একলা
কবি শঙ্খ ঘোষ
আমায় তুমি লক্ষ্মী বলো থেকে নেওয়া

আমি যখন একলা থাকি            তখন কি আর একলা থাকি
.              জানো তখন সঙ্গে থাকে কারা ?
থাকে সবুজ গাছপালা আর        তার ভিতরে চলে যাওয়ার
.              পথও থাকে, ঠিক যদি পাই সাড়া |
একটা আছে কাঠবেড়ালি          আমার দিকে তাকায় খালি
.              এদিক-ওদিক টানতে থাকে আমায়---
যেই-না তাকে ধরতে যাব          ভুলিয়ে দেয় সব হিসাব ও
.              ছুট দেয় আর কেই-বা তখন থামায় !
সেই ছুটে ছুট লাগাই জোরে           এই মাটিতে এই পাথরে
.              কদ্দূরে --- কেউ জানতে পারে না তো
মস্ত আশীর্বাদের মতো                    মাথার উপর ইতস্তত
.             গাছের থেকে ঝরতে থাকে পাতা |
তখন আমি একলা তো নই      থাকে না আর দুঃখ কোনোই
.              শালবনে বা তালসুপুরির বনে
ঘর-বার সব এক হয়ে যায়       চুপ-থাকাটাও বাজনা বাজায়
.              তখন আমার একলা মনের কোণে |

.                               ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
কবি শঙ্খ ঘোষের কবিতা
setstats
*
পাওয়া
কবি শঙ্খ ঘোষ
আমায় তুমি লক্ষ্মী বলো থেকে নেওয়া

ঘোড়া দেখলেই খোঁড়া, কিন্তু না যদি পাই তাকে ?
বেশ তো তখন হাঁটতে পারি, শেষ নেই সেই হাঁটার |
থাকলে ভাবি পারব না, আর না-যদি কেউ থাকে
একলা জলে পড়েও দিব্যি শিখতে পারি সাঁতার !

.               অনেক চেয়ে অনেক পেয়ে মন করে আইঢাই
.               কিচ্ছু যদি না পাই তবে অনেক পেয়ে যাই |

কাছেই তুমি থাকলে ভাবি না-থাকলে কী হবে ?
ভালোই কিন্তু থাকতে পারি দূরে যখন যাও |
সবখানেতেই তোমায় তখন দেখতে পারি তবে
ছেড়ে থাকার দুঃখ যত ভুলতে পারি তাও |

.               কিন্তু যদি কান্না আসে ?  কীভাবে আটকাই ?
.               বলি  : ও মন, ঢের হয়েছে, দেব না আর লাই---

কিচ্ছু যদি না পাই তবু অনেকখানি পাই ||

.                         ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
বকুনি
কবি শঙ্খ ঘোষ
আমায় তুমি লক্ষ্মী বলো  থেকে নেওয়া

যখন তোমায় বকতে থাকি             সেটা যে এক মস্ত ফাঁকি
.                সেই কথাটা বুঝতে পারো না আজ ?
চোখ রাঙিয়ে যাই যখুনি                   সত্যি সেটা নয় বকুনি
.                বুঝবে সেটা নিছক ফাঁকা আওয়াজ |
যখন তোমা বকি, আমার          দুচোখ বেয়ে কান্না নামার
.                চিহ্ন তুমি দেখতে পাও না ঠিকই
বুঝবে তবু সামনে এসে               তোমার জন্য কী আয়েসে
.              হাতের মুঠোয় লুকিয়ে রাখি কী কী !
মনের ভিতর আলো আসার        পথ খুলে যায় ভালোবাসার
.               দশদিগন্ত হয়েছে জমকালো—
যখন তোমায় বকতে থাকি           বুঝতে তখন পারো না কি
.               তোমায় বাসি সবার চেয়ে ভালো ?

.                              ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
কোন্ টা আমি
কবি শঙ্খ ঘোষ
বড়ো হওয়া খুব ভুল থেকে নেওয়া

‘আমার আছে পদ্মানদী’ ‘আমার আছে গঙ্গা’
‘আমার আছে খুলনা-যশোর’ ‘আমার আছে বনগাঁ’
‘আমার আছে রূপসা’ ‘আমার রূপনারায়ণ নেই ?’
‘শিলাইদহ আমার’ ‘আর আমার আছে সেই
ভূবনডাঙার মাঠের পাশে শান্তিনিকেতন---
না থাকলে তা জীবনকথা জানতি কোথায় মন ?’

‘আমার আছে সাগরদাঁড়ি’ ‘বীরসিংহ আমার’
‘আমার বুকে খালবিল সব’ ‘আমারও খেতখামার’
‘আমার কাছে কক্সবাজার আর নয় সে বেশি দূরও’
‘আমার কি নেই মাথার ওপর দার্জিলিঙের চূড়ো ?’
তর্কটা তাই এইখানে ভাই ক্ষান্ত করে দে---
কোন্ টা যে ঠিক আমার আমি--- বল্ তো আমি কে ?

.                        ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
সংঘাত
কবি শঙ্খ ঘোষ
বড়ো হওয়া খুব ভুল থেকে নেওয়া

আমার ছিল পদ্মার ভোর,  বৈঁচিবনের বিকেল
তুমি কি আর সেসব কিছু পাও ?
সোনারূপোর বদলে আজ দিচ্ছি কেবল নিকেল
ঘরের থেকে বেরোও না এক পা—ও !
আমার ছিল ভোরের আলোয় কীর্তনিয়ার গান
আমার ছিল ডালিমগাছে মৌ---
একটু বেলা হলেই যখন মন করে আনচান
দুধ দিয়ে যায় গয়লাবাড়ির বৌ !
আমার ছিল ঘোর দুপুরে ঝপাং-করা সাঁতার
প্রহর পরে প্রহর কাটে জলে—
আমার ছিল উধাও পথ দিগদিগন্ত হাঁটার
হারিয়ে যাওয়া ছলে বা কৌশলে |
আমার ছিল বর্ষা-অঝোর বৃষ্টিপড়ার দিনে
মাঠের মধ্যে ভিজে যাওয়ার সুখ
আমার ছিল নৌকো থেকে জোড়া ইলিশ কিনে
মায়ের মুখে জাগানো কৌতুক |
আমার ছিল একলা বসে দুঃখ পাবার মতো
অঢেল সময়, ছড়ানো দিনরাত----
তোমার দিন যে রুটিন দিয়ে বাঁধছি অবিরত
তোমার আমার সেইখানে সংঘাত |

.                ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
পানসুপুরি
কবি শঙ্খ ঘোষ
বড়ো হওয়া খুব ভুল থেকে নেওয়া

আমরা যখন ছোটো ছিলাম কতই বয়স হবে---
কেউ-বা ছিলাম কৈশোরে কেউ নিতান্ত শৈশবে
পূজোর ছুটির শেষে যখন দেশের বাড়ির থেকে
খাল পেরিয়ে নৌকো যেত নদীর দিকে বেঁকে
আমরা কেউ-বা ছইয়ের ওপর কেউ-বা পাটাতনে
বসে বসে ভেবে যেতাম, কোন্ খানে কোন্ কোণে
রইল পড়ে টান আমাদের রইল পড়ে প্রাণ
ঝাপ্ সা থেকে ঝাপ্ সা হয়ে আসছে যখন গ্রাম
তখন দেখি একটা ছবিই জাগছে ফিরে ফিরে
ঠাকুরমা দেন পানসুপুরি ঠাকুরদা দেন চিঁড়ে
আর সকলই চোখের থেকে মিলিয়ে যায় ধীরে
রইল শুধু পানসুপুরি রইল শুধু চিঁড়ে |

.                ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
বন্ধু
কবি শঙ্খ ঘোষ
বল্ তো দেখি কেমন হতো থেকে নেওয়া

একজন ছিল বন্ধু আমার, চলে গেল দ্বারভাঙ্গায়
বনেজঙ্গলে সারেঙ্গি নিয়ে একা বসে বসে গান গায় |

একজন ছিল বন্ধু আমার, তুলে নিতে চায় কোন্ দায়
এ-দোরে ও-দোরে ঘুরে ঘুরে মরে সকালে দুপুরে সন্ধ্যায় |

একজন ছিল বন্ধু আমার, চলে গেল ধানমন্ডি
এ-শহরে বসে এইখানে তবে কাকে আর আমি মন দিই !

একজন ছিল বন্ধু আমার, হাজার লোকের মধ্যে
ঠিকই চিনে নিত--- কিন্তু সে আর কথা বলছে না গদ্যে !

.                      ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
ভালোমন্দ
কবি শঙ্খ ঘোষ
বল্ তো দেখি কেমন হতো থেকে নেওয়া

বল্ তো দেখি কেমন হতো
সব যদি হয় অন্যমতো
এই দুনিয়ায় কোথাও কোনো যুদ্ধ না থাকত ?

সেই কথাটা ভাবিস পরে
পড়্ শি দুজন পরস্পরে
আগে তাদের ঝগড়া ছেড়ে বন্ধুতাটা পাতাক তো !

ঘটবে না তা সম্ভবত |
বল্ তো তবে কেমন হতো
গোলমেলে এই দুনিয়াটাই কোথাও যদি না রইত ?

মোটেই সেটা ঠিক হতো না---
থাকত কোথায় এই দ্যোতনা :
তোর চোখে চোখ রাখলে আমার লাগছে মনে ভালই তো !

.                  ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
হারজিত
কবি শঙ্খ ঘোষ
বল্ তো দেখি কেমন হতো থেকে নেওয়া

জিতে ফিরে এলে কী-মহাযজ্ঞ
.                      যেন-বা সে রাজসূয়
জয়ধ্বনিতে ভরে দিই সব
.                      হেরে এলে দিই দুয়ো |
হেরে ফিরে এলে কুত্সা ছড়াই
.                      সুনামের পিছু পিছু
বলি ওরা সব বিশ্বাসঘাতী
.                      মতলব আছে কিছু !
যত ভালো খেলো,  পারদর্শীর
.                      যত জ্বালো রোশনাই
সাফল্যলোভী এ তিনভুবনে
.                      বিফলের নেই ঠাঁই |
দেখো বলে তাই জয়পরাজয়ে
.                     গাঁথা এই সংসারে
যারা জেতে তারা বড়ো বেশি জেতে
.                     যে হারে বড়োই হারে !

.                  ******************     
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
ভাবো
কবি শঙ্খ ঘোষ
বল্ তো দেখি কেমন হতো থেকে নেওয়া

ভাবো কেমন স্বপ্নে হতো
শান্তিতে বৈঠক
যদি       লাহোর বলত ‘শচীন’, আমরা
‘ইনজামামুল হক’ |

ইসলামাবাদ জাহির এবং
হরভজনকে পাক----
পাক      দিল্লি শোয়েব আখতার আর
সাকলিন মুস্তাক |

ভাবো যদি সবাই মিলে
সেইভাবে থাকতাম
ধারা      ভাষ্যে যেমন গলায় গলায়
শাস্ত্রী ও আক্রাম !

থাকত না আর কোথাও কোনো
বিবাদ-বিসংবাদ
শুধু       সৌরভেরই গৌরব গায়
জাভেদ মিয়াঁদাদ |

ভাবো কেমন স্বপ্ন হতো
স্বপ্নের এ আখ্যান----
যদি     সমান সমান পা মেলাত
ভারত-পাকিস্তান !

.                  ******************                   
.                                                                                           
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*