কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তর কবিতা
*
.        এস যৌবনে হে চির-কিশোর!
.        এস মম চিতে ওগো চিত-চোর!
নব রবি-তাপে এস গো তাপিত নব-কিশলয়-ছায়।
.        এস পরিচিত পরশের মত,
.        সুখ-স্বপনের হরষের মত,
আঁখি-পল্লব চুম্বন দিয়ে যোয়ো যেথা মন চায়।

.             *************************                 

.                                                                                       
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
মৌনমুখী সেথায় নাকি থাকে!
মন্ত্র প’ড়ে বাড়ায় কমায় জোনাক্-পোকার জেল্লা,
মন্ত্র প’ড়ে চাঁদকে সে রোজ ডাকে!

তুঁত-পোকাতে তাঁত বুনে তার জান্ লাতে দেয় পর্দা,
হুতোম প্যাঁচা প্রহর হাঁকে দ্বারে ;
ঝর্ণাগুলি পূর্ণ চাঁদের আলোয় হ’য়ে জর্দা
জলতরঙ্গ বাজনা শোনায় তারে!

কালো কাঁচের আর্শীতে সে মুখ দেখে সুস্পষ্ট,
আলো দেখে কালো নদীর জলে!
রাজ্যেতে তার নেইকো মোটেই স্থায়ী রকম কষ্ট,
স্বপন সেথা বেড়ায় দলে দলে!

সন্ধ্যাবেলা অন্ধকারে হঠাৎ হ’ল দেখা
ঘুম-নগরীর কাজকুমারীর সনে,
মধুর হেসে সুন্দরী সে বেড়ায় একা একা,
মূর্ছা হেনে বেড়ায় গো নির্জনে!

.        *************************                 

.                                                                                       
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
নিঃস্ব যারা তারাই হবে বিপুল ভবে রাজ্যে-অধিকারী।’

.                   *************************                 

.                                                                                       
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
.        চরকার দৌলত! ইজ্জৎ ঘর-ঘর।
.        ঘর-ঘর হিম্মৎ,---আপনায় নির্ভর!
.                গুজরাট-পাঞ্জাব-বাংলায় সাড়া,
.                দাঁড়া আপনার পায়ে দাঁড়া!

.                   *************************                 

.                                                                                       
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
কালো মেয়ের কটাক্ষেরি ভয়ে অসুর আছে থেমে।
.        দৃপ্ত বলীর শীর্ষ ’পরে
.        কালোর চরণ বিরাজ করে,
পূণ্য-ধারা গঙ্গা হ’ল---সেও তো কালো চরণ ঘেমে ;
দুর্বাদলশ্যামের রূপে---রূপের বাজার গেছে নেমে।

প্রেমের মধুর ঢেউ উঠেছে কালিন্দীরি কালো জলে,
মোহন বাঁশীর মালিক যে জন তারেও লোকে কালোই বলে ;
.        বৃন্দাবনের সেই যে কালো---
.        রূপে তাহার ভুবন আলো,
রাসের মধুর রসের লীলা, ---তাও সে কালো তমাল তলে ;
নিবিড় কালো কালাপানির কালো জলেই মুক্তা ফলে।

কালো ব্যাসের কৃপায় আজো বেঁচে আছে বেদের বাণী,
দ্বৈপায়ন---সেই কৃষ্ণ কবি--- শ্রেষ্ঠ কবি তাঁরেই মানি ;
.        কালো বামুন চাণক্যেরে
.        আঁট্ বে কে কূট-নীতির ফেরে ?
কালো অশোক জগৎ-প্রিয়, রাজার সেরা তাঁরে জানি ;
হাবসী কালো লোক্ মানেরে মানে আরব আর ইরাণী।

কালো জামের মতন মিঠে --- কালোর দেশ এই জম্বুদ্বীপে---
কালোর আলো জ্বলছে আজো, আজো প্রদীপ যায় নি নিবে ;
.        কালো চোখের গভীর দৃষ্টি
.        কল্যানেরি করছে সৃষ্টি,
বিশ্ব-ললাট দীপ্ত---কালো রিষ্টিনাশা হোমের টিপে,
রক্ত চোখের ঠাণ্ডা কাজল--- তৈরী সে এই ম্লান প্রদীপে!

কালোর আলোর নেই তুলনা---কালোরে কী করিস ঘৃণা!
গগন-ভরা তারার মীনা বিফল--- চোখের তারা বিনা ;
.        কালো মেঘে জাগায় কেকা,
.        চাঁদের বুকেও কৃষ্ণ-লেখা,
বাসন্তী রং নয় সে পাখীর বসন্তের যে বাজায় বীণা,
কালোর গানে জীবন আনে নিথর বনে বয় দখিনা!

.               *************************                 

.                                                                                       
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
কোনো ধর্মধ্বজের প্রতি
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

প্রেমের ধর্ম করছ প্রচার কে গো তুমি সবুট লাথি নিয়ে,
ডায়ার-মার্কা শিষ্টাচারের লাল-পেয়ালার শেষ তলানি পিয়ে!
ডিগ্রি নিয়েই ফুরিয়ে গেছে ডাগর-বুলির যা কিছু বোলবোলা ?
উদর তন্ত্র উদরতা ? ধর্ম কেবল কথারই কাপ্তেনী ?
ডঙ্কা-নাদের পিছন পিছন সত্য নিয়ে খেলছ ছেনিমেনি ?
চেয়ে দেখ ক্রুসের পরে ক্ষুব্ধ কে ওই তোমার ব্যবহারে।
জীবন্তবৎ পাষাণ-মুরৎ! --- হেঁটমাথা তার লজ্জাতে ধিক্কারে।
কুড়ি শ’ বত্সরের ক্ষত লাল হয়ে তাঁর উঠছএ নতুন করে।
দেখছে জগৎ --- পাথর ফেটে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ছে শোণিত ঝরে।
দাও ক্ষমা দাও, চোখ মেলে চাও,---
.                                কি কাণ্ড হায় করছ গজাল ঠুকে ?
নিরীহদের নির্যাতনের সব ব্যথা কার বাজছে দ্যাখো বুকে!
কিম্বা দ্যাখার নাই প্রয়োজন, তোমরা এখন সবাই বিজিগীষু,
‘জিঙ্গো’ আসল ইষ্ট সবার, তার আবরণ-দেবতা মাত্র যীশু!
ডায়ার-ডৌল জবরদস্তি,--- তাতেই দেখি আজ তোমাদের রুচি।
গোবর-দস্ত আইন গড়ে নিষ্ঠুরতায় নিচ্ছ করে শুচি।

বীরত্বেরই বিজয়-মালা বর্বরতার দিচ্ছ গলায় তুলে।
অমানুষের করছ পূজা, সেরা-মানুষ খৃষ্টদেবে ভুলে।
মরদ-মেয়ে ভুগছ সমান হূণ-বিজয়ের বড়াই-লালচ-রোগে,
মানুষকে আর মানুষ বলেই চিনতে যেন চাইছ না, হায়, চোখে।
ঢাকের পিছে ট্যামট্যামি-প্রায় টমির ধাঁচায় ট্যাঁশটোশও আজ ঘোরে।
শয়তানই যে হাওয়ায় হাঁটায় শূন্যে ওঠায় সে হুঁশ গেছে সরে।
নেইক খেয়াল, আত্মা বেচে জগৎ-জোড়া কিনছে জমিদারী।
কে জানে ক’দিনের ঠিকা, ঠিকাদারের ঠ্যাকার কিন্তু ভারি!
ধিঙ্গি চলে জঙ্গী চালে, কুচ, করে লাল কাগজ-ওলা চলে,
নাক তুলে যায় দালাল-ফোড়ে, আজ দেখি হায় পাদ্ রীও সেই দলে!

যাও দ’লে যাও, ডঙ্কা বাজাও, অহঙ্কারের ছায়া ক্ষণস্থায়ী।
মিছাই ব্রতের বিঘ্ন ঘটাও অহঙ্কারের হুমকি-ব্যবসায়ী!
আমরা তোমার চাই না শিক্ষা, চাই না বিদ্যা, হে বিদ্যা-বিক্রয়ী!
ধর্ম-কথাও পণ্য যাদের তাদের পণ্য কিনতে ব্যাগ্র নহি।
মানুষ খুঁজে ফিরছি মোরা,---মানুষ হবার রাস্তা যে বাত্লাবে ;
তিক্ত হয়ে গেছে জীবন ঘরের পরের অমানুষের তাঁবে।
ফলিয়ে দেবে মর্ত্যে যে জন বুদ্ধ-যীশুর স্বর্গ-সূচন বাণী,
শহীদ-কুলের হৃদ্য-শৌর্য হৃদয়ে যার পেতেছে রাজধানী,
চরকার বুলবুল কোন বোল কইছে ?
কোন্ ধন দরকার চরকার আজ গো ?
ঝিউড়ির খেই আর বউড়ির পাঁজ গো!
.        চরকার ঘর্ঘর পল্লীর ঘর-ঘর।
.        ঘর-ঘর ঘি’র দীপ, ---আপনায় নির্ভর!
.                পল্লীর উল্লাস জাগল সাড়া,
.                দাঁড়া আপনার পায়ে দাঁড়া!

আর নয় আইঢাই ঢিস্-ঢিস্ দিন-ভর,
শোন্ বিশকর্মার বিস্ময়-মন্তর!
চরকার চর্যায় সন্তোষ মনটায়,
রোজগার রোজদিন ঘন্টায় ঘন্টায়!
.        চরকার ঘর্ঘর বস্তির ঘর-ঘর।
.        ঘর-ঘর মঙ্গল, ---আপনায় নির্ভর!
.                বন্দর-পত্তন হঞ্জে সাড়া,
.                দাঁড়া আপনার পায়ে দাঁড়া!

চরকায় সম্পদ, চরকায় অন্ন,
বাংলার চরকায় ঝলকায় স্বর্ণ!
বাংলার মসলিন বোগদাদ রোম চীন
কাঞ্চন-তৌলেই কিনতেন একদিন।
.        চরকার ঘর্ঘর শ্রেষ্ঠীর ঘর-ঘর।
.        ঘর-ঘর সম্পদ,---আপনায় নির্ভর!
.                সুপ্তের রাজ্যে দৈবের সাড়া,
.                দাঁড়া আপনার পায়ে দাঁড়া!

চরকাই লজ্জার সজ্জার বস্ত্র।
চরকাই দৈনের সংহার-অস্ত্র।
চরকাই সন্তান চরকাই সম্মান।
চরকায় দুঃখীর দুঃখের শেষ ত্রাণ।
.        চরকার ঘর্ঘর বঙ্গের ঘর-ঘর।
.        ঘর-ঘর সম্ভ্রম,---আপনায় নির্ভর!
.                প্রত্যাশ ছাড়বার জাগল সাড়া,
.                দাঁড়া আপনার পায়ে দাঁড়া!

ফুরসুৎ সার্থক করবার ভেলকি!
উসখুস হাত! বিশকর্মার খেল কি!
তন্দ্রার হুদ্দোয় একলার দোকলা!
চরকাই একজাই পয়সার টোকলা।
.        চরকার ঘর্ঘর হিন্দের ঘর-ঘর।
.        ঘর-ঘর হিকমৎ,---আপনায় নির্ভর!
.                লাখ লাখ চিত্তে জাগল সাড়া,
.                দাঁড়া আপনার পায়ে দাঁড়া!

নিঃস্বের মূলধন রিক্তের সঞ্চয়,
*
অ!
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত “প্রবাসী” পত্রিকার বৈশাখ ১৩২২ (এপ্রিল ১৯১৫) সংখ্যায়।
২০চৈত্র ১৩২১ তারিখে (৩/৪ এপ্রিল ১৯১৫) বর্ধমানে, অষ্টম বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মিলনের প্রধান
সভাপতি রূপে
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তাঁর ভাষণে বীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির  
গুরুত্বকে “চুট্ কি” রচনার মর্যাদা দিয়ে তুচ্ছ জ্ঞান করেছিলেন। প্রবাসীর পরের সংখ্যাতেই
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, এই কবিতাটি লিখে সেই ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন।


এই        চট্ করে যাহা বলে ফেলা যায়
.                চুট্ কি তাহারে কয়,
ওগো        ছোট লেখা যত লেখে ছোটলোকে
.                জানিবে সুনিশ্চয়।
ওই        চুট্ কি রচনা কেট্ কেট্ গ্র্যাম্
.                বিকিকিনি চলে চোটে,
ওযে        ফুট্ কড়ায়ের ছুট্ কো বেসাতি
.                হুণ্ডি চলে না মোটে।
ভুয়ো      সজ্ নের খুঁটি  চুট্ কি রচনা
.                দেখিতে নিরেট বটে,
ভায়া,        ভর দিলে ভারে ভেঙে পড়ে চাল
.                আয়ু-সংশয় ঘটে।
ওগো        লিখো না চুট্ কি, লিখিলে পুড়িবে
.                যশোভাগ্যেতে দ,
আর        পণ্ডিত-সভা পুছিবে না তোরে
.                দুখ না ঘুচিবে।---
( কোরাস )                                
অ!  


দেখ        চুট্ কি সূত্র গোটা সত্তর
.                লিখিল সাংখ্যকার,
তাই        কন্ফারেন্সে ডায়েসের পরে
.                চেয়ার পড়েনি তার।
দাদা,        তিনটি ভালুমে লিখিলে মালুম.   
.                হইত এলেম যত,
আর        দর্শন-শাখে হত যোগে-যাগে
.                শাখা-পতি অন্তত।
হায়        অল্পে সারিতে মরিল বেচারা
.                লিখে হ য ব র ল,
এই        জম্বুদ্বীপে কোনো ফেলোশিপে
.                বক্তা না হল।---
( কোরাস )                                
অ!  


দেখ        হাফেজ কেবল চুট্ কি লিখিল
.                ফেজ খোয়াইল তাই,
আর        রবি শেলি রুমি বার্ণস্ হাইন
.                পড়ে সে কজন ভাই ?
হোথা        শ্লোক তিন টন লিখি মিলটন
.                অমর হইল ভবে,
লোকে        পড়ে কি না পড়ে জানেন বিধাতা,
.                হরি হরি বল সবে।
ওগো         লেখ লুসিয়াড্ লেখহ মেসায়া
.                অথবা রৈবতক,
আছে        সস্তার ছাপাখানা যতদিন
.                রইবে সে ইস্তক।
আর        বিপুল গতর দেখি কেতাবের
.                দুনিয়াটা হবে থ,
যত বেকার ক্রিটিক্ ভুলি টিক্ টিক্
.                ‘ঠিক্ ঠিক্’ কবে।
( কোরাস )                                
অ!  


দেখ        ছ-শো-পাতা-রেগুলেশন নভেল
.                বটতলা লিখেছেন,---
বাপু,        বঙ্কিম যার তুলনে চুট্ কি
.                
Bambooর কাছে Cane !
এখন        বাঁশের চাইতে যাঁহাদের মতে
.                কঞ্চি অধিক দড়,
হায়        তাহারা বলিবে চুট্ কি-লেখক
.                বঙ্কিমবাবু বড়!
হা হা        কাঁচা মগজের ধাঁচা ওযে---ওকি
.                লিটারেচারের ল,
ওগো        চটক-মাংস চুটকিতে পেট
.                ভরে না মোদের।
( কোরাস )                                
অ!  


দেখ        দুএক অঙ্কে মেটারলিঙ্কী
.                চুট্ কি নাটক আছে,
হুঁ হুঁ        দাঁড়াতে কি তাহা পারে দেড়-সেরী
.                যাত্রা-পালার কাছে ?
ওগো        চটক দেখিয়া ভুলিও না কেউ,
.                ভুলিও না চুট্ কিতে,
বড়        মজা পাবে রায়-মশায়ের বড়
.                গীতাভিনয়ের গীতে।
তাহে        পাবে খাঁটি সুর যেন চিটা গুড়
.                হুবু চিনি সে যে
raw,
আর        চিটা সে শুদ্ধ, চিনি অশুদ্ধ
.                শাস্ত্রে লিখেছে।---
( কোরাস )                                
অ!  


দেখ        বিশ্বামিত্র আড়াই ছত্রে
.                রচিল গায়ত্রী,
উহা        চুট্ কি বলিয়া পাইল না ঋষি
.                ফলারের পত্রী।
শেষে        মীনরূপে হরি চুট্ কি চুনিল,
.                ঘোর কলি! ঘোর কলি!
ওরে        দেবতার লীলা মানবে ছলিতে,
.                ছলে ভুলিও না ভাই,
চুপ্        রাঘব-বোয়াল কাব্য এখনি
.                ভাষা জলে দিবে ঘাই!
ওহো        কলমের ডগে ফাৎনা লাগাও
.                নড়িও না এক য’
( কোরাস )                                
অ!


দেখ        রৌদ্র রসের চুটকি রচনা
.                লা মার্সে ঈজ্ গান,
ও সে        চুট্ কি বলিয়া হল না আদর,
.                হল না ক সম্মান।
এখন        যুদ্ধের কালে গাহে ইউরোপ
.                হোমারের ইলিয়াদ্,
ওরে        চুটকি ছাড়িয়া মহাকাব্যের
.                মহা মহা খাতা বাঁধ!
ওরে        বড় বড় বই লিখে ক্রমশই
.                মানুষের মত হ।
দেখ্        ধারে না কাটিস ভারে কেটে যাবি
.                কাটা নিয়ে কথা।---
( কোরাস )                                
অ!


ওরে        ইতিহাস কেউ লেখেনি চুট্ কি
.                কিম্বদন্তি জুড়ি’
ঢালি        তিন পয়সার তাম্রশাসনে
.                টিপ্পনি ত্রিশ ঝুড়ি।
আর        গুরুগম্ভীর বিজ্ঞান-পুথি
.                পড়ানো হবে না পুত্রে,
ওতে        চুট্ কি ঢুকেছে, লিখেছে---বিজলি
.                ধরেছে ঘুড়ির সূত্রে।
আর        চায়ের কেট্ লি ডাকন ঠেলিয়া
.                নাচন দেখায় তারি,
হল        হাজার চুট্ কি গল্পের ভারে
.                ভিজা কম্বল ভারী।
যদি        পুছ ‘কেন মাথে চুট্ কি?’ ওযে গো
.                আত্মা-বটের ব,
ওগো        ও যে চৈতন, চাঁই হয় উহা
.                চুট্ কি দলের।---
( কোরাস )                                
অ!  


ওগো        চুট্ কি লিখিলে থেকে যাবে মনে
.                আরসোলা-চাটা-ভয়,
হয়        কীর্ত্তি লোপের সুবিধা বেজায়।
.                ছোট লেখা আর নয়!
লেখ        এমন গ্রন্থ যাহা পাঁজাকোলা
.                করেও না যায় তোলা,
আর        চারি-যুগে চাটি ফুরাতে নারে যা
.                দুনিয়ার আরসোলা।
ওরে        লেখ ব্যাসকূট দাঁতে বিস্কুট
.                আদা জল খেয়ে ল,
শুধু        বিরাট হইলে হইবে কেতাব
.                অজর অমর।---
( কোরাস )                                
অ!  


দেখ        বিনা সম্বল বেকার উড়িয়া
.                চুট্ কির কাম করে,
ওসে        ভিক্ষার চাল জড়ো করি শেষে
.                বেচে গো সুবিধা দরে।
ওগো        ‘চুট্ কি লেখা যে চুট্ কির কাম,’
.                উড়িয়ার কাজ ভাই,
উহা        তোমরা করিলে আমরা সবাই
.                লজ্জায় মারা যাই।
ছি ছি        চুট্ কি ঘৃণ্য দৈন্যের ধ্বজা,
.                দুটি শুধু তার ভালো,
ওগো        পণ্ডিত শির নারীর চরণ
.                চুট্ কিতে করে আলো!
ওরে        এ দুটি চুট্ কি রক্ষা করিয়া
.                রণে আগুয়ান হ,
আর        চুট্ কি-নিধনে চ রে ভাই, জিভে
.                দিয়ে খর শান।
( কোরাস, হাই তুলিতে তুলিতে )           
অ!

.               *************************                 

.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
চিত্রশরৎ
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
১৯১৫ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত "অভ্র-আবীর" কাব্যগ্রন্থের কবিতা।
মিলনসাগরে প্রকাশকাল ২৭.০৯.২০১৯।


এই যে ছিল সোনার আলো ছড়িয়ে হেথা ইতস্তত,---
আপনি খোলা কমলা-কোয়ার কমলা-ফুলি রোয়ার মত,---
এক নিমেষে মিলিয়ে গেল মিশমিশে ওই মেঘের স্তরে,
গড়িয়ে যেন পড়ল মসী সোনায় লেখা লিপির পরে।

আজ সকালে অকালেরি বইছে হাওয়া, ডাকছে দেয়া,
কেওড়া জলের কোন্ সায়রে হঠাৎ নিশাস ফেললে কেয়া।
পদ্মফুলের পাপড়িগুলি আসছে ভেরে আলোক বিনে,
অকালে ঘুম নামল কি হায় আজকে অকাল-বোধন দিনে!

হাওয়ার তালে বৃষ্টিধারা সাঁওতালী নাচ নাচতে নামে,
আবছায়াতে মূর্ত্তি ধরে, হাওয়ায় হেলে ডাইনে বামে ;
শূন্যে তারা নৃত্য করে, শূন্যে মেঘের মৃদং বাজে,
শাল ফুলেরি মতন ফোঁটা ছড়িয়ে পড়ে পাগল নাচে।

তাল-বাকলের রেখায় রেখায় গড়িয়ে পড়ে জলের ধারা,
সুর-বাহারের পর্দ্দা দিয়ে গড়ায় তরল সুরের পারা!
দীঘির জলে কোন্ পোটো আজ আঁশ ফেলে কী নক্সা দেখে,
শোল্-পোনাদের তরুণ পিঠে আলপনা সে যাচ্ছে এঁকে!

ডালপালাতে বৃষ্টি পড়ে, শব্দ বাড়ে ঘড়িক্-ঘড়ি,
লক্ষ্মীদেবীর সামনে কারা হাজার হাতে খেলছে কড়ি!
হঠাৎ গেল বন্ধ হ’য়ে মধ্যিখানে নৃত্য খেলা,
ফেঁসে গেল মেঘের কানাৎ উঠল জেগে আলোর মেলা।

কালো মেঘেরে কোলটি জুড়ে আলো আবার চোখ চেয়েছে!
মিশির জমী জমিয়ে ঠোঁটে শরৎ-রাণী পান খেয়েছে!
মেশামিশি কান্না হাসি, মরম তাহার বুঝবে বা কে!
এক চোখে সে কাঁদে যখন আরেকটি চোখ হাসতে থাকে!

.               *************************                 

.                                                                             
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর