শর্মিষ্ঠা সেনের কবিতা |
আকাশ কুসুম ইচ্ছে ছিল, বিরাট কবি হব'। খাতা জুড়ে লিখব' কবিতাই। আশাতে আর ভালোবাসায় ভ'রে - পাতার পরে পাতা হবে বোঝাই। ইচ্ছে ছিল বিরাট খ্যাতি হবে, আসতে যেতে করবে লোকে সেলাম। দিনে আসবে অনেক চিঠির ডাক লেখা থাকবে, - পেলাম, ওগো পেলাম। হ'ল নাগো সে সব কিছুই পাওয়া লক্ষ্যভ্রষ্ট বয়স্ক হয়ে গেলাম। দিনে হাসি, রাত্রি জুড়ে ঘুম, এইটুকুতেই হয় কি কিছু কম ? ************* . সূচিতে . . . |
কল্লোলিনী বুকের কাছে দামালপনা দিল্লী ডাকে ওই - ! বাঁধন ছেঁড়া মাতন বুকে কলকাতা তুমি কই !?! স্বপ্ন এখানে সবুজে সবুজ আবার সার্থকতা আধভাঙা আশা ফের জোড়ে, তবু ফানুসের ফাঁকা ব্যথা। চাঁদ জেগে আছে মাথার উপরে, আগুণ-চূড়ায় লাল, তবু কলকাতা, কলকাতা তোকে দেখি না যে কতকাল ! ************* . সূচিতে . . . |
পথের সাথী বহু দূরে তুমি যাত্রা করেছ পথিক ছায়াপথকেও ছাড়িয়ে তোমার চলা - তোমায় দিলাম আমার সোনালী আশা তোমায় দিলাম ফেরারী সে-ভালবাসা ; তোমায় দিলাম বুকের অতল জগত্ তোমায় দিলাম শ্বেত শিউলির শরত্। মানুষ বিহীন স্বর্গ তোমার নয়, পথিক তুমিতো মানুষকে ভালবাসো ; মানুষেই বাস, মনুষের মনে থাকা, বুকের রক্তে মানুষের ছবি আঁকা ! হে পথিক, জানি, মানুষের তরে বাঁচো ! মানুষী-ব্যথায় তবু ছায়াপথে হাঁটো ? ************* . সূচিতে . . . |
হয়তো-- হয়তো পাথরে একমুঠো ছিল প্রেম শ্যাওলা পেছল ঘাটের সে ভালবাসা। জীবনে নিয়েছি তারই আস্বাদ, তাই ভাঙা কাঠ বোঝে মাঝদরিয়াতে ভাসা। খ্যাপা খুঁজে মরে পরশপাথর, হায়, ফেলে দিয়ে তবু আজো খুঁজে খুঁজে ফেরে। জীবন দিয়েছে স্বর্ণদণ্ড বাঁয়ে ছেঁড়া ঝুড়ি বুঝি ভরে গেছে গৌরবে, ব্যর্থ প্রেমিক ব'লে গেল লোহা সোনা, খ্যাপা খুঁজে দেখে যতদূর চোখ যায়, দীর্ঘ যাত্রা অবসান হয় বটে, দীর্ঘ ও পথ তবু ফিরে যেতে হবে। ************* . সূচিতে . . . |
ভালবাসা কি তেমনি পাথর পথের ধারে কুড়িয়ে পাওয়া ? ভালবাসা কি চলতে গিয়ে দু চার মিনিট থমকে চাওয়া ? ভালবাসা কি নোঙর ছেঁড়া পূর্বী হাওয়ায় নৌকো-ভাষা ? ভালবাসা কি গুমোট খাঁচায় হঠাত্ লাগা বাদ্লা হাওয়া ? ভালবাসা কি আলতা সিঁদূর অরুন্ধতীর আকাশ বাওয়া ? ভালবাসা কি গো শ্রান্ত পথিক, দিনশেষের বাসায় যাওয়া ? ভালবাসা রক্ত-ঝলক হৃদ ফুসফুসে চলকে পড়া, ভালবাসা কাঁটার ক্ষত বুকের পাশে জীবন জোড়া। ************* . সূচিতে . . . |
ইদানীং প্রার্থনা ইদানীং প্রার্থনা করি বারংবার -- মৃত্যুদিনে যেন বেদনা বোধ করি পৃথিবীর জন্য, শুধু জড় বা ঘনশ্যাম প্রকৃতি নয়, আশে পাশের অনাত্মীয় পরিজন এবং রক্তসূত্রে বাঁধা আত্মীয়ের জন্য একটু পিছুটান দু ফোঁটা চোখের জল রেখে যেতে পারি। জীবনটা যে সত্যিই ততকিছু ঊষর ছিল না -- মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তের অন্তত যেন ভাবতে পারি। সে অনেক দিন - বন্ধুতায় লিখেছিল, যদি বুঝে ফেলা যায় - কোনো গন্তব্য নেই - একটা ফাঁকা মাঠে তবুও কেবল ছুটছি নিরন্তর - যদি বুঝে ফেলা যায় এক মাত্র মরণ ছাড়া কাম্য নেই কিছু - বাধা নেই খারাপ অথবা ভাল হতে, বাধা নেই পূরবে পশ্চিমে -- সে বড় অসুখী দিন, সে বড় দীর্ঘ রাত কোনো ; আপাতত প্রার্থনায় বসেছি কুশাসনে ; মৃত্যু ঠিক কত দূরে না জেনেও তবু যেন একটু জলকণা দু চোখে ঝরাতে পারি ! যেন গ্রন্থি খুঁজে পাই আত্মীয়তার সুদূর সূতায় ! রিসিভার তুলে তাই ফের শুরু করি -- "--হ্যালো ---- !" ************* . সূচিতে . . . |
ইউনিভার্সিটিতে কৈশোর, তোমাকে ছুঁয়ে দেখিনি অনেক দিন, এখন রহস্য খেলার শেষে দগ্ধ দুপুর, নির্মম আলোকে অশ্বত্থ খোঁজার পালা -- তার পর নির্জনে মদ্যপ শরীর মেলে দিয়ে মন্থর জাবর কাটা। বড় ভারি লাগে আজকাল ক্লান্তির সূতোয় জট পাকাতে অনিঃশেষ। বড় দূর বোধ হয় কৈশোর, তোমায়। অপ্রত্যাশ কারো চপল চোখ ভিড়ের ভেতরে দেখে এক-বুক রক্ত চলকে পড়া - বড় ইতিহাস মনে হয় - প্রস্তরময়। পাথর সরাতে সরাতে নীল ব্যথা গাঁটে, পায়ের শিকড় বড় ভারী। পালক আঙ্গুলে হেঁটে উড়ে যাওয়া পাখি ভারী পিত্তল পুতুল এখন। হে বিধাতা, শক্তি দাও, বীজমন্ত্র দাও যেন পারি পিত্তল পুতুলে ভাষা দিতে আরো এক বার পালকের ডানায় জিরোতে। ************* . সূচিতে . . . মিলনসাগর |