রৌদ্রজাতক
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়

ভাই চল্‌, পায়ে পায়ে হাঁটি
ভাই দেখ জলে হয় ভোর
আমাদের বাবা নেই, তবু
বাতাসে চূর্ণ ঘুমঘোর

ঘুম যদি ভেঙে যায়, যাক
আলো, কী আছে তোমার রাঙাবার
আমাদের চাল নেই ঘরে
বুড়ো বৈরাগী গাইছে আবার !

আলো এসো, ক্ষিদে জ্বেলে দাও
শুরু কর হাড়ভাঙা কাজ
মা আমার বীজতলা গড়ে
শুধু, আমাদের উপবাস আজ

শ্মশান ভাসিয়ে আসে জল
আমাদের ঘর পড়ো পড়ো
বাবা ছিল রৌদ্রের কবি
বলেছিল, - শুরুটুকু করো

আমাদের আরম্ভ হল
দুই ভ্রূণ, অনন্ত নাম
প্রসবিনী, তোমাকে তো চিনি
বলো কাকে দেব পিতৃপ্রণাম?

তাই পথে পথে ধান ছুঁয়ে যাই
গেয়ে উঠি ভোরপাখিরবে
পার হব কষ্টের রেখা
ভাই, একদিন আমাদেরও হবে!

.          ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
*
অবকাশ
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়

তোমাকে রোজ ডাকি, সময় পাও না
দেখি, গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে সাইকেল চলে যায়।

কাঠকয়লার আঁচড়ে তোমার মুখ কিছুটা এঁকেছি
তাকেই সামনে ধরে কত করে ডাকি। মুখে রোদ পড়লে
হাতের পাতা আড়াল করে ফিস্‌ফিসিয়ে বলি –
যত রাতই হোক, জেগে আছি

তুমি আস না।

এখন পুজো। তোমাদের পাড়ায় ঢাক বাজে।
তেপান্তরের পাশে আমার ছোটো ঘর,
এককোণে বসে চক্ষুদান করি।
তোমার বন্ধুরা দেশে ফিরেছে বহুদিন বাদে
তুমি আনন্দ কর।

খাল-বিলের দেশে ঘুরে ঘুরে ওই মুখকে বলি –
ভাসানের পর তোমার কি একটু সময় হবে?

.          ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আঁধারমানিক
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়

From now on you will see the Son of Man seated at the right hand of Power and coming on
the clouds of heaven.                                    Jesus : The New Testament

মায়েরা সিঁদুর খেলে প্রতিমার ভার কাঁধে তুলে দিয়েছে সন্ধ্যায়
দলবেঁধে চলেছি ভাসানে। নদীপাড়ে উঁচু করে ছুঁড়ে দিই
ওই গঙ্গায়, রণদামামার সুরে ঢাক বাজে। উপুড় প্রতিমার পিঠ
রুক্ষ নিষ্ঠুর, যেন প্রতিফলিত দেশ আমার। ঘোলা জলে
ডাকের গহনা ভেসে যায়, অনাথ বালক তার ওই দিকে লোভ।
একচোখ জল নিয়ে পুজো গেছে কেটে আজ উৎসবরাত
নদীতে ঝাঁপ দিলে অশ্রু আড়াল পায় শেষহীন জলে

মাতৃশরীর থেকে খড় মাটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে যায়
কাঁচা মাংসের ভয়ে মুখ ফিরি তখনই দিন রাত্রির দুই সাপ
.                                               শঙ্খ লাগায়
ভীষণ বিষের রঙে গোধূলি ঘাতক শিকড়ে কাঁপন তোলে
পিতার নিরুপায়, অনাথিনি দিদি মনে পড়ে শাকান্নে
.                                                দাস্যে জ্যোৎস্নায়
জড়ভার শিড়দাঁড়া ভেঙে যখনই ঝাঁপের কথা ভাবি
তোমাকে দেখা যায় দূরজলে ঘোররঙ কাঠামোয় চড়ে
ভেসে যাও বরাভয় মুদ্রায় ক্ষুধিত অঙ্কুর মারী ও মড়কের দেশে
জ্বলে ওঠো শিরোমণি, নির্ভয় করো যারা দিশা ভুলে গেছি
.                                                ভাসানপথে এসে

.                   ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
নিশিভোর
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়

কাজে বেরুবার আগে ছোটোটাকে মা-ডাকা শেখাচ্ছে
বিন্দুবাসিনী পাখি। ছোট্ট বাদামী ঠোঁটের কাছটায়
ঠোঁট নিয়ে গিয়ে বলছে – বল্‌ মা,মা বল্‌ ...

কাল জল হয়েছিল খুব। এখনও ভিজে ডালপালা, ফুল
বাসা থেকে গলা বাড়িয়ে ঠান্ডা লাগিয়েছে দস্যি ছানা,
কথা কইবে কি, গলার পালক কাঁপিয়ে কেশে ওঠে – খ্‌ খ্‌ খ্‌

আর কাশির শেষে - মা

সেই শুনে ভোরবেলা ভেসে পড়ছে বিন্দু
এত আনন্দ এত আনন্দ যেন আকাশ ঢেকে যায় দুডানায়
পথে পথে খুলে যায় মেঘ, ফুটে ওঠে মেঘে মেঘে যত আলো জমা

পাখি যতবার মনে করে সন্তানডাক, কানে আসে – ক্ষমা ক্ষমা ক্ষমা ...

.                   ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
স্পর্শ
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়

বৃষ্টি নামে ভোরের বেলায় - গাছ ভেজে আর পাখির ক্ষত
হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে যায়। কে হাত রাখে, তোমার মতো

বাইরে মাঠে জল জমেছে। সামান্য জল উঠোনজুড়ে
ভোর নেমেছে বৃষ্টিবেলায় – লেখার খাতার অন্তঃপুরে

লেখার কথা বৃষ্টিতে নয়। ছাতা হাতে সে হাওয়ায় ঘোরে –
পাগল ছাদে বাদল লেগে, একলা-থাকা যাচ্ছে পুড়ে

সে সব কিছুই দেখছে লেখা। লেখার আবার মনটি বড়ো,
জল থামলে একটুখানি – আমায় আবার তোমার করো!

আর কিছু নয় হে বৃষ্টিপাত, লেখার কাছে এটুক্‌ চাওয়া
সময় করে পৌঁছে দিও, পৌঁছে দিও সজল হাওয়া

এ-চাওয়া সব মৃত্যু-অতীত, বিপুল বাদলছায়ার মতো
আষাঢ়মেঘের কাছে যেমন হাত পেতেছেন দেবব্রত

এখন যাবো ঝিপির্‌ ঝিপির্‌ জলের ভেতর পাখির ঘরে
কদিন ধরেই বর্ষাহাওয়ায় শাবকগুলো ভুগছে জ্বরে

জ্বরের গায়ে পালক লেগে, ফুল্‌কি ওঠে – তারার মতো
মা-পাখিটির সন্ধান নেই; হয়ত কোথাও বজ্রাহত

কোন দেশে কোন গাছের ডালে জিরিয়ে নেওয়ার অভিপ্রায়ে
থেমেছিল, আর ওড়েনি – এখন ভরা আগুন গায়ে

ভাবছে বাসায় ছানার কথা – এই বিরহেই ওতপ্রোত
ঘুম ভেঙে যায়; তোমায় খুঁজি – না-হওয়া এক লেখার মতো ...

.                   ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
দামিনীর ঘুম
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়

এ দেশ সঙ ও সমাধির
পাঁজরের হাড়ে বাঁধা পথ
এ দেশেই আগুনের খেয়া
একদিন ভেঙেছিল রথ

সে রথে শান্তনু ছিল
তার সাত ছেলে গেছে জলে
অষ্টমজনের শপথ
বিস্ময়ে শুনেছে সকলে

এতদিন সে-ই ছিল দেশ
কুরুক্ষেতে, তীরবেঁধা স্তবে
আজ ভীড় নতুন খেলায়
তীরগুলো খুলে দেখা হবে –

বাতাসে মানুষ ভেসে থাকে?
পলকে মুছে যায় ক্রোধ?
একা মেয়ে শুধু মনে রাখে
খন্ডিত জরায়ুর বোধ

এ শহরে বণিক পদধূলি
এ শহর চলেছে যমুনায়
নজরমিনার দেখে আজও –
প্রদোষে গালিব হেঁটে যায়

ওই যে শিরোতাজহারা
গুঞ্জন পুঞ্জিত বুকে
গোধূলি শরাব হয়ে নামে
কবুতর উড়ে আসে মুখে

যে পথে গজলগুলি হাঁটে
সেই পথে পাখিদের স্নান
তীর্থ হয়ে ওঠা দেশ
ধুলো তার মুমতাজজান

কি আগুন্ ধিকিধিকি জ্বলে
কুহুতান? দয়িতার টান?
গর্ভে টেনে নাও প্রিয়া
কাছে থাকি ভ্রুণের সমান

তবু প্রেম, দুহাতের পাতা
রৌদ্র ও ছায়া দুই বুক
ক্ষুধা নয় – সুরের বিজয়
শেষাবধি জানুক অসুখ ...

