কবি শৈল চক্রবর্তী – জন্মগ্রহণ করেন হাওড়ার আন্দুল-মৌড়িগ্রামে। কবির পুরো নাম শৈলনারায়ণ
চক্রবর্তী। চিত্রশিল্পী, কার্টুনিস্ট, ইলাস্ট্রেটর এবং গ্রন্থকার হিসেবে তিনি খ্যাতি লাভ করেছিলেন। পিতা
উদয়নারায়ণ চক্রবর্তী ও মা রানি দেবী। পিতা আন্দুল হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন। কবি আন্দুল হাইস্কুল
থেকেই ম্যাট্রিক পাশ করে, হাওড়া নরসিংহ দত্ত কলেজ থেকে অঙ্কে অনার্স নিয়ে বিএসসি পাশ করেন।
কলেজে পড়ার সময় থেকেই কলকাতার পত্রপত্রিকা এবং লেখক-শিল্পীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল।

কবি ১৮-১৯ বছর বয়সে হাওড়া থেকে প্রথমে কলেজস্ট্রিট মার্কেটের কাছে একটি মেসে এসে উঠেছিলেন।
পরে শ্যামবাজার শ্যামপার্কের কাছে একটি বাড়িতে সংসার-জীবন শুরু। সেখানে ছিলেন বছর আটেক।
১৯৪৫ সালে কালীঘাটের সদানন্দ রোডের একটি বাড়িতে চলে আসেন। পরে ১৯৫৬-৫৭ সাল নাগাদ তিনি
ঢাকুরিয়াতে বাড়ি করেন।

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ভাবনায় তিনিই কলকাতা পুরসভার লোগো এঁকেছিলেন।

প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট এবং বন্ধু চণ্ডী লাহিড়ী স্মৃতিচারনায় জানান যে আমাদের দেশের পুতুল নাচের প্রবর্তন
শুরু করেছিলেন রঘুনাথ গোস্বামী ও শৈল চক্রবর্তী। এই পুতুল নাচের কলাকৌশল ছিল একেবারে আলাদা।
বাজনার সঙ্গে
‘sync’ করে পুতুল নাচের প্রবর্তন শৈল চক্রবর্তীই শুরু করেন প্রথম।

যদিও আমরা তাঁকে এই পাতায় কবি হিসেবেই সম্বোধন করছি, তাঁর খ্যাতির বেশিরভাগটাই ছিল শিল্পী
হিসেবে। বিগত শতকের চল্লিশের দশকে আনন্দবাজার পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যায় প্রকাশিত, রবীন্দ্রনাথের
জীবদ্দশায় তাঁরই গল্প ‘ল্যাবরেটরি’, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হাঁসুলিবাঁকের উপকথা’, প্রবোধকুমার
সান্যালের ‘বনহংসী’-র অলঙ্করণ তিনিই করেছিলেন। বাংলায় প্রকাশিত সত্যজিৎ রায়ের প্রথম গল্প ‘বর্ণান্ধ’-র
ইলাস্ট্রেশন করেছিলেন শৈল চক্রবর্তী যা অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল ২২ মার্চ, ১৯৪২ এ।
শিবরাম চক্রবর্তীর হর্ষবর্ধন-গোবর্ধন কাহিনির সঙ্গে ছবি আঁকতেন শৈল চক্রবর্তী। ইলাস্ট্রেশনে সেই
চিরাচরিত চেনা লেখক ঘাড়ে বাবরি, গালে লম্বা জুলপি। পরণে ধুতি, ঢোলা হাতা সিল্কের পাঞ্জাবি। হর্ষবর্ধন
আর গোবরা-গোবর্ধনরাও নিজের নিজের চেহারায়। হর্ষবর্ধনের মাথাভর্তি কোঁচকান কোঁচকান চুল। এ ছাড়া
শৈল চক্রবর্তী নিজে লিখতেন গল্প আর ছড়া। ‘ডাকু’ নামে তাঁর আঁকা একটি চরিত্র ছিল। অমৃতবাজার
পত্রিকায় ছোটদের পাতায় ইংরেজিতে ‘ডাকু’ বেরত। তাঁর রচনার মধ্যে রয়েছে "ছড়ার দেশে টুলটুলি",   
‘বেজায় হাসি’,  ‘চিন্তাশীল বাঘ’, ‘ঘটোৎকচ বিজয়’, ‘স্বর্গের সন্ধানে মানুষ’, ‘কার্টুন’, ‘কৌতুক’, ‘যাদের বিয়ে
হল’, ‘যাদের বিয়ে হবে’, ‘আজব বিজ্ঞান’, ‘চিত্রে বুদ্ধজীবন কথা’, ‘বেলুন রাজার দেশে’, ‘কৃপণের পরিণাম’,
‘টুলটুলির দেশে’, ‘কালো পাখি’-সহ প্রায় ২৫টি গ্রন্থ। কবি মোহিত ঘোষের "জলখাবারের জলসা" এবং
"বর্ণমালায় ছড়াক খেলা"-র ছড়ার বইয়ের ছবি এঁকেছিলেন শৈল চক্রবর্তী। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘বেজায়
হাসি’। সুনির্মল বসুর লেখা নিউ থিয়েটার প্রডাকশনের ‘মিচকে পটাশ’ অ্যানিমেশন তাঁরই সৃষ্টি।

‘মানুষ এল কোথা থেকে’, ‘গাড়িঘোড়ার গল্প’, ‘কালো পাখি’ ও ‘ছোটদের ক্রাফ্ট’-এর জন্য শৈল চক্রবর্তী
রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন চার বার।

সিনেমার নায়ক এবং সাংসদ চিরঞ্জিত তাঁর ছেলে।

আমরা
মিলনসাগরে  কবি শৈল চক্রবর্তী রচিত কবিতা পেয়ে এখানে তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে
দিতে পারলে আমাদের এই প্রচেষ্টার সার্থকতা।



উত্স - কবিপুত্র শৈবাল চক্রবর্তী, কবিপুত্র চিরঞ্জিত, অতীতের তারা, আনন্দবাজার পত্রিকা              
.         
কবি মোহিত ঘোষ, মিলনসাগর      
.         
বিফরবই    


কবি শৈল চক্রবর্তীর মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন।    


আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     


এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ১৯.১.২০১৪  
দুটি নতুন কবিতা নিয়ে পাতার পরিবর্ধিত সংস্করণ - ১৬.৬.২০১৬

...
setstats