গোছানিয়া
কবি শঙ্খ ঘোষ
ওরে ও বায়নাবতী থেকে নেওয়া

ওরে আমার সংসারিণী
.          ওরে আমার গোছানিয়া
সমস্ত ঘর দৌড়ে বেড়াও
.          ঝাঁকড়া চুলের গোছা নিয়া |
ছোট্ট একটা বালতি হাতে
জল ভরে নাও কলতলাতে
আর তো কোনো ভাবনাই নাই
.           ঘর ধোয়া আর মোছা নিয়া |
সব তো এখন তুমিই পারো
রইবে না আর কাজ তো কারো
ওরে আমার স্বপ্ন, আমার
.           সকল দুঃখ ঘোচানিয়া !

.           ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
*
ঘর
কবি শঙ্খ ঘোষ
ওরে ও বায়নাবতী থেকে নেওয়া

এখানে             একলা ঘরে
‘ও দিশা           করছ কী এ ?’
‘কী আবার        করব বলো---
বাবা-মা            যায় বেরিয়ে
আমি তাই        একলা ঘরে
আরো এক        ঘর বানালাম
এখানে             সব সময়ে
সকলে             পায় বাবা-মাম্
যায় না            কেউ বেরিয়ে
সকলে             ঘরেই থাকে
এ ঘরে            কেউ কখনো
পড়ে না           ঘূর্ণিপাকে |
এ ঘরে            অনেক মজা
এ ঘরে            কেউ বকে না
এখানে            দেখবে এসে
সব্বাই            সবার চেনা |
তুমি কি          আসবে এবার
আমার এ         একলা ঘরে ?
জেনো ঠিক       মিলবে ছুটি
বাবা-মা           ফিরলে পরে |’

.        ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
ইষ্টকুটুম
কবি শঙ্খ ঘোষ
ওরে ও বায়নাবতী থেকে নেওয়া

তুমি তো খুব লক্ষ্মী মেয়ে
.         তুমি তো খুব সরস্বতী
তুমি যদি দুর্গাও হও
.          তাতেই বা আর কার কী ক্ষতি |
আসল কথা তুমিই তো সব
.          তুমি আমার ইষ্টকুটুম
তুমি আমার জেগে থাকায়
.          তুমি আমার দুই চোখে ঘুম |
এই-যে তুমি কদিন ধরে
.          দিনরাত্তির কাঁদছ বেশি
সেই কথাটা কাউকে কি আর
.          নালিশ করে বলতে গেছি ?
তুমি আমার দুষ্টু পাজি
.          মানিক তুমি সাগরসেঁচা---
তখন ছিলে রাজহংসী
.          এখন কেন হুতুমপ্যাঁচা ?

.           ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
*
শতাব্দীনন্দিনী
কবি শঙ্খ ঘোষ
ওরে ও বায়নাবতী থেকে নেওয়া

এই চলে যায় দূরে, আবার
এই সে কাছে আসে
একটুখানি গণ্ডিতে আর
বন্দী থাকবে না সে
পা পেয়েছে ময়ূরপঙ্খী
হাত পেয়েছে ডানা
এই মাটিজল এই-বা আকাশ
পাঠায় পরোয়ানা
আলোয় আলোয় মুখ ভাসিয়ে
ভালোয় ভালোয় যায়
সকালবেলায় এই দেশে, তো
ওই দেশে সন্ধ্যায়
ঠিক ঠিকানার হদিস কোথাও
পায় না কোনোদিনই
সেই তো আমার ছোট্ট একুশ-
শতাব্দীনন্দিনী !

.        ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
বোল্
কবি শঙ্খ ঘোষ
ওরে ও বায়নাবতী থেকে নেওয়া

.      অষ্টপ্রহর তোমার সঙ্গে
.      নাচতে হবে এই বিভঙ্গে
সেই কথাটা কেউ কখনো জানতো ?
.      এই ওঠাচ্ছে এই বসাচ্ছে
.      একশো দুশো চারশো পাঁচশো
কী আশ্চর্য --- হচ্ছি না তাও ক্লান্ত !
.      ওইটুকু ওই কচি গলায়
.      কতরকম বোল্ যে বলায়
সবাই ভাবে বিষম হিজিবিজি—
.      তোমার ভাষার মঞ্জু ধ্বনি
.      ভরে আমার দিনরজনী
দায়্ দা পা মা মাম্মাম্ বো জিজি |
.      আমার হাতে রইল বোতল
.      তোমার মুখে বো হলো জল
এই তো দেখি ন্যায়ের প্রথম পাঠ---
.      কিন্তু ন্যায়ের অন্য মানে
.      তোমার হাতের আলতো টানে
মেঝের উপর দুইজনে চিত্পাত !

.           ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
*
দিশা
কবি শঙ্খ ঘোষ
ওরে ও বায়নাবতী থেকে নেওয়া

হাজার দিকে হাজারটা নাম
পাই না খুঁজে দিশা
মামা মামি মাসি মেসো
পিসি এবং পিসা
সবাই মিলে বিলোচ্ছে নাম
লক্ষণই নেই থামার
কী হবে আজ আমার তবে
কী হবে আজ আমার !

একখানা নাম চাই তো শুধু
ব্যাখ্যানা তো নয়---
হাজার শব্দ হাজার দিকে
হাজার কথা কয় |
হাজার লোকের ভয়ে ভয়ে
কাটল দিবানিশা
বাবার কোলে মায়ের কোলে
শেষে পেলাম দিশা |

.        ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
লক্ষ্ণী বলো
কবি শঙ্খ ঘোষ
আমায় তুমি লক্ষ্মী বলো থেকে নেওয়া

আমায় তুমি লক্ষ্মী বলো
.         নইলে আমি কাঁদব মা
আপিস যাবার সময় তোমায়
.         দুই হাতে আর বাঁধব না |
যাবার সময় একটু তুমি
.         আদর করো মন দিয়ে
জানোই তো মা সারাটা দিন
.         থাকবে ঘরে বন্দী এ !
কিন্তু তখন কাঁদবে না আর
.         ছোট্ট তোমার ফুলসোনা—
ও মা তুমি চুপ কেন মা
.          মুখটা কেন খুলছ না ?
আমার কাছে দাঁড়াও এসে
.          লক্ষ্মী বলো এক্ষুনি
দেখবে তোমার ফুলসোনাটার
.          আর তো কোনোই দুঃখ নেই |

.           ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
আউশ
কবি শঙ্খ ঘোষ
ওরে ও বায়নাবতী থেকে নেওয়া

আমনের বোন আউশ
সে খাবে কাল্ বাউশ !
দু-মাস যেতেই মাছ খাবে সে ?
বড্ড দেখি হাউশ !

না-না মোটেই মাছ খাবে না
এখন কেবল হামি
কয়টা পাবে আমন, এবং
কয়টা পাব আমি |

মায়ের সঙ্গে আসবে আউশ
বাবার সঙ্গে না
আনতে যাবে বলে আমন
বাড়িয়ে আছে পা |

বানাও তবে তোরণ সবাই
বানাও তখ্ৎ-এ-তাউস---
রাণীর মতন বসবে এসে
আমনের বোন আউশ |

.        ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
দরিয়ায় শাম্পান
কবি শঙ্খ ঘোষ
আমায় তুমি লক্ষ্মী বলো থেকে নেওয়া

আয়  এইখানে বসে
.           রূপকথা গড়ি আয়
নেচে নেচে শাম্পান
.            ভেসে যায় দরিয়ায় |

ভেসে যাবে কত দূরে
.            তার কোনো দিশা নেই
পাওয়া যাবে টের তবু
.            উঁচু তার নিশানেই |

যে-নিশানে রয়ে যাবে
.            কতখানি মমতা
কারো নেই সেকথাটা
.            বুঝবার ক্ষমতা |

দরিয়ার থেকে ফেরে
.           শাম্পান নিমেষে
আগে ছিল চঞ্চলা
.          আজ কিছু ঢিমে সে !

কেন হলো ঢিমে এত ?
.          কেননা সে বড়ো যে !
যারা পারো বুঝে নিয়ো
.          নিজেদেরই গরজে |

.           ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
কবি শঙ্খ ঘোষের কবিতা
setstats
*
সময়-অসময়
কবি শঙ্খ ঘোষ
আমায় তুমি লক্ষ্মী বলো থেকে নেওয়া

বড্ড তুমি বকো আমায় যখনতখন বকো !
থাকবে না কি একটুআধটু খেলাধুলোর শখও ?
বলছ তুমি ‘খেলার কি নেই সময়-অসময় ?’
--- একটু তো মা ক্রিকেট দেখি, আর তো কিছু নয় |
মেলবোর্নে চললে খেলা দেখতেই হয় ভোরে
জানোই তো এ ভূমণ্ডলটা কেমন করে ঘোরে !
লঙ্কাভারতপাকিস্তান বা ঢাকায় হলে খেলা
টিভির পর্দা খুলতেই হয় লম্বা দুপুরবেলা |
লর্ডস-ওভালে যখন ওরা অ্যাশেজ নিয়ে মাতে
দেখব না কি অগত্যা তা বিকেল থেকে রাতে ?
ওয়েস্টইন্ডিজ-মাঠের খেলায়—কী গ্রীষ্ম কী শীত—
না জেগে কী উপায় বলো নিঃঝুম-নিশীথ ?
ভোরের থেকে রাত্রি আবার রাতের থেকে ভোর
এম্ নিভাবেই সময় নিয়ে পালায় সময়চোর |
তবেই দেখো, আমায় নিয়ে এই-যে অসন্তোষ
সে তো কেবল ভূমণ্ডলের ঘূর্ণিপাকের দোষ |

.              ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
*