কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
|
খুকুর খেলা
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
বাবা তোমায় ডাকিনি তো কোনও দিন ও
তাই করেছ রাগ!
আজকে শুধু তোমার সাথেই করব খেলা ভাগ,
মা তো কবে ই গেছে ছেড়ে নিরুদ্দেশে
ভাই বোন নেই কোনো
বাবা তোমায় থাকতে আমি দেবনা ঘরকুনো।
লঙ্কা, তোতোন, টোটা, নয়ন
মায়ের সাথে আজকে থাকুক বসে,
আজকে শুধু তোমায়-আমায় জমবে খেলা কষে।
তবে চল বেড়িয়ে পড়ি নীল পাহাড়ের দেশে,
সবুজ সাগর সফেন ঢেউ
যার পায়েতে মেশে।
ঐখানেতে পাহাড় ঘিরে গভীর জঙ্গল-
আঁধার রাতে হায়না যাবে হেসে।
তোমার বুকে থাকব ভয়ে ঘেঁসে।
দূরের থেকে দেখব কেমন চাঁদনি রাতে
ইতি উতি চেয়েহরিণ ছানা জল খেয়ে যায়
ঝরনা ধারায় গিয়ে।
বাঘ ডাকবে হুম হুম হুম- সিংহ কেশর ফোলা
আমরা দুজন থাকব আপন ভোলা।
হাতির দল শুঁড় দুলিয়ে চলবে হেলে দুলে
সঙ্গে ওদের ছেলে পুলে-
অবু আমি পাব না তো ভয়
বল দেখি বাবা সেটা কেমন করে হয়।
তাও জাননা – হেরে গেছো খেলায় আমার সাথে,
তুমি আমি যাব সেথাত আমার কল্প রথে।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
আমরা কবির কাছে কৃতজ্ঞ কারণ এই সব কবিতাই কবি নিজে আমাদের টাইপ করে পাঠিয়েছেন।
টেকো
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
চুল ছেঁটেছ কেন?
এমনিতে ই তো টকো মাথা
ফুটবে কাঁটা জান ?
ও মা এ কি তা ও জাননা
কেউ বলেনি বুঝি,
না বলার কারন টা কি
অভয় দাও তো খুঁজি।
এমনিতেই তো তোমার অমন হাঁড়ির মতন মুখ,
তার উপরে চোখ দুটো তো হোঁদল কুত কুত।
এই খুকিরা হাসিস কেন
বুঝিস না ওর ব্যথা,
ছুটির পরে বলব অখন সেই ন্যাড়াটার কথা,
কোন ন্যাড়াটা- এ আবার কি
দিলাম সেদিন এঁকে,
সেদিন তো খুব হেসে ছিলে
তার ছবিটা দেখে।।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
দাবার চাল
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
গনেশ বড় দুষ্টু ছেলে লেখা পড়া করেই না,
শুধুই কেবল খেলা ধুলা পড়ার বই তো ধরেই না।
মা-বাবা তে যুক্তি করে বলল ডেকে গনেশ কে,
চলরে গনেশ ঘুরে আসি মামা বাড়ির দেশ থেকে
সেই খানেতে থাকবিরে তুই থাকবে দাদু দিদিমা,
লেখা পড়া করার কথা আর যেন তুই ভাবিস না।
পড়াশুনা তোর হবেনা বুঝে গেছি আমরা বেশ
তার থেকে তুই পাঠশালাতে পড়না গিয়ে মামার দেশ।
কথা শুনে গনেশের তো চক্ষু চড়াক মাথায় হাত
বাবা মা এ বলছি কি যে ভাবাই যায় না আজব বাত।
মামার বাড়ি ভাড়ি মজা তেমন বাড়ি নয় সেটা
বড় মামার পড়লে হাতে বুঝবে তখন কান্ডটা,
ফুটবলনয়, কৃকেট তো নয়, টেনিস ও নয়
খেলেন দাবা,
