কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তর কবিতা
*
.                ভুরু কোঁচকায়
.                        মাঝি হায়, হায় ;

মন কাতরায়,
.        মেঘ সাঁতরায়
.                আলকাতরায়
.                        দশ দিক ছায়।

বন্ বরা নয়,
.        নয় নর মোষ ---
.                তবু ভারি রোষ
.                        ভারি আক্রোশ।

খেত ধামসায়
.        করে ধানসায়
.                আঁব ধ্বংসায়
.                        হায় আপশোষ!

বুক ধসিয়ে
.        দেয় বসিয়ে
.                হাড় খসিয়ে
.                        সব পাঁজরার,

চোখ পাকলায়
.        ভরে গাঁজলায়
.                ঝরে ওর গায়
.                        মোতি কাজলার!

.           *************************                 

.                                                                                       
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
চণ্ডীদাসের---রামপ্রসাদের---
.        কণ্ঠ কোথায় বাজে রে ?
সে আমাদের বাংলাদেশ
.        আমাদেরি বাংলা রে!

কোন্ দেশের দুর্দশায় মোরা---
.        সবার অধিক পাই রে দুখ ?
কোন্ দেশের গৌরবের কথায়---
.        বেড়ে ওঠে মোদের বুক ?
মোদের পিতৃপিতামহের---
.        চরণধূলি কোথায় রে ?
সে আমাদের বাংলাদেশ
.        আমাদেরি বাংলা রে!

.       *************************                 

.                                                                                       
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
.                                ভূত!
নির্-গোঁফের নাকে চড়ে ইঁদুর চৌ গোঁফা
.                                তোফা!
গণেশ কচালে আঁখি করে সুড়সুড়
.                                শুঁড়!
স্বপ্নে দেখে ভক্তি ভরে খুলেছে সাহেব
.                                জেব!
পূজ্য হন গজানন তেড়ে শুঁড় নেড়ে
.                                বেড়ে!
ত্রিশূলে ঝুলিয়া মন্ত্র জপিছে জাদুর
.                                বাদুড়!
ছেঁচা-বোঁচা কাল-পেঁচা চেঁচায় খিঁচায়
.                                কি চায় ?
সিঁদ দিয়ে বিধ করে মামদোর গোর
.                                চোর!
আবরি সকল গাত্র মশা ধরে অন্তে
.                                দন্তে!
জগৎ ঘুমায় শুধু করে হাঁক ডাক
.                                নাক!
স্বপনের ভারি ভিড় দাঁত কিড়মিড়
.                        বিড়্ বিড়্ বিড়্!

.       *************************                 

.                                                                                       
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কে মা তুই কে মা শ্যামা --- তুই কি মোদের বঙ্গভূমি ?
মা তোর ক্ষেতের ধান্যরাশি জাহাজ ভ’রে যায় বিদেশে,
অন্ন-সুধা গরল হ’য়ে ফিরে আসে মোদের পাশে,
বনে কাপাস বনে মিলায়, আমরা দেখি চেয়ে চেয়ে,
অন্ন বসন বিহনে হায়, মরে তোমার ছেলে মেয়ে।
বল্ মা শ্যামা, শুধাই তোরে, মোদের এ ঘুম ভাঙবে নাকি ?
ধন্য হ’তে পারবো না মা তোমার মুখের হাসি দেখি ?
ত্রিশূল তুলে নে মা আবার রূপের জ্যোতি পরকাশি,
ভয় ভাবনা ভাসিয়ে দিয়ে হাস আবার তেমনি হাসি!
চরণতলে সপ্তকোটি সন্তানে তোর মাগেরে---
বাঘে রে তোর জাগিয়ে দে গো, রাগিয়ে দে তোর নাগেরে ;
সোনার কাঠি, রূপার কাঠি --- ছুঁইয়ে আবার দাও গো তুমি,
গৌরবিনী মূর্ত্তি ধর --- শ্যামাঙ্গিনী --- বঙ্গভূমি!

.                *************************                 

.                                                                                       
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
চাঁদ-প্রতাপের হুকুমে হঠিতে হয়েছে দিল্লীনাথে।

জ্ঞানের নিধান আদিবিদ্বান্ কপিল সাঙ্খ্যকার
এই বাংলার মাটিতে গাঁথিল সূত্রে হীরক-হার।
বাঙালী অতীশ লঙ্ঘিল গিরি তুষারে ভয়ঙ্কর,
জ্বালিল জ্ঞানের দীপ তিব্বতে বাঙালী দীপঙ্কর।
কিশোর বয়সে পক্ষধরের পক্ষশাতন করি’
বাঙালীর ছেলে ফিরে এল দেশে যশোর মুকুট পরি’।
বাংলার রবি জয়দেব কবি কান্ত কোমল পদে
করেছে সুরভি সংস্কৃতের কাঞ্চন-কোকনদে।

স্থপতি মোদের স্থাপনা করেছে ‘বরভূদরের’ ভিত্তি,
শ্যাম কাম্বোজে ‘ওঙ্কার-ধাম’, --- মোদেরি প্রাচীন কীর্তি।
ধেয়ানের ধনে মূর্তি দিয়েছে আমাদের ভাস্কর
বিট্ পাল আর ধীমান্, --- যাদের নাম অবিনশ্বর।
আমাদেরি কোন সুপটু পটুয়া লীলায়িত তুলিকায়
আমাদের পট অক্ষয় ক’রে রেখেছে অজন্তায়।
কীর্তনে আর বাউলের গানে আমরা দিয়েছি খুলি’
মনের গোপনে নিভৃত ভুবনে দ্বার ছিল যতগুলি।

মন্বন্তরে মরি নি আমরা মারী নিয়ে ঘর করি,
বাঁচিয়া গিয়েছি বিধির আশীষে অমৃতের টিকা পরি’।
দেবতারে মোরা আত্মীয় জানি, আকশে প্রদীপ জ্বালি,
আমাদেরি এই কুটীরে দেখেছি মানুষের ঠাকুরালি ;
ঘরের ছেলের চক্ষে দেখেছি বিশ্বভূপের ছায়া,
বাঙালীর হিয়া অমিয় মথিয়া নিমাই ধরেছে কায়া।
বীর সন্ন্যাসী বিবেকের বাণী ছুটেছে জগৎময়,
বাঙালীর ছেলে ব্যাঘ্রে বৃষভে ঘটাবে সমন্বয়।

তপের প্রভাবে বাঙালী সাধক জড়ের পেয়েছে সাড়া,
আমাদের এই নবীন সাধনা শব-সাধনার বাড়া।
বিষম ধাতুর মিলন ঘটায়ে বাঙালী দিয়েছে বিয়া,
মোদের নব্য রসায়ন শুধু গরমিলে মিলাইয়া।
বাঙালীর কবি গাহিছে জগতে মহামিলনের গান,
বিফল নহে এ বাঙালী জনম, বিফল নহে এ প্রাণ।
ভবিষ্যতের পানে মোরা চাই আশাভরা আহ্লাদে,
বিধাতার কাজ সাধিবে বাঙালী ধাতার আশির্বাদে।

বেতালের মুখে প্রশ্ন যে ছিল আমরা নিয়েছি কেড়ে,
জবাব দিয়েছি জগতের আগে ভাবনা ও ভয় ছেড়ে ;
বাঁচিয়া গিয়েছি সত্যের লাগি’ সর্ব করিয়া পণ,
সত্যে প্রণমি’ থেমেছে মনের অকারণ স্পন্দন।
সাধনা ফলেছে, প্রাণ পাওয়া গেছে জগৎ-প্রাণের হাটে,
সাগরের হাওয়া নিয়ে নিশ্বাসে গম্ভীরা নিশি কাটে,
শ্মশানের বুকে আমরা রোপণ করেছি পঞ্চবটী,
তাহারি ছায়ায় আমরা মিলাব জগতের শত কোটী।

মণি অতুলন ছিল যে গোপন সৃজনের শতদলে,
ভবিষ্যতের অমর সে বীজ আমাদেরি করতলে ;
অতীতে যাহার হয়েছে সূচনা সে ঘটনা হবে হবে,
বিধাতার বরে ভরিবে ভূবন বাঙালীর গৌরবে।
প্রতিভার তপে সে ঘটনা হবে, লাগিবে না তার বেশী,
লাগিবে না তাহে বাহুবল কিবা জাগিবে না দ্বেষাদ্বেষি ;
মিলনের মহামন্ত্রে মানবে দীক্ষিত করি’ ধীরে---
মুক্ত হইব দেব-ঋণে মোরা মুক্তবেণীর তীরে।

.                *************************                 

.                                                                                       
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
ঝড়
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

ঝড় রুষিয়ে
কোন্ দেশে
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

কোন্ দেশেতে তরুলতা---