কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
*
লাল বাঁধান খাতায়
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

লাল বাঁধান খাতায় অনেক কথা লিখেছিলাম
অনেক বছর ধরে ।
সে কথা কারুকে শোনান হয়নি, সে সব
কখোনো বলিনি জোরে ।
পিছন ফিরে দেখা ঠিক নয়,
তবু যখন খাতা খুলে পড়ি ,
অনেকটা সেরকমই মনে হয় ।
জীবনে কতো মোড় ঘুরে গেছে
কত পথ গেছে হারিয়ে ,
কতো পাহাড়, কতো মরুভুমি, অরন্য বা সমুদ্র পেড়িয়ে-
কতো বন্ধু চলে গেছে,
কতো হাত আমি নিজেই নিয়েছি ছারিয়ে ।
শুধু ছারেনি আমায় আমার স্বপ্ন,
ছারেনি আমার ভাষা ।
সমতলে জমি পেয়ে যাব একদিন,
এমনি প্রবল আশা এখনও যায়নি ছেরে।
এখনো এত বছর পরে ।

আমার কথা কেন শুধু কথা নয়-
কেন গাঁথামালা মনে হয়;
সে নিয়ে ভাবিনা আর,
মালাতো বাজারে বিকাতে নেবনা,
এ তো শুধু আমারি গলার হার ।
আমি ভালবাসি স্বপ্ন,
আমি ভালবাসি গান,
আমার কথারা স্বপ্নীল তাই
সুরের ঐকতান ।।

. ****************  
.                                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
আমরা কবির কাছে কৃতজ্ঞ কারণ এই সব কবিতাই কবি নিজে আমাদের টাইপ করে পাঠিয়েছেন।
*
তোমায় চাই
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

তোমায় চাই ,আমি তোমাকে চাই
ব্যাকুল-আকুল প্রাণে -বন্ধু তোমার টানে
বন্ধ করে মুঠি -হতাশ হয়ে ছুটি .
কোথায় তোমায় পাবো-
কোন দিকে যে যাবো
দাও বলে দাও তাই .
বন্ধু তোমায় চাই .

হৃদয় আমার জানে,
আমায় তোমার বলে মানে -
তবু তোমার দ্যাখা নাই
ক্যানো তোমার দ্যাখা নাই .

সকাল গেলো চলে, দিন পরেছে ঢলে,
নিকষ কালো রাত ,
শ্রান্ত শরীর-মনে ,একলা ঘরের কোনে,
আলগা হলো হাত,
সে হাত নিয়ে হাতে, সকাল-দুপুর-রাতে ,
চলছ সাথে সাথে ,
বুঝিয়ে তো দাও রোজ-ই .
তবু-ও সকাল হলে -সে সব কথা ভুলে,
আবার তোমায় খুঁজি

বন্ধ করে মুঠি -আবার আমি ছুটি
তোমায় পাওয়া চাই
কেন তোমার দ্যাখা নাই।

. ****************  
.                                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
তোমার কথা, আমার কবিতা
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

কিছু সময়, কিছু পথ , কিছু কিছু কথা
দিয়েছ আমায়
কি জানি কেন পথের ওপার থেকে এলে এপারে,
তুমি একা নও –এরকম কিছু কিছু খেয়ালী মানুষ
আলো জ্বেলে চায় মুখে, খুঁজে খুঁজে ফেরে,
হয়তবা ফেলে আসা দিন, পুরানো প্রেমিক
অথবা নিছক কৌতুহলে,
আমি ভালোবাসি ছন্দমিলে ভরা মেয়েলি ট্র্যাশ
হ্যাঁচকা টানে গর্তে টানেনা প্রেম,
আমাকে সে দিয়া জ্বেলে ডাকে।
মেঘের ওপার থেকে বৃষ্টি ফোঁটা ফোঁটা,
ঝরে পরে আঁচলে আমার,
আমি অঞ্জলি ভরে ধরি তার সে কথা কে,
গানের সুতোয় গেঁথে সুগন্ধ তার দিতে চাই ঢেলে,
কি প্রবল ঘৃণা নিয়ে তুমি যাও তোমার ওপারে,
আমার ভিতর প্রেম প্রদীপ জ্বালায়,
সে আলোয়, সুগন্ধে আমি সাজাই কথা কে॥

. ****************  
.                                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
চাওয়া পাওয়া
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

তুমি এমন কথা বল এমন ভাবে-
না বুঝে মন খুঁজে তো ফিরবেই ;
মন্দ , নাকি ভালই হবে চাওয়া,
উদাসী মন আকাশে উড়বেই ।
তুমি এমন গন্ধ বাতাসে দাও ঢেলে,
ফুলের বুকে ভ্রমর যেমন বসে ।
মন ভরে যায় আকুল করা গানে;
দুঃখফুল গাছ থেকে যায় খসে ।
সে ফুল আমি কুড়িয়ে মনের ভুলে,
গানের সুতোয় গাঁথি এক এক করে ।
শব্দ হয়ে ফুটতে থাকে ওরা -
অবাক সুর্য্য তাকিয়ে থাকে ভোরে ।

. ****************  
.                                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
আমার শেষ প্রেম
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

আমার শেষ প্রেম
শেষের প্রেমিক;
যত তীব্র কামনায়, যন্ত্রনায়
আশ্লেষে, দহনে,
পীড়ন করেছ তুমি -
পূর্ন তা হয়নি কখনো ।
কখনো উদাস তুমি-ক্রুঢ় বা কোমল,
কোনোখানে পূর্ন তুমি পাওনি প্রকাশ ।

কারো চোখে, কারো ঠোঁটে
কারো কারো হাতের ছোঁয়ায়;
তোমাকে চেয়াছি আমি
পরিপূর্ন সমর্পন শেষে -
যতবার গড়েছি তোমায় আমি-
যত্নে, ভালবেসে-
ভেঙে খান খান ।।
চকিত স্পর্শে যেই
ছুঁযেছ হৃদয়-
দিক-বিদিক পরপূর্ন
তার প্রতিধ্বনি -
এইখানে বাজে এই বুকের ভিতর ।।

সভ্য সমাজ
দু-মানুষে মিল আর
অমিলেতে ভরা ।
মিলটা পড়েনা চোখে-
অমিল জগত-জোরা ।
গনিকাটি ক্রেতা ভেবে-
ঈশারায় ডাকে ।
সে বুঝি মানুশ ভালো
পড়েছে বিপাকে ।
ক্রেতা নয়, সভ্য যে মানুষ্টি তার,
লজ্জায় নুয়ে পড়ে ঘাড় ।
ভুল বুঝে পসারীনি দেহ ফিরে যায়;
লজ্জার নেই তার দায় ।
রাতের আঁধারে চেনা শরীর কে ঘিরে-
সভ্য মানুষ চায়-
গনিকা কে ফিরে ।।

. ****************  
.                                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
বকুল কথা
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

কতবার
বল কতবার গেছি কাছে!
কতদিন, সে কি আজো তোর মনে আছে-
ওরে আমার বকুল গাছ ।
ফুলে-ফুলে ছাওয়া, বকুলের হাওয়া
শেষ তো হয়না, ভাঙ্গেনা সহজে
নয় নয় এ তো কাঁচ ।
এ যে আমার বকুল গাছ ।
কতখানি ছায়া, কতখানি মায়া
কত ভালবাসা দিয়ে,
তোমায়-আমায় পেতেছে মিতালী
জগত জানবে কি এ ।
তুমি কথাটি বলনা-
ভাবে লোকে -ভাবে ভুল।
কথা যে তোমার-
সুতোয় গেঁথেছি, বেঁধেছি বেনীর চুল ।
তোমার কথা যে- শুধু শুনি আমি,
কথা যে তোমার আমার বকুল ফুল ।
বকুল বকুল আরো কথা বল
বেলা হয়ে আসে শেষ।
পশ্চিম দেখ-
ধরেছে চিতার বেশ ।
শেষ বাসরের গানটি কি হবে
তাও তুমি দিও বলে ।
ঢেলে দিও ফুল, এমনি বকুল
এই বেলা শেষ হলে ।
তোমায়-আমায় ছাড়াছাড়ি হয়ে
যেইদিন যাব চলে-
শেষ শয্যায় গন্ধ-বকুল
বন্ধু দিও গো ঢেলে ।।

. ****************  
.                                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
যদি চাও
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

যদি চাও তাই হবে;
নীরবে থাকব
চোমার হৃদয়ে-
ছুঁয়ে যাব অনুভবে ।
কথা হবে যত তোমাতে আমাতে-
নিবিড়, নিশীথ রাতে,
আকাশ হৃদয়ে রবে।
আগামী জগত
ফিরে ফিরে দেখা পাবে-
নানা বেশে নানা ভাবে ।
তোমার আমার দূর থেকে দেখা হবে ।
যদি চাও তাই হবে ।।

. ****************  
.                                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
সন্ধ্যা
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

সন্ধ্যা তোমার রূপ মলিন হয়েছে
নাকি এ আমার মনের দর্পণ।
সন্ধ্যা, সন্ধ্যা!
তোমার রঙিন খুশি
কোথায় করেছে অর্পন ?
ধূসর মেঘের সাজ
কেন গো পরেছ আজ-
গোলাপী ওড়না তুমি
ফেলে এলে কেন!
আমার দুখের ছবি-
তোমার ও বুকে দেখি যেন!
ধীর পায়ে চলেছ ফিরে-
কী ব্যাথা রয়েছে ঘিরে।
কি কথা হলনা বলা আজো-
সন্ধ্যা ওগো! বিরহীনি সাজে কেন সাজো!

. ****************  
.                                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
ভালবাসি
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

অনুশোচনা হয়না।
যাকে যখন যেমন
ভালবাসি-
অন্যরকম আর তা হয়না ।
হৃদয় নামক পদার্থটা
একান্ত নিজস্ব- তবু
আমাকে ছেড়ে ছুটেছে
যেন অশ্ব ডিম্বটা লুফছে
হাতে দূরের থেকে হবু
বরের মতন অপদার্থটা ।
গোলমাল সব পাকিয়ে
দড়ির মতন- মাথার চুল ঝাঁকিয়ে
ফেলে দিতে চাচ্ছি যত-
আঠার মত লেপ্টে আছে
চেপ্টে বুকের ভিতর- তত
আমি যাচ্ছি
মনে মনে তার কাছে ।
মাসি ,পিসি, রাশি রাশি
বন্ধু, দাদা, বইএর গাদা
সবার থেকে বাসছি ভালো-
কাকে যাকে ডাকে
ঠিক ভোরের আগে-
আমার চোখের আগে-
জলের দাগে, অনুরাগে
সুরে, তালে, ছন্দে আর রাগে ও সেই
দাঁড়িয়ে থাকে।
তোমরা বোধহয় জানো তাকে ।।

. ****************  
.                                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
সে দিনটি মিলনের
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

বর্ষার আকাশের মত
মেঘের ফাঁকে ফাঁকে
রোদ হেসে যায়
যখন তখন
মনে পড়ে।

মনে পড়ে যেন কার
আসবার আশা-
এমনই প্রবল; তাকে
বাঁধ দেওয়া
নিছক দূরাশা ।
ঘন মেঘ ছায়া ফেলে
যখন সাগর বুকে,
বুঝিনা কে ডাকে কাকে ।
বুঝিনা যে উতরোল
উঠেছে আমার বুকে-
কেমনে থামাই তাকে ।

আকাশ ঢেকেছে মুখ
মেঘের অন্তরালে-
ঈর্ষাকাতর বুক-
প্রেয়সী সাগর জলে
ভাসায় চোখের জল ।
মনে আশা সেই জল
নোনা স্বাদ ফেলে
যাবে আকাশের কোলে,
মিশবে মেঘের সাথে
মিষ্টি বৃষ্টি হয়ে-
আসবে যকন ফের।
প্রতীক্ষার হবে শেষ-
সে দিনটি মিলনের ।।

. ****************  
.                                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর