কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
দেখিলাম জলস্থল, --শুন্য, শুষ্ক, বিহ্বল, জর্জর |

তবু এনু বাহিরিয়া, ---বিশ্বাসের বৃন্তে বেপমান,--
চম্পা আমি,--খর তাপে আমি কভু ঝরিবো না মরি,
উগ্র মদ্য-সম রৌদ্র-- যার তেজে বিশ্ব মুহ্যমান,--
বিধাতার আশির্বাদে আমি তা সহজে পান করি |

ধীরে এনু বাহিরিয়া, ঊষার আতপ্ত কর ধরি';
মূর্ছে দেহ, মোহে মন,--মুহুর্মুহু করি অনুভব !
সূর্যের বিভূতি তবু লাবণ্যে দিতেছ তনু ভরি';
দিনদেবে নমস্কার ! আমি চম্পা ! সূর্যের সৌরভ |

.                *************************                 

.                                                                                       
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ব্যথিত ধরার হৃত্ পিণ্ডটি আমি যে রক্তজবা |
তোমার চরণে নিবেদিত আমি, আমি যে তোমার বলি,
দৃষ্টি-ভোগের রাঙ্গা খর্পরে রক্ত কলিজা-কলি |
আমারে লইয়া খুশি হও ওগো, নম দেবি নম নম,
ধরার অর্ঘ্য করিয়া গ্রহণ, ধরার শিশুরে ক্ষম |

.                *************************               

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
পদ্মফুলের অঞ্জলি যে আকাশ-গাঙে যায় ঢেলে !

পূব্ গগনে থির নীলিমা ভুলিয়েছে মন ভুলিয়েছে !
পশ্চিমে মেঘ মেলছে জটা--সিংহ কেশর ফুলিয়েছে !
হাঁস চলেছে আকাশ-পথে,      হাস্ ছে  কারা পুষ্প-রথে,--
রামধনু-রং আঁচলা তাদের আলো-পাথার দুলিয়েছে !

শিশির-কণায় মানিক ঘনায়, দূর্বাদলে দীপ জ্বলে !
শীতল শিথিল শিউলী-বোটায় সুপ্ত শিশুর ঘুম টলে |
আলোর জোয়ার উঠছে বেড়ে        গন্ধ-ফুলের স্বপন কেড়ে,
বন্ধ চোখের আগল ঠেলে রঙের ঝিলিক্ ঝল্ মলে !

নীলের বিথার নীলার পাথার দরাজ এ যে দিল্ খোলা !
আজ কি উচিত ডঙ্কা দিয়ে ঝাণ্ডা নিয়ে ঝড় তোলা ?
ফির্ ছে  ফিঙে দুলিয়ে ফিতে;        বোল ধরেছে বুল্ বুলিতে !
গুঞ্জনে আর কূজন-গীতে হর্ষে ভূবন হর্ বোলা !

.                *************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
উল্ সে  ওঠে মনটা, দেখে
ইল্ শে  গুঁড়ির নাচ |

ইল্ শে  গুঁড়ি               পরীর ঘুড়ি
কোথায় চলেছে,
ঝম্ রো  চুলে             ইল্ শে  গুঁড়ি
মুক্তো ফলেছে !
ধানেক বনে চিংড়িগুলো
লাফিয়ে ওঠে বাড়িয়ে নুলো ;
ব্যাঙ ডাকে ওই গলা ফুলো,
আকাশ গলেছে,
বাঁশের পাতায়            ঝিমোয় ঝিঁঝিঁ,
বাদল চলেছে |

মেঘায় মেঘায়           সূর্য্যি ডোবে
জড়িয়ে মেঘের জাল,
ঢাক্ লো  মেঘের              খুঞ্চে-পোষে
তাল-পাটালীর থাল |
লিখছে যারা তালপাতাতে
খাগের কলম বাগিয়ে হাতে
তাল বড়া দাও তাদের পাতে
টাট্ কা  ভাজা চাল ;
পাতার বাঁশী                 তৈরী করে'
দিও তাদের কাল |

খেজু পাতায়                সবুজ টিয়ে
গড়তে পারে কে ?
তালের পাতার             কানাই ভেঁপু
না হয় তাদের দে |
ইল্ শে  গুঁড়ি---জলের ফাঁকি
ঝরছে কত বলব তা কী ?
ভিজতে এল বাবুই পাখী
বাইরে ঘর থেকে ; --
পড়তে পাখায়               লুকালো জল
ভিজলো নাকো সে |

ইল্ শে  গুঁড়ি !              ইল্ শে  গুঁড়ি !
পরীর কানের দুল,
ইল্ শে  গুঁড়ি !             ইল্ শে  গুঁড়ি !
ঝরো কদম ফুল |
ইল্ শে  গুঁড়ির খুনসুড়িতে
ঝাড়্ ছে  পাখা---টুনটুনিতে
নেবুফুলের                     কুঞ্জটিতে
দুলছে দোদুল দুল্ ;
ইল্ শে  গুঁড়ি             মেঘের খেয়াল
ঘুম-বাগানের ফুল |

.                *************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
নাহিক বস্তুর মায়া, মরিতে প্রস্তুত চির দিনই !
অয়ি স্বাতন্ত্রের ধারা ! অয়ি পদ্মা ! অয়ি বিপ্লাবনী !

.                *************************                  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
দুর্নমিত, অসংযত, গূঢ়চারী, গহন গম্ভীর ;
সীমাহীন অবজ্ঞায় ভাঙিয়া চলেছ উভতীর |

রুদ্র সমুদ্রের মত, সমুদ্রেরি মত সমুদার
তোমার বদরহস্ত বিতরিছে ঐশ্বর্যসম্ভার |
উর্বর করিছ মহি, বহিতেছ বাণিজ্যের তরী
গ্রাসিয়া নগর গ্রাম হাসিতেছ দশদিক ভরি |

অন্তহীন মূর্ছনায় আন্দোলিত আকাশ সংগীতে,--
ঝঙ্কারিয়া রুদ্রবীণা, মিলাইছ ভৈরবে ললিতে
প্রসন্ন কখনো তুমি, কভু তুমি একান্ত নিষ্ঠুর ;
দুর্বোধ, দুর্গম হায়, চিরদিন দুর্জ্ঞেয় সুদূর !

শিশুকাল হতে তুমি উচ্ছৃঙ্খল, দুরন্ত দুর্বার ;
সগর রাজার ভস্ম করিয়ে স্পর্শ একবার !
স্বর্গ হতে অবতরি ধেয়ে চলে এলে এলোকেশে,
কিরাত-পুলিন্দ-পুণ্ড্র অনাচারী অন্ত্যজের দেশে !

বিস্ময়ে বিহ্বল-চিত্ত ভগীরথ ভগ্ন মনোরথ
বৃথা বাজাইল শঙ্খ, নিলে বেছে তুমি নিজ পথ ;
আর্যের নৈবেদ্য, বলি, তুচ্ছ করি হে বিদ্রোহী নদী !
অনাহুত-অনার্যের ঘরে গিয়ে আছ সে অবধি |

সেই হকে আছ তুমি সমস্যার মত লোক-মাঝে,
ব্যাপৃত সহস্র ভুজ বিপর্যয় প্রলয়ের কাজে !