চাও কি না চাও খেলতে হবে ধরবে মামা
বাগিয়ে থাবা।
দাবার ভয়ে মুখ শুকিয়ে করল গনেশ দিন কে রাত।
পরীক্ষাটার ফল বেরতে ভাবলে মনে গনেশ চাঁদ
একটু খানি করলে কষ্ট এমন ভাল ফল যদি হয়,
এবার থেকে কিছু সময় পড়বে গনেশ এ নিশ্চয় ।
সবাই বলে কেমন করে পালটে গেল গনেশটা,
বাবা হাসেন মনে মনে ভেবে দাবার এ ছালটা।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
খুকুর ভয়
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
মাগো আমি শিখব না আর পড়া
গুরু মশাই যতই ডাকুক
দেবনা কো সাড়া।
কেমন গুরু এসেছ মা চোখ গুল গোল গোল
ওদিক পানে তাকালেই মা সব তাতে হয় ভুল।
পরশু যেদিন বিড়ালছানা কোথায় গেল চলে,
চেয়েছিলুম চশমাখানা খু*জব তাকে বলে,
কিছুতেই দেয়নি মা চশমা আমার হাতে,
তুমিই বল, এমন যদি করে তবে দোষ হয় না তাতে।
অনেক অনেক নালিশ আমার আছে তোমার কাছে,
গুছিয়ে সব রাখছি লিখে ভুল হয়ে যায় পাছে।
দু-এক খানা বানান আমার হয়ে ছিল ভুল,
তাতি দেখ হাতের উপর মেরেছে ফুটরুল,
হলই বা তা আস্তে মারা
চোট লাগেনি অলে, দুঃখ আমার হবেনাকো তাই কি বলা চলে!
পাশের বাড়ির ভুতো যখন ছিল পাশে বসে,
তার সামনেই গুরু আমার কান মলেছে কষে।
এমন কিছুই দোষ মাগো করিনিকো মাই;
কেমন করে জানব বল চশমা খানা দামি,
চশমা খানা নিয়ে গুরুর নাকের থেকে কেড়ে
ছুঁড়ে ছিলাম মেঝের উপর খুব আস্তে করে,
চশমাখানা কাঁচের ছিল তাইতে গেল ভেঙ্গে,
তাতেই মাগো গুরু মশাই উঠল রেগে রেঙ্গে,
আমার কি মা দোষ হয়েছে বল না সত্যি করে,
পাঠাও যদি পড়তে আমি ভয়েই যাব মরে।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
সমুদ্র পারে
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
সমুদ্র পারে
রাতের হাজার তারা জ্বলা অন্ধকারে
যেদিন বসেছিলে কবি
শিথিল ভঙ্গিমায়
অন্তরের অন্তস্থলে যার
করেছিলে ধ্যান
তোমার কালো চোখের তারায়
তারায়
আজো
আছে কি লেখা স্বমহিমায়!
দুরন্ত ধাবমান শুভ্র ফেনা রাশি রাশি
ঢেউএর মাথায়
প্রচন্ড আবেগে আছড়ে পড়েছিল
তোমার পায়ের কাছে
অদম্য উচ্ছ্বাসে
তোমার উষ্ণ কোমল বুকে সঘন
নিশ্বাসে আকাশ বাতাস চিরে
অনন্তের সীমায় সীমায়
যার নাম উঠেছিল বেজে
ঝড়ের মতন
আজো সে ই নাম বাজে তো তেমনি আবেগে !
রাতের সমুদ্র তট আজো ডেকে যায়
নামহীন উদ্দামতায়
এক হয়ে যেতে
বারে বার বারে বার বারে বার
যেন তুমি, সে উদ্দাম প্রেম
সে আকর্ষণ সে ভালবাসায়-
আজো ভেসে যায় কবি
রাতের সমুদ্র তটে
গম্ভীর স্বরে সাগর ডাকে
আয় আয় আয়
সহস্র বাহু মেলে আছি আজো
তোর অপেক্ষায় !
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর