আপনি বললেন, “ভুলে যাবেন না জন্ম থেকেই আপনি বলি প্রদত্ত, কনডেম্ ড্” আমি বুঝতে পারলাম না আপনার কথা।
আমার হাত দুটো ডানা হয়ে গেছিল উড়তে গিয়ে কোথাও আকাশ খুঁজে পেলাম না। আমার পা দুটোয় রোলার স্কেটের দুরন্ত গতি রাস্তা আমার পা দুটোকে নিতে রাজি হল না আমার মাথা সব গাছ ছাড়িয়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আকাশ ছুঁতে ফন ফন্ করে বাড়ছিল চেপে ধরে আমায় একটা হরলিক্সের বোতলে ঢুকিয়ে দেওয়া হল।
দম বন্ধ হয়ো আসছে একটি হাওয়া পেতে চাইছে আমার ফুসফুস।
কেন কাকজ্যোত্স্নায় দুঃথে ভিজে যাই কেন ফুটিফাটা স্বদেশের মাটিতে আমার পা ফেটে রক্ত পড়ে কেন কান পাতলে শুনি হু হু কান্নার কোরাস . . . আমি তো স্বাধীন দেশে জন্মানো এক অভাগা বটগাছ শিকড় যার গঙ্গেত্রীর দিকে ধাবমান পাতার আঙুলে যার সূর্যের আদর আমার শিরায় ছুটে যাচ্ছে অনেক পীর-পয়গম্বর শ্রমন সাধুর দেহ-নির্যাস আমার শিরায় ছুটে যাচ্ছে দুঃখ আর চোখের জল তবু আমি কাঁতে চাইলাম আপনিও দিলেন না কান্নার কোনও আবহ। বরং পিট সিগারের গিটারে ঝঙ্কার তুললেন এপাড় গঙ্গা ওপাড় গঙ্গায় চুমো খেলেন ভীমসেন যোশী বড়ে গোলাম আলির পায়ে বিসমিল্লার শানাই-ও দুঃখ ঝিকমিক করে উঠলো গলানো সোনার মতো। আমার শুকনো চোখে কণ্ঠ রেখে বললেন “হেরে যাবেন না বন্ধু দুঃখ আপনার সখা রক্তক্ষরণ আমাদের নিত্যসঙ্গী কেননা আপনি জন্ম থেকেই দুঃখের কাছে বলিপ্রদত্ত। ভুলে যাবেন না।”
সাধে কি তোমায় ডেকেছি “কৃষ্ণসখা” বলে ? ঠিক মথুরায় গিয়ে ভুলে গেলে এই বৃন্দাবন, এই মথুরা, এই প্রফুল্ল কদম্ববন। তোমার সামনে পিছনে লোক লস্কর পাইক পেয়াদা মন্ত্রী বিদূষক কোথায় কোন গোপবালিকা আনমনে চোখের জলে পথ ভুল করে পড়ে রইল কে আর মনে রাখে!
সে মেয়ে তো রন্নাবান্না ঘরকন্নায় ভালই ছিল--- তুমিই তো তাকে বারেবারে বাঁশিতে ডাকলে, মুগ্ধ করলে, ভোলালে তার ইহকাল পরকাল। ঝুঁকি যা নেবার সে-ই নিল। তবু চার দিনের পুজো শেষ হতেই দেবী হয়ে গেলেন মাটির প্রতিমা। মন্দির থেকে একেবারে সোজা জলে বিসর্জন। কৃষ্ণ হে---তিনশো বছরের বুড়ি কলকাতার এঁদো গলিতে চোখের জলে গলে যাচ্ছে তোমার প্রাণপ্রিয়া---দেবীপ্রতিমা! রাজদণ্ড ছেড়ে একবারও কি বাঁশিতে ফুঁ দেবে না ?