কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
*
সোনালী
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

যখন সূর্য্য ডোবার সময় হয়েছিল, সোনালী রদ্দুর বলেছিল-
এখনি যেওনা ছেড়ে, বড় ভালোবাসি-
আমার সকল দিয়ে ঘিরে রাখতে এ আকাশ ।
কিন্তু সে তো কবে ই শেষ হয়ে গেছে,
এখন গোলাপীর আলিঙ্গনে মুগ্ধ আকাশ
ফিরে ও দেখবেনা তোমাকে সোনালী;
হেসে বলেছিল সূর্য্য,
আকাশ তো আসবে ফিরে,
রাত্রির গভীরে- নীলিমাকে দিতে সান্ত্বনা,
তোমার সকাল তুমি রাখ যত্ন করে
ভোরের আকাশ ঘিরে তোমার আঁচল থাক
থাক চীর কাল ,
অমলীন, নীলের থেকেও নীল
ও ই পূর্বাকাশে
সোনালী রোদ্দুর হাসে ।।

. ****************  
.                                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
আমরা কবির কাছে কৃতজ্ঞ কারণ এই সব কবিতাই কবি নিজে আমাদের টাইপ করে পাঠিয়েছেন।
*
ছবি কথা বলে
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

এ অরন্য, ও ই মেঘ, এ ই যে গাছের সারি,
ঐখানে এক পাতায় ঢাকা ছোট্টো কুঁড়ে বাড়ি,
চলনা যাই মেঘলা দিনে
বেড়িয়ে পড়ি পথে,
পোষাক-আসাক, তেমন কোনো
নাইবা নিলে সাথে
শুধু ই কেবল মেঘের চাদর
জড়িয়ে নিয়ে গায়ে,
অনেক দূরে ও ই যে নীল পাহাড় দেখা যায়
তার ছায়াতে নিজের ছায়া মিশিয়ে দেব আজ
চল না যাই বেড়িয়ে পরি - থাক পরে সব কাজ ।।

. ****************  
.                                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
বিরহ
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

কতো দিন যেন দেখিনি
সবুজ আর নীলের মাখামাখি
ঐ অনেক দূরে-
যেখানে আকাশ হয়েছে শুরু,
কতোদিন শুনিনি ডাক-
নিরাসক্ত নয় যেখানে
মেঘের দামামা আর
ঢেউএর গুরু গুরু।।
ভেজা মাটির গন্ধ, বেল, জুই, চাঁপা
কতোদিন বাসেনি ভালো কেউ,
অসীম শক্তি নিয়ে
আছড়ে পড়েনি ঢেউ
তীরের উপর ।
শুধু কষ্ট বুক চাপা-
মিথ্যা অভিনয়।
কতদিন যেন দিখিনি তোমায়
মনে হয় ।।

. ****************  
.                                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
রাধা উবাচ
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

জল ছিলনা চোখে আমার-
পূর্ণ হয়নি আশা ?
তাই কি এত কঠিন আঘাত
চোখের জলে ভাসা ?
বুঝতে যদি কোন গভীরে
ডুব দিয়েছে মন ;
দেখতে পেতে এই এখানেই
রাধার বৃন্দাবন ।
চোখের জলের ভাষায় যদি
হয় এ প্রেমের জয়,
চাইনা অমন তুচ্ছ কিছু
এমন পরিণয় ।
তুমি আছ দাঁড়িয়ে যেথায়,
জগত সেখানে নেই,
চলেও যদি যাও হে প্রিয়
থাকবে এ প্রাণেই।
চোখের জলের পাওনি দেখা
পূর্ণ হয়নি আশা !
হৃদয় দিয়ে ঢেকেছি যে
তোমার ভালবাসা ।।

. ****************  
.                                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
শূন্য হৃদয়
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

শূন্যতা
এত অপূর্ণতা কেন
জীবন জুরে থাকে?
খুঁজব কোথায়
কেমন করে পাব তাকে,
আকাশ ভরা সূর্য তারার
ফাঁকে ফাঁকে
যে পূর্ণতার আভাস মেলে
সব ফেলে আজ
তাকেই শুধু খুঁজি।
এ কেমন খেলা
মন আমার
তুমি খেলছে বল দেখি।
শূন্য কে আজ পূর্ণ
বলে হচ্ছে মনে।
বনে বনে
পাতায় পাতায়
ফুলে ফলে
জলে স্থলে
কে যেন ডাক দিচ্ছে
আকুল স্বরে
শূন্য হৃদয়
কার প্রেমে আজ
ভরল এমন করে !

. ****************  
.                                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
সেদিন সবুজ উপত্যকায় দাড়িয়ে ছিলাম একা
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

সেদিন সবুজ উপত্যকায় দাড়িয়ে ছিলাম একা,
চারি পাশে কাটাগাছের মেলা
তখন ছিল পড়ন্ত বেলা ।
তুমি ছিলেনা কাছে কোনোখানে-
যেমন থাক হয়ত ছিলে নিজের মনে
ব্যস্ত কাজে টেবিল-চেয়ার জুড়ে।
আমি ছিলাম আমার স্বপ্নপুরে ।
কাছে কোথাও আর ছিলনা প্রাণী
মন বলল্ আমি জানি জানি।
একা হবার আনন্দটা কিযে
একা হয়েই বুঝতে হবে নিজে।
সেদিন সবুজ উপত্যকায়
পিছন ফিরে দেখা
চলে এলাম এতটা পথ
কেমন একা একা॥

.     ****************  
.                                                                            
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
আকাশ পরী হাত বাড়িয়ে ডাকছে তাকে
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

আকাশ পরী হাত বাড়িয়ে ডাকছে তাকে
ভাবছ নাকি হাড়িয়ে যাবে!
সে সেয়ানা ।
পরীর ডানায় রামধনু রঙ
চুরি করে ভরায় কাগজ,
সে যাবেনা ।
সে যাবেনা ঐ আকাশে হাড়িয়ে কভু
তার আকাশ তো চার দেয়ালে
বন্ধ খাতা।
উদাস চোখে আকাশ দ্যাখে- মন যে তবু
পিছন ফেরা-যেথায় অভাব
আশন পাতা ।

সেদিন রাতে ঝড় ওঠেনি
শান্ত গাছের পাতা,
মরণ আমায় শোনায়নি ভাই
ভালবাসার কথা,
তার দুখানি আঁখির পাতে
কী ছিল যে লেখা-
আঁধার রাতে তাও
হলনা দেখা ।।

স্পর্শে ছিল শীতল আভাস,
কঠিন বাহুপাশ ।
আমার সর্বনাশ,
লিখল আপন হাতে ।
স্মরনীয় সেই সেদিনের
নিঝুম নিশীথ রাতে ।

অচেনা তার ভাষা
ছিল অদেখা তার রূপ,
তারারা সব আকাশ ভরে
ছিল রে নিশ্চুপ ।
ভয় ছিল না প্রাণে,
সেদিন সুর ছিল না গানে ,
মরণ যেদিন ফেলল ছায়া
আমার অবুঝ মনে ।

হায়রে একি কঠিন বাঁধন
যায়না এরে খোলা
বুঝিনি তার ভাষা
তবু যায়না কেন ভোলা !
আর একটি বার এস মরণ
রাখ চরন দুটি
একটি কুশুম কলি যেথায়
করছে ফুটি ফুটি ।
আজ এ প্রাণে সুরের আগুন
রক্তে প্রদীপ জ্বালা ।
বাহুলতায় সুবাসিত
শিউলি ফুলের মালা।
এই আগুনে মরণ তুমি
চাও কি ধরা দিতে!
মৃত্যু তোমার মরণকে আজ
চাই ফিরিয়ে দিতে॥

.     ****************  
.                                                                            
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
আমাকে বলে ধৈর্য ধর
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

