কবি সরলাবালা সরকার - জন্ম গ্রহণ করেন নদীয়া জেলার কাটালপোতা গ্রামে। তাঁর পৈতৃক নিবাস
ছিল ফরিদপুরের ভর রামদিয়াতে।
পিতা কিশোরীলাল সরকার ও বড়দা ডঃ সরসীলাল সরকারের কাছেই তাঁর যাবতীয় শিক্ষালাভ হয়। মাত্র
বার বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় শরত্চন্দ্র সরকারের সাথে। কবির খুব অল্প বয়সেই একটি মেয়ে রেখে তাঁর
স্বামী পরলোক গমন করেন। কবি তাঁর বাকি জীবন সাহিত্যচর্চায় কাটিয়ে দেন। তাঁর সাহিত্যে অনুরাগ
সম্ভবত পেয়েছিলেন তাঁর ঠাকুরমা “আমার জীবন” খ্যাত, রাসসুন্দরী দেবীর কাছ থেকে, যিনি ছিলেন বাংলা
সাহিত্যের প্রথম আত্মজীবনীকার।
স্বামী বিবেকানন্দ সঙ্কল্প করেছিলেন যে তিনি ব্রহ্মচারিণীদের জন্য একটি মঠ প্রতিষ্ঠা করবেন। স্বামী
বিবেকানন্দের সেই সংকল্পকে ভিত্তি করেই, নারী শিক্ষার বিস্তারের জন্য, কলকাতার বোসপাড়ায়, ভগিনী
নিবেদিতা ও শ্রীমতী ক্রিশ্চিয়ানা তাঁদের বাড়ীতেই একটি স্কুল খুলেছিলেন। কবি সরলাবালা দেবী সম্ভবত
সেই স্কুলের ছাত্রী ছিলেন এবং ভগিনী নিবেদিতাকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। ভগিনী
নিবেদিতার পরলোক গমনের পর তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে নিবেদিতার সান্নিধ্যে আসার অভিজ্ঞতা থেকে
লিখেছিলেন “নিবেদিতা” যা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের পত্রিকা “উদ্বোধন” কার্য্যালয়, বাগবাজার, থেকে জ্যৈষ্ঠ
১৩১৯ (১৯১২ খৃ) এ প্রকাশিত হয়। বইটিতে লেখিকার নাম দেওয়া হয়েছিল - শ্রীমতী সরলাবালা দাসী,
“প্রবাহ” রচয়িত্রী । বইটির ভূমিকা লিখেছিলেন রামকৃষ্ণ মঠের স্বামী সারদানন্দ। ভূমিকার শেষে লেখিকার
সম্বন্ধে তিনি লেখেন---
“ভগিনী নিবেদিতার পূর্ব্বোক্ত বিদ্যালয়ের সহিত বর্ত্তমান পুস্তিকাখানির লেখিকার এককালে এমন বিশেষ সম্বন্ধ ছিল যে তাঁহাকে
নিবেদিতার ছাত্রীদিগেরই অন্যতমা বলা যাইতে পারে। নিবেদিতার সম্বন্ধে অনেকে অনেক কথা আজি লিখিলেও তাঁহার দৈনন্দিন
অন্তর্জীবনের মহত্বের চিত্র ইনি যে ভাবে অঙ্কিত করিতে সমর্থা হইয়াছেন ইতিপূর্ব্বে ঐরূপ করিতে আর কেহ পারিয়াছেন বলিয়া
আমাদের বোধ হয় না। না পারিবারই কথা। কারণ পুরুষমাত্রেরই প্রবেশাধিকার রহিত উক্ত বিদ্যালয়ে ভগিনী নিবেদিতা গৃহস্থের
পুরাঙ্গনাদিগকে নিত্য লইয়া আসিয়া তাঁহাদিগের অন্তরে সত্য, সদ্ভাব ও মহদাদর্শের বীজসমূহ কি ভাবে বপন করিতেন ও কিরূপে ঐ
সকলের ক্রমে পুষ্টিসাধন করতঃ ফলচ্ছায়াসমন্বিত মহামহীরুহে পরিণত করিয়াছিলেন, শ্রদ্ধাসম্পন্না ছাত্রী ভিন্ন তাহার পরিচয়
অন্য কে আর প্রদানে সমর্থ হইবে ? সেই জন্যেই বলিতেছি, ক্ষুদ্রকায়, হইলেও পুস্তিকাখানি হইতে পাঠক নিবেদিতার মানসিক
মহত্বের অনেক গূঢ় কথা জানিয়া মুগ্ধ হইবেন। ভগিনী নিবেদিতাকে বিশেষভাবে জানিবার জন্য সাধারণের আন্তরিক আগ্রহের
ঐরূপে পরিতৃপ্তি সাধনের জন্য লেখিকা আমাদিগের হৃদয়ের কৃতজ্ঞতার অধিকারিণী হইয়াছেন, একথা বলা বাহুল্য। অলমিতি---
. সারদানন্দ।”
রাজনীতিতে সরাসরি যোগদান না থাকলেও স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি
মহিলা সত্যাগ্রহ সমিতির সদস্যা ছিলেন এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবীদের তাঁর গৃহে বিভিন্ন
সময়ে আশ্রয় দিয়েছিলেন।
তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে “প্রবাহ” (১৯০৪), “অর্ঘ্য” (১৯৩৮)। অন্যান্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে
“স্বামী বিবেকানন্দ ও শ্রীরামকৃষ্ণ সংঘ” (১৯৫৭), ছোট গল্পগ্রন্থ “চিত্রপট” (১৯১৭), “গল্প সংগ্রহ” (১৯৫৭), শিশু
সাহিত্য “পিঙ্কুর ডায়রি” (১৯৬১), “হারানো স্মৃতি” (১৯৫৩), প্রবন্ধ সংকলন “মনুষ্যত্বের সাধনা” (১৯৫৩),
“সাহিত্য জিজ্ঞাসা” (১৯৫৩), “নিবেদিতা” (১৯১২) প্রভৃতি।
তাঁর কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে “সাহিত্য প্রদীপ”, “উত্সাহ”, “জাহ্নবী”, “উদ্বোধন”,
“অন্তঃপুর”, “সুপ্রভাত”, “প্রবাসী”, “ভারতবর্ষ” প্রভৃতি পত্রিকায়।
১৯৫৩ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গিরিশচন্দ্র ঘোষ লেকচারার পদ অলংকৃত করেন। তিনিই ঐ
পদে প্রথম মহিলা অধ্যাপিকা।
কবি সরলাবালা সরকার অনেক বই লিখেছিলেন “সরলাবালা দাসী” নামেই। প্রায় একই সময়কালে আরও
একজন কবি খ্যাতি লাভ করেন যাঁর নামও ছিল “সরলাবালা দাসী”। তাই পরবর্তীতে অনেকেই “সরলাবালা
সরকারকে”, “সরলাবালা দাসী”র সাথে গুলিয়ে ফেলেন। এই ভ্রম দূর করার জন্য আমরা মিলনসাগরে এই
দুজন কবিরই কবিতা তুলেছি, তাঁদের জীবনের যাবতীয় লব্ধ তথ্য সমেত।
আমরা মিলনসাগরে তাঁর কবিতা তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে এই কবিতা পৌঁছে দিতে পারলে
আমাদের এই প্রচেষ্টার সার্থকতা |
কবি সরলাবালা সরকারের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন।
উত্স - যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, বঙ্গের মহিলা কবি, ১৯৩০
. বাংলাপেডিয়া
আমাদের ই-মেল - srimilansengupta@yahoo.co.in
এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ২০১২
পরিবর্ধিত সংস্করণ - ৮.১১.২০১৪
...