কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
*
আমি ষোলো আনা পাঠক চাই
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

তোমরা কি আমাকে ভাল বলছ নাকি তাকে খারাপ
বাহবা পেতে কার না ভাল লাগে,
কিন্তু বুদ্ধি বলছে যেখানে এত ঈর্ষা এত রেষারেষি
সুবিধার মনে হচ্ছে না হাত তালি ;
মনের ভিতর খুলে যাচ্ছে না পদ্ম কোরক,
রন্ধ্রে রন্ধ্রে পুলক দূরাগত –
এস কাছে বস পাশটিতে,
কবিতার জগতটিকে বরণ করেছ কি
দিয়েছ কি মন প্রাণ ভালবেসে ;
শেষে দেখা গেল গোল টেবিলের আড্ডায়
সারি গয়নার ঝলকে ম্লান
কবির কবিতা ।
কার সারি মেকি সিল্ক, কারো বা গহনায় ভেজাল,
পাণের পাত্রে তুফান উত্তাল ;
এক সুন্দরি বলে – ও মা দেখেছিস
কি ভয়ানক দেমাকি অমুক-
একটু কিছু লিখেছে তাই ফুলে ভল্লুক,
দিয়েছি ফুটো করে বেলুনের গ্যাস-
ভাল বল, হাত তালি দাও জোরে
একে চোখে ঠেলে – ও কে তোল-
ব্যাস, মাফ কর চাইনা এমন
পরে পাওয়া আঠার আনা ।
কারণ আমি ষোলো আনা পাঠক চাই ।।

.            ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
আমরা কবির কাছে কৃতজ্ঞ কারণ এই সব কবিতাই কবি নিজে আমাদের টাইপ করে পাঠিয়েছেন।
*
জঙ্গি বাস করে
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

আমার মনের থেকে এক পল দূরে জঙ্গি বাস করে,
অট্টহাসি হাহাকার এক সাথে ঘোরে
আমার অন্তরে ।।

আমার জানালা দিয়ে দিনের প্রথম আলো উঁকি দিয়ে যায়,
কেন সে থাকেনা ঘরে- মন করে হায় হায়।।
অট্টহাসি হেসে জঙ্গি চিঠি লিখে যায়
আমার দরজায় ।।

ভেঙ্গে ফেল মনের কপাট
জানালা দাও খুলে,
চেয়ে দ্যাখো আকাশটা অসীম ব্যাপ্তি নিয়ে
অনন্ত যাত্রায় ভেসে যায় ,
তোমাকে ডাকছে আয়
ঘর ভেঙ্গে আয় চলে  ।

জঙ্গি তোমার ফাঁদে দেবনা তো পা,
সভয়ে বন্ধ করি জানালা দরজা ।।
জঙ্গি তবু ডাকে যে আমায়- আয় চলে আয় ।।

আমি শিউরে উঠি ভয়ে ।
বড় চেনা ঘর আমার ;
কি বা আসে যায়,
যদি আলো ফিরে যায় ।
দেয়ালের ইট কাঠ গুনে গুনে
দিন কেটে যায় ।।

.       ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
আমাকে বাঁচাও
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

আমি উদ্ভিদ , সবুজ শ্যামলা ঘাস
আদিগন্ত ছেয়ে থাকি
আমার বুকের পরে
কচি কচি ঘাস ফুল মাথা তুলে চায়
আকাশে তাকায়
আমি মহীরুহ হয়ে মাটি কামড়ে থাকি
আম জাম বট ফলে ডাল পালা ঢাকি
বেল যুই গোলাপের গাছে
প্রাণ পেতে রাখি
আমি প্রকিতির দান
আমি তোমাদের কন্যা সন্তান
চারি দিকে কান পেতে শোনো
প্রকিতি বলছে ডেকে
সবুজ বাঁচাও
সবুজ ধংশ শেষ হলে
পৃথিবীটা অগ্নি গর্ভে যাবে চলে -
তোমরা কি চাও !
আমি তোমাদের কন্যা সন্তান। আমাকে বাঁচাও।

.          ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
কল্পনা আর আমি
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

আমি ঝড়কে দুহাতে বরণ করেছি
উড়েছি আকাশে বাতাসে
দিনে তোমার চোখের তারায়
রাত্রে ঘুমের ঘোরে
স্পর্শ করেছি তোমার চেতনা
নিয়েছি আপন করে
তোমার স্বপ্ন আমের ভিতর
শিকর গড়েছে
মাটিতে রয়েছে পা
আর যাই করি এ জীবনে আর
তোমাকে ভুলবনা
ঝড় যদি আরো আসে একবার
কল্পনা যেও সাথে
ভয় নেই আর ফিরে এস চোখে
দিনে রাতে কবিতাতে ..

.          ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
বিজয়া তোমার জন্য
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

আসছি বলে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলে
আমি ছুট্টে বারান্দায়
সে দিনটা শনিবার
মনে মনে ডাকি একবার ফিরে চাও
বাতাস সে কথা শোনাল-না
তুমি রোজকার মত
রাস্তার মোর ঘুরে
একা একা চলে যাও
আমি একা রাতে ডেকে বলি
আমায় ঘুম দাও ঘুম দাও
রিং রিং রিং সু তীক্ষ্ণ স্বরে
মোবাইল বেজে যায়
আমি স্বপ্নে বারান্দায়
ঝুঁকে ঝুঁকে ডাকি ফিরে চাও ফিরে চাও
হেলো এত রাতে কে আবার
বলি বিরক্ত ঘুম ঘোরে
বডি পাওয়া গেছে ট্রেন এ
এসে শনাক্ত করে যান

তার পরে কত কিছু
লোক জন ডাকা ডাকি

আমি রাস্তায় চেয়ে থাকি
আর তো হবেনা দ্যাখা
ফিরে চাওয়া হবে না যে
সেদিন তোমায় যে কথা বলিনি
না বলাই থেকে যাবে

.      ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
বলেছ তোমাকে চাই
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

একটু একটু এসেছ কাছে রোজ,
আমি ফিরেও দেখিনি,
তখন পুবের আকাশে সুর্য্য
দেখেছি পশ্চিম গগনে তার অন্তর্ধান,
আমি জীবনের মদিরা পান করে
করেছি সুন্দরের গান
ঘুন পোকা কুরে কুরে খায়
আলমারি
,তার শব্দ শুনেছি বিনা দ্বিধায় ,
আমি পথে যেতে যেতে শব দেহ দেখে
আহারে বলেছি কে চলে যায়।।
তুমি ছোট্টো ছোট্টো টোকা মেরে ,
ফিরে ফিরে গেছ, আমি দেখিনি তাও-
তখন জীবন ঘিরে মধুচন্দ্রিমা।
প্রাণের ভিতর কে ডেকে যায়,
আমি চাই তোমায় ।
শরীরের খেলা মাতাল করেছে
মন ঘুরে ফিরে সে খেলা চায় ।
বুঝিনি ভিতরে কে ডেকে যায়
আমি চাই তোমায় ।।
জীবন যাকে ঠকিয়ে গেল
তার কাছে এসে হাত পেতে চাও
কি দেব আর-
কঠিন আগাতে বুকের দরজা
সপাট খুলেছ- বলেছ চাই তোমায়।।

.          ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
ছায়া
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

তুমি বুঝি আজকাল
মাঝ-আকাশে থাকো !
ছায়াটাকে আর দেখি না তো ।

খুশি খুশি আলো আলো
হাসি দেখি নয়নতারায় ,
রাত গুল শুধু যেন জ্যোৎস্না ছড়ায় ।

ভয়াল, করাল ছায়া
থাক পরে মাটিতেই থাক ।
আমাকে পারেনা ছুঁতে তার নিশি ডাক ।

তোমাকে দেখি যে আমি
সবুজের ফাঁকে ফাঁকে ,
ফুলের রেণুতে আর পাখিদের ডাকে ।

সামনে রয়েছ তুমি
জীবনের আলো ;
পিছনে থাকুক পরে অন্ধকার কালো ।

রাত যায় দিন আসে ,
দিন শেষে রাত ;
অন্ধ আবেশে আমি বাড়িয়েছি হাত ।

স্নেহের পরশমণি
দিয়ে গেলে হাতে ,
হৃদয় ধন্য হল নতুন প্রভাতে ।

যত কাল আছি আমি ,
তুমি আছ সাথে –
স্নেহের পরশমণি দিয়ে গেলে হাতে ।।

.          ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
আকাশ
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

(১)

রোদ্দুরে তোমার ঝকমকে চুল
ছুঁয়ে যায় অসহায় এ হৃদয়
ভিজে ওঠে তোমার চিন্তায়,
ভিজে ভিজে নরম ঠোঁট
দুষ্টু পাখির মত চঞ্চল চোখ,
যা সব আমার প্রিয়
যন্ত্রণা আমার অসুখ,
মিলে মিশে একাকার
তোমার ভাবনা বিভোর-
একা একা  মনটা আমার
পেতে  চায় একটা নরম পাখি
আমার পাঁজরায়।।

(২)

ঝড়ের মত এসেছিলে আলোয় ভরিয়ে আকাশ,
ছুঁয়েছিলে মন ;
ফিরে দেখি তুমি আর নেই।

আমার চুল দিয়ে কেন যে ঢাকিলি আকাশ,
সে সন্ধ্যায় ,
কেন যে ধরিনি বুকে তোমার স্বপ্ন যত
সেখানে বিরাট ক্ষত।
আজ অবেলায়
তোমার প্রেমের কাছে ধরা দিতে চায়
মন আমার করে হায় হায়,
কেন যে ঢাকিনি আকাশ সেই সন্ধ্যায়।।

.             ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
অযাচিত
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

অনেক বছর পার করে অনেক টা সময় ধরে
মনে রাখা কথা-গুল বড় কষ্ট পায়,
কেন রেখেছ মনে,
কেন ছাড়নি আমায় বিস্মরণের হাতে,
কিছু কি পেয়েছ তুমি বলতো আমায়-
তবে কেন সযত্নে পালন কর
অন্ধকার তমসায় পুতি গন্ধ ময় নরকের অন্ধকারে-
ছেরে দাও ছেরে দাও যেতে দাও আমায়।।
যেতে দিতাম তোকে রাখিনি তো মনে-
কোনো কোনো মানুষের কাছে,
অকাঙ্খিত পাওয়া, না চাইতেই অনেক অনেক
ভাল কথা রঙ্গিন মোড়কে মোরা
তখনি হটাত করে বিদ্রূপের হাসি-
আঘাত করে হৃদয়ের দরজায়।।
কেন কেন কেন কেউ খেলা করে অপরের বিশ্বাস নিয়ে –
কি আনন্দ পায়-
আর তখনি তোদের কথা মনে পড়ে
নিম তিত –উপহার যখন আসে অযাচিত
অবজ্ঞার সাথে ভীষণ আঘাতে-
তোকে মনে পড়ে যায়।।

.         ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
আজীবন
কবি সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায়

আমাকে  জরিয়ে রয়েছিস আষ্টে পৃষ্টে
বাঁধনের বাঁশি নিয়ে হাতে,
যেদিন মনে হবে
আমাকে করেছিস জয়,
ফুরিয়ে গেছি সব টুকু  ‘আমি’
ছুঁড়ে ফেলে দিবি, বাঁধন নিবি খুলে ,
তবু কেন ভালবাসি, কেন মনে হয়
আমার জীবন এত নিষ্ঠুর নয় ।।
ভালবাসে আমাকে ই ভালবাসে,
মুহূর্ত মুহূর্ত আঁকড়ে ধরতে  চাই,
সবাই তো যায় চলে,
তবু কেন আমি থাকতে চাই ,
তোর সাথে আজীবন,
আমরণ নয় ।।

.      ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর