কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
*
প্রতিক্রিয়াশীল
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়
“শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা” পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৮২) থেকে নেওয়া।
"অস্ত্রের গৌরবহীন একা” (১৯৭৫) গ্রন্থের কবিতা।


অন্ধকার পথ ছিলো মন্দিরের পাশে, ঝাঁটি গাছ চেপে ধরে হাত
.            কিংবা নিরঙ্কুশ ভয় যা কারো চৈতন্যময় জাগে
এরকম অবস্থায় মধ্যবর্তী হলে পর | আকস্মিকতার কাছে
মানুষের খট্ কা লাগে, তারপরেই স্বাভাবিক হওয়া, যেমন নারীর কাছে
অন্ধকার দেবতার ধূপধুনো পচা পুষ্পগন্ধ – তার কাছে
তবু কিছুকাল গেলে ফেরে স্বাভাবিক – মন্দির মণ্ডপ ছেড়ে

.        মন্দিরের পথ গেছে মন্দিরের অত্যন্ত ভিতরে |
সেখানে কি যেতে পারে – ফুলপাতা ?  বিরহ ব্যাপক ?
জানি না, দুয়ারে হাত দিয়ে আমি দাঁড়িয়ে দেখেছি
প্রকৃত পাণ্ডার কন্ঠে কলকাতারই রাজনীতিবিদ
.  মানুষের মধ্যে অন্য মানুষকে দোষারোপ করে
যে চায় তৃষ্ণার শান্তি, তাকে যেন জলের নিয়মে দূরে রাখা,
বালি ও পাথর কতো শান্তি দেবে অমল সন্ন্যাসে ?

মৃত্যু ও জীবনে শুধু একটি ঊর্দ্ধে উঠে-আসা মেঘ
কিংবা এক জলজ হিংসা লেজ ঝাপ্ টে লুপ্ত করে নেবে –
গান গাওয়া !
তেমনি প্রসিদ্ধ কোনো কবিতার পংক্তি নষ্ট করাও সহজ
আর থাকে করে থাকে ভার্সিটির নীল গুবরে পোকা—
শিক্ষার গোবরে করে মাখামাখি এবং যা চায়
মৃত মাথা রেখে দেয় স্বরচিত বই-এর বালিশে—
আহম্মক !
মানুষেরই আহাম্মকি মানুষকে ভালুক নাচায়—
.              এমন দেখেছি আমি বিবেচনাপ্রসূত মণ্ডপে
সভাস্থলে, কোথা নয় ? এমন কি ময়দানের ধারে—
যেখানে বক্তৃতা চলে :  এখনি শুদ্ধতা দিতে পারি
.              যদি তুমি ভক্ত থাকো—যদি শ্রুতি না মানে কবিতা
বাংলাদেশ গ্রাম থেকে উঠে আসে উজ্জ্বল দুপুরে
.              এবং সন্ধ্যায় ফেরে রিক্ত নিঃস্ব মুখ সারি সারি
যে-মিছিল ভেঙে যায়, বাড়ি ফেরে—তার দুঃখ দেখে
অন্ধকারে কেঁদে ওঠে রেড্ রোড
.                গঙ্গার ঢালা জলে—

একদিন, মিছিলের ডগা-মধ্য-লেজে বসে থেকে, অনেক ঘুরেছি আমি
কলকাতা, বিপুল বাংলাদেশ. ..
মানুষের খুব কাছে গিয়ে আমি প্রত্যক্ষ করেছি—
ভোলানো সহজ তাকে, তার মধ্যে স্বপ্নের করবী
তাকেও ফোটানো সোজা—শুধু তার বীজে শক্ত বিষ
এ-সম্পর্কে কোনো কথা ভালো নয়, এড়ানোই ভালো
একদিন, মিছিলের ডগা-মধ্য-লেজে বসে থেকে, অনেক ঘুরেছি আমি
কলকাতা, বিপুল বাংলাদেশ ...
একটি সতর্ক পথ  মুড়ো খোলা, লেজে চেপে জাঁতি
.         আমার ঘরের কাছে রেখে গেছে |
আকাশের মতো তাকে মনে হয়, কিংবা ফালিকাটা
.         দরজির দোকানে টুকরো কাপড়ের মতো ব্যর্থ মুখ
যাকে শুধু রজঃস্বলা দুই ঊরু ঢেকে দিতে পারে
আর কেউ পারে না |

.        ঐ ব্যর্থ আকাশের টুকরো দিয়ে কলকাতা আমার
নিচে থেকে কাকচক্ষু ছবির মতন মনে হয় ...
পাতালে যে পড়ে আছে, সে দ্যাখে এভাবে দর্শনীয় !
মানুষেই পারে তবু রক্ত দিয়ে সে বুক ভরাতে
এবং যে দেয়, তার উপকারে এক আকর্ষক
তাঁবু ফেলে রাখা হয় কিছুদিন, যা করে পৃথক
দুইজন মানুষের বর্জনীয় রক্তের পিপাসা
যে মারে সে কিছুকাল বাদে গিয়ে বলে, বন্ধু ভালো ?
আমিও তোমার পাশে শুয়ে থাকবো নিরবধিকাল |
এইভাবে
পৃথিবীতে কিছু সত্যিকার ক্লেদ ধুয়ে মুছে যাবে
ভুল হবে রুদ্ধশ্বাস তৃষ্ণা হবে পাথরে সংযমী
আর ছার রাজনীতি ! বাড়ি বাড়ি ভিক্ষে করবে ভোট
এবং যে ভিখারিকে দয়া করে, সে কত নির্মম—
ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করবে ভিখারির বাচাল ব্যগ্রতা
এইভাবে
পৃথিবীর কিছু সত্যিকার ক্লেদ ধুয়ে মুছে যাবে—
যেভাবে প্রতিমা ধোয়, সেভাবেও ধোবে একদিন
বের হয়ে পড়বে খড়, কাঁচা বাঁশ— সাধ্য ও দালালি |
ভালোবাসাবাসি থাকে মুখোমুখি এবং শত্রুতা
আরেকরকম রোদ বাধা পেয়ে তেরছা হয়ে পড়ে
ছায়া বাঁকাভাবে পড়ে আপন স্বভাবে ...
তেমনি মানুষ !
হিংসাপরবশ সড়কি বিঁধে দেয়, লুকোচুরি খেলে
অমাবস্যাময় বনে, তার মুখ থাকে না প্রত্যহ
যেমন সহজ ছিলো, ঠেকে যায় আদর্শে, হিংসায়
অথচ জিজ্ঞাসা এক, সিংহাসন একই, নিরুদ্দেশ
ভাগ্য মন্দ—তাই পড়ে থাকা
উথ্বানক্ষমতাহীন মেরুদণ্ডে এসে লাগে ঝড়
ঝগড়ার শরিকি তাপ এবং এ-দৈনিক ধ্বংসের
আমিও উচ্ছিষ্ট এক, কায়ক্লেশে  বুঝি বেঁচে আছি...
.                                                     নিরবলম্বনে |

ঐ ঘাস আমাকেও খায় - অর্থাৎ সারল্য,  তার কাচপোকা,  ছুঁচে
.                  এবং তল্লাট জুড়ে জীবনের শান্তি, থেকে থাকা
আমার চঞ্চল্য টানে যেন সাপ সরলরেখায়
আকাশ পাতাল আমি কী কারণে উত্তপ্ত হয়েছি ?        
বরং নিশ্চিন্তি আনে বোতলের নেশা
দারুণ চপেটাঘাত মধ্যরাতে করে ভগবান –
বাড়ি যা, অবোধ ছেলে --- মুখোমুখি দাঁড়া জীবনের-
ভালোবাসাবাসি থাকে মুখোমুখি এবং শত্রুতা |

বড়ো ভালো লাগে এই পৃথিবীর মূঢ়তার দ্যোতক ইস্কুলে
.                ছুটি-লেগে-থাকা ঘর, হাইবেঞ্চ, পেটা ঘন্টাধ্বনি
বড়ো ভালো ভাঁটফুল, তীব্র গন্ধে বৃষ্টিতে মুখর
ভাঙা সাতমহল ঐ বড়োমানুষ বোসবাবুদের
.                ঝিল, তার পানফুল, আমলকি ও অর্বুদ বকুল
হাটের ধুলোয়
বড়ো ভালো সব ঐ যাতে হিম ন্যাপ্ থল মাখানো |
ডেকে আনো
যেখানে ও যাকে পাও ডেকে আনো, হিসেবনবিশ
আমার মাথার ধারে এসে গেছে, রোগীর ডাক্তার...
কিংবা মজাতৃষ্ণা নিয়ে যেভাবে মন্থর পশু গেরস্তের
.                                    সেভাবে এসেছে
বাহুল্যবর্জিত, তবু দ্রুত নয়, শিক্ষিত ভ্রমণে
এখন প্রকাশ্যে, মনে মনে, শুধু তোমাকেই চাই, তুমি
.                কাছে এসো, ভেঙে দাও ভুল
আমার শিমূল আমারই ঘরের পাশে ফুটে আছে
ফেটে তার তুলো
আমার বাগানে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে বকুলও
ছেলেবেলা থেকে তার ধুলোমাখা উচ্ছন্ন প্রকৃতি
.                 আমাকে করেছে বটে অনায়ত্ত, আলস্যমদির
কিন্তু জানি, যুক্তি কাকে বলে
জানি কাকে বলে এক খরশান্ জীবনযাপন
জানি কার নাম ক্রোধ, খাদ্য যার তুঁষ ও কর্পূর
জানি দেবার্চনা, যদি দেবতাও প্রচ্ছন্ন পাথরে ?
‘যশো দেহি’বলে আমি কোনোদিন করিনি প্রার্থনা
শুধু এই
.                    পঙ্গুর অলঙ্ঘ্য শৃঙ্গে করি আমি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত
কবিতা, কল্পনালতা
এবং হে ভঙ্গুর বিধাতা
তোমার বিখ্যাত ভালো, তোমাকে ফিরিয়ে দিতে চাই !

এক তিক্ত, নষ্ট ফলে তবু থাকে প্রত্যাশা মধুর—
কিন্তু, কেন এ-আড়াল ?  মাঝা ভেঙে ন্যাংটো হয়ে বলি :
তিক্ত ও বিরক্ত আমি, নিজভূমে দীর্ঘ পরবাসী
ওদের প্রবাসবোধ আমাদের থেকে আধুনিক
এমনি তো মনে হয়, যখনি সঠিক কথা বলে
যেন পেটকাপড়ে ঢেকে নিয়ে যায় ঝিউড়ির মতন
কিছু বা গূঢ় ও গুহ্য ; মন্ত্র নাকি ?  পাবে না সকলে |
সেই পুরোহিততন্ত্র !   অসম্ভব বিংশশতাব্দীতে
এবং যা কিছু খাঁটি তার জন্য সংহিতা, পোস্টার
সর্বজনগ্রাহ্য ঘূণ চরিত্রের ঝাঁঝ্ রা করোটিতে
.                                      ব্যাগ্ পাইপ বাজায়
হায়, হায়, কাকে বলে জন্মপরবাসী !
চলো, গিয়ে দেখে আসি
দেশ আমার, দেশ আমার, মা- -
.               অর্থাৎ এক মুঠো ধুলো, অন্য মুঠে ছাইমাখা কেশ
.                                                মুঠিভরা নুটি


এবং অনন্ত এক সহ্যের প্রতিমা,
চলো, গিয়ে দেখে আসি
.               দেশ আমার, দেশ আমার, মা
এবং তাকেও চাই, জীবনের সার্থক খেলায়
.               যে তোমার সঙ্গে যাবে, কোনদিন পিছনে ফিরবে না
সঙ্গে যাবে মেঠোঘর, গঙ্গাজল, তুলসীর মতো
আমিষ গন্ধের মতো বর্ম ঘিরে বাঁচাবে তোমাকে
.               এবং দেখাবে মন্ত্র প্রতিচ্ছবি তোমারই বালকে—
আধুনিকতার পাপ – একটি রোগের কাছে তুমি নও ভ্রষ্ট ও পাতক
.                     সাধারণ কবি তুমি
ঘুরে ফিরে, নর্তনে-কুর্দনে, সঞ্চয়বিহীন, তুমি মন্দ তুমি মূঢ়মতি
.                                                   এ যুগে প্রজড়
তোমার রক্তের চাকা, তুমি নও অর্জুন অর্জুন
তুমি আত্মরক্তপ্রিয়, এ-শতাব্দে কবির মতন নও
.                                    গৃঢ় ও তামাটে—
মমতাপিয়াসীমাত্রে স্তন্য দাও নারীর মতন---
.                                   প্রতিক্রিয়াশীল |
ঘৃণ্য এক সড়ককুক্কুর তুমি, গ্লানি ক্লেদে, প্রগতিবর্জিত
.                হেঁটোয় ওপরে কাঁটা জীবন্ত সমাধি দিতে চাই
তোমাকে, আমার মতো যারা কবি, নিতান্ত কানীন !

.                  *****************                          

.                                                                          
সূচিতে . . .     

মিলনসাগর
*
এবার আমি ফিরি         
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়
“শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা” পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৮২) থেকে নেওয়া।
"অস্ত্রের গৌরবহীন একা” (১৯৭৫) গ্রন্থের কবিতা।

          
.এবার আমি ফিরি ফেরার কুতূহলে
এবার আমি ফিরি ফেরায় কামনায়
অনেক হলো দিন অনেক হলো বলে
এবার আমি ফিরি ফেরার কুতূহলে
এবার আমি ফিরি ফেরার কামনায়
অনেক হলো দিন অনেক হলো হায়
দিনের বেলা ঘরে, ঘরের বেলা দিন
রাতের মেঘ সবই গড়ায়ে যায় জলে
নিজেরে সাবধান করিতে হবে খুব
পরেরে সাবধান করিবে তুমি আসি
তোমার ভুলগুলি তুমি কি ভুলে যাবে
তোমার ভুলগুলি আমি যে ভালোবাসি
এবার ফিরি আমি ফেরার বেলা হলে
এবার ফিরে যাই ফেরার কামনায়
দিনের বেলা ঘরে রাতের মেঘ করে
রাতের বেলা ঘরে দিনের মেঘ নাই |

.                  *****************                          

.                                                                          
সূচিতে . . .     

মিলনসাগর
*
মিষ্টিগুড়ের ইস্টিশানে
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়
“শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা” পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৮২) থেকে নেওয়া।
"অস্ত্রের গৌরবহীন একা” (১৯৭৫) গ্রন্থের কবিতা।
                                                                 
                   
এক পাড়াগাঁ থেকে আরেক পাড়াগাঁয় উঠে এলুম
রেলগাড়ি থামলো এসে মিষ্টিগুড়ের ইস্টিশানে
হাতে রইলো টোপর-ঝোপর, বড়ি-বেগুন, দাদুর লাঠি
লটবহর বলতে আরশুলা আর পোকায় কাটা প্রচ্ছদছেঁড়া নোংড়া বই
মনে রইলো টেঁ-টুঁই শঙ্ঘচিল বাগানভর্তি নারকোল গাছের
.                                              মাথায় ঝড়
উশিখুশি বাদলের দিন, বাদাবনের হাঁ-করা আলোয়. .এইসব |

কলকাতায় চলে এলুম প্রাণপণ ফাঁকা থেকে একটা ঝাঁকার মধ্যে যেন
ঐ আলু পটল মটরশাকের মনের সঙ্গে মন মেলাতে চলে
.                                                এলুম কলকাতায়
মাত্র ওটুকুই আজ প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কে, গা ঘষাঘষি
বাকিটা নাক-বরাবর দেয়াল গুমে-ভেজা জবড়জং বাড়িঘর
আর মাটি বিক্কিরি ক’রে যায় ঠিক দুক্কুরের ফিরিঅলা
বুড়ির মাথায় পাকা চুল, দোরগোড়ায় ঘন্টা নাড়ে পাটনাই ছাগল
কোথায় এলম্ হে-এ, এ কোথাকে এলম্
হর-ঘরকে ঝি-ঝিউড়ি গলি ভেজায় ঝেলম্
অর্থাৎ কিনা, মা-গঙ্গের জল রাস্তার দুপাশে নামছে ঝোরায়
পাথরের খোরায় দম্বল
মা রাঁধতেন অন্বল
চপাৎ-সপাৎ টানতুম |   টানতে-টানতে আঙুলগুলো
.                                                  বাধতো টাগরায়

একবার আগ্রায় গেলুম পূজোয়
পেতনের ওপর কুঁজোয় থাকতো ফটিক জল
মা বলতেন, খোকা, জানিস, ঐ জলের নাম জীবন
ঢোক্-ঢোক্ জল খা, খাবার-দাবার সময়ে খাবি
যখন যা পাবি, এখানে কেউ চায় না
আরশিকে বলে আয়না—

খোকা, ভদ্রতা বজায় রাখবি...
এক পাড়াগাঁ থেকে আরেক পাড়াগাঁয় উঠে এলুম
রেলগাড়ি থামলো এসে মিষ্টিগুড়ের ইষ্টিশানে ||

.                  *****************                          

.                                                                          
সূচিতে . . .     

মিলনসাগর
*
আমি যাই
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়
“শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা” পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৮২) থেকে নেওয়া।
"জ্বলন্ত রুমাল” (১৯৭৫) গ্রন্থের কবিতা।


আমি যাই
তোমরা পরে এসো
ঘড়ি-ঘন্টা মিলিয়ে
শাক-সবজি বিলিয়ে
তোমরা এসো
ততক্ষণে চোখের ওপরকার হৈ হৈ
শূন্য মাঠ পার হই
তারপর তো একনাগাড় জঙ্গল
সাপ-খোপ-জলা
সবুজ একগলা
দেয়াল বা দেয়ালের চেয়ে বেশি
মৃত্যু এলোকেশী
সাঁকো
যেখানেই থাকো
এপথে আসতেই হবে
ছাড়ান নেই
সম্বল বলতে সেই
দিনকয়েকের গল্প
অল্প অল্পই
আমি যাই

আকাশ নিঝুম
রুগ্ন ঘুম
ঝাঁট্ নেই, হাসপাতাল ময়লা
ছাগলদুধের গয়লা
কানাগলির দয়জায়
হঠাৎই আকাশ গর্জায়
ম্যানসন, মুখ-চাপা বিদ্যুৎ
জুৎ
লেই, সবটা মন-মরা
পর্দায় চড়া
যাকে বলো, আলো
সেই ভালো
আমি যাই

মস্করার মাঝখানেই বৃষ্টি এলো
এলোমেলো
হাওয়া
কাছে পাওয়া
শক্ত
বিদায়, অশ্রু-ব্যাঙ্কে রক্ত
বাস্তব বটে টাকা
ধুলো-ধোঁয়ায় ঢাকা
সন্ধে
মন দে
যাত্রাকর, জাপটে
আগের ছায়াকে ধর
কিউ—মরণকালেও লাইন
আগু-পিছু ফাইন
মাইনে কাটা
সুতরাং হাঁটা, হাঁটাই
আমি যাই
কার্নিসে ভেজা কাক
বসে থাক্
আমি যাই

পথের প্রথম দিকটাই
গোলমেলে
পেরিয়ে এলে
হিসেব মতন সাত কোশ রোজ
তাহলেই সিদ্ধি
আত্মানং বিদ্ধি –
আমি যাই

শিরীষে ফুল এসেছে
নাগকেশরের গন্ধ পাই
গোটা আকাশটাই
বদলে যেতে বসেছে
গোটা, মানে টুকরো টুকরো
ফাঁক-ফুক্ রো
গঙ্গার কাছেই এক ঝুড়ি
রূপকথার বুড়ি
কলকাতা কাঁথা বিছিয়েছে
জলের মধ্যে বাগান
খান্ খান্
সোনার বেড়া
ঠিক মাথার ওপর টেরা
চাঁদ
আঁধারে বাঁহাতি গড়, ফাঁদ
মেঘ ফাটিয়ে পেঁচা
চেঁচা, যতো জোরেই চেঁচা
চিচিং ফাঁক—
দরজা খুলবে না
চেনাজানা
সব পথই বন্ধ
কলকাতার অন্ধ
কিংবা কলকাতাই
আমি যাই

বাজারটা ঘুরে আসি
ছেলেবেলায় বাঁশি
কিংবা জলছবি
কিনেই তো লুকোবি
মন, আমারি কাছে
সমস্তক্ষণ আছে
পোড়ামুখো মিন্ সে
মাগো, কি তার হিংসে
বরং ইস্টিশানে
যাই যদি তার মানে
হয়—শুধু কি তাই
বরং আমিই যাই

কুড়োর মায়ের কুড়ো
তার চেয়ে নই বুড়ো
যেতে পারবো
ফুটফাট কাজ সারবো
টিউকলে খাবো জল
ব্যামো তো অম্বল
চিরকেলে
আজ না হয় ফেলে
পালাচ্ছি দমছুট্
সব ঝুট্ হ্যায়, ঝুট
তবু
স্মৃতির জবুস্থবু
পাল্লার ক্যাঁচকোঁচ
আওয়াজেই একপোঁচ
কলি ফেরাই
যাই

পিতল কিংবা সোনা
কাছে
যা ছিলো তাই আছে
পকেট, তাও যে ফুটো
দুপাশে স্রেফ্ দুটো
সঙ্গী বলতে সাঁই
যাই ||

.      *****************                          

.                                                                          
সূচিতে . . .     

মিলনসাগর
*
শব্দের ঝর্ণায় স্নান
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়
“শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা” পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৮২) থেকে নেওয়া।
"সুন্দর এখানে একা নয়” (১৯৭৬) গ্রন্থের কবিতা।


শব্দের ঝর্ণায় স্নান করে ওরা, আকাশের নিচে
কালো পাথরের কোলে জল ও দুধের শব্দ ঝরে পড়ে, ছিন্নভিন্ন ফেনা
কোটরে হৃদয়ে জমে, স্থিরচিত্র বিংশশতাব্দীর
তরুণ কবির রক্ত, স্মৃতি, মেধা, তছনছ সংসার
বিষের মতন বদ্ধ শব্দ আসে মুক্তস্রোত থেকে
সেখানে সে-গর্তে ওঠে শরবন, ভাসে গুঁড়ো পানা
প্রতিষ্ঠান এইভাবে শিল্পের সংস্রবে সাড়া দেয়
অর্থ দেয়—টাকাসিকি, সম্বর্ধনা, তামার ফলকে
ছেনি দেগে নাম লেখে – এবং দেয় ঘা পচনের
আগুপিছু অর্ধসত্য

শব্দের ঝর্ণায় ওরা স্নান করে আকাশের নিচে

এই তার বনাঞ্চল, এইখানে সুখের বসতি
সুন্দর এখানে একা নয়, আছে সমভিব্যাহারে
সম্পদে-বিপদে-সুখে কাজে অবসরে ঈআছে আলস্যে গভীর
কখনো-সখনো একা হেমন্তের পাতার আড়ালে
কিশোরবেলার ছেঁড়া ফ্রক, তাপ্পি মারা লাল জুতো—
এইসব সঙ্গে নিয়ে, বড়ো একা, কখনো-সখনো

শব্দের ঝর্ণায় ওরা স্নান করে আকাশের নিচে

তার কানে শব্দ নয়, চোখে আছে বিষাক্ত ভুবন
ভালোবাসা থেকে এক কৃমিকীট উঠেছে পাথরে
এবং বিমূঢ় হয়ে চেয়ে আছে, অসহ্য সুন্দর
কীটের প্রবৃত্তি থেকে কীর্তিনাশা অগ্নি জ্বলে দেখে
ভয় পায় দুঃখ পায় |   অভিমান যেন সে শিশির
বাতাসে পাতার মতো ঝরে যায় শব্দের শিবিরে
একা একা

এইভাবে দুজনের দেখা মধ্যরাতে, শ্বাপদসংকুল বনে

শব্দের ঝর্ণায় স্নান করে ওরা আকাশের নিচে
উত্সব শুরু ও শেষ, শোলাফুল চাঁদোয়ায় হিম
চাঁদের মুখের দিকে চেয়ে থাকে, মনে পড়ে তারও
আর কোনো কাজ নেই—

.                                ‘এবারে অন্যত্র যেতে পারো’ |

.                   *****************                          

.                                                                          
সূচিতে . . .     

মিলনসাগর
*
জঙ্গলের মধ্যে ঘর ঈশ্বর গড়েন
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়
“শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা” পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৮২) থেকে নেওয়া।
"প্রচ্ছন্ন স্বদেশ” (১৯৮২) গ্রন্থের কবিতা।


বৃষ্টিতে ডুয়ারস খুবই পর্যটনময় !
মেহগনি-বীথি পার হলে পাবে দোতলা বাংলোটি
কাঁটাতার বেড়া-ঘেরা সবুজ চাদরে ঘাস বড়ো উচ্ছৃঙ্খল
এখন, এখানে |
তাকে ঘিরে আছে কিছু রুদ্রাক্ষের গাছ ছাতার মতন
কৃষ্ণের দেহের বর্ণময় ফল পড়ে আছে ঘাসে,
রাতের বাদুড় তার মুখ থেকে খসিয়ে গিয়েছে,
বৃষ্টিপতনের চাপে হয়তো বা |  খুঁটিমারি রেনজ
দোতলা বাংলোর ঘর আমাদের দখলে দিয়েছে
দু’ রাতের জন্যে |

জঙ্গলের মধ্যে ঘর ঈশ্বর গড়েন |
মানুষের বসবাস সহজ সহজতর হব ব’লে
ঈশ্বর গড়েন
জঙ্গলের মধ্যে ঘর—শিক্ষানবিশির জন্যে
ঈশ্বর গড়েন
মানুষেও পারে
ঈশ্বরের কাজ হাতে, উত্তরসুরির মতো, নিয়ে নিতে
এবং বাড়াতে,
দুঃখ ও সুখের মধ্যে থাকবে ব’লে, মানুষেই পারে |


এখন জঙ্গল খুব উপদ্রুত নয় |
মানুষের ভয়ে সব পশুপাখি
অধিক অধিকতর জঙ্গলের দিকে সরে গেছে |
মানুষের সাধ্য নয় সে গভীরে যাওয়া
প্রাণভয়,. কুশলতা অপেক্ষাও বড়
ওরা গেছে প্রাণভয়ে নিজেকে জেতাতে নয়, বাঁচার তাগিদে
মানুষের মতো নয়, শিকারীর মতো নয় কোনো |

খুঁটিমারি বাংলো জুড়ে বসে থেকে অবাক হয়েছি !
তেমন নিষিদ্ধ কোনো পাখি নয়., কাক ও শালিখ—
যাদের গৃহস্থ বলে মোটামুটি, তারাই এসেছে
কখনো রেলিং-এ বসে খাদ্যের গন্ধের দিকে
পলক ফেলেছে,
কখনো উঠোনে খুঁটে তুলেছে কেঁচো বা কীট—নিজস্ব তাদের
মানুষের মুখাপেক্ষী থেকে এক উদাসীনতায়
তাদের ফুসফুস ভরে গেছে, শুধু মনটি ভরেনি
মন ও খাদ্যের মধ্যে অপরূপ যোগাযোগ আছে,
আমি জানি |

ছেড়ে চলো খুঁটিমারি, মেহগনি-রুদ্রাক্ষের বন
খাট ও পালঙ্ক, কাচ-ক্রকারিজ, চিরুনি চুল
ছেড়ে চলো সুবাতাস, সোঁদা গন্ধ, কাদা মাটিময়
জঙ্গল, যা পাখিহীন, পশুশূন্য, ছেড়ে চলো তাকে
এভাবেই যেতে হয়, যা তোমাকে পরিত্যাগ করে
তাকে ছেড়ে |
স্মৃতি বেদনার মালা ছিঁড়ে ফেলে, বাগানে ছড়িয়ে
এভাবেই যেতে হয় দ’লে ম’লে অন্ধের মতন |

এবার জঙ্গলে সরাসরি নয়, পথ খুঁড়ে খুঁড়ে
দু’পাশে জঙ্গল রেখে ক্রমাগত ছুটে-দৌড়ে যাওয়া
জঙ্গলের মায়া মেখে, ছায়া মেখে উত্তরের দিকে
ক্রমাগত চলে যাওয়া, পিছনে ব’লেও যাওয়া নয়
শুধু যাওয়া, শুধু চলে যাওয়া |
এবার জঙ্গলে সরাসরি নয়, মেটেলির হাটে
জঙ্গলের কিছু কিছু লোক ছুঁতে যাওয়া |
মেটেলি-চালসার হাটে চলো যাই
ঘুরে-ঘুরে-ঘুরে
পাহাড় পাকিয়ে উঠে চলো পথ ঘুরে-ঘুরে-ঘুরে |

কাছে দূরে চা-বাগান, ধোঁয়া ওঠে পাকিয়ে আকাশে---
এখানেও পাকদণ্ডী !  ধোঁয়ার প্রকৃত পাকা পথ
উত্তর বাংলার |
এ-নিসর্গ দ্বিতীয়রহিত
জঙ্গল-পাহাড় নদী মানুষের মুখশ্রী বাড়ায়
ছায়া ফেলে মুখে |
মানুষ এখানে খুব দ্রুতগামী নয়
মাটির মানুষ খরস্রোত নদীর মতন
কিংবা শুধু পাহাড়ের মতো নয় সম্পন্ন সবুজে |
বিপণ্ণতা আছে, ধৃতি, বৃন্ত, পাতা আছে—
শুধু হাহাকার নয়, আনন্দও আছে,
মাদলে-বাদলে বাজে হাতের খঞ্জনী,
পায়ের নূপুর বাজে জলে যেন নুড়ি
ঘোরা গান গেয়ে চলে মহামান্য বুড়ি
তিস্তা |

চাতালে বসেছে হাট |  দেখে মনে হবে
শর্করা মণ্ডের পানে ছুটছে মানুষ
সারিবদ্ধ, পিঁপড়ের মতন
বাগানে বল্মীকস্তূপ ভেঙে-ভেঙে ছুটেছে বাল্মীকি—
হাটে যাবে !
সপ্তাহের হাট,
ছদিনের ধান ভেঙে চাল করা আলোর মতন
এই হাট !
বন্দী জানালার মতো হাতছানিময়
খোলা খাঁচা নিয়ে পাখি যেমন বিমূঢ়
মানুষও বিমূঢ় হয় ছ’-ছ’ দিন ভেবে
অতোটুকু মুক্তি পেলে, কীভাবে সামলাবে ?

একসময় সন্ধ্যা নেমে আসে
মাদলে স্থলিত কাঠি ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তোলে আকাশে-বাতাসে
সন্ধ্যা হয়ে আসে |
বিজয়ী মোরগ বুকে ওঁরাও মরদ হাসে যতো
তারও বেশি কাঁদে
কারণ না জেনে কাঁদে ধুলোয় লুটিয়ে
ছদিনের কান্না যেন একদিনে ফুরোবে
হালকা-বুকে ফিরে যাবে বাগিচা-বস্তিতে—
যাওয়া যায় ?
বাগিচার মধ্যে বস্তি ঈশ্বরই গড়েন ||

.                   *****************                          

.                                                                          
সূচিতে . . .     

মিলনসাগর
*
চতুর্দশপদী কবিতাবলী
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়
“শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা” (১৯৭৩) থেকে নেওয়া। "চতুর্দশপদী কবিতাবলী”
(১৯৭০) গ্রন্থের কবিতা।


একটি হাঁসের চেয়ে ভারি নও, যারে বারবার
দূরের পাহাড়ে-ভরা ঝর্ণায় ভাসাই প্রতিদিন |
চিন্তার চেয়েও তুমি লঘুপক্ষ, তুমি পারাবার
নও, তুমি অতিশয় রূপবান অথবা মিহিন
সুষমামণ্ডিত নও তরুবীথি –কেন বহিব না
তোমারে কয়েকদিন ? প্লাতেরোর সান্নিধ্য তোমার
ভালো লাগিবে না, তবু তার ভালো লাগিবে তোমারে
অসম্ভব ভালো আর উত্তেজক – প্রণয়বিহীন |
পৃথিবীতে বহুদিন শিক্ষা দেওয়া হয় প্রসাঙ্গিক
বিষয়ে, বিজ্ঞানে, দৌত্যে – নাবিকতা, পর্বতারোহণ—
এইসব, শিক্ষাশেষে ডিপ্লোমা ও মান্য যুগপৎ
নিক্ষিপ্ত গৌরববসম ভেসে আসে – হাঁস নাই জলে
কেননা, হাঁসের চেয়ে তুমি হায় কি অপ্রাসঙ্গিক
প্লাতেরোর দুঃখ হয়, বহনের ক্লেশ তুমি করো |

.                   *****************                          

.                                                                          
সূচিতে . . .     

মিলনসাগর
*
চতুর্দশপদী কবিতাবলী
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়
“শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা” (১৯৭৩) থেকে নেওয়া। "চতুর্দশপদী কবিতাবলী”
(১৯৭০) গ্রন্থের কবিতা।


ভালোবাসা ছাড়া কোনো যোগ্যতাই নাই এ-দীনের
দয়াময়ি, দয়া করো, ভিখারিরে অন্নবস্ত্র দাও
রাখিও না মানহীন উলঙ্গ আলোকে প্রকাশিয়া
লোল তরবারি—বাহ্যপ্রাকৃতিক, নৈরাশে, হাওয়ায় |
লো নিবিড় দিনগুলি বৃথা যায় বহিয়া পবনে—
দয়া করো, আজিকার মুহূর্তমণ্ডিত দিনগুলি
বহি যায়, দয়া করো—ব্যর্থতার বিরূদ্ধে দাঁড়াও
ভালেোবাসা ছাড়া কোনো যোগ্যতাই নাইএ-দীনের |
হৃদয়ে অসংখ্যবার বালুকাবেলার ‘পরে জল
এসেছিলো, বহুবার – তার পদাঘাত যায় ডাকি—
প্লাতেরো, অ্যাঙ্করহীন, ঘোড়ার অনুজ, সহোদর—
আজিকার দিনগুলি বৃথা যায় বহিয়া পবনে
ওঠো, ক্ষূর গাঁথি সব ব্যর্থতার বিরুদ্ধে দাঁড়াও
হাস্যকরভাবে, বলো : দয়াময়ি, দয়া করো চিতে !

.                   *****************                          

.                                                                          
সূচিতে . . .     

মিলনসাগর
*
চতুর্দশপদী কবিতাবলী
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়
“শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা” (১৯৭৩) থেকে নেওয়া। "চতুর্দশপদী কবিতাবলী”
(১৯৭০) গ্রন্থের কবিতা।

১০
তোমার পায়ের তল মুছাতে-মুছাতে হাত কাঁপে---
অবিমৃষ্যকারিকতার মতো আর কিছু নাই, আহা,
তোমার পায়ের তল মুছাতে-মুছাতে হাত কাঁপে
প্লাতেরো হৃদয়হীন, হা প্লাতেরা, শুভ্র মেধাহীন |
একান্ন কুমারী জলে সারিবদ্ধভাবে ভাসি যায়
ওরা ভালোবাসে জল, ওরা ভালোবাসে না প্লাতেরো
আমাদের, হা প্লাতেরো, উহাদের পদতল নাই
দুইশত চারি হাতে উহারা বিস্তৃত আছে জলে |
যে-বাড়িতে আছি তার পাশের সঠিক পলিপথে
সময়, বরফ-অলা, হাঁকি যায়—দু-ডাকে আলাদা
করে দেয় আমাকে, ও আমার বাবার প্লাতেরোকে |
যে-বাড়িতে আছি তার উপহৃত দু-ঘড়ি জানায় ;
দ্বিতীয় প্রভাত, দুই সূর্য, দুই সন্ধ্যা—অন্ধকার
অথচ প্লাতেরো বলে – প্রতিসন্ধ্যা শব্দরূপ পড়ো |

.                   *****************                          

.                                                                          
সূচিতে . . .     

মিলনসাগর
*
চতুর্দশপদী কবিতাবলী
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়
“শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা” (১৯৭৩) থেকে নেওয়া। "চতুর্দশপদী কবিতাবলী”
(১৯৭০) গ্রন্থের কবিতা।

১১
প্লাতেরো, তোমারে প্রিয় ঈর্ষা করি, তুমি বহুদিন
আমার বুকের পাশে ঘুমায়েছো, পিঠের উপরে |
আমার গোলাপগুলি খেয়ে গেছো, ভবিষ্যৎ-ভরা
কবিতার খাতাগুলি –স্মরণীয় রুমালের ঝাঁক |
তবুও তোমারে কিছু বলি নাই, আত্মসাবধান
কোরেচি বাবার মতো | দূরদেশে গিয়েছি কখনো
তুমি কি কখনো আর বহিবে না, বহিব একাকী
দুঃখ ও স্মৃতির ভার, উপরন্তু, তোমারে, দিবসে ?
শোনো বেড়াবার গল্প –বহু পুরাতন গল্প নয় –
তোমার অদ্ভুত চোখ চাহিল বারেক মুখপানে ;
মুহূর্তে উদ্দিষ্ট তব দেখি কোনো নূতন কবিতা—
কী ভীষণ ভালোবাসা মদীয় কবিত্বে স্নানাহার !
প্লাতেরো তবুও কোন্ মায়াবী ভিতরে ডেকে যায়
তুমি যতো খুলে দাও, প্রিয় যাই কেবলি জড়িয়ে !

.                   *****************                          

.                                                                          
সূচিতে . . .     

মিলনসাগর