কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
*
কেউ আসবেনা
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

শাশুড়ি মা কে দেখে রিমার পিত্তি জ্বলে যায়।
তিনকাল গেছে  ,
তবু দেখো সাজের কি বাহার ;
লেখা লিখি বাই ;
কি হবে, হ্যাঁ কি হবে!
কেউ তো আসেনি আজো লেখা চেয়ে নিতে ;
স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়ে যাবে।
স্বপ্ন দ্যাখার বয়স যে আর নেই ,
কে বোঝাবে !
শুধু খাতার পাতায় জাল বোনা ,

কারো আসার প্রতীক্ষায়
দিন গোনা-
বিফল -
হয়না রিমিমা॥
আমি বুঝি খুব বুঝি,
তোমার জীবনের অনেকটা পথ বাকী ;
হয়তও বা নেই- কে বলতে পারে!
জীবন তার নিজের ছন্দে চলে।
কেউ আসেনি কেউ আসবেনা জানি-
তবু ফুরিয়ে যাবার আগে আমি দীপ নিভাবনা॥

.              ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
আমরা কবির কাছে কৃতজ্ঞ কারণ এই সব কবিতাই কবি নিজে আমাদের টাইপ করে পাঠিয়েছেন।
*
শিশু বোধ
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

ছাগলের বাচ্চাটার কচি ঘাস খাওয়া
নধর ও নজর-কারা কালো
চক চকে গায়ে মানুষ শিশুটি
হাত বোলায় ।

আহা এই অবেলায় বাছা আমার
হাড়ি কাঠে বলি হবে
মাদি ছাগল ভাবে মনে মনে
পূজা প্রাঙ্গণে ।।

ঘরে গিয়ে শিশু ডাকে মা , মা
কালুকে বলি দিও না মা
ওর  খুব কষ্ট হবে, হারুদা বলল
বলি দিলে ও মরে যাবে।
ও যে আমারই মতন শিশু মা ।             

মা বলেন বালাই ষাট-কিসের সাথে কি,
যা এখন খেলা কর গিয়ে –
তাড়া খেয়ে গুটি গুটি পা পা
শিশু নিজের জগতে  হারিয়ে যায়।

ঠাকুরের প্রসাদ সবাই সোনা মুখে খায় গপ গপ,
শিশুর বুকে ঢিপ ঢিপ শব্দ বেজে যায় ;
ভয় ভয় চোখে দেখে মা তার হাঁ করে-
শিশুর মাংস খায় ।।

.              ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
আমার বনলতা
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

সাদা শারি নীল পাড় দুটো লম্বা বিনুনি,
নীলাঞ্জন নয় সেতো, তার কথা শুধু আমি জানি ।

আমার বন্ধু ছিল সে বনলতা সেন ;
মুখচোরা রোগা মেয়ে তখন ক্লাস টেন ।

মাঠের পথ ধরে একসাথে হেঁটে  স্কুল ,
পায়ে ছেঁড়া জুতো তার বই নিতে হত ভুল ।

এক দমকা হাওয়ায় সাদা শারি উরে উরে যায় ।
ভিতরের ছেঁড়া সায়া ঢাকে সে লজ্জায় ।
কেন সে চায়না কিছু ভেবে ভেবে আমি আকুল ।
টিফিনের বাটি নিতে হত তার  ভুল ।

কত-না মানুষ ছিল তার পথে হাত বাড়িয়ে ,
সে সব কাছে নিলে বনলতা যেত হারিয়ে।

বনলতা ছিল উন্মুখ মুক্ত হৃদয়ে মনে ,
চেয়ে ভালবাসা ভালবাসা ,
সে কথা রেখেছিল সে গোপনে ।

মা ছিলনা তার ছিলনা বাপ ,
কাছের লোক কারো কেন ছেড়ে যায় ।
বনলতা তোকে বোঝেনা কেউ
তুই আমার বুকে আয়।।

.         ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
তাকে ভালবাসা দাও
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

আমি উনিশ-কুড়ি, তিরিশ-চল্লিশ আবার ষাটে ও আছি
সুখে-দুখে, অভিমানে অপমানে,
দণ্ডে দণ্ডে পলে পলে
জীবন দেখেছি।

চাওয়া-পাওয়া কখনো মিলেছে হয়তো
কখনো নয়  ;
মৃত্যুর মাঝেও আমি দেখেছি জীবনের জয়।
হেরে গিয়ে জীবনের কাছে- হাত ছেরে পথে
পড়ে গেছে যারা -
নিষ্ঠুর আমি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি,
চোরা বালি ঘিরেছে তাদের
আমি জীবন বেছেছি ।।

সব দেখে এখন জীবন চেটে খাই
পথ চলতে যত টুকু নিতে পারি
তত টুকু চাই ।।

জীবন আছে পথ জুড়ে  ,
শেষে অনন্ত অজানা অচেনা অবস্থান-

আছে কিনা তা ও নেই কে বলতে পারে;
যত টুকু নিতে পার তত টুকু নাও
পথের শেষে কিছু নেই ।
ছড়িয়ে রয়েছে পথে জীবন তোমার
তাকে ভালবাসা দাও।।

.         ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
দাদা
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

আলা ভোলা দাদা ছিল এক মাথা চুল,
লোকে ভাবত ভারি পাজী তারা বুঝত ভুল।
একা একা ঘরে বসে কি  ভাবত সারাক্ষণ,
বলতো লোকে -চেয়ে দ্যাখ ঐ এক বিকৃত মন;
দাদা আমার ছোটো থেকে ছিলনা এমন ,
ভালবেসে বুকে নিয়ে রেখেছিল  বোন।
বোঝেনি কেউ তাকে একাকীত্ব
অসুখ হয়ে খায় কুরে কুরে,
বোনেরা বড় হয়ে তাকাল-না ফিরে ।
ততো দিনে দুঃখ ফুল ছড়াল গভীরে ।।
জানলনা বোনেরা কেউ-
দুরারোগ্য অচ্ছুত ব্যাধিতে  ,
মাংসল দেহ তার খাচ্ছে কুরে কুরে ।
বড় গন্ধ পুতিময়-রেখনা রেখনা ঘরে-
কি করে কি করে কেউ এতো কামিনা
হতে পারে ;
হায়-
মনে মনে দাদা  ডাকে ‘বোন’ আয় কাছে
লোকে দেখে রাস্তয় মড়া পরে আছে।।

.         ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
যেদিন ছিলাম উনিশ কুড়ি
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

ছিলাম উনিশ কুড়ি
আকাশ আমার ভরা ছিল কবিতায়
মাটিতে ছিলনা পা
বাতাস যখন ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেত চুল
মন আকুল অজানায় অচেনায়
স্বপ্নে ঘেরা জীবন তখন
ফুলের গন্ধে ভরা
ছিলাম
প্রজাপতি যেন
রঙিন নেশায় মত্ত
ভালবাসায় ঘেরা

বুঝিনি সেদিন কেউতো বোঝেনা
যত গান আর কবিতা
সবিতা নিজের জন্য
নিজেরই ভিতর পূর্ণ

আজ ফিরে ফিরে খুঁজি
এখনো কি দাঁড়িয়ে সেখানে
সে ই স্বপ্নের নারী
যে ছিল উনিশ কুড়ি !

.      ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
আমার আনারকলি
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

চোখের সামনে ঘটেছিল
অঘটন
আসুক আবার সময় সন্দেহাতীত
বলল মাথা

এবারে ও হারিয়ে দিয়ে গেল
প্রকাশ্য সমাবেশে
ভিতর পোকা মানব জাতি

ছুঁয়ে গেল কাদা হাত
আমার শিশু আনারকলি

আমি কি ভাবে কিছু বলি
আনারকলির শুভ্র মনে
পোকার কথা ছাপ ফেলেনা
থাকুক নিজের মতন
পদ্ম ফুল যেমন
কাদার মাঝে আপন সৌরভে
লোভী হাতের ছোঁয়া
নিজে ই সরে যাবে

.      ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
লোভী হাত
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

পাতার আড়ালে ঢাকা
অনেক মমতা মাখা
নরম ছোট্ট কলি
ছিল প্রতিক্ষায়
উন্মোচনের
লোভি হাত অপূর্ণ সেই বুকে
হাত দিল
আকাশ ঢাকল চোখ
বাতাস চলা ভুলে গেল
ছিল বাগানের মালি
সে হাত ভেঙ্গে টুকরো টুকরো
করে. ছড়ালো পথে

আমি অকপটে চেয়ে থাকি
পারিনি কেন পারিনি আমি ;
লোভির সে হাত ,
এমনি মুক্ত নিষ্ঠুরতায়,
প্রকাশ করে দিতে

.      ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
বিশ্বাস তো নিজেকে করাই মুশকিল
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

বিশ্বাস তো নিজেকে করাই মুশকিল,
পরের কথা তো দূরে,
আজকের ভালবাসা
থাকেনা জীবন জুরে ।।

অনেক প্রেমের কথা- ইনিয়ে বিনিয়ে বলা,
দেহের আগুনে পুড়ে
একসাথে পথ চলা,
একদিন যায় থেমে ।

আবেগের রাশ টেনে -দুজনে দুদিকে চলা ;
হটাত-ই বুকের মাঝে,
নতুন ছোট্টো ব্যথা
কোথা থেকে আসে নেমে ।

পিছনে তাকিয়ে দেখি কত নদী গেছে বয়ে ,
সাগরের পথ ধরে ।
ছোটো ছোটো যত ঢেউ,
খুঁজেছি হন্যে হয়ে ।

আগে পিছে নেই সেতো- আছে যে অন্তঃপুরে,
সেখানে দরিয়া-দিলে
তোমার বাঁশিটি বাজে
চির চেনা সেই সুরে ।

যে সুরে জীবন জাগে, যে সুরে মরন নামে,
আঁধারে-আলোতে ,
জোয়ারে-ভাঁটায়
বাজে সে হৃদয় জুরে ।।

.      ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
সূর্যমুখী  তুমি এলে যখন
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

সূর্যমুখী  তুমি এলে যখন ,
অর্জুন গাণ্ডীব  হাতে
তোমার অপেক্ষায় ;

তুমি এক গুচ্ছ রোদ্দুর  হয়ে
সাজালে ফুলদানি ;
আমি স্বপ্নে ভেসে যাই ।

তৃতীয় পাণ্ডব তির বিঁধে ছিল
আমার চারি পাশে ,
আকাশে বাতাসে ।

সোনা  রঙ ঢেকেছিল কৃষ্ণ  কালো  মেঘে;
আমি তখনও  ঘুমে কাতর
আমি তখনও  উঠিনি জেগে  ।

দিন শেষে  আকাশের  ঘোমটা    খুলে
অর্জুন  গেল চলে ,

আমার অজান্তে ,
আমারই অন্তরে
সূর্যমুখী থাকে প্রতীক্ষায় ।

.      ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর