কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
*
স্বপ্ন
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

এমন কেন হয়, যখনই ভাল স্বপ্ন দেখি ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।
কালকে দেখি নতুন জুতো নতুন জামা পরে
যাচ্ছি যেন ইশকুলেতে ইস্কুলবাস চড়ে ।
নতুন নতুন বই খাতা সব করছিল চক্ চক্
এমন সময় হঠাৎ কোথায় শব্দ হল ঠক্ ।
চমকে উঠে জাপটে ধরি আমার টিনের বাটি ,
সারাদিনের ভিক্ষার ধন, আমার জিয়নকাঠি ।
ঘুমিয়ে ছিলাম স্বপ্ন-কাজল মাখিয়ে নিয়ে চোখে -
রশিদ-চাচা হাত বাড়াল বাগিয়ে নিতে তাকে ।
ফুটপাথেতে জাগি মোরা ফুটপাথে ঘুমাই,
তবুও ঘুমের ঘোরে আমার স্বপ্ন দেখা চাই ।

.              ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
মা বাবা
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

মিঠু তখন অনেক ছোটো বয়স সবে নয়।
মনের ইচ্ছে ছড়া লেখে –
নিয়ে কাগজ কালি লিখল তিনটে লাইন –
তার মনে যে ছিল না প্রত্যয়।

খাতা হাতে ছোট্ট মেয়ে বাবার কাছে গিয়ে ,
বাড়িয়ে ধরে লেখা।
লেখা দেখে হেসেই খুন, আমার এখন সময় নেই কো
তোর মায়েরে  দেখা।

মিঠুর সে লজ্জা খানা –
বাবার মনে দাগ কাটেনা কোনও।

মা এসে লেখা পড়ে মিঠুর শুকন মুখটি ধরে,
বলেন চুমা দিয়ে , মেয়ে আমার
বড়ই গুণী, সব বিষয়েই প্রথম হবে শোনো।

মিঠু ভাবে আমার মা আর বাবা
ঠিক যেন রবির রাজা-রানী ।
রবি ঠাকুর পড়ব আমি,
ছড়া, গান, আর যা জানি -
তাঁর লেখাতেই ভরা –
মনের কথা, এমন করে কেউ বোঝেনা
রবি ঠাকুর ছাড়া।

.              ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
দৌড়
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

ছেলেটা দৌড়ায়, আরও আরও আরও জোরে,
কোথাও পৌঁছাতে হবে তাকে।
কাক ভোরে উঠে রোজ চলেছে সে ছুটে।
নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা, নতুন আরও কত কিছু ;
ধীরে ধীরে দিন ঢলে, সূর্য যায় অস্তাচলে ,
আকাশটা ডেকে বলে –আরও একটা দিন শেষে,
রাত এসে গেল। পেয়েছ কি যাকে চেয়েছিলে ?
না আকাশ আমার চাওয়ার শেষে –
হাতছানি দেয় এসে কেউ দূর থেকে।
থামতে পারিনা তাই,
আরও আরও ছুটে যাই ,
যদি দেখা মেলে।
রাত আসে চাঁদ হাসে –
তারার চাদর দেয় মেলেয।
রাত যায় দিন আসে,
সৃষ্টির আদি-অন্তে,
সময়ের সীমা-হীনতায়
মানুষ দৌড়ায়॥

.     ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
ফাজু
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

ফাজু সোনা আয়না বাপু
বস না আমার কাছে
দুদিন পরে ফিরে যাব
সেখান এ ঘর আছে
কিন্তু নেই এমন হৃদয় ভালবাসায় ভরা
নরম লোমে মিষ্টি মুখে
দুষ্টুমিতে গড়া চোখে
ডাকবেনা কেউ আর
আয়না ফাজু আয়না আর একবার
মানুষ জাতির ভালোবাসা
কেমন করে বুঝিস ?
কোনও কথা না বলে ও তুই
ভালবাসা খুঁজিস
বলটা নিয়ে আয়ত দেখি
খেলব তোর সাথে
বয়স আমার অনেক হলো
ছুটতে পারিনা যে!
দুদিন বাদে এ ফিরে যাব
আয় না আর একবার

.       ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
মায়াবী ক্ষণ
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

মন ছুটেছে ঝর ঝর ঝর পাহাড়ি ঝরনা,
ছলাত ছলাত ঢেউ উঠেছে জলে,
চারি পাশে পাহাড় ঢাকে রূপালি ওড়না,
মাঝখানেতে উপত্যকা সবুজ সমতলে।

উপত্যকার সবুজ ঘিরে ফুলের আলপনা,
ফুলে ফুলে উড়ছে প্রজাপতি,
মনের ভিতর গান ধরেছে রঙ্গিন কল্পনা,
মনের পায়ে বনহরিনের গতি।

আকাশ ঘিরে আবির আজ কে দিয়েছে ঢেলে,
মিলে মিশে গোলাপি আর সোনা,
পেড়িয়ে পাহাড় সূর্য ঐ যায় যে অস্তাচলে ,
এমন খুশী মন বলে ভুলবনা॥

হীরের কুচি ঝক ঝক ঝক জ্বলে আকাশ জুরে,
সাতনলা হার পরিয়ে দিল মন,
এমন রাত এই জীবনে আর কি আসে ফিরে!
আর কি আমি দেখতে পাব এই মায়াবী ক্ষণ।

.               ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
আমাদের আপু স্যাম
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

আমাদের আপু-স্যাম, সবাই জেনেছে নাম
প্রাইজ পেয়েছে ডগ শো এ
আপু বাবা, স্যাম ছেলে, দুই এ মিলে জিতে নিলে
প্রথম দ্বিতীয় ডগ হোয়ে।
ধপ ধপে সাদা লোম, কি নরম নরম
সারা দিন চটকাই বসে।
বাটি বাটি দুধ খায়, রাত্রে মাংস চায় ,
মাকে দেখে লেজ নাড়ে কষে।

আপুর সাহস ভারি, বিড়ালের সাথে আড়ি
ছুটে যায় পুষি যদি আসে ;
যত বলি থাম থাম, আ রে ছি ছি রাম রাম,
মেনিটাকে মারবি কি শেষে।
শোনে নাতো কথা কিছু ছোটে শুধু পিছু পিছু,
পুষিটাকে নিতে হয় কোলে।
অত যদি তেজ তোর- গায়ে যদি অত জোর-
মার দেখি হুলোটাকে ফেলে।
কানকাটা হুলো বেটা –সাদা কালো ডোরা কাটা
বাঘের মতন চোখ দুটো।
রোজ এসে দুধ খায়, মাছ নিয়ে চোলে যায়,
ঘড়িতে যখন বাজে দুটো।
আপু বলে ঘেউ ঘ্যাঁকো, ঠিক আছে এবার দেখো
হুলোটাকে করে দেব দূর।
এমন করব তাড়া করে দেব পাড়া ছাড়া,
দেখ আমি কত বাহাদুর।
সেদিন দুপুর বেলা –চলছিল লুডো খেলা
স্যাম এসে দাঁড়াল সেখানে,
স্যামের সাহস নেই, বিপদ দেখলে তাই
ছুটে এসে জামা ধরে টানে।
স্যাম আগে চলে ছুটে, পিছে আমি আর গুটে,
কি জানি কি ঘটেছে ঘটনা।
চুপি চুপি বলি শোনো,
এ ঘটনা করোনা রটনা।
লোমগুলো করে খাড়া,
ফুলিয়ে গোঁফের তাড়া
ঠাস ঠাস চড় মারে হুলো।

আপু ডাকে ঘেউ ঘেউ,
শোনাচ্ছে মেউ মেউ,দোহাই আমায় নিয়ে চল।
আপুকে নিলাম কোলে, স্যাম সাথে সাথে চলে।
হুলো বেটা খেয়ে এক লাথ,
ডিগবাজী নিলো সাত হাত।
আপু বাহাদুর বীর,লজ্জায় নত শির,
খাটের তলায় স্থান নিলো।

.         ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
দাদামনি
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

কান্না আর না, আমার খুকু সোনামণি
পুতুল কিনে এনেছে দেখ, তোর সে দাদামনি ।
পুতুল আমার ছেলে যে মা ,বউ এনে দাও তবে,
রবিবারের দিনে তাদের বিয়ে দিতে হবে ;
বউ বাজারে বউ পাওয়া যায় ,
লালা চেলি আরে জোর
এনো দোকান থেকে ;
ধুম করে খুব বিয়ে দেব –
তাকিয়ে দেখবে লোকে ।
কিন্তু মাগো –
দাদামনি কোথায় গেল চলে ,
পুতুল কিনে দিল তবু
নিলো নাতো কোলে ।
দাদামনি না থাকলে যে হয়না কোনও মজা ।
পুতুল বিয়ে কে দেবে মা, কে সাজবে রাজা ।
কতই হবে খেলে-ধুল, কত না হই-চই ,
সন্ধে হল মাগো আমার দাদামনি কই !
দাদা তোমার গেছে চলে অনেক দূরের দেশে ,
তারা হয়ে জ্বলছে সে যে রাতের আকাশে ।
দাদামনি ছিল আমার সাতরাজার ধন ।
তুই যে আমার চোখের মনি , তারই ছোটো বোন ।
আয় মা আমার কোলে চোখে ঘুম এসেছে ঐ ।
রাত্রি হল মাগো আমার দাদামনি কই ?

.         ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
বুড়ি-মা
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

মাগো নীচে ঐ বুড়ি-মা ছেঁড়া কাপড় গায়,
শুকনো মুখে একলা কেন বসেই আছে ঠায় ?
ঠিক যেন মা ঠাম্মা আমার নিয়েসনা ডেকে,
আমার ঘরে আমার কাছে থাকবে এখন থেকে।
ঠাম্মা আমায় বাসতো ভালো গল্প বলত কতো,
আজকে থেকে বুড়িমা ও থাকবে যে তার মতো।
আমরা দুজন খেলব লুডো দুই বন্ধু যেন,
তোমাকেও তো ভালবাসি , রাগ কর যে কেন!
বুড়িমাকে বলে দেব শুনবে তোমার কথা,
শুতে দেব বুড়িমাকে আমার জোরা কাঁথা।
অনাথ শিশু দত্তক তো নিচ্ছে কতো লোকে,
আমরা নেব দত্তক মা আমার বুড়িমাকে।

.               ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
*
স্বপন-বুড়ো
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

যেইনা আমি পড়তে বসি বই খাতা সব নিয়ে
স্বপন-বুড়ো হাতছানি দেয় বকের পালক দিয়ে।
হাতছানি দেয়, ফোকলা হাসে, হাতপা তুলে নাচে,
শব্দ শুধু করেনা সে মা শুনে নেয় পাছে।
মাকে ডেকে যতই বলি ঠিক দুপ্পুর বেলায়
হয়না আমার লেখাপড়া স্বপন-বুড়োর ঠেলায়।
মস্ত বড়ো চোখ পাকিয়ে শাসন করে মা,
বাবা হাঁকেন মারব এবার যা পড়তে যা।
পরীক্ষা তোর এপ্রিলে না কেবল ফিকির ফন্দী।
ঐ ঘরেতে সারা দুপুর রাখব তোকে বন্দী।
জানেনা তো এরা সবাই, স্বপন বুড়োর সাথে
ঘুরব আমি দেশ বিদেশে, ফিরবনা আর রাতে।
কেবল ভাবে মিথ্যা বলি, সন্দেহে মন ভরা।
এবার গেলে ফিরবনা আর, বুঝবে মজা এরা।

.                ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
বিড়ালছানা
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

গুরুমশাই রাগ করেছ কেন ? হয়নি পড়া বলে !
কাল যে আমার বিড়ালছানা কোথায় গেছে চলে।
তারই জন্য কান্নাকাটি, মাখামাখি কাদামাটি, খুঁজছি সারা পাড়া।
তুমি কেবল জান শুধু পড়া পড়া পড়া।
বিড়ালছানার জন্য আমার দিনটা মাটি হল।
তারই জন্য হয়নি করা তোমার অঙ্কগুলো।
দাওনা তোমার চশমাখানা দেখি চোখে দিয়ে,
ভয় পেয়ে ঠিক আসবে দেখো লেজটি গুটিয়ে।
তখন তুমি যত খুশি শিখিও আমায় পড়া-
বিড়ালছানা যতই ডাকুক দেবনাতো সাড়া।
নেবনাতো কোল ওক, দেবনা দুধ-ভাত
তোমার পাশে বসে পড়া করব রাতদিন।
কিন্তু যদি দেখি দুঃখ খুব হয়েছে ওর মনে
আর চোখেতে তাকিয়ে যদি দেখি ঘরের কোণে
গোঁফ ঝুলিয়ে আছে পুষি বসে।
আদর তখন করব খুব কষে।
তুমি যেন কোরোনাকো রাগ
ততক্ষণে হয় যাবে পড়া প্রথমভাগ।

.            ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
আমরা কবির কাছে কৃতজ্ঞ কারণ এই সব কবিতাই কবি নিজে আমাদের টাইপ করে পাঠিয়েছেন।