কবি শাশ্বতী গাঙ্গুলীর কবিতা
*
ঘুম ভেঙে যায়
কবি শাশ্বতী গঙ্গোপাধ্যায়

ঘুম ভেঙে যায়---
.        কি এক নিথর ব্যথায় উঠে বসি,
তোমাকে বলেছি বহুবার রাত বড় দীর্ঘ লাগে
.        তুমি নিরুত্তাপ।
পাশে কেউ আছে আজ, একদিন সে ছিল শুধুই আমার
ঘুম ভেঙে যায়---দেখি, খুঁজি এলোমেলো চুলগুলো
.                                        বালিশের পর।
হাত বাড়াতে চাই, মুঠো ভরা শূন্যতা রাত্রি নীরব।
.        তুমি এসে হাত রাখো হাতের ওপর।
কি চাই তোমার কাছে, কতটুকু পার তুমি দিতে
.        যতটুকু দাও ভোরের আলোর থেকে হেঁটে হেঁটে
.                পায়ে পায়ে কথা বিনিময়।
তুমি বল কি করেছি আমি ?
.                        ভালোবাসা এক নিরাময়।
আমার ক্লান্তি আসে, চোখ বুজে প্রাণপণে,
.                        ঘুম চাই আমি।
এসো, চোখে হাত রাখ, একবারও আসবে না তুমি ?
.        অভিমান, শতমান, মাঝে কত ব্যবধান,
.                ছোট ছোট ভুল, সব ভুলে যেতে চাই
আমি পারি না এখন।
.                একা একা
তাই বার বার একা হতে হয়।
.        ঘুম ভেঙে যায়---
চোখ বুজি, মন থেকে উঠে আসে
এক অনুভব --- ভয় নয়,
.        নিরন্তর অবক্ষয়, সংশয়হীন---
জীবনের কাছে বুঝি ছিল এই ঋণ ?

.           ********************  

.                                                                                   সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
অন্ধকারে হাত রেখেছি
কবি শাশ্বতী গঙ্গোপাধ্যায়

অন্ধকারে হাত রেখেছি, অন্ধকারে ব্যথা
অন্ধকারে বুকের মাঝে জমাট নীরবতা।
অন্ধকারের মধ্যে ঘুমোই, অন্ধকারও জাগে---
অন্ধকারই জড়িয়ে ধরে আলোর অনেক আগে॥

.              ********************  

.                                                                                   সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ও হাত যেন ধরাই থাকে তার
কবি শাশ্বতী গঙ্গোপাধ্যায়

ও হাত যেন ধরাই থাকে তার,
মুঠো যেন হয় না শিথিল,
হৃদয় তবু বইতে পারে ভার।
ও হাত যেন ধরাই থাকে তার।

.         ********************  

.                                                                                   সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
তুমি আসছো এটাই ভালো ছিল
কবি শাশ্বতী গঙ্গোপাধ্যায়

তুমি আসছো এটাই ভালো ছিল।
.        ঝরা শিউলিতে হাসি ছিল লেগে,
কাশফুলের দোলা ছিল হাওয়ায়,
.        শরতের আকাশটাতে অনেক আলো ছিল।
তুমি আসছো, এটাই ভালো ছিল।
.        আসবে বলে মেঘের হুড়োহুড়ি,
নতুন শাড়ি, পূজোর গন্ধ মাখা মন
.        তুমি আসবে বলে আনন্দ সারাক্ষণ।
তুমি এলে নদী বয়ে গেল---
.        মেঘের ফাঁকে খুশী ঝিলিক দিল।
তুমি আসবে, কাল আসবে জানি
.        রাতের বুকে চোখ রাখলাম আমি।
কান পাতলাম, ভোরের পাখী মনে,
.        রাত ফুরোলেই দেখা তোমার সনে।
সবুজ সকাল, স্নিগ্ধ আলো, হাওয়া---
.        সবই ছিল যা হয়নি পাওয়া---
তোমার সাথে নতুন সাথি এল।
.        তাকিয়ে দেখি কি যেন আজ হল---
.                তুমি আসছো, এটাই ভাল ছিল।

.                  ********************  

.                                                                                   সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কেউ ছুঁয়ে দেখেনি আমায়
কবি শাশ্বতী গঙ্গোপাধ্যায়

কেউ ছুঁয়ে দেখেনি আমায়---
.        হাওয়া এসে ছুঁয়ে যায়---
ঠিক এখানটায়। বৃষ্টির জল শুধু ছুঁয়েছিল
আর কেউ! এলোমেলো অগোছালো
কোনো রাতও নয়। কেউ ছুঁয়ে দেখেনি আমায়
ঠিক এখানটায়। সন্ধ্যের আগে একছুটে
ছাদে গিয়ে আকাশের নীচে---
.        দাঁড়িয়ে থেকেছি আমি,
ওপরে আকাশ শুধু দেখেছে আমায়---
.        বৃষ্টি পড়েনি তবু ঠিক এখানটায়॥

.            ********************  

.                                                                                   সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সূর্য ডোবা মন
কবি শাশ্বতী গঙ্গোপাধ্যায়

সূর্য ডোবা মন, সন্ধ্যের বাতায়ন।
হঠাৎ কোন হাওয়া, স্মৃতির নৌকা বাওয়া।
ছাদে ওঠার সিঁড়ি, বুকের তিরিতিরি।
উঠে এলেই আকাশ, অসীম অবকাশ।
ভাবনার রঙ হলুদ, বসন্তেও মন দুলুক।
গ্রীষ্ম, বর্ষা শেষ, শিউলি ফোটা দেশ।
দুজনে পাশাপাশি, পূজোর গন্ধে ভাসি।
স্বপ্ন দেখার শখ, হেমন্তে নীরব,
শীত ছুঁয়েছে তাকে, বিষন্নতা থাকে।
সূর্য উঠছে আজ ? --- এসব কথা থাক॥

.            ********************  

.                                                                                   সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সে এক নদী
কবি শাশ্বতী গঙ্গোপাধ্যায়

এক ঝলক রোদের মত তুমি নও,
.        মনে পড়ে তোমার স্মৃতি।
এক সে নদী চলেছিল এঁকে বেঁকে
.        জীবন স্রোতে খুশীর তালে মুখরিত,
.        বিশ্বাস আর ভালোবাসায় উচ্ছ্বসিত।
সেই জলেতে অবগাহন, প্রাণ জুড়ালো
.        তৃষ্ণা তোমার কি নিদারুণ!
মধ্যাহ্নের আকাশজোড়া ব্যাপ্তির আঁচ
.        পুড়িয়ে দিল নদীর জলের শীতলতা,
.        নদীর সাথে শুরু হল তোমার কথা।
পাহাড় পথ পেরিয়ে এল মুখর নদী---
.        স্বচ্ছ জলে চিত্ত তোমার আকুলিত,
.        পারত যদি নদী তোমায় আর কি দিত ?
উপলরাশি বুকের মাঝে, জমা মাটির ভার
তোমার গতির সাথে নদীর চলতে পারাই ভার।
মন্থর এক ছন্দ এল, নদীর গতি হারিয়ে গেল।
হারিয়ে গেল, ফুরিয়ে গেল নদীর চোখে জল।
তোমার বুকে আর এক নদী---
.                        সোহাগ টলমল।

.            ********************  

.                                                                                   সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ঋতুপর্ণ তোমাকে
কবি শাশ্বতী গঙ্গোপাধ্যায়

তোমাকে কেউ হীরের আংটি দেয়নি,
.                কিন্তু তুমি দিয়েছিলে সব্বাইকে।
তোমাকে অথবা তোমার রোববারগুলোকে তো
.                কেউ সাজিয়ে দিত না,
অথচ তুমি একার কাঁধে তুলে নিয়েছিলে---
.        সব্বাইকার রোববারগুলোর আরও
.                সুন্দর করে তোলার দায়িত্ব।
তুমি তো কখনো নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চাওনি,
.        তবু সবাই অথবা অনেকে মিলে
.                তোমাকে নিয়ে কানাকানি, হাসাহাসি
.                                        করত।
কিন্তু তারা তো কোনদিন ‘তুমি’ হয়ে উঠতে
পারবে না। তারা যে শুধু ‘তারা’, সীমাবদ্ধ
আর মননে, লিখনে, ছবিতে--- তুমি যে
.                অফুরান, তুমি অনন্ত।
তুমি তো কারো বায়লজি নিয়ে মাথা ঘামাতে না,
কিন্তু তোমার বায়লজি সঠিক নির্ধারণের
.                        কি কৌতূহল।
তুমি ঘুমিয়ে পড়লে, অভিমানে নাকি ক্লান্তিতে
.                        জানিনা।
ঘুম ভাঙলে দেখতে পেতে তুমি কোথায়,
হৃদয়ের কোন মণিকোঠায়।
অজানা দেশে যেখানেতে গেছ --- একাকীত্ব ভুলে
.                        সেখানেই থাকো।
আমি আর কতটুকু : কিই বা দিতে পারি তোমায়
.        তবু বলি সেখানেতে গিয়ে তুমি ভালো থেকো।

.                  ********************  

.                                                                                   সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
আমার কথা
কবি শাশ্বতী গঙ্গোপাধ্যায়

‘তাতে ছন্দ নষ্ট হয় না’--- একথাই বলেছিল কেউ
.        নিভৃতে মনের মাঝে ওঠে যত ঢেউ
স্বচ্ছন্দ গতিতে মিলিয়ে যেতে দেওয়াটাই ঠিক
.        রোজকার জীবন গড়াবে গড়াবে দেখো---
.                                নিয়মমাফিক।

নুড়ি ফেলে দেখবে না কেউ,---
.        তোমার মনের মাঝে ওঠে কি না ঢেউ
স্নানের পরে এলোচুল পিঠ বেয়ে নেমে
.                                এলে হয়,
চুল শুধু চুল থাক্, নদী হলে ভয়।
.        নদী যদি হয় তবু প্রবাহ রুদ্ধ কর শেষে
.                রোজ অভ্যস্থ তুমি স্রোতহীন একই
.                                নিঃশ্বাসে।

.                     ********************  

.                                                                                   সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
রবীন্দ্রনাথ তোমাকে
কবি শাশ্বতী গঙ্গোপাধ্যায়

আজ সারাদিন বৃষ্টিতে শুধু বলোনা কোথায় মাথা রাখি ?
.        বালিশের গায়ে, তোমার বুকেতে যেখানে স্বপ্ন মাখামাখি।
ছিল কোনদিন রোদ্দুর মাখা ডানা মেলা চিল, নীল আকাশ
.        চোখের সামনে তুলে ধরা মুখ চুম্বন ছিল স্পর্শে তার।
হারিয়েছি সবই বৃষ্টিতে ভিজে সব একাকার দুপুর রাত
.        ঘুমের মধ্যে বিজন ঘরেতে নিশীথ স্বপ্নে তোমার হাত।
প্রাণপণে ধরি জ্যোত্স্না রাতেতে বনেতে যাই নি আসবে তাই
.        সাজিয়েছি ঘর বহু যত্নেতে অন্তরে যদি তোমায় পাই।
ঝড়ের রাতেতে অভিসারে গেছি, গহন পথেতে তোমায় খুঁজেছি
.        সারারাত জেগে একলা থেকেছি, দিগন্ত জুড়ে আমি যে দেখেছি---
কালো রাত বুঝি ভেসে চলে গেছে আঁখির জলেতে লেখা ভালোবাসি
.        এটুকুই শুধু আমার বেদনা, যন্ত্রণা নেই কোন তোমার---
তোমার চোখেতে সকলই শোভন, সুনীল বিমল নীল আকাশ।
.        আমার বিষাদ জ্যোত্স্নার ছায়া ঢেকে দাও তুমি দাও আকাশ,
ঐ আকাশেতে আজ সারা দিন মেঘ করে নাও, নাও আমায়,
.        তোমার কাছেতে তোমার আকাশে যন্ত্রাণা মোর ভাসিয়ে নাও।
বৃষ্টিতে শুধু বৃষ্টিতে আজ খানখান হলে মন পাতি,
.        জল চুঁয়ে পড়ে চোখ থেকে তাই মেঘের নীচেতে হাত রাখি।
অঙ্গ বিহীন আলিঙ্গণের তৃষ্ণা রয়েছে দৃষ্টিতে
.        দিবস রজনী স্বপ্নেতে কাটে, তোমার বুকেতে মুখ রেখে----
চারি দিকে জল, ঝরঝর ধারা, ঝরিছে বরষা বিরহ তাই---
.        এত কথা ভাবি, এত কিছু লিখি, জলে ভেসে যায়, হারিয়ে যাই।
“কিনু গোয়ালার গলি”--- মনে পড়ে আজ, সেই কথা দেওয়া হাত বাড়াই,
.        যতদূর দেখি ধূ ধূ শূন্যতা, তুমি নেই আমি একলা তাই।

.                              ********************  

.                                                                                      সূচিতে . . .   


মিলনসাগর