মহালয়া কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন হোক কলরব (২০১৪) এর প্রেক্ষিতে লেখা।
ক্রমশ কেটে যাচ্ছে কুমোরটুলির বিষণ্ণ অন্ধকার। খড়, মাটি, রঙ-তুলি, দুঃখ ও তেজে একটু একটু করে ফুটে উঠছ তুমি।
কুমোর পিতার স্পর্শে প্রত্যেক খড়ে আজ ধমনীর গুণ মাংসের সুদীর্ঘ যন্ত্রণায় থর্থর্ কেঁপে উঠছে মাটি ঠিক নিজের মেয়ের মতো তোমায় কালো কেশরাশি দিয়েছে কুমোর।
শূন্যতা থেকে শরীর নিচ্ছ, সর্বভূত থেকে গ্রহণ করছ ক্রোধ, অন্ধকার আকন্দঝোপ থেকে বিক্ষত কন্যা তোমায় পাঠিয়েছে বজ্রের হাড় ক্রন্দিত পিতা দিলেন কমণ্ডলু, হাহাকারজল
ঊষালোক এসে কুমোরটুলির শিরে ছড়িয়ে দিয়ে গেল একমুঠো শিউলির ফুল
জবাব কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন হোক কলরব (২০১৪) এর প্রেক্ষিতে লেখা।
এই যে দাঁড়ালাম, আর সরছি না কিছুতেই।
রাজদন্ড নয়, আমি উত্তর চাই – দূরে তুমি প্রশ্নের ভয়ে কেঁপে কেঁপে ওঠো, ভাবো তোমার ওই সোনার শিরদাঁড়া বুঝি ছিনিয়ে নিতে চাই!
তুমি পুলিশ পাঠাও – আমি সরছি না গুণ্ডামহল্লা উজাড় করে নামাও দমনে দেখো - একেকটা আঘাতের মুখোমুখি আমাকে ঘিরে দাঁড়ায় আরও এক এক আমি
সেই তিয়েনয়ামেন থেকে দাঁড়িয়ে আছি। আমিই দাঁড়িয়ে ছিলাম যখন বসন্তে কলম্বিয়ায় – আমার প্রত্যেক মুখে তখন দাউদাউ করে জ্বলছে ভিয়েতনাম। আমিই সোরবর্ন থেকে চেয়ে আছি নিষ্পলক আর আশঙ্কায় ঘামে ভিজে যাচ্ছে তোমার ফ্যাকাশে কাগজের মুখ
আমার দিকে পাথর তাক করে তুমি যত বলছ – পাথর তুমি যত বলছ – নেশায় চুর যত তুমি বলছ – ভ্রষ্ট
ততই আমার পায়ের পাতা থেকে, ঊর্ধ্বাকাশ থেকে নাভীর কেন্দ্র থেকে উঠে আসছে নেমে আসছে ঘিরে ধরছে নেশা – সে-ই আমার নাছোড়বান্দা জেদ – সমস্ত বন্ধুর পথ, উত্তাল সমুদ্রজলরাশি অতিক্রম করে মৃত্যুঞ্জয় নেশায় জারিত, বলছি – উত্তর দাও উত্তর দাও উত্তর না জেনে একচুলও নড়ব না।
নড়ব না বলেই শুয়ে আছি Tlatelolco-র রাত্রিজোড়া শব আমার শরীর দাঁতে নখে করে ছিঁড়ে নিতে চায় জাকার্তা শ্বাপদসঙ্কুল কত শতাব্দীকাল তোমার বুলেট শরীরে সঞ্চয় করে করে আজ অগ্নিগর্ভ থেকে ছুঁড়ে দিই একেকটা জিজ্ঞাসা
তোমাকে প্রশ্ন করে আমি অপেক্ষায় আছি –ভ্রষ্ট, নেশাতুর, জেদী ও প্রেমিক
তোমার ত্রস্ত শাসন ঝাঁপিয়ে পড়ে আর উল্লাস করে বুট বন্দুক লাঠি
যবে থেকে চোখে চোখ রেখে রয়েছি নিশ্চল সেইদিন থেকে প্রত্যেক পাথরের গায়ে, প্রতিশ্রুত ফুটে আছে তার সঙ্গী ঝর্ণাটি!
বীজপুর কবি শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় ২৫.৪.২০১৬ কবির ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া। এপ্রিল ২০১৬-এর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে অভূতপূর্ব হিংসা ছড়ায়, তাতে বীজপুরে, ২৪.৪.২০১৬ তারিখে, একটি ৩ বছরের শিশুকেও আঘাত করা হয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে লেখা কবির প্রতিবাদ।
বড়ো হলে সেরে যাবে ব্যথা - এ-কথায় ভোলাব কি তাকে? যার মা নাছোড় সিপিএম যার বাবা বীজপুরে থাকে?
যখন জিজ্ঞাসা করি - শরীরে কারা দিল মার? চেনে না 'মানুষ' ঠিক কারা শুধু বলে - আমার ... আমার ...
সাড়ে তিন বছরের 'আমি' মায়ের কোলে চড়ে শেখে - ভোরের সব মার ভুলে যেতে হবে কেন্দ্রের দিকে
এইভাবে অনেকটা পথ পেরোতে পেরোতে বড়ো হওয়া এইভাবে মার খেতে খেতে দেহটার দেশ হয়ে যাওয়া
সেই দেশে ভিরু ধানক্ষেতে কাস্তের মতো ওঠে চাঁদ সেই দেশে হাতুড়ির ঘায়ে ঘেমে ওঠে মজুরের কাঁধ
আর লেখা হয় শিলালিপি মুখ ও মুখোশ চেনো কার ক্ষত থেকে স্ফুলিঙ্গ ওঠে সব আঘাত মনে রাখবার
ও যদি ভুলেও যায় তবু আমি ভুলব না - এই রোখ সাড়ে তিন বছরের গায়ে 'মা-মাটি-মানুষ'এর নখ ...