সারাদিন কী কী ফুল ফোটে আমি জানি আকন্দ, ঘেঁটু ফোটে কখনো-সখনো--- হয়তো রঙিন নয় তত-- কুসুম বা পুষ্প বলতে যা বুঝি জেনেশুনে ফের কোনো বাগানের ভিতরেই ঢুকে দেখি জুঁই, কিংবা শিউলির সাদা অন্তর্মুখী ফাঁকা ঠোঁটে কত কি জীবিত একটু বিস্মিত হই, কুঁড়ি ঝরে পড়লে যা হয় এমন তো নয় পদ্মা বা চামেলি গোল হয়ে ঘিরে ধরে ওই বাড়িটিকে ---
এরকম হুলুস্থুলু দেখি স্পষ্ট, ভোরের আলোয় কৃষিবিদ একজন আমাকে কুঁড়ির নিত্য নতুন বর্ণনা দিতে থাকে তারও রং টুকটুকে ছিল, তার বর্ণচ্ছটা দেখি প্রতিদিন, কীভাবে এক পা তুলে আমি ফুলগুলি থেকে দূরে যেতে পারি নিজেও জানি না, আরও হাঁটি, বাগানের সবই পাতাসুদ্ধ ইশারায় ডাকে কাছে গেলে ফিসফিস করে এত কী বোঝায় তারা এক কুন্দ, কলাবতী লাজুক, মুচকি হেসে ওঠে বিপিনবিহারে ডেকে বলে মহোত্সব হবে আজ---- দুঃখী বাড়িটির পাশে গেলেই সঠিক হত, তবু উচ্ছ্বসিত এই জন্য যে বিভিন্ন সময়ে ছুঁয়ে দেখতে পেয়েছি কুঁড়ি, তার ভিতরের ফুলগুলি |
কেউ ডাকছে কোনো আড়াল থেকে গোপনে শুনতে পাচ্ছি একটা কোয়েলিয়া ও চিলের কান্নাও আজ বৃষ্টি হবে কুচিয়া গ্রাম থেকে বান্দোয়ান পেরিয়ে . তীর্থযাত্রার পথে জল গড়াবে হু হু গৃহহীনা উন্মাদের মতো ভিজবে দুহাত তুলে আজ আরও একটা বাইশে শ্রাবণ আমি জানালায় বসে বসে কেবলই অন্ধ হয়ে যাচ্ছি--- ওইটুকু রাস্তা পেরোব কীভাবে ? দিনাবসানের গাড়িগুলি ছুটছে একে অপরের পেছন পেছন আমার নির্জনতা লুকিয়ে আছে এক পুরনো গাছের নিচে আজ ফের বৃষ্টি হবে এক তরুণ কবির হাত ধরে রাস্তা পেরোচ্ছি একা
বহুদিন পর বৃষ্টি এল জোরে, লন্ডভন্ড হল সবকিছু কুচিয়া গ্রামের দিকে একটা বিবর্ণ বাস ভিজতে ভিজতে ছুটে গেল আজ চারাগাছগুলি স্নান করছে মনের সুখে তারা-বিদ্যামন্দিরের ছাত্রীরা আসেনি কেউ, ক্লাসরুম জলে থইথই --- খিচুরি হবে না জানি, ডিমভাজা ও ভদকা নিয়ে বসেছেন একা বিভু, দায়িত্ববান পুরুষ, স্কুলে ভালোমন্দ সবই সামলান নিজে ক্লাস সিক্স পড়া শেষে পলিটিক্সে --- আজ শুধু বৃষ্টিধারায় দুদিকে প্লাবন দেখছি ঘনাচ্ছন্ন ধারাজল ঠেলে বাসটি এগোয় দ্রুত আজ আরও বৃষ্টি হবে তেমন শুনেছি কাল, প্রাণীসমাজের কথা শুনেছি আগেই বাসের অন্দরে বদ্ধ ঘেরাটোপে কারা আছে জানি না আমিও সবাই দুলছে যেন, এ-ওর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ছাড়ে ঘন ঘন বাইরে বৃষ্টির তোড়ে আমি দেখি এইমাত্র সমুদ্রের তীর থেকে উঠে এল দুজন নাবিক মাথায় রঙিন ছাতা, হাতে গ্যালাক্সির জাদুদন্ড---- সবটা ভ্যানিস করে দিতে চোখ কপালের ভাঁজে মিশিয়েই হুস্ করে গর্জে ওঠে বলামাত্র বৃষ্টি থেমে যায়, দুটো পানকৌড়ি একটা সজনে গাছ থেকে অন্য কোথাও পালায়, কৃষিবিদ যে যার মতো দৌড়োয়, পাগল সাজে নৃত্যপটিয়সী আজ আচম্ কা বৃষ্টি থামল যে, তাকে চিনি, ধারাবর্ষে নয়, সে ছিল অম্লান ঊষরতা |
আমি ফুল তুলে দিই একা পিরীতের পাগলিকে একা নয়, বোঁটাসুদ্ধ পাতাও তিনটে সঙ্গে দেব কার হাতে যে দেব জানি না হে বাতাস, বসন্তেরই ঝড় তোলো আজ বারবার
পাশ দিয়ে ভাঙা এক সাইকেল ক্রিং ক্রিং ছুটে যায় অস্ফুটে একটা নীল ফড়িং বেড়ায় উড়ে জামরুল গাছে আমি দু’হাত মেলে অপেক্ষায় থাকি বসন্তের দু’একটি পাপড়ি হয়তো জমা হবে বলেছিল কেউ
শুকনো পাতার পর আর কতটুকু হাঁটা যায় জানি না হে বিষ্ণু মন্দিরের পাশে কখনও সূর্যের আলো ঢুকতে দেখিনি আমি আছি নিনাদিত বাতাসের সঙ্গে আজও জড়াজড়ি একা রাঙানো কনকচাঁপা না হোক এ পদ্ম হবে আন্দোলিত ঠিকই
ফাগুয়ার সঙ্গে ছিল চক্ মকি দিনগুলি, গুপ্তকেশী চোরও হাতের তালুতে জুঁই তাগা ও কঙ্কণ ছুঁড়ে মেরেছে সবাই আমরা বন্দিনী সব সেজে উঠি হইহই করে ছাই-রঙা পতাকাটি আজ ছিঁড়ে ফেলি বর্ণময়তায় |
আজ খুব ভোরে উঠে দেখি বৃষ্টি থেমে গেছে পুরোপুরি না হলেও বর্ষাতি বা ছাতা কোনো কিছুরই প্রয়োজন ছিল না আমি সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেটের বাইরে যাই, দেখি মাধবীলতার গায়ে মুক্তোর মতন জল লেগে আছে স্থির পাশের বাড়ির দু’টি মেয়ে একসঙ্গে . ছোটবেলায় খেলত কত আজ এই ভোরে শুধু অপমান করার জন্যই আমাকে গম্ভীর হয়ে ডাকছিল বারবার, আমি শুনতে পাইনি কিছু পরে জানলাম ওরা ডিমভাজা, ফুলকপি দিয়ে . খিচুরি বানিয়েছিল আমাকে খাওয়াবে বলেই
নিজেকে দরিদ্র ভেবে ---- ভালোমানুষের ভান করে এভাবে লুকোব কত দিন মাধবীলতার কাছে গিয়ে আজ সেকথা জানালে সে মুচকি হেসে ধন্য করে দিল বৃষ্টি, মেঘ, দুটি মেয়ে আর আমাকেও |