কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা |
মন উদাসী কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায় গান তুমি গাও কোন উদাসীর বাঁশিতে ! ভাষাহারা কোন বেদনার রঙে রাঙাও হৃদয়। গানে গানে কোন কথা বলে যাও অচেনা ভাষায়, কোন সুরে দাও দোলা- ভয়লাগা শিহরণে হৃদয় জাগাও ! পথ তুমি কোন পথে নিয়ে যাও উদাসীন হাসিতে । কোন অজানার পথে নিয়ে যাও টেনে । দিশাহারা প্রাণে, জাগাও স্বপ্ন যেন, বালুময় সাহারায় বৃষ্টির ধারা । ভাষা কোন যাদু মন্ত্রে তুমি গেঁথে নিয়ে মালা কাকে দাও উপহার। হৃদয়ের ভার, কোন ফুলে রেখে আস ফেলে । কোন প্রিয় তাকে নেবে বুকে টেনে কে নেবে বরণ করে বরমাল্য তোমার বল কাকে তুমি দিলে । . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
ছায়া সঙ্গী কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায় সহসা কোথা থেকে এলে ফিরে ! যুগ-যুগ পরে যেন উষ্ণ সেই কোমল হৃদয় নরম দৃষ্টি মেলে দিলে । যেন একরাশ সাদা মেঘ শরত আকাশে, এক পশলা বৃষ্টি যেন জৈষ্টের তাপিত হৃদয়ে । ছায়া ছায়া মুখ, ভাসা ভাসা কথা প্লাবনের প্রায় ডোবাল আমায় । ভেবেছিলে কোনোদিনও, তোমার ঐ কায়া- হারাবে যে তার পেলবতা, কঠিন দৃষ্টি ; হবে রুক্ষ স্পর্শ তার ক্রুদ্ধ হবে ভাষা ! বেল-কুঁড়ি তোমার প্রেমিক হৃদয়- ক্যাক্টাসে হবে পরিণত ! শীতের সকাল আজ পাতাঝড়া বেলা । ফিরে দেখি আজও আছ বেঁচে, ছায়া হয়ে আজও চলো সাথে । আজ এই শীতের প্রভাতে ডাক দিয়ে গেলে কেন সেই চেনা স্বরে , চেনা নাম ধরে। . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
তুমি আছ কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায় অরন্য, পর্ব্বত, সাগর জল পার হয়ে যেদিন তোমার দেখা পেলাম, তুমি ছিলে প্রথম দিনের সূর্য্যের আলো থেকে শেষ বিন্দু জলে । রাতের আঁধার আর অরন্যের নিঃশব্দ সংকেতে, ওতপ্রোতো মিশে ছিল তোমার নিঃশাস । ভালোবাসা ফেলে এসেছিলাম মাতৃক্রোড়ে, সহোদরের কোমল হৃদয়ে ফুটেছিলে শতদল মেলে, সব ফেলে উর্ধশ্বাসে খুঁজেছি তোমায় আসে, পাশে, সবখানে বুঝিনি তো হৃদয়ের এক কোনে বসে আছ শান্ত, সমাহিত ; নীরব বিঃশ্বাসে । . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
সে আসছে কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায় সে আসছে! কত আশা , কত বিশ্বাস, কতোনা ভালবাসা তোমার হৃদয় জুড়ে আছে । আগু পিছে নেই কেউ, তবু ঢেউ দেয় দোলা। আমার হৃদয় জলে ভাসছে । কোন চোখে তুমি তাকে দেখ বন্ধু কোন চোখে রাখ ! কোন উষ্ণ পেলবতা দিয়ে তুমি তোমার প্রেমের ছবি আঁকো ! পুবের আকাশে তাকে দেখেছ কি কোনোদিন ভোরের সোনালি রং মাখতে ! মেঘের আড়ালে থেকে ডেকেছে কি ভালোবেসে খেয়ালি সাতটি রং বুনতে ! বিকেলে সে অধোমুখে গোলাপী আঁচলে মুখ ঢেকে , দেখেছে কি ফিরে ফিরে, পেরেছো কি তার কথা শুনতে ? রাতের আগেই সে কি ঝরে গেছে - পরে আছে পথে ! দেখেছ কি তাকে ফিরে যেতে ! তোমার হৃদয় তার পেয়েছে কি দেখা , বাড়িয়েছ হাত কোনোদিন, যে হাতের ছোঁয়া লেগে মালা থেকে ফুল গেছে ঝরে । শুধু কাঁটা দিয়ে , গেঁথেছ কি মালা ! অবাক বিষ্ময়ে , বেদনার লাল রক্তে করেছ কি স্নান ! তবুও অম্লান ঐ প্রেমিক হৃদয় করেছে যে জয় , জলে স্থলে অন্তরীক্ষে শুধু দেখে আলো , যে আলোর পথ বেয়ে ভেসে আসে প্রেম তোমার জীবনে ফিরে ফিরে, নতুন আলোয় দেখ ভাসছে, সে আসছে ।। . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
যেতে চাইনা কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায় এখনি চাইনা যেতে ; আরও কিছুক্ষণ, থাকি মনে হয় তোমাদের মাঝে ; মনে হয় ফাঁক রয়ে গেল । হলনাতো বলা সব যা বলতে চাই । কত স্মৃতি, কত রূঢ়ভাষ- ফেরাতে যে হবে মধুভাষে ।। এত দীঘ পথ পাড় হয়ে এসে - মনে হয় কিছুই হলনা দেখা , এক সাথে আরো কিছু পথ , চলা যেত । বলা যেত আরো কিছু কথা ।। সময় হয়েছে বুঝি শেষ ! তোমার চোখের কোল ভিজে আছে জলে ; কি করে যে যাই চলে ফেলে রেখে সব ; তবু এ বাস্তব - আজ, আলো নিভে যাবে । কাল তুমি সঙ্গীহারা একা অসহায় । কি করে যে যাই ! এত কথা বলবার শক্তি নিয়ে গেছে মৃত্যুর দুত, তবুও অদ্ভুত কোনো অলৌকিক হাত দেখো ঠিক নেবে পথ করে, আমার না-বলা কথা , বুক-চাপা আকুলতা, পৌঁছে যাবে ভোরে তোমার অন্তরে।। . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
আমার আমি কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায় সারাদিন এই গোলামী! হাঁপিয়ে মরে , নিজের ভিতর গুমরে ফেরে আমার আমি । রাত হলে তাই, যা আছে তার মনের মতন ভাললাগার স্বপ্ন যত, তুলির টানে জাগায় তারে। আমার আমি । সঙ্গী-সাথী, কোথায় এখন ! তারা সব নিদ্রামগন সুখের রাতে । তোমাদের পায়না বলে ভেবনা কো দূঃখী ভীষণ আমার আমি । না পাওয়ার সুখ সে জানে মনের টানে আসবে ঠিক ই বন্ধু যত মনের মত ফিরে ফিরে রোজ দুপুরে । দেখবে তারা তুলির এ টান তখন হাজার কাজের ভিরে তরঙ্গ সে ছুঁয়ে যাবে জাগিয়ে যাবে মধুরে সুরে হৃদয়বীনার একতারা টা ভাসবে সুখে আমার আমি॥ . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
আমার বিশ্বাস কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায় একটা দুটো কথা, কিছুটা দীর্ঘশ্বাস তোমার বুকেও ঝড় আমার বিশ্বাস । তবুও লুকিয়ে রাখা, তবুও থাকা দূরে ঘাসের বুকে জ্বলে শিশির রদ্দুরে । জানিনা কেন মন, হয়েছে চঞ্চল তোমার চোখ আজ করেছে বিহ্বল । যদিও যাবে চলে, নেবেনা বুকে টেনে মন ভরেছে তবু, জীবন জয়ের গানে । এখনও আছ কাছে, আমার নিশ্বাসে গভীরে আছ ডুবে। আমার বিশ্বাসে । একটা দুটো কথা, সঘন নিশ্বাস পেয়েছ সাড়া প্রাণে, আমার বিশ্বাস ।। . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
রূপকথা কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায় ছোটোবেলায় রূপকথা বড় ভালোবাসতাম, বলতাম খালি, বল, বল আর বল ।। কেমন করে সে দুঃখী মেয়েটা পার হয়ে রাতটাকে- হঠাত সেদিন রূপসী রানীটা হল ! রাতের আকাশ ঢেকে দিল তার লজ্জা , তারারা ডেকেছে- ঝলমলিয়ে জ্বলো ; কেমন করে সে দুষ্টু রাজা কে ছেড়ে, একদিন একা পরীর দেশেতে গেল ! আজকে জেনেছি রূপকথা নয় সত্যি আজ ও ঘরে ঘরে দুঃখী মেয়েরা কাঁদে রাতের আকাশ ঢাকেনা তাদের লজ্জা; দুঃষ্টু রাজারা আস্টে-পৃষ্টে বাঁধে । দূর থেকে তাকে পরীর দেশটা ডাকে, হাতছানি দেয়, নিতে চায় তাকে কোলে ওখানে যাবেনা, ওটা ঠিক নয়, পাপ হয় গেলে, রাজার লোকেরা বলে . . .। . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
জীবন কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায় জীবন! তুমি নও দুঃখজাত তুমি নও বহমান চোরাস্রোত মাটির গভীরে ।। তোমাকে খুঁজেছি আমি সূর্য্যের আলোতে সেই জীবনের ভোরে। প্রবল প্রেমের শিখা জ্বেলে রেখে প্রাণে দুরন্ত যৌবনে , লিখেছি তোমার কথা গেয়েছি যে গান জীবন সায়াহ্নে - চাঁদের কিরনে আর প্রাণের ভিতরে ।। দুঃখ্যের তীব্রতা আর ক্ষতের যন্ত্রনা যত, বেদনার লাল রক্তে চুঁয়ে চুঁয়ে পরে । সযত্নে মুছি সে রক্ত ; জানি আছো তাই রক্ত ধমনী তে । মুছে নিয়ে যায় যদি কালো হাত তার, শত দুঃখ, শত প্রেম পারবেনা ছুঁতে । জীবন ! এখন তুমি শুধু যে আমার ।। . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
কাছে-দূরে কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায় যেদিন তুমি অনেক দূরে, কোথায় যেন হারিয়ে গেলে, ভেবেছিলাম আছো কোনো তারার দেশে, উজ্জ্বল এক তারা হয়ে - মন বলতো, আমি ও আছি তারার আলোয় ঝল-মলিয়ে, সেই আকাশের একটি কোনায় । বেদনার একতারাতে- একটু খুশীর ছোঁয়া লেগে, দুতারাটা বাজতো যেন গুনগুনিয়ে- মনে মনে । যেদিন তুমি এলে ফিরে, তোমায় ঘিরে স্বপ্ন যত, হঠাত ভেঙ্গে খান খান, আর মন আনচান, অবুঝ ব্যাথায়- সুর ভুলেছে তার দুতারা- বাজতে চায়না আগের মতন, জাগতে চায়না স্পর্শে তোমার - হৃদয় জুরে - অঙ্গে অঙ্গে, দুঃখ-সুখের দোলায় আছে যে আনন্দ যায় যে ভেসে স্পর্শে এসে।। . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |