কইলকাত্তায়
কবি শঙ্খ ঘোষ

বাপজান হে
কইলকাত্তায় গিয়া দেখি সক্কলেই সব জানে
আমিই কিছু জানি না
আমারে কেহ পুছত না
কইলকাত্তার পথে ঘাটে সবাই দুষ্ট বটে
নিজে তো কেউ দুষ্ট না

কইলকাত্তার লাশে
যার দিকে চাই তারই মুখে আদ্যিকালের মজা পুকুর
শ্যাওলপচা ভাসে

অ সোনাবৌ আমিনা
আমারে তুই বাইন্দা রাখিস, জীবন ভইরা আমি তো আর
কইলকাত্তায় যামু না।

.                   ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
কবি শঙ্খ ঘোষের কবিতা
setstats
*
বাবরের প্রার্থনা
কবি শঙ্খ ঘোষ

এই তো জানু পেতে বসেছি, পশ্চিম
আজ বসন্তের শূন্য হাত---
ধ্বংস করে দাও আমাকে যদি চাও
আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।

কোথায় গেল ওর স্বচ্ছ যৌবন
কোথায় কুড়ে খায় গোপন ক্ষয়!
চোখের কোণে এই সমুহ পরাভব
বিষায় ফুসফুস ধমনী শিরা!

জাগাও শহরের প্রান্তে প্রান্তরে
ধূসর শূন্যের আজান গান ;
পাথর করে দাও আমাকে নিশ্চল
আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।

না কি এ শরীরে পাপের বীজাণুতে
কোনোই ত্রাণ নেই ভবিষ্যের
মৃত্যু ডেকে আনি নিজের ঘরে ?

না কি এ প্রসাদের আলোর ঝল্ সানি
পুড়িয়ে দেয় সব হৃদয় হাড়
এবং শরীরের ভিতরে বাসা গড়ে
লক্ষ নির্বোধ পতঙ্গের ?

আমারই হাতে এত দিয়েছ সম্ভার
জীর্ণ ক’রে ওকে কোথায় নেবে ?
ধ্বংস করে দাও আমাকে ঈশ্বর
আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।

.        ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
মিথ্যে কথা
কবি শঙ্খ ঘোষ

লোকে আমায় ভালোই বলে দিব্যি চলনসই
দোষের মধ্যে একটু নাকি মিথ্যে কথা কই।
ঘটশিলাতে যাবার পথে ট্রেন ছুটছে যখন
মায়ের কাছে বাবার খাছে করছি বকম্ বকম্।
হঠাৎ দেখি মাঠের মধ্যে চলন্ত সব গাছে
এক একরকম ভঙ্গি ফোটে এক একরকম নাচে।
“ওমা দেখ নৃত্যনাট্য” --- যেই বলেছি আমি
মা বকে দেয়, “বড্ড তোমার বেড়েছে ফাজলামি।”
চিড়িয়াখানার নাম জানো তো আমার সেজ মেসোর?
আদর করে দেখিয়েছিলেন পশুরাজের কেশর
ক’দিন পরে চুন খসানো দেয়াল জুড়ে এ কী
ঠিক অবিকল সেই রকমই মূর্তি যেন দেখি ?
ক্লাসের মধ্যে যেই বলেছি সুরঞ্জনার কাছে
“জানিস ? আমার ঘরের মধ্যে সিংহ বাঁধা আছে!”
শুনতে পেয়ে দিনিমণি ওমনি বলেন “শোনো,
এসব কথা আবার যেন না শুনি কক্ষনো।”

বলি না তাই সে সব কথা সামলে থাকি খুব
কিন্তি সেদিন হয়েছে কি এমনি বেয়াকুব---
আকাশপারে আবারও চোখ গিয়েছে আটকে
শরৎ মেঘে দেখতে পেলাম রবীন্দ্রনাথকে।

.              ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
মিস্
কবি শঙ্খ ঘোষ

বাইরে এত লম্ফঝম্ফ
ক্লাসে গেলেই চুপ
কেন সেটা জানতে কি চাও ?
.        ---মিসেদের যা রূপ!

ক্লাসে এসেই শুরু করেন
প্রকাণ্ড লাফঝাঁপ---
তাদের সামনে কথা বলব
ভাবলে --- উরে ব্বাপ্

বুক ঢিপঢিপ বুক টিপটিপ
.        স্বর হয়ে যায় ক্ষীণ---
ভাবতে থাকি : ইস্কুলে আর
আসব কোনোদিন ?

তারপরে যেই পরে আবার
স্কুলের বাইরে পা---
তখন দেখি আর কিছুতে
মন তো লাগে না!

কেবল ভাবি কাল সকালে
.        ক্লাস আছে ভাগ্যিস
জান না তো কেমন ভালো
.        গল্প বলেন মিস্।

.       ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
বাউল
কবি শঙ্খ ঘোষ

বলেছিলাম তোমায় নিয়ে যাব অন্য দূরের দেশে
সেই কথাটা ভাবি,
জীবনের ওই সাতটা মায়া দূরে দূরে দৌড়ে বেড়ায়
সেই কথাটা ভাবি।
তাকিয়ে থাকে পৃথিবীটা, তোমার কাছে হার মেনে সে
বাঁচবে কেমন ক’রে!
যেখানে যাও অতৃপ্তি আর তৃপ্তি দুটো জোড়ায় জোড়ায়
সদরে-অন্দরে।

উদাসিনী নও কিছুতে---বুঝতে পারি তোমার বুকে
অন্য কিছু আছে,
যন্ত্রণা তার পাকে পাকে হৃদয় খোলে, সে খোলাটার
অন্য মানে আছে।
ঘুমের মধ্যে দেখি আলোর ভরা-কুসুম নীলাংশুকে
বাঁধতে পারে না এ :
উঠেই দেখি কী বিচিত্র, একটি আঁচড় লাগে নি তার
ভালোবাসার গায়ে!

বলেছিলাম তোমায় আমি ছড়িয়ে দেব দূর হাওয়াতে
সেই কথাটা ভাবি
তোমার বুকের অন্ধকারে সুখ বেজেছে মদির হাতে
সেই কথাটা ভাবি॥

.                  ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
যেদিন
কবি শঙ্খ ঘোষ

যেদিন নদীর জলে ভেসেছিল দু’হাজার শব
যেদিন পাড়ার সব দুয়োরে কুলুপ আঁটা ছিল
যেদিন শহরজোড়া গাছে গাছে ঝোলা কাটা হাত
অসাড় ইশারাভরে ডেকেছিল হৃৎপিণ্ডগুলি
যেদিন মাটির থেকে উঠেছিল শুধু কচি হাড়
বুভুক্ষু সমস্ত মুখ ভরে দিয়েছিল হুতাশনে
রাজপথে ছুটেছিল যেদিন উলঙ্গ নারীদল
এবং স্তনের শীর্ষে গাঁথা ছিল হাজার ত্রিশূল
যেদিন কবন্ধগুলি মদভাণ্ড রেখে ডানপাশে
নিজেরই মুণ্ডের চোখ খুঁজেছিল টেবিলের নীচে
যেদিন পৃথিবী তার সম্বিৎ হারিয়ে ছিল চুপ
ঝর্ঝর ঝরার শব্দে ঝরে পড়েছিল সব ধী
মুখেরা ফসিল আর যেদিন ফসিলই হল মুখ
সেদিনও কি জানতে চাও তাহলে কবির ধর্ম কী ?

.                ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
শহিদশিখর
কবি শঙ্খ ঘোষ

আমি এই শতাব্দীর শেষ প্রান্ত থেকে কথা বলি
আমি এই শালপ্রাংশু মধ্যরাত্রি থেকে কথা বলি
আমার মায়ের রক্ত হাতে নিয়ে আমি কথা বলি
হোলি খেলেছিল যারা আমার মেয়ের রক্ত নিয়ে।
আগুন জ্বালিয়ে যারা শবের উপরে নেচেছিল
এই শেষ অন্ধকারে তাদের সবার কথা বলি
আর যারা চুপ ছিল যারা কিছু দেখেও দেখেনি
একাকার মনে যারা অনায়াসে ছিল অন্যমনে
গলের ভিতরে যারা দলবৃত্তে অন্ধ হয়ে ছিল
অথবা মৃতই ছিল---সেই সব প্রাক্তন হৃদয়ে
একমুঠো ছাই ছুড়ে পিছনে না চেয়ে ফিরে এসে
নক্ষত্রের ক্ষত বুকে রক্ষাবাহিনীর ব্যূহমুখে
এই শতাব্দীর শেষ ভূমিহারদের কথা বলি
বলি যে জাতক বীজে মাটির কেশর মেখে মেখে
এক মরণের থেকে আরেক মরণে যেতে যেতে
আণার আমির থেকে জেগে ওঠে আরো আরো আমি
আমিই শতাব্দী আমি আদিঅন্তহারা মহাদেশ
আমি এই শতাব্দীর শহিদশিখর থেকে বলি
মৃত্যুর ভিতরে আজ কোথাও মৃত্যুর নেই লেশ
দেখো এ মৃত্যুর মধ্যে কোথাও মৃত্যুর নেই লেশ!

.                ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
নামতা
কবি শঙ্খ ঘোষ
সবকিছুতেই খেলনা হয় থেকে নেওয়া

নামতা ভুলে আমতা গেলে
.            সামতাবেড়ের গা-য়
শালুক-মুখে ভালুক উঠে
.            দাঁড়াচ্ছে জ্যোত্স্নায়
চুক্তি করে নিক্তি মেপে
.            দোক্তা যদি খায়
জ্যোত্স্নারাতে পোষ মানাতে
.            স্বগ্ গে চলে যায় |

.           ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
শহর
কবি শঙ্খ ঘোষ
সবকিছুতেই খেলনা হয় থেকে নেওয়া

রাগ কোরো না রাগুনি
মুখ কোরো না বেগুনি
বাস আসবে এখুনি
ছুটতে হবে তখুনি
বাসের পিছন পিছনে
কী শুনতে সে কী শোনে
বাসের গায়ে কাঁঠালফল
নেই পা-দানি নেই হাতল
কোলে তোমায় নিল না
জায়গা তো আর ছিল না
তাই বলে কি রাগতে হয়
ধৈর্য ধরে থাকতে হয় !

.       ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
দিন ফুরোলে
কবি শঙ্খ ঘোষ
সবকিছুতেই খেলনা হয় থেকে নেওয়া

সুয্যি না কি সত্যি নিজের ইচ্ছেয়
ডুব দিয়েছে ? সন্ধে হলো ? দুচ্ছাই !

আকাশ জুড়ে এক্ষুনি এক ঈশ্বর
চমকে দেবেন লক্ষ রঙের দৃশ্যে |

লক্ষ, বা তা হতেই পারে একশো---
কেই-বা খুলে দেখছে রঙের বাক্স !

আমরা কি আর দেখতে পাব ভাবছ ?
বাপমায়েরা যাবেন তবে মুচ্ছো  !

পাখির সারি যেমন ধানের গুচ্ছে
আঁধার ফেলে ঘরের দিকে উড়ছে

তেমনি এবার ফিরতে হবে সত্যি
নিজের নিজের মন-খারাপের গর্তে |

বলবে বাবা :  এইটুকু সব বাচ্চা—
দিন ফুরোলেও মাঠ ছাড়ে না ? আচ্ছা !

মা বলবে :  ঠ্যাংদুটো কী কুচ্ছিৎ !
একগঙ্গা জল দিয়ে তাই ধুচ্ছি |

.       ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*