আমাকে বলে ধৈর্য ধর,
মেওয়াটা ফলে সবুরে।
এখন কিছু অন্য কর।
প্রবধ দেওয়া এমন তর-
ভাল কি লাগে !
তবুরে- আর করি ই কি বা,
হবার যা তা হবেই যদি,
ভাবনাটাকে বলগা দিয়ে
ছোটাই- নদী, আকাশ-পাতাল
পাহাড় পেড়োই- দিনের বেলা
কাজের ফাঁকে পাখির ডাকে
রাতের বেলা ঘুমের ঘোরে
স্বপ্ন দেখি ঠিক দুপুরে-
তার হাতে হাত,
মিলিয়ে গেল স্বপ্ন যখন
তখন ভোরে- ঘুমিয়ে সবাই
আকাতরে-
আমি ছিলাম
আর ছিল সে
আমার পাশে।
নিশ্বাসে এক ভোর হল যেই
সবাই দেখি ডাকছে আমায়
সবাই দেখি ডাকছে আমায়
বলছে, খোলো খোলো
তোমার নতুন জীবন পথের ধুলো
মুঠোয় করে তোলো ।।

.     ****************  
.                                                                            
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
বসুন্ধরার গান
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

কত দিন পরে দ্যাখা হল আজ
বসলে এসে পাশে,
ফেলে রেখে তোমার যত কাজ ।

আসতে যেতে পথের মাঝে,
অনেক সময় অনেক কাজে,

হয়ত গেছি পাশ কাটিয়ে
ঠিক পড়েনা মনে ।
শুধু মনের গোপন কোনে
ব্যাথার মত উঠত বেজে বেজে,
হাড়িয়ে গেছে বন্ধু আমার
কোথায় পাব খুঁজে !

আজকে সকাল থেকে
কাজল কালো মেঘে
আকাশ গেছে ঢেকে
তুমি আজ এসেছ কাছে।


সব কাজ আজ থাকুক পরে
নীরবতা থাকুক ঘিরে।
আজ যে আমার ভরেছে মন প্রাণ।
বন্ধু তোমায় শোনাব আজ
বসুন্ধরার গান ।
আকাশ ভরা কালো মেঘের ভিড়
গুরু গুরু মেঘ ডাকে গম্ভীর,
বৃষ্টি ধারায় ভিজছে মাটি
রোদ-তাপে চৌচির ।
বন্ধু এবার বুক ভরে নাও ঘ্রাণ।
অনেক দিনের অদর্শনে অতৃপ্ত এ প্রাণ ।
বৃষ্টি ভেজা মাটির মত গাইছে সে আজ গান ।
বন্ধু এস শোনাই তোমায় বসুন্ধরার গান

.            ****************  
.                                                                            
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
বাতাসী
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

তুমিকি শুনতে পাচ্ছনা,
তোমরা পাচ্ছনাকি টের
বাতাসীর দীর্ঘশ্বাস;
তার উত্তপ্ত নিঃশ্বাস
শুধুই কি ওড়াবে ছাই নিভে যাওয়া চিতার আগুনে.

তোমরা শোনোনি কেউ
সমুদ্র গর্জন !
উথাল পাথাল ঢেঊ
বুকের ভিতর
কোনোদিন মরেনি কি বৃথা আক্রশে কাল গুনে গুনে !

সন্জীবনীসুধা মাতাল লম্পটের হাতে
করেছ কি পাণ !
আকন্ঠ ডুবিয়ে রেখে পাঁকে
পেরেছ কি বাঁচাতে আত্মাকে !

আমিতো শুনেছি তবু জীবনের গান
তার সরল বিশ্বাসে, তার নিষ্পাপ নিঃশ্বাসে.
তিলে তিলে শেষ হয়ে যাওয়া প্রাণ
করেছিল দান।

তোমরা কি জান তাকে ?

.            ****************  
.                                                                            
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর