কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
|
কবিতা
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
কবিতা!
তুমি কি আমার সঙ্গী হবে ?
আমার বিষণ্ণতা ;
নির্জন দুপুরের মত-
খাঁ খাঁ মাঠের মত-
শ্মশানের মতন শূণ্যতা
যদি তোমায় দিই
তুমি কি রাজি হবে !
কবিতা !
তোমার সরলতা মাখা
দুটি চোখের তারায়
হাড়িয়ে যেতে দেবে আমায়?
যদি বলি, শিশুর মতন
এস আমার বুকের মাঝে
তুমি কি বলবে আমায়
-ছাড় এ পাগলামি !
কবিতা !
মেঘের দেশে, সাগর পাড়ে
মাঠে -ঘাটে, মনটা যখন
ছোটাই তখন আসবে কি গো
চুপিসারে।
নারে নারে নারে বলে
পালিয়ে কোথাও যাবে নাতো !
বলনা আজ নতুন কোনও ছন্দভরে
তোমার ওপর ভরসা কোরতে পারি আমি ।
কবিতা!
শূণ্যতাটা উড়িয়ে দেব
আকাশপথে
কোনো মতেও যাবনা আর ফিরে ঘরে
এখন থেকে তুমি-আমি যদি হই
ছন্নছাড়া, বাঁধনহারা
তুমি কি রাজি হবে!
কবিতা !
বলনা আজ নতুন করে
তুমি আমার সঙ্গী হবে ।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
আমরা কবির কাছে কৃতজ্ঞ কারণ এই সব কবিতাই কবি নিজে আমাদের টাইপ করে পাঠিয়েছেন।
কে তুমি
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
রিণি রিণি সুরে
ঝিনি ঝিনি তালে
চিনি চিনি মনে হয়;
কে তুমি এসেছ
আজ এ দুঃসময় ?
এখন ও আমার হয়নি তো কাজ
এখন ও পায়নি ছুটি ।
সকল বাঁধন এখন ও যায়নি টুটি ;
চঞ্চল ঐ তোমার মনেতে
পেয়েছিলে বুঝি সাড়া -
আমার নয়ন এখন ও রয়েছে
তেমনি তন্দ্রা হারা !
তাই বুঝি এসে
দোলা দিয়ে গেলে প্রাণে !
তাইকি বন্ধু হৃদয় ভাসাও গানে !
হৃদয়ের ভার কেড়ে নিয়ে যাও-
সুরটুকু করে দান
দুর থেকে থাক চেয়ে ,
শিহরন লাগে হৃদয়ের মাঝে
এই পরিচয় পেয়ে ।।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
বালম
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
বিকেলের রোদ মিঠে লাগে ভারি;
এস হে বন্ধু, এস তাড়াতাড়ি;
দেব বহুদূর পাড়ি ।
যান-বাহনের দেখা না যদি মেলে,
হাতখানি দিও এই হাতে ফেলে,
কল্পনা-রথ এখন ও করেনি আড়ি।
রোজ বিকেলের ফিরে ফিরে যাওয়া;
এক একটি দিন সাথে নিয়ে যাওয়া;
পাথর জমায় বুকে ।
হারিয়ে যাবার বাসনা কি শুধু
মিঠে বুলি বলা মুখে !
বন্ধু তোমায় কি নামে যে ডাকি !
স্বপ্ন তোমার কোন চোখে রাখি !
সাথী মোর ওগো কলম-
না জানুক কেউ, না চিনুক কেউ ;
ডাক দিলে ঠিক ঝরনা ঝরাও
কঠিন আমার বালম ।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
বিদায় বেলা
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
কিছু বোলোনা তুমি
কিছু বোলোনা মন;
যদি ভুলতে চাও - তবে
ভুলো এ ক্ষণ ।
যা আসেনা ফিরে
শুধু কাঁদান সুরে
ধাঁধায় মন ,
তাকে ভোলো এখন ।
শেষ করতে চাও যদি
ভাঙ্গ এ খেলা;
ঐ আকাশ পারে
এত রঙের মেলা.
এ যে বিদায় বেলা-শুধু বিদায় বেলা ।
যদি ভুলতে চাও
ভুলো গোধুলি বেলা.
যদি ফিরতে চাও
ফির শূণ্য ঘরে,
ডেকনা ফিরে বিদায় দিয়েছ যারে
যদি ভুলতে চাও ব্যথা দিয়েছ তাকে
ভুলো আমার এ মন।
যদি ভুলতে চাও
তবে ভুলো এ ক্ষণ ।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
হৃদয় প্রকৃতি
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
অভিমান
একটু একটু করে মেঘের মতন
জমছিল বুকের ভিতর কখন, পায়নি টের!
চোখে তারই ঘন ছায়া।
পাতা-গুল ভারি,
এলো-মেলো পরে তাড়াতাড়ি
চোখের উপর।
এখনও নামেনি বর্ষা
স্তব্ধ অন্তর,
ঝড়ের সঙ্কেতে যেন
চুপ করে আছে পাখি
ভুলে গেছে গান।
প্রাণ আনচান করে-
আঁখি যদি চায় তার পানে
বাতাসের বিপরীত টানে
দূরে চলে যায়।
হৃদয়ের চাপা গর্জন যেন
বলে হায় হায়
প্রকৃতির খেলা একি
অকরুণ যেন
বর্ষা না নামে যদি
মেঘ জমে কেন ?
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
একাকীত্ব
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
আবার নিঃসঙ্গ একা,
তবু নয় আগেকার মত।
লেখা, আকা ছিল যত সঙ্গী-সাথী
তারাও গিয়েছে ছেড়ে
মন একা একা ফেরে
উদাসী দুপুরে ।
রাতের আশ্রয় শুধু বালিশ-বিছানা
বিক্ষিপ্ত মন চায় বলিষ্ঠ ঠিকানা ।
মার মত উষ্ণ কোনও
কোমল হৃদয়, বন্ধুর মতন প্রেম
যার কাছে সমর্পণ
শুধু দেহ নয়।
পাপ দেওয়া-নাদেওয়ার
মাঝে
মরে মাথা ঠুকে
না-বলা অনেক কথা
ব্যথা হয়ে জমা হয় বুকে ।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
একা
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
সেদিন সবুজ উপত্যকায় দাড়িয়ে ছিলাম একা,
চারি পাশে কাঁটাগাছ মেলা
তখন ছিল পড়ন্ত বেলা ।
তুমি ছিলেননা কাছে কোনোখানে-
যেমন থাক হয়ত ছিলে নিজের মনে
ব্যস্ত কাজে টেবিল-চেয়ার জুড়ে।
আমি ছিলাম আমার স্বপ্নপুরে ।
কাছে কোথাও আর ছিলনা প্রাণী
মন বলল্ আমি জানি জানি।
একা হবার আনন্দটা কিযে
একা হয়েই বুঝতে হবে নিজে।
সেদিন সবুজ উপত্যকায়
পিছন ফিরে দেখা
চলে এলাম এতটা পথ
কেমন একা একা ।।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কেনো ফিরে আসি
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
কেনো তোমায় সেদিন ছেড়ে এলাম চলে
জানতে চাওনি ! আমি ও বলিনি কিছু
বুকের ভিতর টুকরো টুকরো
ভাঙ্গা স্বপ্নের রাশি
ভালোবাসি ভালোবাসি ;
তখন ফাগুন আকাশে বাতাসে
আগুন ঝরানো ফুলে ফলে ঘাসে
চুপি চুপি বলে গেছি,
আমার গোপন প্রেমের ছবিটা
লুকিয়ে রেখেছি মনে,
প্রকৃতির অঙ্গনে ,
আজ সে ই ছবি ফিরে পাব বলে
তোর কাছে ফিরে এসেছি ;
বন্ধন হীন ভালবাসা
কত মধুর জানোনা তাই ,
বলিনি তোমায় কেন বারে বারে
আমি ফিরে চলে যাই
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
তুমি আর আমি শুধু
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
তুমি আর আমি শুধু
হাসি আর গানে ভরা এ ই পৃথিবীতে
বেখেয়ালে ভেসে চলে যাই
দুজনাতে বিছানাতে বকুল ছড়াই
আমাদের স্বপ্ন-বাসর থেকে দুরে
মাটিতে পেতেছে শয্যা যারা
দু:স্বপ্নের রাতে -
এক মুঠো ভাতের স্বপ্ন চায় হাতে ;
আমি আর তুমি তবু গান গেয়ে যাই
দুজনাতে দুজনা হারাই ;
আমরা জানিনা কোনও দিনও
ক্ষুধা কাকে বলে,
আমরা অঞ্জলি ভোরে ভিক্ষা করিনি ফ্যান
ভাতের বদলে
শীর্ণ শরীর আর ড্যাব ড্যাবে চোখে
চেয়ে আছে যারা,
তাদের জগতে নেই গান
শুধু কান্না ছাড়া
তুমি আর আমি তবু গাইব কি গান
আজো মধু রাতে -
কেবলই , আমার সন্তান যেন
থাকে দুধে ভাতে
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
অকারণ
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়
সারি সারি দেবদারু গাছের মাঝে রাস্তা বেয়ে চলে
স্মৃতির নৌকো বেয়ে ভেসে আসে সে
তার খোলা চুল মেঘের মতন ছিল ছেয়ে
সে যে এক সদ্য ফোটা মেয়ে
দেবদারু হাওয়ায় দোলে .....তখন বৈশাখ
মনের আয়নায় ভাসে হরিণ চোখ
সে চোখের তারায় স্বপ্ন টল টল
যেন পদ্ম পাতায় জল
দেবদারু তোমরা সাক্ষী ছিলে সে এক শীতের রাতে
হিম ঝরা বেদনাতে আকুল কাঁদে সে মেয়ে
কার পথ চেয়ে সে ই জানে
তোমরা বোঝনি তার মানে
দেবদারু পাতা বিছিয়ে ছিলে তার পথে
সেদিন রাত্ভাঙ্গা ভোরে -
পাহাড়ি রাস্তায় যেন ঝর্নার মতো
ছুট্টে গেলো ফিরে ঘরে সে ই সদ্য ফোটা মেয়ে
সেদিন রাত ভোরে
আজ সন্ধ্যায় দেবদারু গন্ধে বিভোর এই মন
ভাবে সুখী কে আমার মতন
সে ই সদ্য ফোটা হৃদয়ের প্রেম
এখনো ছড়ায় সুবাস
সেদিনের মতো অকারণ
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর