কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
*
কবি প্রণাম
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

সবার আমায় প্রশ্ন করে,
বলে ডেকে ডেকে,
তাল মিলিয়ে বলতে কথা শিখলে কোথা থেকে!
আধুনিক এই যুগের সাথে মিলিয়ে ফেল পা,
দেখবে সবাই দিচ্ছে তালি, পাচ্ছ বাহবা।
খোলা তোমার খাতা যেন শিশুবোধের পাতা,
অ, আ ,ক, খ লিখছ কেন, চেনা-জানা কথা!
কঠিন শব্দ চয়ন করে, বেতাল সুরে ভরে,
দেখাও দেখি নতুন ভাল লেখা সৃষ্টি করে।
অভিনব নতুন কিছু লিখব মনে করে,
জেগে ছিলাম রাতের বেলা, কলম হাতে করে।
জানলা দিয়ে জ্যোতস্নারাতের কিরণ এলো ঘরে,
সেই পুড়ান চাঁদের আলো দেখি নতুন করে।
নীল আকাশে চাঁদের সাথে তারার মেলা যত,
মনে হল নীল কাপড়ে জরির সুতোর মত।
চুমকি লাগা ওড়না গায়ে, হাসছে যেন শ্যামলা মেয়ে,
দেখছে চেয়ে চেয়ে –চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে –
বলছে গেয়ে গেয়ে।
রাতের বেলা নতুন কিছু হলোনা আর লেখা ,
সকাল বেলায় লিখব নাহয় সূর্য দিলে দেখা।
ভোরের বেলা নতুন রবির পেলাম যখন দেখা –
ভানু-সিংহের নাম যেন দেখছি আছে লেখা।
দিবাকরের কর এলো যে আমার হৃদয় মাঝে ,
পুড়ান আর নতুন ধ্বনি একই সুরে বাজে।
আবহমান কালের ধারা চলছে বেয়ে বেয়ে,
নৌকা বয়ে যাচ্ছে যেন আমায় সাথে নিয়ে।
নতুন আর পুরাতনের ভেদ পড়েনা চোখে,
আধুনিকা নই গো আমি চির নূতন বিশ্বলোকে
 

.              ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
আমি কিছু লিখে ছিলাম
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

আমি কিছু
লিখেছিলাম কবির মনস্তাপ
চোখে কারো পড়লনা তা
খোলাই পড়ে থাক !

আমি কিছু
দিয়েছিলাম ভালবাসায় ভরা
গ্রহণ তাকে করলনা কেউ ,
রাতের আকাশ ছাড়া !

আমি কিছু
চেয়েছিলাম অল্প একটু সুখ
সবার ই হাত খালি
কে যে ভরিয়ে দিল বুক

.       ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
অদ্ভুত কবিতা
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

উফ কি কষ্ট করে
পড়া হলো -কবিতায়,
শব্দ হয়ে পথ আছে ,
উঁচু নিচু পাহাড়ি রাস্তায় ,
কেন এত বিশ্রী -
ভূমিকায়
এমন কাঁকুরে রাস্তায়,
হোচট খেতে খেতে চলে যাই ,
তোমার সঙ্গে বাক যুদ্ধে হে নতুন কবি,
চাইনা যেতে কারণ গেলে ও হেরে
হব ভুত আর ছাপার অক্ষরে
যাব ভেসে অচলায়তনে !!
মানে??? অদ্ভূত

মনে পড়ে যায়, পড়া সুকুমার রায়,
ভীষণ শব্দে চমকে চমকে উঠি
নতুন সূর্য করছে ফুটি ফুটি ,

ফটাস ফটাস ভয়ানক শব্দ
সুর্যের আলো ফোটে
রাত কেমন হয়েছে জব্দ ।।
এতো অসময়ে চলে গেলে কবি রায়,
নাহলে ছড়াতে দিতেনা পদ্য এমন কঠিন রাস্তায় ।

.   
           ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
কাকে চাও
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

শুনলে হাসি পায়
আজ কেউ কবিতার মানে জানতে চায়
কবিতা এখন বুদ্ধির ঘিলুতে
চটকিয়ে ছোটো ছোটো
পিন্ড প্রদান
নুন মিষ্টি মশলা
বর্জিত
কবিতা কবির অর্জিত
আধুনিক জ্বালানি
পানীয়,
পাঠক জানিও তুমি
কি পড়তে চাও,
কঠিন দেয়াল যেখানে
গদ্যে পদ্যে মাথা ফেটে যায়
নাকি চেনা অচেনার হাতছানি
মৃদু হেসে ডাকে ঈশারায়,
প্রেয়সীর মতো
ভালোবেসে, কখনো বা
রুদ্র আবেশে
কথা বলে যায়
পাঠক তুমি বলে দাও,
কাকে তুমি চাও

.    ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
কবি তোমার জন্য
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

যখনি তোমার লেখে পড়ি,
মনে হয় কবে যেন দেখা হয়ে ছিল
বহুদূরে
অনন্ত সাগরে। তখন ঢেউ এর সাথে সাথে,
নেচেছিল প্রাণ আর গাংচিল উড়ে ছিল
আকাশের দিকে, দুটি চোখ মিলেছিল ক্ষণিকে
আকাশে-সাগরে।
তার পরে কত যুগ কেটে গেছে
তবু আমি বসে আছি-
আসবে কি ফিরে,
প্রাণের গভীরে
সেই ভালোবাসা।
আশা নিরাশার দোলে
দিন কেটে যায়;
মন করে হায় হায় সে কি এসেছিল !
না হলে এমন করে নাড়া দিয়ে গেল কে যে
প্রাণের পাতায়।।

.    ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
জন্মদিনে
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

আরো একটা পা বাড়ালাম আজ
যেমন বাড়িয়েছ তুমি সে ও তারা
প্রতিদিন ঘন্টা পলে পলে
যুগ যুগ ধরে
আর ভেবেছ আমার মত করে
তারপরে সে অন্ধকার ঘরে
সে অতল জলের ওপারে
আছে কি নতুন সূর্য নতুন আকাশ
আছে কি নতুন বালিয়াড়ি

জলের ও পার থেকে জাগে কি নতুন প্রভাত
পৃথিবীর অগ্নিগর্ভো থেকে মাথা তুলে
দাঁড়ায় কি নতুন সন্তান
নাকি কয়লার আগুনে পুড়ে ছাই হয় সবই
অনু পরমানু - তারা যায় কোথায়
কোন রূপ ধরে ?

.    ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
গরম ভাতে ঘি
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

মা কোথায় তুমি ! বড্ড খিদে
গরম ভাতে ঘি আর একটা কাঁচা লঙ্কা

একটু সবুর করো মনি
একটা আলু মেখে দি .

আমার মা গরম ভাতে ঘি এখনো
আছেন আমার মেয়ের দিম্মা ;
তবু যেন অনেক দূরের কেউ
অনেক অচেনা !
মা তোমার হাতে মাখা গরম ভাতে ঘি
খেতে আর মন চায়না
.....

বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে দিন কেটে যায় ,
মনের চোখের সামনে কত কিছু ঝাপসা হয়ে আসে
ছেলে মেয়ে জীবনের আসল জমানো ধন
দরকারে কাছে এসে পিছন এ দাঁড়ায়

তাদের কর্ত্যব্য জ্ঞানে জল মিশে নেই ;
মন বড় একা হয়ে গেছে
জীবনের শেষে এসে পিছনে
তাকালে মনে পরে
কত কিছু নেই !

.    ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
বুদ্ধি বুড়ি
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

আমার হাতে কলম
সামনে সাদা কাগজ,
বুকের ভিতর একটা চাপা কষ্ট।
আমি জানি-
দেখতে পাচ্ছি স্পষ্ট
বীণাপাণি আজ আমার উপর
হয়েছেন ভারি রূষ্ঠ ।

গুরু-চণ্ডালে মেশা-মিশি,
সেন্টের শিশি ,
দেশী ও বিদেশী
ভাষাকে করেছে ভ্রষ্ট ।
সবাই আঙ্গুল দেখিয়ে বলছে ,
দেখ তোরা মেয়েটা নষ্ট, মেয়েটা নষ্ট ।।

বলছিলাম না বুকের মধ্যে
চাপা কষ্ট।
হ্যাঁ টের পাচ্ছি স্পষ্ট,
সতী সেজে পাশের বাড়ির মেয়েটাকে –
যত দিয়েছি মনকষ্ট –
তাই আজ বুমেরাঙের মতন
আমার বুকের পানপাতায়
লিখেছে স্পষ্ট – মেয়েটা নষ্ট, মেয়েটা নষ্ট ।।
এমনটাই ভেবেছিলাম তিন যুগ আগে –
মেয়েটা কবে হয়ে গেছে মহিলা –
চামড়ায় নেই টান, চুলের কলপ স্পষ্ট ,
তবুও বুকের মধ্যে সেই ব্যথা
ফিরে আসে বার বার –
ভারি কষ্ট, চাপা কষ্ট ।
এ সব কিছুর জন্যই দায়ী
সেই ব্যাটা কলির কেষ্ট ।।
শুনতে পাচ্ছি মাথার ভিতর বসে
বুদ্ধি-বুড়ি আঙ্গুল নাড়ছে –
বেহায়া বটে তুই নষ্ট, তুই নষ্ট ।।

.   
    ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
ক্ষমা কর
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

শিশুকাল থেকে তোমায় ছাড়া অনেক দুঃখ পেয়েছি ,
আর কল্পনার তুলি দিয়ে দেবী-মূর্তি এঁকেছি মনে মনে।
সে আমার মস্ত বড় ভুল-
আর সে ভুলের মাশুল দিয়েছ তুমি ।

তোমার সোনার দিন গুল কেটেছে একা অন্ধকারে সঙ্গিহীন,
সে কথা ভেবে ভেবে
কেঁদেছি মাগো রাত্রি-দিন।
তুমি জানলেনা ।।

বিশ-তিরিশ বছর অন্ধকারে
নির্বাসনে তোমার কি দশা –
দেখেছি যেদিন ফিরে এলে-
উন্মাদ আশ্রম  থেকে সভ্য সমাজে ।।

সভ্য আমি শত চেষ্টাতেও মানাতে পারিনি নিজেকে
তুমি যে দুঃখিনী মানবী কোন দৈব শক্তি নও ।


তুমি শুধু আশ্রয় চেয়েছিলে সন্ততির কাছে,
চেয়েছিলে পুনঃ  প্রতিষ্ঠান ।

মাগো ক্ষমা কর-
আমি পারিনি ফিরিয়ে দিতে সে আশ্রয়,
সে সম্মান ।।

.       ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
পথ বেয়ে যায়
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

ঝরা পাতা ধূলি ঝড় সাথে করে নিয়ে যায় ,
বুক খালি করে পথ শুয়ে থাকে;
কেউ আসেনি, কেউ আসবেনা ,
যাকে ডেকে ডেকে মেঘ বৃষ্টি হয়ে গেল ।
তবু  ও প্রথম বৃষ্টিতে স্নান করে হেসে ওঠে গাছ –
পথ তুমি ভুলে জাও নি তো !
আজ তার আসার কথা ছিল ।
না গাছ কিছুই ভুলিনি আমি
কিছু ভুলবনা-
দেখ চেয়ে
সূর্য ডোবার সাথে সাথে-
ধীর পায়ে  এ পথ বেয়ে চলে যায়
নতুন তারারা ছায়া পথে ।
পথের শেষ মিলেছে যে আকাশের গায় ;
কেউ আসেনি কেউ আসবেনা
তারা বলে যায় ।।

.       ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
আমরা কবির কাছে কৃতজ্ঞ কারণ এই সব কবিতাই কবি নিজে আমাদের টাইপ করে পাঠিয়েছেন।