মুছে গেছে গালিবের ছায়া
তবু, এখনও হেঁটে যায় গান
নজরমিনার –ঘুম ভাঙো
নিশি ডাকে ঘাতকসমান

উলঙ্গ পড়ে আছে মেয়ে
নাড়ি ছেঁড়া – ক্রুর সেই ডাকে
দুহাত মোমবাতিভরা
কোথায় তুলে নেবে তাকে?

শরীর মুছে গেছে প্রায়
নিশিথিনী করে আছে ভর
এই দেশ গালিবের প্রিয়া?
এই সেই গজলের ঘর?

ত্রিনয়ন মেলে আছ শুধু
ঘুণধরা ডাক দেবালয়ে
ঠোঁট মুছে দানব ঘুমায়
পথে ছুঁড়ে গালিবের মেয়ে

মেয়ের কপাল থেকে সেতু
আরক্ত ডুবে যায় জলে
ঝরাফুল শাখাটুকু খোঁজে
ঘ্রাণ লুটে পালায় সকলে

এইভাবে শুষে নেওয়া ঘ্রাণ
বিদ্রোহী সুর হয় তেজে
মিছিলের বহু ক্রোশ দূরে
মেয়ে তার যোনিটুকু খোঁজে

কি সহজ সাধ্য তোমার
আহা, হাতের কৌশল ভারী
বুক থেকে খুলে নাও রাগ
মেয়ে থেকে ছিঁড়ে নিলে নারী

শতধারে খুলে যাও পথ
ও মেয়ে তোমার কাছে যাক
যদিও নরম আলো, ভিড়
তবু এই দেশ পুড়ে খাক্‌

পুড়ে খাক্‌ জননীর আয়ু
পুড়ে খাক্‌ ভীষ্ম সে পিতা
উচ্চে আসন হয়ে আছে
শাসক নামধারী চিতা

চিতা থেকে ভেঙে নেওয়া কাঠে
ভ্রষ্ট আগুন শুধু ঘোরে
গালিবের মেয়ে জন্মায়
আজও এই নিষাদশহরে

.      ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
দানবপুর
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন হোক কলরব (২০১৪) এর প্রেক্ষিতে লেখা।    

আমার বন্ধু গিয়েছিল কাল রাতে
হাতে হাত রেখে লড়াই করার ডাকে
সদরদুয়ারে মা-ই দাঁড়িয়েছিল
ত্রস্ত দুচোখে, যেমন সবার থাকে

আমার বন্ধু অনেক বন্ধু মিলে
ক্যাম্পাসে জুটে জাগছিল সারা রাত
কিছু কথা ছিল, কিছু দাবী, কিছু রাগ
বাড়িতে সবার জুড়িয়েছে বাড়া-ভাত

প্রহরার কথা স্লোগানে গেঁথেছে ওরা
আর কিছু নয়, সত্যি জানার টানে
একদল ক্ষুধা নাছোড়বান্দা জেদে
দাউদাউ করে জ্বলে উঠছিল গানে

প্রতিরোধ বড়ো ভয়াল সংক্রামক
এইসব গান মহামারী ডেকে আনে
অবাধ্য পথ কেঁপে কেঁপে ওঠে পায়ে
এ ভয়টুকুই রক্ষককুল জানে

তাই তারা বাছে অন্ধ মধ্যরাত
তাই তারা আসে জংলাপোশাক গায়ে
সাথে ক্রীতদাস, লাঠি আর বন্দুক
ভাতের আগুন পিষে দিতে চায় পায়ে

আমার বন্ধু হাঁক দিয়েছিল রাগে
তার পাশে ছিল মহাসমুদ্রক্রোধ
আলো নিভিয়েই ওরা ভেবেছিল বুঝি
শেষ হল যত অতন্দ্র প্রতিরোধ

বাইরের আলো নেভানোটা বড়ো সোজা
মূর্খ রাজার খেয়ালে একথা নেই –
যারা দেখবার দুচোখ জ্বালাবে তারা
যারা জাগবার তারা ঠিক জাগবেই

আমার বন্ধু মার খেল কাল রাতে
তার প্রেমিকার চুল ছিঁড়ে নিল ওরা
মাটিতে শুইয়ে আরও মার, গর্জন –
‘কঠোর শাসন কাকে বলে দেখ তোরা’

কাল শাসন করেছে রাষ্ট্রগুণ্ডাদল
ঝিকিয়ে উঠেছে খুনমাখা সাদা-দাঁত
রক্ত ঝরেছে লাইব্রেরি, ক্লাসঘরে
গোঙানি শুনেছে নিঃস্ব মধ্যরাত

এক পেট খিদে, চোখজোড়া ঘুম নিয়ে
জমি-না-ছাড়ার আহুতি হয়েছে যারা
তাদের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে ওই
পুলিশের পাশে চোখ রাঙাচ্ছে কারা?

রাঙানো দুচোখ চিরকাল ভুলে যায়
উপড়ে নেওয়ার হাত নয় খুব দূরে
সেই সব হাত আজ রণ-পা হয়ে
এগিয়ে আসছে ভীষণ যাদবপুরে

আমার বন্ধু এখন বন্দী জেলে
তবু কি বন্দী? সেও কী মিছিলে নেই?
আমরা সবাই ধান খেয়ে যারা বাঁচি
ভাতের আগুন ঢেলে দেব মিছিলেই

যে যেখানে আছি শিকলে শান্ত, বাঁধা
সেখান থেকেই চিৎকার করি রাগে –
আসল শাসক রাজাসনে নয়, যারা
সুখে থুথু চাটে সিংহাসনের আগে

ওই করজোড় লাথি মেরে ভাঙা ছাড়া
ভেবে দেখো আর ধর্ম রয়েছে কিনা
ক্রুদ্ধ দুচোখে এই গোটা লেখা জুড়ে
‘ছিঃ’ বলবার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না

.          ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
দুন্দুভি
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন হোক কলরব (২০১৪) এর প্রেক্ষিতে লেখা।    

আবার আজকে বিকেলবেলায়
দেখা হবে রোদজলে
দৃপ্ত আমার পাগল বন্ধু
সহাস্যমুখে বলে –


আমরা সবাই সময়ে আসব
তুই কি ভাবলি, যাবি?
আবার উঠবে দশহাজার মুঠো –
পদত্যাগের দাবী

আবার কাঁপবে ধুলোয় ধুলোয়
আঘাত, রক্ত, কষ্ট
রাজার মুকুটে জ্বল্‌জ্বল্‌ করে
ওই দলদাস – ভ্রষ্ট


তাকে যেতে হবে প্রাঙ্গণ ছেড়ে
এক্ষুনি, এইবেলা
নাহলে আবার রক্ত ছিটিয়ে
ভেঙে দেবে ধুলোখেলা

আমাদের দেশে আমরাই রাজা
আমাদের যত কাব্য
লিখব পাতায়, ইস্তেহারে
দেওয়াল ভরিয়ে ভাবব


যত মার পারে গুন্ডার বুট
তার চেয়ে বেশি জেদ
আরেক জেদকে বার্তা পাঠায় –
সলিডারিটি, কমরেড!

তুমি যদি জানো বন্দুক তুলে
চোখ রাঙাবার বিদ্যে
আমরাও পারি কবিতা নামিয়ে
অস্ত্র-বানানো শিখতে


অস্ত্রে অস্ত্রে দেখা হবে আজ
হাড়ে হাড় লেগে ঘর্ষণ,
কলেজে বলবি, কফি হাউসেও
হ্যাঁ, ভালো কথা, আর শোন

ফেরবার পথে স্টেশনের গাছ
বলে যাবি মরা গলিদের,
হাঁক দিয়ে যাবি দীঘিজলে, আর
হাঁকবি কুমোরটুলিতে


এখনও এ মাটি বিক্রি হয়নি
আকাশ এখনও জিন্দা
যে পথ চলেছে সমুখসমরে
সেই রাস্তাই চিনবার

কুমোরটুলির আবছা আলোয়
ত্রিনয়ন একা জাগে
দশখানা হাত দশদিক হয়ে
হাঁটে মিছিলের আগে


আজ দেখা হবে বিকেলবেলায়
বইপত্রিকা ভিড়ে
আমদের ডাকে কবিতা হাঁটবে
সূচিপত্রটি ছিঁড়ে


আবার ফিরব প্রিয় ক্লাসরুমে
মৃত্যুর বাজি জিতে
শারদোৎসব এবছর হবে
মিছিলে – কলেজস্ট্রিটে ...

.      ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আগুন
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন হোক কলরব (২০১৪) এর প্রেক্ষিতে লেখা।    

ঘুমের ভেতর ঢেউ থাকে না
জেগে উঠলেই যন্ত্রণা
পথের আওয়াজ স্বপ্ন ভেঙে
আছড়ে পড়ে – শান্ত না

নষ্ট দিনের ভ্রষ্ট আওয়াজ
ঘরে ঢোকবার কী দরকার
গোঙানিরব ঢাকার জন্য
গান এনেছে এ-সরকার

বাজাচ্ছে গান পাড়ায় পাড়ায়
গান শোনাচ্ছে ট্র্যাফিকমোড়
জাগার জন্য জীবন আছে
বহাল থাকুক ঘুমটি তোর

আমরাও সেই গানের ফাঁদে
স্বপ্ন দেখি সরকারী
মিছিলদিনে বৃষ্টি এত
পৌঁছতে কি আর পারি?

আঁচ-বাঁচানোর বোলতানি সব
বৃষ্টি, অসুখ, ব্যস্ততা
আসল অসুখ আরামচেয়ার
শিরায় শিরায় বশ্যতা

আজকে যারা জাগার কথা
বলতে বলতে হাঁটছে ওই
জিন্দা তাদের রক্তমাংস
ভিজছে দারুণ, ভাগছে কই?

একটা মিছিল দেখছ পথে
তাতেই এত অশান্তি
মধ্যরাতে বুটের মুখে
জন্ম নিল অগুন্তি

রক্তবীজ ওই মিছিলগুলো
মরবে তবু থামবে না
যে ঘুমোচ্ছে – মুক্তিটি তার
স্বপ্ন থেকে নামবে না

কলরবের পাগলগুলো
দিচ্ছে কথা – হাঁটবে ফের
স্বপ্নশাসন দুখান করে
করবে শাসন স্বপ্নদের

ওদের স্বপ্ন রক্তে আমার
উল্লাসিত, বাড়ায় ভিড়
রাস্তা থেকে ডাক পাঠাচ্ছি –
ঘুম ভেঙে যাক বন্দীটির

নতুন স্লোগান হতেই পারে –
‘আমিও যাব, দাঁড়াস তো’

হাঁটার জন্য পা লাগে না
আগুনটুকুই যথেষ্ট !

.      ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
দখল
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন হোক কলরব (২০১৪) এর প্রেক্ষিতে লেখা।    

পিঠে মার নিয়ে যখন শিখছি আগুন পেরিয়ে যাওয়া
মিছিলের থেকে স্লোগান উড়িয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে হাওয়া

হাওয়া তো পাগল, ঘরবাড়ি নেই, যেই দেখে হানাদারি
বুক পেতে দেয় লাঠি-বন্দুকে – আমিও লড়তে পারি

দল নেই ওর, রাজনীতি নেই, শুধু কান্নার পাশে
গান এনে রাখে আলোয় আলোয়, গান এনে দেয় ঘাসে

হাওয়ার ফুলকি গায়ে লাগতেই ভিনরাজ্যও হাঁটে
জেএনএউ থেকে আওয়াজ মিশছে যাদবপুরের মাঠে

যারা সারা রাত মার খায় আর পোস্টার লেখে জেগে
তারা একা নয় – ওই দেখো দেশ ঘুমোয় না উদ্বেগে

একে একে এসে ভিড় করে মাঠে হাজার বন্ধু, ভাই
অগ্নিকুণ্ড ঘিরে রব ওঠে - দ্রুত সুবিচার চাই

চিৎকার লেগে কুশের পুতুল লহমায় জ্বলে খাক
অসুররাজার ঘুম ভেঙে দেয় হল্লা বোলের ডাক

কাঁপছে আকাশ, কাঁপছে বাতাস –এই জল্লাদরাজ না
ক্ষতচিহ্নেরা এক হলে পরে হৃৎস্পন্দও বাজনা

বাজনা বাজছে বাজনা বাজছে হাতে হাত তালে তাল
আজ বিকেলের মিছিল বলছে – আবার আসব কাল

কাল দেখা হবে সংহতিগান, আবার হাঁটব একজোট
নদীও বলেছে কালকে পাঠাবে উত্তাল যত তার স্রোত

সে স্রোতে ভাসাব ক্যাম্পাস-ঘেরা যত লালচোখ গুন্ডা
ভয় দেখাচ্ছে চুয়াল্লিশের পা-চাটা কখানা বান্দা

কাল দেখে নিও জংলাপোশাক ‘মানবিক’ প্রতিপক্ষ –
চুয়াল্লিশের চোখে চোখ হানে কয়েক হাজার লক্ষ!

.                ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*