সে বড়ো সুখের সময় নয়, সে বড়ো আনন্দের সময় নয় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় উত্তম দাশ ও মৃত্যুঞ্জয় সেন সম্পাদিত আধুনিক প্রজন্মের কবিতা থেকে নেওয়া।
পা থেকে মাথা পর্যন্ত টলমল করে, দেয়ালে দেয়াল, কার্নিশে কার্নিশ, . ফুটপাত বদল হয় মধ্যরাতে বাড়ি ফেরার সময়, বাড়ির ভিতর বাড়ি, পায়ের ভিতর পা, . বুকের ভিতর বুক আর কিছু নয়--- ( আরো অনেক কিছু ? ) --- তারও আগে পা থেকে মাথা পর্যন্ত টলমল করে, দেয়ালে দেয়াল, কার্নিশে কার্নিশ . ফুটপাত বদল হয় মধ্যরাতে বাড়ি ফেরার সময়, বাড়ির ভিতর বাড়ি, পায়ের ভিতর পা, বুকের ভিতরে বুক আর কিছু নয় | ‘হ্যান্ডস্ আপ’---হাত তুলে ধরো – যতক্ষণ পর্যন্ত না কেউ . তোমাকে তুলে নিয়ে যায় কালো গাড়ির ভিতরে আবার কালো গাড়ি, তার ভিতরে আবার কালো গাড়ি সারবন্দী জানলা, দরজা, গোরস্থান –- ওলোট পালট কঙ্কাল কঙ্কালের ভিতরে শাদা ঘুণ ভিতরে জীবন, জীবনের ভিতরে . মৃত্যু---সুতরাং মৃত্যুর ভিতরে মৃত্যু আর কিছু নয় ! ‘হ্যান্ডস্ আপ’—হাত তুলে ধরো--- যতক্ষণ পর্যন্ত না কেউ . তোমাকে তুলে নিয়ে যায় তুলে ছুঁড়ে ফেলে গাড়ির বাইরে, কিন্তু অন্য গাড়ির ভিতর যেখানে সব সময় কেউ অপেক্ষা করে থাকে—পলেস্তারা মুঠো করে বটচারার মতন কেউ না কেউ, যাকে তুমি চেনো না অপেক্ষা করে থাকে পাকার আড়ালে শক্ত কুঁড়ির মতন মাকড়সার সোনালি ফাঁস হাতে, মালা তোমাকে পরিয়ে দেবে--- তোমার বিবাহ মধ্যরাতে, যখন ফুটপাত বদল হয় . ---পা থেকে মাথা পর্যন্ত টলমল করে দেয়ালে দেয়াল, কার্নিশে কার্নিশ মনে করো, গাড়ি রেখে ইস্টিশান দৌড়চ্ছে, নিবন্ত ডুমের পাশে তারার আলো মনে করো জুতো হাঁটছে, পা রয়েছে স্থির – আকাশ-পাতাল এতোল-বেতোল মনে করো, শিশুর কাঁধে মড়ার পাল্কি ছুটছে নিমতলা – পরপারে বুড়োদের লম্বালম্বি বাসরঘরী নাচ--- সে বড়ো সুখের সময় নয়, সে বড়ো আনন্দের সময় নয় তখনই পা থেকে মাথা পর্যন্ত টলমল করে, দেয়ালে দেয়াল, কার্নিশে কার্নিশ, . ফুটপাত বদল হয় মধ্যরাতে বাড়ি ফেরার সময়, বাড়ির ভিতর বাড়ি. পায়ের ভিতরে পাপ, বুকের ভিতর বুক আর কিছু নয় ||
ও চিরপ্রণম্য অগ্নি কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় উত্তম দাশ ও মৃত্যুঞ্জয় সেন সম্পাদিত আধুনিক প্রজন্মের কবিতা থেকে নেওয়া।
ও চিরপ্রণম্য অগ্নি আমাকে পোড়াও | প্রথমে পোড়াও ঐ দুটি পা দুটি যা চলচ্ছক্তিহীন, তারপর যে-হাতে আজ প্রেম পরিচ্ছন্নতা কিছু নেই | এখন বাহুর ফাঁদে ফুলের বরফ, এখন কাঁধের ‘পরে দায়িত্বহীনতা, ওদের পুড়িয়ে এসে জীবনের কাছে, দাঁড়াও লহমা, তারপর ধ্বংস করো সত্যমিথ্যা রঙে-শ্বেতে স্তব্ধ জ্ঞানপীঠ | রক্ষা করো দুটি চোখ | হয়তো তাদের এখনো দেখার কিছু কিছু বাকী আছে | অশ্রুপাত শেষ হলে নষ্ট করো আঁখি, পুড়িও না ফুলমালা স্তবক সুগন্ধে আলুথালু , প্রিয় করস্পর্শ ওর গায়ে লেগে আছে | গঙ্গাজলে ভেসে যেতে দিও ওকে মুক্ত, স্বেচ্ছাচারী – ও চিরপ্রণম্য অগ্নি আমাকে পোড়াও |
পড়ন্ত বিকেলে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় উত্তম দাশ ও মৃত্যুঞ্জয় সেন সম্পাদিত আধুনিক প্রজন্মের কবিতা থেকে নেওয়া।
ও বোধিবৃক্ষের পাতা রয়েছো লুকায়ে ?
কীভাবে সন্ধান ক’রে সর্বশক্তিমান পাতার উপর লিখি শূন্যতার কথা ! কীভাবে নিকটে এসে উঁকি মারো সর্বশক্তিমান ও বোধিবৃক্ষের পাতা পড়ন্ত বিকেলে !
প্রকৃত কে ধরা দিল তা নিশ্চিত নয়, খুঁজে পাওয়া গেলো কিনা তা নিশ্চিত নয়, কিন্তু, এসে গেলো, দেখা একে অপরের পড়ন্ত বিকেলে – মাথার ভিতর ছিলো এক একটি কবিতার মতন শূন্যতা |
জন্মদিনে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় উত্তম দাশ ও মৃত্যুঞ্জয় সেন সম্পাদিত আধুনিক প্রজন্মের কবিতা থেকে নেওয়া।
জন্মদিনে কিছু ফুল পাওয়া গিয়েছিলো | অসম্ভব খুশি হাসি গানের ভিতরে একটি বিড়াল এক বাহান্নটি থাবা গুনে গুনে উঠে গেলো সিঁড়ির উপরে লোহার ঘোরানো সিঁড়ি, সিঁড়ির উপরে সবার অলক্ষ্যে কালো সিঁড়ির উপরে শুধু আমিই দেখেছি তার দ্বিধান্বিত ভঙ্গি তার বিষণ্ণতা |
জন্মদিনে কিছু ফুল পাওয়া গিয়েছিলো এখন শুকিয়ে গেছে |
দুঃখ কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় অনুপ কুমার মহাপাত্র সম্পাদিত সহজ পাঠের কবিতা থেকে নেওয়া।
কবি যদি দুঃখ পায়, কলকাতাও দুঃখ পেতে থাকে | অথচ সকলে বলে, তার মতো নিষ্ঠুর দেখিনি--- খল, শঠ, প্রবঞ্চক, হৃদয়বিহীন বৃদ্ধা লোল এবং কখনো টেনে গৃহ থেকে শিশুকে চাকায় থ্যাঁতলায়, নিহত করে ; ফেলে দেয় নর্দমার ধারে গরীব দুঃখীকে, হায় কলকাতা কি দুঃখ পেতে পারে ?
আমি জানি দুঃখ পায়, কেঁদে হয় কলকাতা আকুল মনের ভিতরে তুমি একবার কান পেতে শোনো মধ্যরাত্রে ফাঁকা রাস্তা, কান পাতো রাস্তার উপরে--- শুনবে, কে যেন কাঁদছে, মনে মনে দুঃখের নিশ্বাস পড়ছে, যেন মেঘ ডাকছে নিচের গহ্বর থেকে রোজ রোজই যাকে কাঁদতে হয়, সে কি আর দুঃখ পেতে জানে ?