কবি সেবন্তী ঘোষের কবিতা
*
আমাদের কথা
কবি সেবন্তী ঘোষ


জল ও জলের সন্ধানী
ভাগাড়েই আছি আমি জানি
কখনও উড়েছি তাও ভুলে যেতে চাই
খুঁটে খুঁটে দানা কিছু পেলে
তাকেই ভবিষ্য ভাবি, সান্ত্বনা পাই
আড়ালে জানাই আরও কিছু
এ ছেলেটিকে ভালবাসি বলে
তাকেও দিয়েছি কিছু বেশি

বাধ্যতই খুকু আমি রাই
প্রয়োজনে গন্ধও ছড়াই।


তোমরা যাওয়ার আগে বলি
কোণঠাসা একঘরে আছি
যতদিন চলে যায়, হাহুতাশে ভুগি
উজানি বাতাস নেমে গেলে
দু’জনে দু’জনের পাশে ফিরে শুই
এবারেই শেষ সমযোতা
তীব্র বাতাসে জ্বলে কাঁচা আমপাতা
আমতিতা নিমতিতা, তিতা ওর মুখ
আমাকে জড়িয়ে ধরে এপাশে ফিরুক।


.        *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বিবাহিতা মেয়েদের সমস্যা
কবি সেবন্তী ঘোষ

নারীবাদ ছাড়া বিবাহিতা মেয়েরা কিচ্ছু লিখতে পারবে না।
কারণ তখন তারা আর নারী থাকে না ; বাদী ও বিবাদীর মধ্যে
ঘুপাক খায়। বিবাহিতা মেয়েরা আর মেয়েও থাকে না, কারণ
তখন তাদের বউ, স্ত্রী অথবা বঊদি নামে ডাকা হয়। সবচেয়ে
বিপদ হয় বিবাহিতারা কবিতা লিখতে এলে। তাদের কাছে
ভদ্রতা আর সহবৎ আশা করে, তাঁরাও নিখুঁত গার্হস্থ্য
লেখে, সমাজ পরিবর্তন আর পরিবার ব্যবস্থা নিয়ে দু-চার বাক্য
দেয়। কবিতা যে কী বিষম বস্তু অনেকেই জানেন।
বিবাহিতাদের কাছে তাই প্রেমের কবিতা আশা করেন না।

বিবাহিতা মেয়েরা আজকাল পাঁঠা ও কুকুর নিয়ে কবিতা
লিখছে। বিবাহিতা মেয়েরা আজকাল চমত্কার ভুতের গল্পও
লেখে। কেবল মাঝেমধ্যে তাদের লেখায় ঘুরে ফিরে আসে
তাদের বরেরা।

.                    *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
রোদ্দুর
কবি সেবন্তী ঘোষ

এ কী আলো দেখালে হুজুর ?
নসিবে যদি বা সয়
টুটাফাটা সংসারে
এমন অমৃত রাখি
আসন কোথায় ?
তার চেয়ে সেই ছিল ভাল
বেপরোয়া দুইজন
পান থেকে চুন খসা রং
এ ওকে ঝাঁঝিয়ে বলি
তুই চোর, সব তোর দোষ।

গালফোলা টাকমাথা
এ দীনদয়াল
আজ তোর সুখে
ঝগড়টে পাখি দুটো
কাঠকুটো খুঁটে
কী আমোদে হেলেখেলে
বাসাটি বানায় . . .

.   *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বরিশাল
কবি সেবন্তী ঘোষ

তুমি বললে ম্যাজিক, যা চাইছি তাই নাকি ঘটে যাচ্ছে এবার।
কুসুমকুমারী এলেন, নিজে নিজে বড় হতে চাই শুনে ভর্ৎসনা
করলেন, তাঁর রাগী, অহংকারী ছেলেটি এল, তার রহস্যময়তায় আক্রান্ত
নই দেখে বিষম বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ল, তাঁকে এড়িয়ে বেঁচে থাকব এ
তো অসম্ভব! এগিয়ে এলেন জগদীশ বিদ্যাপীঠ, আধো চেনা পায়ে
যেখানে প্রথম পা ফেলেছিল আমার শিশু মা, এগিয়ে এলেন বি.এম.
ইস্কুল, কালীবাড়ি রোড, মহাত্মা অশ্বিনী দত্ত।

বৃষ্টিস্নাত খৃষ্টান পাড়ার গাবতলায় তখন কাঁঠালের স্তুপ, হাঁসের
ত্রস্ত পায়ে গেঁড়ি-গুগলি, ঘন চেপে বসা সুঁড়িপথ ছিন্ন করে পাছদুয়ারের
জলভরা ডোবায় তখন ডাহুকের মৃদু পায়ে চমক উঠেছে খলসে আর
বাগানের নাইটকুইন এই বিস্মৃত সময় অগ্রাহ্য করে ফুটে উঠেছে
চকিতে, তুমি কি বলবে একে, ম্যাজিক না অনিবার্য সেই উল্কাপতন
যখন মহাবিশ্বের সৃষ্টি উন্মাদনায় ভবিষ্য-সম্ভব কালো গহ্বরে প্রাণবীজ
বিস্ফারিত হয়, মহাতেজে রেতঃপাত করেন সূর্য আর পৃথিবী তার
অনন্ত সন্তান সম্ভাবনায় সে বীজ ধারণ করেন গর্ভে---?

.                    *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
খেলা
কবি সেবন্তী ঘোষ

কেন বলছো, কেন বলছো রাত এত ছোট ?
.        গিলে নিতে পারি জান, শেষটুকু সুতো

আলগা টেনেছ তাই শান্ত এত ঘুম
.        অন্তরে ভিজে যায় সুখা বাথরুম

মটকা মেরেছি আর শুষে  নিচ্ছি আলো
.        পশম উষ্ণ বুক মনটি কাড়লো।

বিপদজনক বোঝ, এ তো খেলা, খেলা
.        আঙুলে জ্বলেছে ঠোঁট, ভোলা আলবেলা।

ফুটে উঠল ফুল দুটি স্পর্শে কঠিন
.        তোমার হাতের খেলা যেন জলে মীন

এই ভেজা পথ আর আমি অন্ধঝড়
.        ডাকো যদি সম্বল মাত্র চীবর

জাদু ও বাঁশিধ্বনি, আমি যেন রাই
.        পুলকে পুলকে জাগি, পুলকে হারাই।

.           *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর