কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
নির্ঘোষ
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন হোক কলরব (২০১৪) এর প্রেক্ষিতে লেখা।    

শব্দের পাশে শব্দ বসে আগুন জ্বালায়, জ্বালায় রোষ
তাদের মধ্যে শান্ত সেতু, ওই যে নীরব শঙ্খ ঘোষ

দাঁড়-পাঁজরের ভীষণ আওয়াজ, জল-বাতাসের কী আক্রোশ
আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ঢেউ ভেঙে যান শঙ্খ ঘোষ

মধ্যরাত্রি, বর্বরতা – ফুরিয়ে আসছে অস্ত্রকোষ
নিজের হাড়ে বজ্র গড়ে যুদ্ধে দিলেন শঙ্খ ঘোষ

অবাক মুন্ডু হেঁট হয় না – রাজদ্রোহীর এই তো দোষ
দ্রোহ যখন শরীর পেল, আমরা পেলাম শঙ্খ ঘোষ

আসন যতই হোক না উঁচু, আসন তবু – আকাশ নোস্‌
সেই আসনেও ঘেরাও হবে, রাত জাগবেন শঙ্খ ঘোষ

কবজাগুলোর কবজি ভাঙে তাই তো তাদের অসন্তোষ
পোস্টারে ওই পংক্তিগুলোয় তাকিয়ে আছেন শঙ্খ ঘোষ

চুল্লিগুলো উঠবে জ্বলে যতই পুলিশ, গুন্ডা পোষ
তোমার দেহেই ফুঁ দিয়েছি, লড়াই শুরু – শঙ্খ ঘোষ!

.          ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
হোক কলরব
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন হোক কলরব (২০১৪) এর প্রেক্ষিতে লেখা।    

এখনও যে তুমি ঠিক করোনি
আজকে মিছিল তোমার কি না
তাকেই বলছি – তোমায় ছাড়া
‘হোক কলরব’ জোর পাবে না

এখনও যে তুমি কষছ হিসেব
কার অন্যায়, কার কী দোষে
ডাকছি তোমায় – স্নান করে যাও
আজ আমাদের দারুণ রোষে

এখনও যে আছো দ্বন্দে-দ্বিধায়
রাজার আঙুল স্বপ্নে দেখো
ভয় পেয়ো না – ও-হাতখানা
অক্ষত আর থাকবে নাকো

হাড়ের আসন কবজা করে
তর্জনীর আজ স্পর্ধা ভারী
ভুলেই গেছে – গড়ার মজুর
এক নিমেষে ভাঙতে পারি

ডাক উঠেছে অন্ধরাজা
এক্ষুনি ওই তখ্‌ত ছাড়ো
দুলছে মালা মৃত্যুফুলের  
দেখব কত মারতে পারো

যে তুমি এখনও শান্ত আছো
ভাবছ হাঁটবে হুকুমমতো
কাল দেখবে নিজের ঘরে
নিজেই কেমন বহিরাগত!

আজকে মিছিল দিনবদলের
হার না-মানা বিচার-চাওয়া
রাজপথে আজ ভয়-না-পেয়ে
পুলিশকর্ডন পেরিয়ে যাওয়া

পুলিশকর্ডন রাত চিরে খায়
পুলিশকর্ডন কন্ঠরোধে
চাইছে ওরা শাসন ছড়াক
আমার প্রেমে তোমার বোধে

তোমার মেয়ের ছেঁচড়ে শরীর
দম্ভ ছেঁড়ে আব্রু, কাপড়
একবারটি তাকিয়ে দেখো –
পুলিশ তোমার বুকের ওপর

আজকে মিছিল হাড়মাংসের
দহনভাষায় কাব্য লেখার
বুকের থেকে উপড়ে শাসন
চোখ-রাঙানি ভাঙতে শেখার

দাবানলের গাছগুলো সব
ঘিরছে শহর কদমতালে
জানলা দিয়ে তুমিও ঠিক
মুখ বাড়াবে কৌতূহলে

সাহস পেয়ে রাস্তা ভাবে
যাক জ্বলে যাক এ রৌরব
শিকল-ছেঁড়ার বন্ধু এসো –
হোক কলরব হোক কলরব ...

.       ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
গ্রাস
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন হোক কলরব (২০১৪) এর প্রেক্ষিতে লেখা।    

বন্ধ দরজা বন্ধ দরজা তুমি শুধু সব জানো –
কীভাবে সজীব সাদাকালো ঘুঁটি
অক্ষমতার ছকজুড়ে সাজানো

বন্ধ দরজা বন্ধ দরজা রাজা এল কাল ঘরে
যারা মার খেল আমার মেয়ের হয়ে
সেই মুখগুলো বড্ড মনে পড়ে

বন্ধ দরজা বন্ধ দরজা শিরদাঁড়া বেঁকে যায়
লালবাতিটির আলো এসে পড়ে
ইজ্জতে আর আমার মেয়ের গায়

বন্ধ দরজা বন্ধ দরজা অপরাধ নিও না
হাঁটতে গেলাম অন্ধ দু-চোখে
পুতুলখেলায় বিকিয়ে দিলাম পা

বন্ধ দরজা বন্ধ দরজা আর কী করব বলো
জেগে ওঠবার ভীষণ ক্ষণেই
চাপা হুঙ্কার - সন্ধ্যা নেমে এল

সন্ধ্যা নামে সন্ধ্যা নামে দেশজুড়ে ভয়ভয়
শকুনির ওই চতুর দাবায় দেখো
আমার মেয়ের লজ্জা বিক্রি হয়

বন্ধ দরজা বন্ধ দরজা চৌদিকে ক্রুর থাবা
পরের জন্ম যদি দিতে চাও –
আর যাই করো, কোরো না মেয়ের বাবা

ক্ষমা চাইলাম তোমাদের কাছে ওই যারা উত্তাল
আজকে যে দোর বন্ধ রয়েছে
তোমরাই এসে লাথি মেরে ভেঙো কাল

দেখো নিও তার ভেতরে স্তব্ধ মুখচাপা কলরব
বিশ্বাস করো – আজ হাঁটেনি বাবা
হাঁটতে গিয়েছে পরাজিত তার শব

.           ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ধুলোপথ বারুদপথ
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন হোক কলরব (২০১৪) এর প্রেক্ষিতে লেখা।    

তুমি কি ভিজে গেছ খুব? আজ কি হেঁটেছ মিছিলে?
তুমিই কি দূর-থেকে-আসা কিশোরকে পথ বলে দিলে

এই প্রথম মিছিলে আসা। একাই। নন্দন চেনে না ও ছেলে
তুমি কি যাওনি আজ, ভোর থেকে জল হল বলে?

সেদিনও জলের মতো মাঝরাতে ঝরেছিল শতধারা খুন
চিনতে পারোনি ঠিক, শোনো বলি – জল আজ আসলে আগুন

দেখে নিল সঙ্গে কে কে আছে কার আছে বুকফাটা রাগ
আর কে কাঁপে বৃষ্টিভয়ে, লুকোয় উল্কি আঁকা ক্রীতদাস-দাগ

তুমি কি বসেছ ধুলোয়, বলেছ হোক হোক কলরব হোক
অদূরে নিথর ক্ষমতাসীমা টানা – ত্রিস্তরে কাঁপছে শাসক

এভাবে কি রোখা যায় আর, হে আদিম বুরবক সেনা
শব্দ রুখতে পারো? রোখো তবে মেঘে মেঘে ক্রুদ্ধ চেতনা

সে মেঘ বার্তা নিয়ে পৌঁছল দূরদেশে, সেই জলে বন্ধুরা বুঁদ
আসতে পারেনি তবু রাত-জাগা – মনে মনে সবাই বারুদ!

এসেছে গঞ্জ গ্রাম, এসেছে মফস্বল, ‘আছি’ বলে এসেছে সবাই
যে আজ আসেনি সে-ও আগামীর রণে – ভাববে একবার যাই

তুমি কি রাজপথ, ছেলেরা বসবে শুনে ধুলোমাখা বুক পেতে দিলে?
আজকে বর্ষা ঘোর, তবু জল নয় – গোটা দেশ ভিজেছে মিছিলে ...

.                     ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কুশপুতুল
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন হোক কলরব (২০১৪) এর প্রেক্ষিতে লেখা।    

না, গুন্ডা ছিল না কোনো, ছিল না মনে কোনো বিষ
শুঁড়ির সাক্ষী ওই চিরকালই বলে – লাঠিচার্জ করেনি পুলিশ

শুধু নরম মনে নিয়মমাফিক সরিয়ে দিয়েছে বহিরাগত
তবে আকাশ থেকে উল্কা পড়ে আমার মেয়ের বুকের ক্ষত

ধক্‌ধক্‌ করে জ্বলছে এখন সর্বগ্রাসী অন্ধকারে
ডুবন্ত লোক খড়কে পেলেও ভীষণ জোরে জড়িয়ে ধরে

আর সেইদিন বন্ধুর পাশে আতঙ্করাত জাগতে দিয়ে
ফিরছে দেখো ক্রুদ্ধ তরুণ, ‘বহিরাগত’ নামটি নিয়ে

নাকি, বাইরে থেকে অস্ত্র হাতে লোক ঢুকেছে পড়ার দেশে
কলম গিটার অস্ত্র এখন – এসব কথাই কী অক্লেশে

ছড়িয়ে দিয়ে রাজার গোলাম পা-চাটবার শপথ নিল
এসব গল্পে ভুলছে না আর ছেঁচড়ে-টানা শরীরগুলো

সেইরাত্রে লাঠির ঘায়ে আঁকছিল যারা বিপুল ধ্বংস
নিজেই জানে না ও–লাঠি কখন তাদের দেহের গভীর অংশ

অংশটি শুধু বশ্যতা জানে রাজভক্তির পরমোৎসবে
ওই দেহ ভেঙে আগুনে আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার যজ্ঞ হবে

আজ মাটির ওপর রক্তবিন্দু রাস্তা আঁকছে অনেক দূর
সে পথ দিয়ে মানুষ হওয়ার ডাক পাঠাচ্ছে যাদবপুর

.                     ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মহালয়া
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন হোক কলরব (২০১৪) এর প্রেক্ষিতে লেখা।    

ক্রমশ কেটে যাচ্ছে কুমোরটুলির বিষণ্ণ অন্ধকার।
খড়, মাটি, রঙ-তুলি, দুঃখ ও তেজে
একটু একটু করে ফুটে উঠছ তুমি।

কুমোর পিতার স্পর্শে প্রত্যেক খড়ে আজ ধমনীর গুণ
মাংসের সুদীর্ঘ যন্ত্রণায় থর্‌থর্‌ কেঁপে উঠছে মাটি
ঠিক নিজের মেয়ের মতো তোমায় কালো কেশরাশি
দিয়েছে কুমোর।

শূন্যতা থেকে শরীর নিচ্ছ, সর্বভূত থেকে
গ্রহণ করছ ক্রোধ,
অন্ধকার আকন্দঝোপ থেকে বিক্ষত কন্যা
তোমায় পাঠিয়েছে বজ্রের হাড়
ক্রন্দিত পিতা দিলেন কমণ্ডলু, হাহাকারজল

ঊষালোক এসে কুমোরটুলির শিরে
ছড়িয়ে দিয়ে গেল একমুঠো শিউলির ফুল

ওই দেখো কাঁপে রাজপথ –
এক অবিনাশী মিছিল আজ বয়ে আনে তোমার ত্রিশূল ...

.                 ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পরিচয়পত্র
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন হোক কলরব (২০১৪) এর প্রেক্ষিতে লেখা।    

তোমায় আমি চিনতাম না।

তুমিও কি আমায় চেনো?

প্রথম দেখি আবছা আলোয় যখন তুমি মধ্যরাতে
হুকুম তামিল করতে এলে
নীল থাবাতে
ভাঙতে গেলে আমার কন্ঠ, শিরদাঁড়াটি

আলোও লাগে, হাওয়াও লাগে চিনতে গেলে
আমার মাটি

তারই সঙ্গে রাগও লাগে!

মায়ের অথই জলের বাড়ি চিনতে হলে
চুমোর সঙ্গে হলুদ-লাগা শুভ্র হাতের মারটি লাগে

ধানের বুকে রক্তঘামের কাব্যগুলির
ছন্দ যখন শিরায় শিরায় বোধন আনে
আমার দেশের ক্রুদ্ধ ও মুখ আকাশজুড়ে ওই তো জাগে

তাই দেখে কী থাকতে পারি?
দৃপ্ত আমার পায়ের মিছিল ঘুরতে ঘুরতে দারুণ রাগে

যখন দেখে দূরের কজন দাঁড়ায় পাশে –
এক নিমেষে বন্ধু বলে ঠিক চিনে যাই মারের দাগে

আমার গিটার আমার কলম আর বেহালার সুরকে যখন
অস্ত্র বলো
তখন তুমি আর তোমার ওই দাসের দলও
উলটো দিকে দাঁড়িয়ে পড়ে – মধ্যে কেবল মত্ত শাঁখের শব্দ শুনি

তোমার আমার স্বরূপ চেনে উথালপাথাল যুদ্ধভূমি

সদ্যোজাতক বধির কিনা, ওর দু-ঠোঁটে শব্দ কিনা
জানতে যখন ঝাঁকায় তাকে – উৎসারিত কান্না জাগে

তেমন কিছু অশ্রু আমার, যখন শুনি

আমায় চিনতে তোমার এখন সব দরজায় রক্ষী লাগে!

.                 ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
স্লোগান
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন হোক কলরব (২০১৪) এর প্রেক্ষিতে লেখা।    

তোমার জন্য আজকে দেখো পিঠের ওপর দগ্ধ ক্ষত
তোমার জন্য দরজা ঘিরে রাত জেগেছে বহিরাগত

তোমার জন্য গান গেয়েছে, মার খেয়েছে ছেলের দল
আসবে তুমি আকাশ হয়ে, মুক্তধারায় নতুন জল

সেই জলে স্নান সারবে বলে দাঁড়িয়ে আছি দেশজুড়ে
তোমার নিশান বর্ধমান আর মিশিগানেও ওই ওড়ে

তোমার জন্য বিশ্বজুড়ে একশো শহর স্লোগান লেখে
তোমার মুখটি দেখবে বলে অন্ধ ছেলেও হাঁকতে শেখে

হাঁকতে হাঁকতে দূরদূরান্ত মারের মুখেও বন্ধু হয়
শেখাও তুমি গর্জে ওঠা, তুমিই শেখাও সমন্বয়

তোমার জন্য দু-মুঠো চাল আজ দেখি মা বেশিই নেয়
মায়ের পাগল পথের পাথর রক্ত ঢেলে ধুইয়ে দেয়

ওই যে ছেলে ওই যে মেয়ে বুটের মুখেও অচল, স্থির
তোমার জন্য অতীত গানে নতুন স্তবক মৌসুমির

কখন দ্বারে শব্দ হবে - প্রহর জাগি অপেক্ষায়
যাদবপুরের ভাইয়ের জন্য ভ্রমরদিদির কান্না পায়

অশ্রু ওড়ে অশ্রু ওড়ে – শাসক দেখে অলিন্দে
উড়তে উড়তে জলও আগুন তূণ ভরে দেয় স্ফুলিঙ্গে

কলরবের ঝান্ডা তুলে দুনিয়াজোড়া বন্ধুরাজ
তোমার জন্য লিখবে বলে আঙুলগুলোও অস্ত্র আজ!

.                 ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
জবাব
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন হোক কলরব (২০১৪) এর প্রেক্ষিতে লেখা।    

এই যে দাঁড়ালাম, আর সরছি না কিছুতেই।

রাজদন্ড নয়, আমি উত্তর চাই – দূরে তুমি প্রশ্নের ভয়ে
কেঁপে কেঁপে ওঠো,
ভাবো তোমার ওই সোনার শিরদাঁড়া বুঝি ছিনিয়ে নিতে চাই!

তুমি পুলিশ পাঠাও – আমি সরছি না
গুণ্ডামহল্লা উজাড় করে নামাও দমনে
দেখো - একেকটা আঘাতের মুখোমুখি আমাকে ঘিরে দাঁড়ায়
আরও এক এক আমি

সেই তিয়েনয়ামেন থেকে দাঁড়িয়ে আছি।
আমিই দাঁড়িয়ে ছিলাম যখন বসন্তে কলম্বিয়ায় –
আমার প্রত্যেক মুখে তখন দাউদাউ করে জ্বলছে ভিয়েতনাম।
আমিই সোরবর্ন থেকে চেয়ে আছি নিষ্পলক
আর আশঙ্কায় ঘামে ভিজে যাচ্ছে তোমার ফ্যাকাশে কাগজের মুখ

আমার দিকে পাথর তাক করে তুমি যত বলছ – পাথর
তুমি যত বলছ – নেশায় চুর
যত তুমি বলছ – ভ্রষ্ট

ততই আমার পায়ের পাতা থেকে, ঊর্ধ্বাকাশ থেকে
নাভীর কেন্দ্র থেকে
উঠে আসছে
নেমে আসছে
ঘিরে ধরছে নেশা – সে-ই আমার নাছোড়বান্দা জেদ –
সমস্ত বন্ধুর পথ, উত্তাল সমুদ্রজলরাশি অতিক্রম করে
মৃত্যুঞ্জয় নেশায় জারিত, বলছি –
উত্তর দাও
উত্তর দাও
উত্তর না জেনে একচুলও নড়ব না।

নড়ব না বলেই শুয়ে আছি Tlatelolco-র রাত্রিজোড়া শব
আমার শরীর দাঁতে নখে করে ছিঁড়ে নিতে চায় জাকার্তা শ্বাপদসঙ্কুল
কত শতাব্দীকাল তোমার বুলেট শরীরে সঞ্চয় করে করে
আজ অগ্নিগর্ভ থেকে ছুঁড়ে দিই একেকটা জিজ্ঞাসা

তোমাকে প্রশ্ন করে
আমি অপেক্ষায় আছি –ভ্রষ্ট, নেশাতুর, জেদী ও প্রেমিক

তোমার ত্রস্ত শাসন ঝাঁপিয়ে পড়ে আর উল্লাস করে বুট বন্দুক লাঠি

যবে থেকে চোখে চোখ রেখে রয়েছি নিশ্চল
সেইদিন থেকে প্রত্যেক পাথরের গায়ে, প্রতিশ্রুত
ফুটে আছে তার সঙ্গী ঝর্ণাটি!

.          ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বীজপুর
কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
২৫.৪.২০১৬ কবির ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া।
এপ্রিল ২০১৬-এর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে অভূতপূর্ব হিংসা
ছড়ায়, তাতে বীজপুরে, ২৪.৪.২০১৬ তারিখে, একটি ৩ বছরের শিশুকেও আঘাত করা
হয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে লেখা কবির প্রতিবাদ।
   


বড়ো হলে সেরে যাবে ব্যথা -
এ-কথায় ভোলাব কি তাকে?
যার মা নাছোড় সিপিএম
যার বাবা বীজপুরে থাকে?

যখন জিজ্ঞাসা করি -
শরীরে কারা দিল মার?
চেনে না 'মানুষ' ঠিক কারা
শুধু বলে - আমার ... আমার ...

সাড়ে তিন বছরের 'আমি'
মায়ের কোলে চড়ে শেখে -
ভোরের সব মার ভুলে
যেতে হবে কেন্দ্রের দিকে

এইভাবে অনেকটা পথ
পেরোতে পেরোতে বড়ো হওয়া
এইভাবে মার খেতে খেতে
দেহটার দেশ হয়ে যাওয়া

সেই দেশে ভিরু ধানক্ষেতে
কাস্তের মতো ওঠে চাঁদ
সেই দেশে হাতুড়ির ঘায়ে
ঘেমে ওঠে মজুরের কাঁধ

আর লেখা হয় শিলালিপি
মুখ ও মুখোশ চেনো কার
ক্ষত থেকে স্ফুলিঙ্গ ওঠে
সব আঘাত মনে রাখবার

ও যদি ভুলেও যায় তবু
আমি ভুলব না - এই রোখ
সাড়ে তিন বছরের গায়ে
'মা-মাটি-মানুষ'এর নখ ...

.          ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*