১ যা দিলে তা পাবার কথা ছিলই না কখনো, অযোগ্যতায় "অতিরিক্ত" মানুষকে তা দেওয়া মানুষ তো নয়, হাড় মাংসের পুরনো অভ্যাস "জীবনযাপন" বৃহৎ-কথা, দিন কাটানো তবু একরকমের ক্লেদ-গ্লানি-ক্ষয়, দাম কি দেবে তার ? মুণ্ডহীনের মাথায় ব্যথা পোড়ানো সম্মান "সম্মান" না আত্ম-আদর নিজেই খুঁজে মরি ভালবাসা প্রেম না ঘৃণা, দেহ না সৌরভ পালিয়ে-যাওয়া জীবন নাকি জীবনে পা রাখা দয়া তোমার নির্দয়তার বিরাট গোলকধাঁধা |
২ আলো-আকাশ, রাত তারার সীমাহীন সুখ দিন কাবার পুরনো পাতারা আজ ফেরার বৃষ্টি ঝাপ্সা দূর-পাহাড় সোনালী স্বপ্ন স্বর্গদ্বার যা-ছিল পিছনে, চাই না আর সামাহীন সুখ দাও আবার তৃপ্তি বৃষ্টি মুষল ধার !
অসম্ভব শব্দ ক'রে বোমা ফাটে বোমা নয়, শান্তি বুঝি ওই--- চেতনা থেকে বর্তমান খ'সে যায় বর্তমান থেকে স্মৃতি- অতীতের সুখী মুখ সব | অতীত আর বর্তমান, চেনা আর অ-চেনার মাঝে নিরালম্ব ঝুলে থাকি আমি ; ত্রিশঙ্কুর অবস্থায় দেখি যুবকের অন্ধ চোখ ম্লান, তারি 'পরে মৃত্যুনীল ছায়া যেন কার --- দুহাতে মৃত্যুর পুঁজি-ঠোঁটে মৃত্যু দোলে, অতীত না, স্মৃতি না, চেতনাও নেই--- তবুও হাঁটে সে দেখি থসে পড়া পায়ে তবুও হাঁটছে সে যে স্বপ্ন সেতু গ'ড়ে --- জীবনের অপর-পারে ও বুঝি যাবে তুবড়ির রঙীন ফুল ফোটা মরুদ্যানে |
আমার জীবন হে মহাপ্রাণ, সন্ধ্যা নামে ক্লান্ত যোদ্ধার কপালে স্নেহস্পর্শ হেন ; দিনমান গত হলে স্মৃতিকে প্রদীপ জ্বালি দেবতার আরাধনা করি | নৈবেদ্য সাজাই : ক্লান্ত স্বর, যুযুধান প্রাণ, ব্যথার্ত হৃদয়, যত প্রেম, অপবিত্র যত কানাকানি গ্লানির কালিমা, বহুধাদীর্ণ সত্তা, ঈর্ষা, অবিশ্বাস --- কামনার শিহরণ, বিকীর্ণ মিতালি আর আত্মার ভ্রুকুটি --- যতদূর দেখা যায় --- ষোড়শোপচারে সাজাই নৈবেদ্য তাঁর থরে থরে থরে... আমি সেথা একা নই ; কোলাহলে, কূজনে, কলতানে আছে নানা স্বর মিশে বহু মানুষের গীতি বাজে |
তাপস পথিক, তোমার করুণা জানি সান্ত্বনার মত আমার গুঞ্জন গানে স্পর্শ দিয়ে জানাবে : ভাল থাকো | আমার কল্লোলজল-নৈরাশ্য অপ্রেমে আশিস জানাবে তুমি তপঃ কর ছুঁয়ে : কল্যাণ হোক ; ঈশ্বরকে ধ'রে রেখো জীবনের পথে |
শুধুই কল্যাণ প্রভু? শুধু আশীর্বাদ? তোমার ওষ্ঠে শুধু কৃতঘ্ন আশিস? নিদাঘ দুপুর, কান্না, কোলাহল, শ্রেণীকক্ষ, ভালবাসা, ব্যাকুল মিলন, আমায় দিলে না ব'লে এক ফোঁটা মুক্তো অভিমান সেই তীব্র অপ্রাপ্তির ব্যথা সেই সুনিবিড় সুখ পুঞ্জ রক্তপল সবকিছু মুছে দেব? অপ্রেম? যন্ত্রণা? সাদা লেখা, ঝলমলে লেখা --- ভিজে হাতে সব মুছে পরম করুণাময় ঈশ্বরের আরাধনায় লেখা হবে --- "ওঁ"! আমার আকুল আত্মা, বিক্ষিপ্ত চেতন শান্তি পাবে ; জপ করবে : ওঁ! ওঁ! ওঁ? তোমার আশিস ভরা গৈরিক উত্তরী সরাও যতীশ! বড় বিষন্ন বিকেল! বড় দীর্ঘ-রাত এই বিজন, বিফল! আমার অসহ্য হ'ল করুণা তোমার | আমি তো মানুষ! নেমে যাব --- পাতালে যদিও তবু পৃথিবীর পথে প্রেম, ঘৃণা, ব্যথায়, আঘাতে মানুষের হাতে হাত রেখে রক্তঋণ মানুষের মেটাতে মেটাতে পিতার, মায়ের, বোন, বন্ধু ও শত্রুরও বটে! আমি ভুলিনি এখনও তাকে যে আমাকে অপ্রেমে টেনেছে |
সেই আমার সূর্যভেজা মাঠ পেরিয়ে জাহান্নামের গলিতে এককযাত্রা |
এই জ্যোত্স্নাহীন হাতে জলনিমগ্ন আমি তুলে ফেলেছি একশো-আটটা নীল পদ্ম | আমার বেণীবদ্ধ চুল এখন সরীসৃপ ওই সর্বনাশের সলমন-বুকে আমি ছোবল দিয়েছি নিবিড় প্রেমে আর কী আশ্চর্য! মাটির কান্নামোছা শঙ্খও সেই মুহুর্তে বেজে উঠেছে --- ওঁ | রুদ্রবীণার ঝঙ্কারে আকাশলীন তামস হঠাৎ পূর্বদিগন্তের সার্চলাইটে জবাকুসুমসঙ্কাশ মহাদ্যুতিময় দিন |