কবি শঙ্খ ঘোষ - জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত বাংলার চাঁদপুরে। তিনি সমকালীন বাংলা কবিতার জগতে
এক উজ্জলতম নক্ষত্র | রবীন্দ্র ভাবধারার অনুগামী হলেও তাঁর কবিতা স্বতন্ত্র | শিশুসাহিত্যের জগতে কবির
সহজ বিচরণ |

তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ "দিনগুলি রাতগুলি" (১৯৫৬) প্রকাশিত হবার আগেই তাঁর কবিপ্রতিভা পাঠক সমাজে
সমাদৃত হয়। পরবর্তী কাব্যগ্রন্থগুলি "নিহিত পাতাল ছায়া" (১৯৬৭), "তুমি তো তেমন গোরী নও" (১৯৭৮),
"মূর্খ বড়ো সামাজিক নয়" (১৯৭৬), "বাবরের প্রার্থনা" (১৯৭৬), "গন্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ" (১৯৯৪) প্রভৃতি তাঁর
ক্রমউদ্ভিন্যমান প্রতিভার নিদর্শন।

ডঃ শিশির দাশ লিখেছেন . . . "
শঙ্খ ঘোষের কাব্যের মধ্যেদুটি ধারা পাশাপাশি প্রবাহিত, একটি আত্মমুখী,
এর নির্জনতা সন্ধানী ব্যক্তিসত্তার আত্মকথা, সংকেতময় ভাষায় ও প্রতিমায়, মৃদুকোমল ছন্দস্পন্দে
অনুত্তেজিত কণ্ঠস্বরে এই কাব্যধারা বিশিষ্ট ; অন্যধারাটি চারপাশের জগতের অসঙ্গতি, সমাজের বৈষম্য ও
অমানবিকতার প্রতিক্রিয়ায় বিচলিত ও ক্রুদ্ধ এক ব্যক্তিমনের প্রতিবাদের ধারা, তা মূলত বিদ্রুপে ও ব্যঙ্গে,
কখনো স্পষ্ট ও তীব্র, কখনো বেদনায় ও যন্ত্রণায় গভীর। এই কাব্যধারা দুটি যে সমানতরালভাবে প্রবাহিত
কা নয়, তা বহু সময়েই একীভূত এবং তার ফলে তাঁর কাব্যে ব্যক্তি-কবিতা ও সমাজ-কবিতার এক
তৃপ্তিকর সম্মিলন দেখা যায়।

তাঁর কবিতার মধ্যে রবীন্দ্রনাথের গানের নানা পংক্তি অন্তঃশীল শক্তির মতো কাজ করে। সাম্প্রতিক
কবিদের মধ্যে এমনভাবে আর কেউ রবীন্দ্রনাথকে আত্মস্থ করেননি। রবীন্দ্রজিজ্ঞাসা তাঁর সমালোচক
জীবনের প্রধান অবলম্বন। "কালের মাত্রা ও রবীন্দ্রনাটক" (১৯৬৯), "এ আমির আবরণ" (১৯৮০), "উর্বশীর
হাসি" (১৯৮১), "নির্মাণ আর সৃষ্টি" (১৯৮২) তাঁর বহু মানিত রবীন্দ্র-আলোচনা।
"

২০০৬ সালের মে মাসে সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর, শিল্প গড়ার নামে শালি
জমি অধগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেন যা সিঙ্গুরে লুণ্ঠনের আকার নেয় এবং পরে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায়
নন্দীগ্রামে গণহত্যা সংঘটিত করা হয় |

নানা মহল থেকে যখন বুদ্ধিজীবীদের মৌনতার জন্য দোষারোপ করা হচ্ছিল এবং যখন ভাবা হচ্ছিল যে
রবীন্দ্রনাথের মত মনের কবির দিন বোধহয় শেষ, তখন কবি শঙ্খ ঘোষ ১৭ই মার্চ ২০০৭ তারিখে প্রতিবাদ
করে বাংলা একাডেমির সহ সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করে বাংলার মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন
যে এ যুগের মানুষও কোনো কিছুতে কম যান না | হিটলারের মত শাসক থাকলেও রবীন্দ্রনাথের মত মানুষ
এখনও এ দেশে আছেন |

সেই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের ফলে বাংলায়, ৩৫ বছরের বামফ্রন্টের শাসনের সমাপ্তি ঘটে। “পরিবর্তন”
আসে বাংলায়! বিপুল জনমত নিয়ে নতুন সরকার গঠন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল তৃণমূল
কংগ্রেস। অচিরেই এক জনদরদী “মা-মাটি-মানুষের-সরকারের” মুখোশ সরে, সাধারণ জনগণের কাছে প্রকট
হয়ে ওঠে এই নতুন সরকারের আসল মুখ। অনেকের কাছে বামফ্রন্টের কালো হাতগুলো যেন অনেক ধলো
মনে হতে থাকে! কিন্তু এর প্রতিবাদ করার মত মানুষ তখন অনেক কমে গিয়েছেন। কারণ বেশিরভাগ
বুদ্ধিজীবীই ততদিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তাঁদের মাথা বিকিয়ে দিয়ে, বিভিন্ন পুরস্কারে ও পদে টু-
পাইস করে খেতে শুরু করেছেন। অনেকে তো আবার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের অর্থ-লুঠেরা
চিটফাণ্ডগুলির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পড়েছেন। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও, আমরা শঙ্খ ঘোষকে এক
ব্যাতিক্রমী ভূমিকায় দেখলাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিভিন্ন সময়ের অবিমৃশ্যকারিতা,
অমানবিকতা, অসততা, সর্বক্ষেত্রে বলপূর্বক নির্লজ্জ দলীয়করণ সহ বহু বহু পদস্খলনের বিরুদ্ধে শঙ্খ ঘোষ
প্রতিবাদ করেছেন।   

আমরা তাঁর দীর্ঘ সুস্থ জীবন কামনা করি।

তাঁর কিছু কবিতার ও ছড়ার সঙ্গে এখানে আমরা তাঁর সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে
লেখা কিছু কবিতাও তুলে দিচ্ছি, যা আমরা সেই আন্দোলন চলাকালীন সংগ্রহ করেছিলাম।

আমরা
মিলনসাগরে  কবি শঙ্খ ঘোষের কবিতা তুলে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।





উত্স - ডঃ শিশিরকুমার দাশ, সংসদ বাংসা সাহিত্য সঙ্গী।    



কবি শঙ্খ ঘোষের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন



আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     




এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ২০০৭
পাতার প্রথম পরিমার্জনা - ২২.০৬.২০১৩
পাতার দ্বিতীয় পরিমার্জনা - ২৬.০৫.২০১৫

মোট ৯১টি কবিতা নিয়ে তৃতীয় পরিমার্জনা - ১০.১.২০১৭

...