নভেম্বর বিপ্লব জিন্দাবাদ পারভেজ শাহেদীর কবিতার অনুবাদ, স্বাধীনতা পত্রিকা, ৭ই নভেম্বর, ১৯৫৮
অশ্রুগলিত কোটি কোটি চোখে যে স্বপ্ন ছিল জড়ানো, একদিন শেষে রাশিয়ার বুকে জীবনে উঠিল জ্বলিয়া, যুগযুগান্ত দীর্ঘশ্বাসের পাথরে পিষ্ট হাসি, রক্ত শুষ্ক শূন্য অধরে হঠাৎ উঠিল ঝলিয়া |
সারা দুনিয়ার যত মজদুর ঊর্ধ্বে তুলিল মুঠি, কন্ঠে কন্ঠে গান এল তার বিজয় কেতন উড়ায়ে, আকাশের গায় এদিকে-ওদিকে যত মেঘ ছিল ছড়ায়ে, জড়ো হয়ে ছিল তপ্ত, তৃষিত রাশিয়ার মাটি জুড়ায়ে |
বিপ্লব যদি ব্যর্থ হইত, ভাবিতে শিহরি উঠি, আরও নত হয়ে নামিয়া পড়িত মজুরের শিরদাঁড়া | এই রাশিয়ার জীবনের স্রোত হ’ত নরকের নদী, রক্তশোষক শ্বাপদ ফিরিত মানুষ করিয়া তাড়া |
রাশিয়ার বাহু যদি না পারিত শক্তি ধরিতে এত, পড়ে র’ত যত পদানত দেশ বিহঙ্গ ডানাভাঙ্গা, আরও কালো হ’ত কালো আদমীর কালো জীবনের দিন, কালো রক্তের সাদার চাবুক আরও বেশী হত রাঙা |
চন্দ্র, সেও তো তারায় তারায় জপে ধরণীর নাম, দূরের তারারা ভিড় ক’রে তার কাছে আসে সরি, আমি কবি, তবু মনে হয় যেন আমার কাব্যলোকে বিজ্ঞান এসে কবির স্বপ্ন নিয়েছে হরণ করি |
তরুণ দিনের কত স্বপ্নের দু’হাতে ছিঁড়েছে পাখা, কপাল হইতে কপোলে নেমেছে কত না ঘামের ধারা, কত না তপ্ত দীর্ঘ নিঃশ্বাসে পাঁজর উঠেছে কেঁপে, আশা ও ভয়ের কয়েদখানায় কত দিন হল সারা,---- সব যন্ত্রণা ভুলিনু যেদিন ধরিনু তোমার পাণি, . হে আমার শেরওয়ানী |
. ৫
সেই উনিশ শো পঁয়ত্রিশ সাল, দারুণ ডিসেম্বর----- মনে পড়ে সেই শীতের নাচন শাণিত ছুড়িকা হাতে, মনে পড়ে সেই হিমেল বাতাস , হাড়ে হাড়ে ঠোকাঠুকি সে কি নিদারুণ বাঁচার লড়াই চলেছিল দিনে-রাতে | ভুলিনি ভুলিনি ভুলিনি বন্ধু ! পুরাতন সে কাহিনী | . হে আমার শেরওয়ানী |
. ৬
সে বছর তুমি ঘরে এলে মোর কস্তুরি-সুরভিতা, পশম তোমার কী নিবিড় স্নেহে অঙ্গ ঢাকিল মোর, তোমার কেশের ফাঁসীতে জড়ালো শীতের আঁধার রাত তোমার তাপের সুধায় ভরিল শীতের দারুণ ভোর | আমার সকল বেদনা ঢাকিয়া দাঁড়ালে তুহিনরাণী . হে আমার শেরওয়ানী |
. ৭
কত মজলিশ, কত মুশায়ারা, কত সভা-সমাবেশ চোখের ভাষায় কত না কাহিনী, কত ভালোবাসা হায়, আশাতীত কত উষ্ণ আবেগ, কী নিবিড় সমাদর গন্ধের মত আজও মিশে আছে তোমার স্মৃতির গায়ে তোমারে জড়ায়ে আজও বেঁচে আছি জিন্দেগী-অভিমানী . হে আমার শেরওয়ানী |
. ৮
আমার অঙ্গ অঙ্গে ঢাকিয়া কাটালে বিশ বছর, হিমেল বায়ুর চাবুকের মার পড়েছে তোমারই গায়, তপ্ত তোমার বুকের গভীরে কেটেছে আমার দিন, তোমার দিন যে কেটেছে বন্ধু নিবিড় যন্ত্রণায় | কিছুই টেঁকে না এই দুনিয়ায় -----শুনি বিজ্ঞের বাণী, . হে আমার শেরওয়ানী |
. ৯
বিশ বছরের জীবন তোমার, এসেছে জন্মদিন, তোমার অঙ্গে তালি দিতে হবে, হায়রে কপাল হায়, তোমার সঙ্গে খেলিতে হইবে সূঁচসুতো নিয়ে খেলা, ভাবিনি কখনো জীবনে আমার আসিবে এমন দায় | জীবন তোমার অমর করিতে পারিতাম যদি, রাণী ! . হে আমার শেরওয়ানী |
. ১০
নূতন বছর এসেছে প্রেয়সী সঙ্গে রঙীন চিঠি, নূতন খবর বহিয়া এনেছে আমাদের ভাঙ্গা ঘরে, ভয় কি প্রেয়সী ? মুখ তুলে চাও ! ঐ দেখ ঐ দেখ ! শয়তান শীত আবার তোমারে আভূমি সালাম করে | আর দুটো দিন সবুর লক্ষ্মী ! আঁধার ঘুচিবে জানি | . হে আমার শেরওয়ানী |
. ১১
সঙ্গিনীদের অঙ্গের দিকে চেয়ে দেক একবার, একই দশার কশার চিহ্ন ফুটেছে সবার দেহে, হাজার তালির জীর্ণ জীবন ধুঁকিছে মরণ-মুখে, একবার চাও সাথীদের পানে সমব্যথিতার স্নেহে | একা তুমি নও তোমার সঙ্গে রয়েছে লক্ষ প্রাণী, . হে আমার শেরওয়ানী |
. ১২
হাজার কামানে একসাথে কারা আগুন দিয়েছে আজ ? শীতে কাঁপা লাখো কন্ঠে কন্ঠে শ্লোগান গর্জে ওঠে,--- আইনসভার ভদ্র আসরে ওঠে শ্লোগানের ঝড়, ক্ষুধার জ্বালায় শ্লোগানের সুর কাঁপে শিল্পীর ঠোঁটে | শীতের শাসন শেষ হয়ে আসে, ভয় কি কুসুমরাণী ! . হে আমার শেরওয়ানী |
. ১৩
নগ্ন মানুষ নির্ভিক আজ, শীতের গলিত লাশ কফিনে ভরিয়া হাসিয়া হাসিয়া পেরেক মারিছে তারা,----- কফন-বস্ত্র উপহার নিয়ে প্রাসাদ লক্ষ্য করে সারা দুনিয়ার কলিজা কাঁপায়ে চলেছে সর্বহারা | ভয় কি প্রেয়সী ! ইতিহাস গায় ওদেরই বিজয়বাণী, . হে আমার শেরওয়ানী |
আমি ও আমরা পারভেজ শাহেদীর কবিতার অনুবাদ, স্বাধীনতা, শারদীয়া সংখ্যা ১৩৬৪
পাশের বাড়ীতে আগুন লেগেছিল, ধোঁয়ায় ভরে গেল আমার নিজের বাড়ী, আর্তচীত্কারে কেঁদে উঠল পাশের বাড়ীর মানুষ, যন্ত্রনায় বিদীর্ণ হয়ে গেল আমার নিজের বুক |
আজ বুঝেছি কোটি কোটি বুক আমারই বুকের প্রতিবেশী | কে বলেছে আমি এক ? আমি যে অসংখ্য ! দুনিয়াকে দূরে রেখে আমি একা ? মিথ্যা কথা | দুনিয়া যে আমার গৃহপ্রঙ্গণ
হাসছে, আমার চোখে চোখ রেখে হাসছে দিন দুনিয়ার ভালবাসা | দেখতে পাচ্ছি, অসংখ্য আঁখির আর্শীতে দেখতে পাচ্ছি, অন্ধকার রাত্রির বুকের গভীরে রক্তসূর্যের আবির্ভাব | আজ আমার বুক এক সীমাহীন, কোষহীন দুনিয়া সেখানে আমার নিজের ব্যথার সাথে জড়িয়ে গেছে পরের ব্যথার . অন্তহীন জটিলতা | আমার ‘আমি’কে আজ আমি ‘আমরা’ করে তুলেছি, সঙ্গে সঙ্গে আমি হারিয়ে ফেলেছি আমার ‘আমি’কে, সঙ্গে সঙ্গে খুঁজে পেয়েছি আমি আমার বহুদিনের হারানো . ‘আমি’কে |
নবীন পৃথিবী পারভেজ শাহেদীর কবিতার অনুবাদ, মহম্মদ ইকবাল, স্বাধীনতা ১৫ই নভেম্বর ১৯৫৩, [ নভেম্বর বিপ্লব স্মরণে ]
জাগো, দেখ এক অপূর্ব মহিমায় স্নান করে . উঠেছে আজ সারা বিশ্বের মানুষ | সারা পূর্ব ও পশ্চিম জুড়ে শুরু হয়েছে শ্রমিকের যুগ | সীমাহীন সপ্ত সমুদ্রে মন ভরে না ওদের . এত অন্তহীন ওদের বাসনা | কতকাল, আর কতকাল দু’ফোঁটা শিশির নিয়ে . গোলাপ কুঁড়ির মত খুশী রইবে তুমি ? জনজাগরণের গানের ভেতরেই রয়েছে . মানুষের সব সুখের নির্যাস | কতকাল, ওদের কতকাল সিকান্দার ও জামসেদের . নিঝুম রূপকথার স্বপন কাহিনী কান পেতে শুনতে হবে ?
. পৃথিবীর গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে এক নূতন সূর্য | আর কতকাল, হে স্বর্গ, পতিতা তারকাদের ভাগ্য নিয়ে . বিলাপ করবে তুমি | . মানুষ আজ তার সমস্ত শৃঙ্খল ছিঁড়ে ফেলেছে, হারানো স্বার্থের জন্য আর কতকাল ধরে কাঁদবে আদম ? হে পতঙ্গ, অগ্নিশিখার মূঢ় আকর্ষণ থেকে ছিন্ন করো নিজেকে, . যেখানে তোমার নিজের ঘাসে-ঢাকা মাঠ . আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে, . সেই আপন ঘরে ফিরে এসো তুমি |
ক্ষুধিত সন্তানদের প্রতি নিকোলা ভ্যাপ্ সারভ-এর কবিতার অনুবাদ,
[ বুলগেরিয়ার বিপ্লবী মজুর কবি ও কমিউনিস্ট নেতা নিকালো ভ্যাপ্ সারভকে ১৯৪২ সালে জার্মান ফ্যাস্স্টরা বিচারের প্রহসনান্তে গুলি করে হত্যা করে | শোষিত পুঁজিবাদী বুলগেরিয়ার জন-জীবনের এক অপূর্ব বাস্তব আলেখ্য, বেদনা ও দৃঢ়তা ফুটিয়ে উঠিয়াছে ভ্যাপ্ সারভের কবিতায় | কবি ভ্যাপ্ সারভার যে ভবিষ্যৎ বুলগেরিয়ার স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন এবং যাহাকে বাস্তবে পরিণত করিবার সংগ্রামে প্রাণ দিয়াছিলেন, সেই বুলগেরিয়া আজ বাস্তব সত্য | আজিকার শোষণ-মুক্ত স্বাধীন বুলগেরিয়ায় ভ্যাপ্ সারভ জাতীয় কবির আসনে প্রতিষ্ঠিত | ইতিপূর্বে তাঁহার কয়েকটি কবিতার অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত জীবনকাহিনী ‘স্বাধীনতা’ য় প্রকাশিত হইয়াছে | আমরা ভ্যাপ্ সারভের আর একটি কবিতার অনুবাদ এখানে প্রকাশ করিলাম ]
উদয়াস্ত হাড়ভাঙ্গা খাটুনীর পর রুটি যা জুটেছে তাতে পেট ভরবে না কারো | একি রুটি না ঠাট্টা ! হালের ফলায় শতদাদীর্ণ ক্ষেতের বুকের মত চোখের জলের শুকনো দাগে বরা তোদের মুখ | কী বোবা, কী বাধিত, কী নিষ্প্রভ ও চোখ ! ঐ ব্যথা-বিস্ফারিত চোখের বিহ্বল চাউনি থেকে একটা গা শিউরে-ওঠা আর্তচীৎকার উঠে আসছে ; রুটি, রুটি, রুটি ! শোন তবে, বাছারা আমার, সোনা মাণিকরা আমার, শোন ! কাল ছিল যেমন আজও ঠিক তেমনই আছে | ভাঁড়ার আমার শূন্য, তোদের মুখে দেবার মত কিছুই নেই আমার | তাই রুটির বদলে আর যা কিছু দিচ্ছি আজ তোদের, দিচ্ছি বিশ্বাস |
এমন দিন আসবে যেদিন কালের স্রোতস্বিনীর গতিশক্তিকে বন্দিনী করে সেবিকায় পরিণত করব আমরা প্রতিদিনের বৃষ্টিধারাকে আটকে জমিয়ে রাখব কংক্রীটের চৌ-দেয়ালে, বেরিয়ে যেতে দেব না কোনো পথে উদ্ধত হাতে রাশ টেনে ধরব নদীগুলোর, বলব : “ও পথে নয়, এই পথে |”----- কথা শুনবে ওরা, কথা শুনবে পোষমানা জানোয়ারের মত | সেদিন রুটি মিলবে আমাদের, হ্যাঁ, রুটি মিলবে | আর খুশির হাসি উপ্ ছে পড়বে তোদের চোখের পেয়ালা থেকে | সেদিন যদি রুটি মেলে আমার রুটি মিলবে তোদেরও, যদি রুটি মেলে তোদের রুটি মিলবে কোটি কোটি মানুষেরও | সেদিন জীবন ভরে উঠবে আনন্দের দুর্নিবার জোয়ারে, আর, বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাবে যক্ষার পোকায়-কাটা অতীতের দিনগুলো | সেদিন গান গাইব আমরা, কাজ করব আর গাইব গান, মানুষের মহিমা-বন্দনার উচ্ছ্বসিত আনন্দগান | যখন বুড়ো হব, জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকব দীর্ঘ পথের দিকে দেখব তোরা ঘরে ফিরছিস পায়ে পায়ে প্রাণোচ্ছ্বাসের ঢেউ তুলে | তখন আস্তে আস্তে বলব “কী চমত্কার এই পৃথিবী !” একদিন এ হবেই হবে ! কিন্তু আজ, আজ ঘরে রুটি নেই আজ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তোদের মায়ের বুক | নালিশ জানিয়ে লাভ কি ! কোনো নালিশ নেই আমাদের | তবু বুকের গভীরে আমার মর্মণূল কেটে দিচ্ছে যন্ত্রণার বজ্রকীট তোদের এই ‘আজ’ এ যে আমার কত বড় গোপন ব্যথা কী বলব | কিন্তু তবু বলি বাছারা আমার, ভয় করিসনে ‘আগামী কাল’ কে, সে যে তোদেরই |
রেডিওতে উত্তেজিতভাবে বিতর্ক করে চলেছে লোকটা, কাকে উদ্দেস করে বলছে ও ? কে জানে ! হয়ত জনসাধারণকে | বলতে দাও ওকে, এই বলার জন্য তো ও টাকা পায় ! লোকটা বলে চলেছে : “ রাষ্ট্রের শক্তি, রাষ্ট্রের প্রভূত্ব প্রহরীর মত দাঁড়িয়ে আছে তোমার স্বার্থ রক্ষায় | বন্ধ করো শ্লোগান ! নামিয়ে ফেলো ঝান্ডা ! সবাই তুষ্ট, সবাই তৃপ্ত, সবাই সুখী |” কফিখানায় একটা লোক ঘৃণায় থুতু ফেলে, তারপর জোরে পায়ে মাড়িয়ে ধূলোয় মিশিয়ে দেয় থুতুর দলাটাকে | চারিদিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে বলে, “কুত্তার বাচ্চারা আমাদের সাথে চালাকি করতে চায় ! কিন্তু ভগবান তো শাস্ত্রে লিখেছেন ---- জনসাধারণের কন্ঠস্বরই ঈশ্বরের . কন্ঠস্বর |” “ঠিক বলেছ |” চীত্কার করে ওঠে কোনো ক্ষুধার্ত শীতার্ত যুবক | বলে. “এ কথাই না শালারা বলেছিল উনিশ শ’ পনের সালে ? যদি ওরা আমাদের মরতে বলে, তা হলে নির্বোধেরা পর্যন্ত স্বীকার করবে, জবাব দেওয়ার সময় এসেছে আমাদের | এই আমার বিশ্বাস, কারণ, কোকের চেয়েও কালো আমাদের রুটি, আমাদের তেলের ভাঁড় শূন্য : আমাদের একটি মাত্র শ্লোগান---- ধ্বংস হোক এই ত্রাসের রাজত্ব মৈত্রী হোক সোবিয়েত ইউনিয়নের সাথে |”
বলাকা চৌ বংশের রাজত্বকাল এর একটি কবিতার অনুবাদ, ১০৬৬ হইতে ৪০৩ খৃষ্টপূর্বাব্দ
পাখার আঘাতে আকাশ উদ্বেলিত করে অরণ্যের উপর দিয়ে উড়ে য়ায় বুনো রাজহাঁসের ঝাঁক যেমন উড়ে যেতাম আমরা অতীতের তিক্ত দিনগুলিতে নিষ্ফল যুদ্ধের দিকে ; শূন্য সংঘাতে অপচয় হোত আমাদের হাতের মেহনৎ | আকাশ থেকে হ্রদের শান্ত বুকে নামে বুনো রাজহাঁসের ঝাঁক, শুরু হয় তাদের শান্ত বিশ্রামের দিন | আজ আমরা তুলেছি আত্মরক্ষার দীর্ঘ প্রাচীর, গড়েছি আশ্রয় ; নিজেদের শান্তির নীড় বানিয়েছি আমরা ; কঠোর মেহনতে আজ আমরা ক্লান্ত, শ্রান্ত, তবু আমরা সুখী |
ঘরে ফেরা হান বংশের রাজত্বকাল এর একটি কবিতার অনুবাদ,. ২০৬ খৃষ্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খৃষ্টাব্দ
পনের বছর বয়সে সেপাই হয়ে ঘর ছেড়েছিলুম, আজ বুড়ো হয়েছি, অকেজো হয়েছি তাই, ওরা আমায় বিদেয় করে দিল টলতে টলতে রওনা হলেম দেশের দিকে | গাঁয়ে ঢুকে জিজ্ঞেস করলুম, কে আছে এখন আমার বাড়িতে ? আঙুল দিয়ে দেখিয়ে ওরা বললো, “ওই যে দেখা যায় তোমার বাড়ি ওই যে পাইন-দেবদারুতে ঢেকে আছে যে ভিটেটা, ওই তো তোমার বাড়ি |”
কেউ কোথাও নেই | একের পর এক খরগোস উঠে পালিয়ে গেল গর্তগুলো থেকে ; চালের বাতা থেকে উড়ে গেল কতকগুলো চড়ুই | উঠোনটা ভরে গেছে বুনো ফসলে, কুয়োর ধারটা ঢেকেছে ওষধিপাতায় |
যেখানে ছিল আমার বাড়ি এলুম সেখানে, উঠোন থেকে কিছু বুনো ফসল কুড়িয়ে নিলেম, ওষধিপাতার সাথে জ্বাল দিয়ে বানালুম ঝোল | তারপর, গরের বাইরে গিয়ে তাকালুম পূব দিকে, ভাবতে লাগলুম, সাথে খেতে ডাকব কাকে ; চোখের কোণ থেকে জল গড়িয়ে ভিজে যেতে লাগল আমার পরনের জামা-কাপড় |
প্রশ্ন হান যুগের পর, ২২০ - ৬১৭ খৃষ্টাব্দ, চিয়াং ইয়েন এর কবিতার অনুবাদ,
বহুদিন, বহুদিন প্রাণনাথ আমার সৈন্যদলে | দেয়াল থেকে নিঃশব্দে ঝুলছে আমাদের বাদ্যযন্ত্রগুলি, আর একাকিনী আমি সেই দিকে তাকিয়ে বসে আছি | একটি বালিশে মাথা রেখে রেখে সাদা হয়ে যাচ্ছেআমার চুলগুলো, একটি বাতির আলোয় ক্ষয়ে যাচ্ছে আমার লাবণ্য |
মনে শুধু জেগে আছে একটি চিরন্তন প্রশ্ন --- আমাদের সীমান্তে যুদ্ধ শেষ হবে কবে ? আমাদের ঘোড়াটি আবার কবে বাঁধা হবে আমাদেরই উঠোনে ?
মনে পড়ে তাং রাজবংশের যুগ, ৬১৮ - ৯৪৭ খৃষ্টাব্দ - তু ফু এর কবিতার অনুবাদ
যুদ্ধের দামামা বাজছে ; জনমানবশূন্য পথঘাট | শরতের রাত্রি | এত নীচু দিয়ে এত জোরে উড়ে যাচ্ছে বুনো রাজহাঁসের দল, বাড়ির খবরের জন্য হু হু করে উঠছে মনটা ; এখানে এখন শিশিরকণা তুষারকণায় পরিণত হচ্ছে ; এখানকার চাঁদ আমার দেশের চাঁদের মতই উজ্জ্বল ; দেশে ভায়েরা আমার ছড়িয়ে পড়েছে এখানে-ওখানে, বাড়িতে এমন কেউ নেই যে ভাববে আমার কথা, বেঁচে আছি কি নেই ! কিন্তু লাভ কি এসব কথা ভেবে ? যুদ্ধ য়দি না থাকত তবুও এত দূরে রইতাম যে, বাড়ির কোনো খবরই পৌঁছত না আমার কাছে | আর এখনও যুদ্ধ চলছে, তাই আশা কোথায় ?
প্রাচীন ক্রেমলিনের তিনখানি ঘর নিয়ে থাকেন একটি মানুষ তাঁর নাম জোসেফ স্তালিন | অনেক, অনেক রাত্রি পর্যন্ত তাঁর ঘরে আলো জ্বলে, দুনিয়া ও তাঁর নিজের দেশ তাঁকে বিশ্রাম নিতে দেয় না | ইতিহাসের অন্যান্য বীরেরা দেশ সৃষ্টি করেছেন ; আর ইনি ? ইনি করেছেন তার কিছু বেশী, ইনি দেশকে ধ্যান করেছেন, সৃষ্টি করেছেন, রক্ষা করেছেন | তাঁর বিশাল দেশ তাই তাঁর নিজেরই অংশ | তাঁর দেশের বিশ্রাম নেই, তাই বিশ্রাম নেই তাঁরও |
একদিন বরফ ও বারুদের মধ্যে পুরানো, ঝানু ঠ্যাঙাড়েদের সামনে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন তিনি, তারা চেয়েছিল লক্ষ লক্ষ হৃতসর্বস্ব ক্রীতদাসদের কান্না ও দীর্ঘশ্বাসের মধ্যে দুর্দশার নরক আবার জাগিয়ে তুলতে | পশ্চিমের ওরা পাঠিয়েছিল ওদের ব়্যাঙ্গেল ও ডেনিকিনদের তাদের ‘সংস্কৃতি’ রক্ষা করতে | সেদিন তাদের গায়ের চামড়া খুলে রাখা হয়েছিল গায়ের চামড়া খুলে রাখা হয়েছিল জহ্লাদদের ভাড়াটে দালালদের | তারপর ? তারপর বিশাল সোভিয়েতের সর্বত্র, সারাদিন, সারারাত্রি কাজ করে চললেন জোসেফ স্তালিন | এমন সময় সীসার তরঙ্গের মত এল জার্মানেরা চেম্বারলেনের আহারপুষ্ট ফ্যাসিষ্ট জহ্লাদের দল, বিশাল সীমান্তের প্রতি ইঞ্চি জমি জুড়ে . স্তালিন দাঁড়ালেন তাদের মুখোমুখি, কখনও সঙ্গ ছাড়লেন না তাদের | তারা যখন এগিয়ে এল, সামনে তাদের স্তালিন | তারা যখন পিছু হটল, পিছনে তাদের স্তালিন | জনতার মহাঝঞ্ঝার মত সুদূর বার্লিন পর্যন্ত এগিয়ে গেল . স্তালিনের সন্তানেরা | সঙ্গে তাদের রাশিয়ায় বিশাল, বিপুল শান্তি |
[ চেন-ই ১৯৩৬ সালে দক্ষিণ কিয়াংসীর গহন পার্বত্য অরণ্যে গেরিলা বাহিনীর সঙ্গে ছিলেন | জনৈক দলত্যাগীর বিশ্বাসঘাতকতায় গেরিলাদের সদর দপ্তর শত্রুদ্বারা পরিবেষ্টিত হবার উপক্রম দেখে, চেন-ইর মনে হয় শত্রুর হাতে তাঁর মৃত্যু অবধারিত | এই অবস্থায়, লড়ায়ের আগুনের বেড়াজালের মধ্যে বসে, চেন-ই এই চার স্তবকের কবিতাটি রচনা করেন ]
বিশ বছর কেটেছে অন্যায়ের সাথে পাঞ্জা কষে, সারা জীবন ছায়ার মতো বিপদ ফিরেছে পিছু পিছু---- আজ লগ্ন এলো যাবার, তাই কন্ঠে নিলাম গান, অস্ত সূর্যের রাঙা আলোয় চীত্কার করুক কয়েক দল, কী আসে যায় |
বিপ্লব বড় নির্মম, শত সংগ্রামের আহুতি চায় সে ; আজ করুক ওরা আমার শিরচ্ছেদ, কি আসে যায় | পাতালের প্রেতলোকে জমায়েত করবো যত পুরাতন সহযোদ্ধাদের তারপর ঝাঁপিয়ে পড়ে শেষ করবো জাহান্নামের অধিরাজকে |
বিসবছর ধরে আশার মশাল জ্বলছে দক্ষিণে, আমার ছিন্ন শির যদি আজ দূর্গপ্রাকারে ঝোলে, ঝুলুক | তোমরা যারা রইলে এগিয়ে যেও দ্বিগুণ উদ্যমে, তোমাদের জয়ের সংবাদ খুশীর জোয়ার আনবে--- তাদের বুকে, . যারা আর রইল না |
বিশ বছর ধরে বিপ্লবই আমার গৃহ ; চিরকালই আকাশে রইল রক্তবৃষ্টির জমাট মেঘ ; তবু জানি এ অমানিশার অবসান আসন্ন | প্রাণের কুসুম ছিন্ন করে আমরা অর্ঘ্য দিলাম----ন্যায়ের যুদ্ধে, জানি, একদিন মুক্তির রক্তকমল সহস্র দল মেলে দেবে সারা দুনিয়ায় |
শান্তির যুগ আর্নেস্ট জোন্স এর কবিতার অনুবাদ, স্বাধীনতা পত্রিকা, ৩০শে জানুয়ারী ১৯৫৫,
[ “এজ অফ পীস” কবিতায়, চার্টিষ্ট আন্দোলন নামে খ্যাত ব্রিটেনের গৌরবময় শ্রমিক অভ্যুত্থানের নেতা ও কবি আর্নেস্ট জোন্স মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মুখোশ খুলে ধরেছেন ]
তোমা ঝাণ্ডার “ডোরা” কাঁদিয়া রক্তাক্ত পিঠে বহিছে তোমারই ক্রীতদাস, তোমার ঝাণ্ডার “তারা” যে আকাশে জ্বলে আজ সে আকাশ রাত্রির আকাশ!
মজুরের চোখে ইতিহাসের কেতাব বেরটল্ট্ ব্রেশ্ট এর কবিতার অনুবাদ
কারা গড়েছিল থিবিস নগরীর সাত সাতটি প্রবেশদ্বার ? ইতিহাসের কেতাবে লেখা হরেক রাজার নাম। কিন্তু বড় বড় চাঙড়গুলে ঠেলে ঠেলে তুলেছিল যারা তারা কি রাজা ছিল ?
ধ্বংস হলো ব্যাবিলন কিন্তু প্রতিবার নতুন করে গড়ে তুললো যারা, তারা কারা ? স্বর্ণ ঝলকিত লিমা নগরীকে গড়েছিল যারা। নগরীর কোন গৃহটিতে তাদের বাসস্থান ?
যে সন্ধ্যায় শেষ হলো চীনা প্রাচীরের নির্মাণ কাজ সে সন্ধ্যায় কোন্ আশ্রয়ে ফিরে গিয়েছিল ক্লান্ত রাজমিস্ত্রীর দল ?
সাম্রাজ্যিক রোম বিজয় তোরণে তোরণে ভর্তি, কিন্তু সেগুলি গড়েছিল কারা ? কাদের বিজিত করেছিলেন সম্রাটেরা ?
গানে গানে অমর হয়ে আছে বাইজান্টিয়াম কিন্তু তার সব গৃহগুলিই কি ছিল রাজপ্রাসাদ ?
যে রাত্রে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে হঠাৎ প্লাবিত হলো পুরাণ কথিত আতলান্তিস্ নগরী, সে রাত্রে, সেই দিশেহারা প্লাবনের মুখে দাঁড়িয়েও, ডুবন্ত মানুষগুলো মালিকের মেজাজ নিয়ে ডেকেছিল তাদের ক্রীতদাসদের। তরুণ আলেকজান্দার জয় করেছিলেন ভারতবর্ষ জয় করেছিলেন কি তিনি একা ? সীজা মেরে তাড়িয়েছিলেন গল্ দের কিন্তু একটি বাবুর্চিও কি ছিল না তাঁর ফৌজে ?
স্পেনের নৌবহর ধ্বংস হয়ে সমুদ্রে তলিয়ে গেলে কেঁদে ভাসিয়েছিলেন স্পেনের রাজা ফিলিপ, কিন্তু আর কেউ কি কাঁদে নি ? সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন মহামতি ফ্রেড্রিক, আর কারা জয়ী হয়েছিল তাঁর সঙ্গে ? ইতিহাসের পাতায় বিজয় কাহিনী, কিন্তু বিজয়োৎসবের খরচ যুগিয়েছে কারা ? প্রতি দশ বছর অন্তর একজন মহাপুরুষের আবির্ভাব, কিন্তু কাদের গাঁটের শেষ কানাকড়ি টেনে নিয়ে তৈরী হয়েছিল এই মহা আবির্ভাব-পথ ?
মনে আসে এই ধরণের নানা খুঁটিনাটি কথা, এই ধরণের হাজারো রকমের প্রশ্ন।
আফ্রিকার বুকে একটি সকাল প্যাট্রিস লুমুম্বার কবিতার অনুবাদ
[ এই কবিতাটি চেকোশ্লোভাকিয়ার ব্রাতিশ্লাভা প্রদেশের “কুলতুর্নি জিভোৎ” পত্রিকায় শ্লোভাক ভাষায় অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়। তার ইংরেজী তর্জমা প্রকাশ করেছেন “লিংক”। বর্তমান তর্জমা ইংরেজী অনুসরণে করা হয়েছে। ]
নিগ্রো, তিমি হাজার বছর ধরে অত্যাচার সয়েছ . পশুর মতো আর মরুভূমির বাতাসে উড়েছে . তোমার ভস্মাবশেষ। তোমার আত্মাকে বাঁচিয়া রাখার নামে তোমার দুঃখ ভোগকে জিইয়ে রাখার জন্য, মুষ্ট্যাঘাতের বর্বর অধিকার তার কশাঘাতের শ্বেতাঙ্গ অধিকারকে জিইয়ে রাখার জন্য, তোমার মরার অধিকার আর তোমার কান্নার অধিকারকে চিরন্তন করবার জন্য, তোমার জালিমেরা গড়েছে অসংখ্য অনিন্দ্য সুন্দর যাদু মন্দির ; তোমার টোটেমের বুকে ওরা এঁকে দিয়েছে অন্তহীন উপবাস ও অন্তহীন বন্ধন। অরণ্যের অন্তরীক্ষ থেকে সাপের মতো . লক্ষ্য করেছে তোমাকে, এক বিভত্স নিষ্ঠুর মৃত্যু --- বনস্পতির ফাটল, ফোকর ও শীর্ষদেশ থেকে প্রসারিত শাখার মতো পাকে পাকে জড়িয়েছে তোমার দেহকে . তোমার পিড়িত আত্মাকে। তারপর তোমার বুকের উপর ছেড়ে গিয়েছে এক বিরাট কুটিল বিষধর ; কাঁধে দিয়েছে ফুটন্ত জলের জোয়াল, সস্তা ঝুটো মুক্তার ঝলকানিতে প্রলুব্ধ করে বুক থেকে কেড়ে নিয়েছে তোমার প্রেয়সীকে, কেড়ে নিয়েছে তোমার অবিশ্বাস্য অপরিমেয় ঐশ্বর্যকে। অন্ধকার নিশিথে তোমার কুটির থেকে উঠেছে টমটমের আওয়াজ, ভেসে এসেছে ধর্ষিতা নারীর আর্ত চিত্কার, তোমার বিশাল কালো নদ নদীর বুক বেয়ে অশ্রু ও রক্তের সমুদ্র বেয়ে বোঝাই জাহাজ চলেছে সেই পাপভূমির দিকে--- ওরা যাকে বলে মাতৃভূমি মানুষ যেখানে পঙ্কিল, ডলার যেখানে সম্রাট। যেখানে তোমার সন্তান, তোমার প্রেয়সী দিনে দিনে পিষ্ট হয়েছে নির্মম ও ভীষণ শোষণের রথের চাকায় অসহায় যন্ত্রণায়। ওরা তোমাকে বুঝিয়েছে সবার মতো তুমিও মানুষ, শ্বেতাঙ্গ দেবতা একদিন সব মানুষকেই মেলাবেন! কিন্তু কান্না তোমার থামেনি কোনদিন। অনাত্মীয়ের দ্বারে দ্বারে গৃহহীন ভিখারীর মত।
যখন জ্বালার জোয়ার লেগেছে দেহ মনে সারা রাত ধরে নেচেছ তুমি আর গান গেয়েছ ঝড়ের গোঙানির মতো হাজার বছরের যন্ত্রণার গর্ভ থেকে ফেটে পড়ছে এক প্রচণ্ড শক্তি পৌরুষের সুরের আগুন লাগা কথা ও কাহিনীতে জাজ সংগীতের ধাতব ঝঙ্কারে। সেই উন্মাদিনী সুরধুনীর মুক্তধারার বেগের প্রচণ্ডতায় কেঁপে কেঁপে উঠেছে মহাদেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। চমকে জেগে উঠেছে সারা দুনিয়া বিস্মিত আতঙ্কে কান পেতে শুনেছে সেই ভীষণ রক্তের ছন্দ, সেই ভীষণ ছন্দ সংগীতের। আতঙ্কে বিবর্ণ শ্বেতাঙ্গের দল কান পেতে শুনেছে নিশিথ অন্ধকারে মশালের মতো এক নতুন গান।
সকাল হয়েছে, বন্ধু, চেয়ে দেখ আমাদের মুখের দিকে, জ্বল জ্বল করছে এক নতুন শপথ, চেয়ে দেখ, পরানো আফ্রিকার বুকের উপর ভেঙে পড়েচে এক নতুন সকাল। এতদিনে ফিরে পাবে সর্বহারা নিগ্রো তার হাজার বছরের হারানো দেশ, হারানো জমি, হারানো জল, হারানো বিশাল নদ-নদী। সূর্য উঠেছে ; তার বিকীর্ণ নির্মম অগ্নিকণায় শুকিয়ে যাবে তোমার চোখের জল, শুকিয়ে যাবে তোমার মুখের উপর ছড়ানো থুতু--- শেকল ছেঁড়ো বন্ধু, শেকল ছেঁড়ো। শেকল ছেঁড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিরদিনের মতো সাঙ্গ হবে তোমার দুঃসহ দুঃখের দারুণ দুর্দিন। কালো মাটির বুক চিরে মাথা তুলে দাঁড়াবে এক সাধীন নির্ভিক কঙ্গো। কালো মাটির অন্ধকারে কালো বীজের ভেতর থেকে কালো মুকুলে মঞ্জরিত হয়ে আলোর আকাশে মাথা তুলে দাঁড়াবে কঙ্গো, আমার কঙ্গো।