুধু
নামটি ঘিরে ঘিরে ।।
নামের স্রোতে ভাসে-
নামের সাথে গন্ধ আসে,
স্বপ্ন চোখে ভাসে ।
নাম যে আর নামটি শুধু নয়;
নাম যে তার জগতটাকে
করেছে মধুময় ।।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
প্রেমের জ্বর
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
ঝরনা ছোটে ঝরনা চলে
পাথর বেয়ে যায়,
মন পাথারে প্রেম বয়ে যায়
প্রেমের পরীক্ষায় ।
ডাইনে বামে দাঁড়িয়ে হতাশ
দাঁড়িয়ে প্রেমিক কুল,
জোর করে তাই প্রেম সাগরে
মন হারালে কুল ।
কাউকে ছোঁয়া আধেক দেওয়া,
কাউকে দেওয়া পুরো ।
প্রেম আগুনে মন পুড়েছে
এবারে তুই জুরো ।
সে আসে ,
সে যায়,
সে থাকে কিছুক্ষণ ,
তারপরে যায় পাথর বেয়ে,
মাড়িয়ে শরীর মন ।
ঝরনা ছোটে ঝরনা চলে
পাথর বেয়ে যায়,
প্রেমের জোয়ার শরীর ছুঁয়ে,
মন ছাড়িয়ে যায় ।
মনের কোনায় ঘুমায় প্রেমিক,
প্রেমিক , প্রেমের জ্বর ;
প্রেম চাস তো শরীর ছেড়ে ,
হৃদয় খুলে ধর ।।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবির স্বপ্ন পুরাণ
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
তুমি আসনি কাছে, আসনি কাছে
আসনি কোনোদিন ।
আমি শরীর থেকে বেড়িয়ে গিয়ে
চেয়েছি প্রতিদিন ।
কলম কেউ টেনে ধরে,
গলাটা ধরে চেপে ;
বুকের মাঝে
নানা রকম শব্দ ওঠে কেঁপে ।
তারা চাপাই থেকে যায়-
ভাষা শুধু বলে আমায় ,
হায়রে বন্ধু হায় ।
অণু আর প্রেরণা তোর
জোরা তো লাগেনা –
নতুন কোনও ভাবনা-ঠিকানা
পাওয়া গেলনা আর।
মনের আকাশ শুধুই হল ভার ।
মনের আকাশ-বাতাস ভারি হল
ঝড় হলো না-বৃষ্টি উড়ে গেল ।
এলো মেলো শব্দ-বাতাস
মনেই গেল মিশে –
কবি হবার আশা যত
স্বপ্নে গেল ভেসে ।।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
লাগাম
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
লাগাম টেনে ধর বন্ধু লাগাম টেনে ধর ,
মনের কোনায় আপদ ঘুমায় এবার বিদায় কর ।
পদ্ম গন্ধী হৃদয় তোমার সুবাস থাকুক ছেয়ে ।
আপন যে জন হবে না তার থেকোনা পথ চেয়ে ।
কোনও এক অলস সময় পড়বে মনে যদি,
ভেবে নিও কাল যে ছিল আজ সে মরা নদী ।
জীবন তোমার নয় খেলাঘর , নেশার পাত্র নয়,
অপাত্রে হে বন্ধু জীবন আর কোরো না ক্ষয় ।
দেবার পাত্র শেষ হয়েছে আর তো কিছু নেই,
বন্ধু জনের ঘর ভাঙ্গেনি মনের আশা এই ।
বুঝতে আমায় ভুল কোরোনা, তাও বা যদি কর ,
তবুও হে বন্ধু মনের লাগাম টেনে ধরো ।।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
মায়ের স্বপ্ন
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
স্বপ্ন চোখে ভাসে –
মায়ের স্বপ্নে খোকা হাসে ।
ঘুমের থেকে উঠে দেখে
দেয়াল চারি পাশে ।
কঠিন দেয়াল যত ,
কঠিন তারি মত ;
স্বপ্ন এমন ভাঙ্গা ,
স্বপ্নে খোকার নরম দুটি চরণ ছিল রাঙ্গা ।
নরম ছিল মুঠি
হাঁটত গুটি গুটি
টলো মলো পায়ে ।
বছর গেলে মায়ের খোকা চলত রাঙ্গা পায়ে ।
মায়ের কোলটি ঘেঁসে
দাঁড়াত সে এসে ,
ঘুমটি এলে পরে ;
মায়ের কোলে পরম সুখে থাকত ঘুমের ঘোরে ।
ইটের দেয়াল
সিমেন্ট দিয়ে বাঁধান ঘর বাড়ি ,
তাই তে খোকা করেছে কি আড়ি
মায়ের সাথে আজ ,
খোকার ডাকে স্বপন-পুরে আসবে কখন মাগো ;
সাঙ্গ করে দালান বাড়ির কাজ ।
মা কাঁদে –হায়,
হায়রে জীবন-
বেঁধেছ আজ এ কোন জাঁতা কলে !
খোকার স্বপ্ন কেঁদেই গেল চলে ।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কেন আমি লিখি
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
কবি তুমি কোন তাড়নায় দেখেছিলে
ঝলসান রুটি এক পূর্ণিমায়,
কামের পিছন ছুটে ছুটে
চার হাত-পায় ,
ভেঙ্গে গেল মন ।
নিচের খিদেই শুধু –
বুকে ধরায় রঙ -আমার
কামড়ে ধরা কাম ।
মায়ের কোলেতে কাঁদে
জ্বরে ধরা ছেলে –
পূর্ণিমায় গ্রহণ লেগেছে যেন ,
মা ডাকেন চাঁদের ললাটে-
আয় টিপ দিবি আয় –
আমার মনটা কাঁদে হায় হায় হায় ,
আমায় কেন যে শুধু কাম কামড়ায় ।
জ্যোৎস্নার বিভোর মায়ায় ,
কবি তুমি ডাক দিয়েছিলে ,
আয় তোরা আয়, খেলি বন-জ্যোৎস্নায় ;
কেমন সে সুন্দর রাত,
কেমন সে মুকুলিত আমের পল্লব ,
কি ছিল সে মাতাল হাওয়ায় ,
আমার হৃদয় কাঁদে হায় হায় হায় ;
কেন আমি ছুটি শুধু কামের তাড়ায় ।
শেষের সে দিনটিতে কবি,
তোমার কথার মালা লে ফেলে রেখে গেলে ,
ভালবেসে তুলে নিয়ে,
রেখে দিই হৃদয়ের গোপন কোনায় ।
সে মালার সুগন্ধে হৃদয় হারায় –
আমার সকল কাঁদে হায় হায় হায় ।
কেন আমি লিখি শুধু কামের তাড়ায় ।।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
অসঙ্গতি
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
কবি তোমার বয়স হল
চার কুড়ি আর আট,
এখন তোমার ফুল বাগানে
সাদা তুলোর আঁটি,
তবুও তোমার নাভির নীচে
টাকার সুড়সুড়ি ,
সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালাবে কি
তোমার পোড়া কাঠি ।
নিঘৃণে মা, দিদিমা দিচ্ছ ঢেলে থালায় ,
বৌ যে এখন একলা ঘরে
খাটের আলো জ্বালায় ।
কোমরে জোর না থাকে তো
আসতে দাও ঘরে ।
তবুও এখন টাপুর টুপুর
বৃষ্টি ঝরে পরে
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
আমি জ্যোৎস্না খুঁজে ফিরি
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
তুমি ডাকলে -
জ্যোৎস্নায় পা ডুবিয়ে চলে এস মালতী ,
আমার কঙ্কালটা হেসে ওঠে ,
তার খাঁচায় খাঁচায়
অমাবস্যার অন্ধকার ,
তবু আমি জ্যোৎস্না খুঁজে বেড়াই ।
তার নরম আলোয়
ডুবে যেতে চাই মালতীর মত ।
অশান্ত, অবাধ্য মেঘ ঢেকে ফেলে চাঁদ,
তারারা উঁকি মারে -জগত ঘুমায় ;
আমি জ্যোৎস্না খুঁজে ফিরি
অমাবস্যার কালো হাত
ছিন্ন-ভিন্ন করে -রাতের বেলায়
জ্যোৎস্নার মায়াবী আলো
খেলা করে কোন ঘরে
তুমি দাও বলে ।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
অবাক-সবাক জীবন দর্শন
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
তোমার পথে চলব বলে
পথ হেঁটেছি অনেকটা,
কখন মস্ত ভুল করেছি ঘুরে গেছে দিক,
পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি
চিনি না তো এ পথটা,
ভাবছি মনে ফিরব নাকি,
এই পথটাই ঠিক !
লেখা আমার অন্ত্যমিলে
আটকা পড়ে থাকে,
বেরোতে চায় না ।
মিল যদি বা থাকে লেখায়
দোষটা কি আর তাতে ,
ছন্নছাড়া হতে হবে,
কেন এ বায়না !
তোমরা স-বাক, তোমরা তরুণ
টগবগিয়ে চল ।
আমার লেখা বড্ড নরম
কি আর করি বল !
আমার মাটি শুকন এখন
ফেটে সে চৌচির ,
মনের মধ্যে এখন তখন
ছেলেবেলার ভিড় ।
কঠিন জীবন দর্শন
আরও কঠিন যে তার ভাষা ।
মাঠ করেনি কর্ষণ
তাতে ফসল ফলার আশা ।
জীবন কঠিন বাস্তব
বিয়োগান্তে ভরা –
তাইতে ভাসি কল্পনাতে,
আসি কবির পাড়া ।
এখানে তো কচি ঘাস ও
ভীষণ জীবনমুখী কঠিন কথা বলে ।
যেদিন হবে শুকনো কেঠো
হয়ত লিখবে মিষ্টি কিছু
আমার মন তো বলে ।।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর