কথা - শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সুর - কল্যাণ সেন বরাট শিল্পী - মৃণাল চক্রবর্তী
একদিন চলে যাব অন্য পথে যে পথে গেলে আর কেউ ফেরে না যেতে হবে যেতে দাও সময় যখন . এসে গেছে পৃথিবীর শেষ স্টেশন॥
জীবনের রেলগাড়ি বহু পথ ঘুরে চলে গেছে দূর থেকে আরও বহু দূরে ঝড়-জল-বৃষ্টিতে আর রোদ্দুরে সময় পেরিয়ে গেছে সন্ধ্যা এখন যেতে হবে যেতে দাও সময় যখন . এসে গেছে পৃথিবীর শেষ স্টেশন॥
মানুষের হাটে হাটে শেষ বিকিকিনি আমি তবু রয়ে গেছি আরও বেশি ঋণী হিসাবের খাতা খুলে কখনো দেখিনি শোধ করা গেল না তো কি হবে এখন ? যেতে দাও সময় যখন . এসে গেছে পৃথিবীর শেষ স্টেশন॥
চোখের সামনে যাবতীয় শোকতাপ আকাশ এখানে ছড়ায় যে উত্তাপ কঙ্কাল সে তো মানুষের এক নাম অনাহারে ভেঙে গেছে জীবনের হাট শিল্পী লেখক গায়ক বন্ধু . বাড়াও দরদী হাত॥
ক্ষুধার ভূগোলে লেখা আছে দুটো নাম শকুনের ঠোঁটে খুঁজে পাবে তার দাম চোখের জলে কান্নায় ভেজে পথ বলরাম কাঁদে কাঁদছে জগন্নাথ শিল্পী লেখক গায়ক বন্ধু . বাড়াও দরদী হাত॥
গায়ক, তোমার তানপুরা তুলে রাখো শিল্পী, তোমার রঙের তুলিতে আঁকো কান পেতে শোনো কাঁদছে সুভদ্রা রেখে দাও কবি প্রেমের কবিতা পাঠ শিল্পী লেখক গায়ক বন্ধু . বাড়াও দরদী হাত॥
কথা - শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সুর ও শিল্পী - ভূপেন হাজারিকা
হে দোলা হে দোলা আঁকা বাঁকা পথে মোরা কাঁধে নিয়ে ছুটে যাই . রাজা-মহারাজাদের দোলা আমাদের জীবনের ঘামে ভেজা শরীরের . বিনিময়ে পথ চলে দোলা এই হেঁইয়া না, এই হেঁইয়া না, এই হেঁইয়া না।
ঐ দোলার ভেতরে ঝল্ মল্ করে যে . সুন্দর পোশাকের সাজ আর, ফিরে ফিরে দেখ্ তাই ঝিকিমিকি করে যে . মাথায় রেশমের তাজ হায়, মোর ছেলেটির উলঙ্গ শরীরে . একটুও জামা নেই---খোলা দু’চোখে জল এলে মনটাকে বেঁধে যে . তবুও বয়ে যায় দোলা হে দোলা . . . হে দোলা . . . হেঁইয়ো হো . . . হেঁইয়ো হো . . .
যুগে যুগে চলি মোরা কাঁধে নিয়ে দোলাটি . দেহ ভেঙে ভেঙে পড়ে ঘুমে চোখ ঢুলু ঢুলু রাজা-মহারাজাদের . আমাদের ঘাম ঝরে পড়ে উঁচু ঐ পাহাড়ে ধীরে ধীরে উঠে যাই . ভাল ক’রে পায়ে পা মেলা হঠাৎ কাঁধের থেকে পিছলিয়ে যদি পড়ে . আর দোলা যাবে না তো তোলা . রাজা-মহারাজাদের দোলা . বড় বড় মানুষের দোলা॥
ওরে হো . . . . . . নাম আমার কিশোরকুমার গাঙ্গুলী, রবি ঠাকুর যে ভাষাতে বলতো কথা, তাই বলি নাম আমার কিশোরকুমার গাঙ্গুলী॥ ব্যানার্জী নয়, মুখার্জী নয় --- গাঙ্গুলী নাম আমার কিশোরকুমার গাঙ্গুলী॥
আহা গল্প হলেও সত্যি কথা, বলছি সবাই শোনো রূপকাহিনী, রূপকথা নয় আজগুবি নয় কোনো আমার গানের বন্ধুরা সব, মন দিয়ে আজ শোনো!
এক যে ছিল দুষ্টু ছেলে, বেজায় রকম কালো কেবল লেখাপড়ায় অষ্টরম্ভা মনটা ছিল ভালো ও তার মনটা ছিল ভালো এমনিতে, সে চালাক-চতুর মোটেই সে নয় বোকা আদর করে ডাকতো সবাই, গাইয়ে বাবু, খোকা।
খাণ্ডোয়া বাসী, বম্বে বাজার সেই ছেলেটার বাড়ী তাড়ির দোকান, গাঁজা-গুদাম সামনে ছিল তারই পালিয়ে যেত খেলার মাঠে সেথায় সারা বেলা বন্ধুরা সব জুটতো এসে খেলতো নানা খেলা
(সংলাপ)
---- কয়েন তো সেই পোলাডা কেডা ? ওটা আমি গো আমি ব্যানার্জী নয়, মুখার্জী নয়, চ্যাটার্জী নয় --- গ্যাঙার্জী নাম আমার কিশোরকুমার গাঙ্গুলী॥
আমি বম্বেবাসী আজ, প্রবাসী তবু খাঁটি বাঙ্গালী নাম আমার কিশোরকুমার গাঙ্গুলী
আমার বাবা ছিলে রাশভারী লোক বি.এ. বি.এল. কুঞ্জলাল উঠ্ লে ক্ষেপে যেতেন রেগে মুখটা যে তার হত লাল বাবা ছিলেন পেশায় উকিল নেশায় যে তাঁর ছিল গান বন্ধুরা সব আসতো, যেতো বাবার ছিল দরাজ প্রাণ॥
(সংলাপ)
বাবার খুব শখ ছিল। উকিল বন্ধুদের বাড়িতে ডেকে এনে আসর বসাতেন। আর, সেই আসরে, ঘুম থেকে টেনে তুলে আমাকে বলতেন --- খোকা, ওরে খোকা, শুনিয়ে দে সকলকে অশোক আর দেবিকা রাণীর সেই গানটা তাড়াতাড়ি। আর আমি সেই আসরে গান গেয়ে পেয়েছি কত সম্মান, কত ক্যশ কত কড়ি। তখন আমি কি গান গাইতাম জানেন ?
দাদামণির গান শুনিয়ে পেতাম একটি টাকা শচিন কর্তার ভাটিয়ালী গেয়ে পেতাম আড়াই টাকা চুক্তি ছিল সায়গল সাহেবের গানে পাঁচট্ টাকা॥
সবার যিনি অশোর কুমাক ---আমার দাদামণি তাঁর কাছেতেই হাতেখড়ি ---আমার পরশমণি আমার দিদিমণির গানের গলা ---মিষ্টি ছিল ভারি দিদি আমার গানের গুরু ---শিষ্য আমি তারই এমনি করে রঙে-রসে ---ভরে ছিল দিনগুলি ছোটবেলার কিশোর এখন কিশোরকুমার --- হারিয়েছে গাঙ্গুলী
(সংলাপ)
--- বুঝলেন না ? --- বোঝাচ্ছি। আমি গায়ক হলাম, খুব নাম হল। আমি অভিনেতা হলাম --- আরো নাম হল। হঠাৎ ; হঠাৎ আমার জীবনে উঠল ঝড়। ঝড় না, ঝড় না-কর-আয়কর। আয়কর আমাকে করল দেশান্তর।
তারপর অনেক কিছুই ঘটল। কিছু দিলাম, কিছু পেলাম, কিছু হারালাম।
স্মৃতি নামের রেলগাড়িটা পেছন দিকে ছোটে আমার মনের পর্দাতে সব ছবি হয়ে ওঠে বেশ তো ছিলাম ছোটবেলায় মায়ের আঁচল তলে সেই কথাটি ভেবে এখন ভাসি চোখের জলে॥
শিশু ঘুমালে পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে গানের সুরে ঘুম পাড়াতো মা যে ভালবেসে ঘুম পাড়ানি ছড়ায় শিশু এখন ঘুমোয় না তারার দেশে হারিয়ে গেছে --- স্নেহময়ী মা॥