কবি শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান ও কবিতা
*
কথা - শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
সুর - ভূপেন হাজারিকা
শিল্পী - ঊষা মঙ্গেশকর

হাওয়া ঝির্ ঝির্
খুশি রিম ঝিম
তারা ঝিক্ ঝিক্      দূরে হাসবে
.                তুমি আসবে তুমি আসবে॥

চাঁদ উঠ্ বে ফুল ফুট্ বে
আশা ঝিল্ মিল্      ঘোর টুট্ বে
আজ মন চায়    শুধু প্রাণ চায়
.                তুমি আসবে, ভাল বাসবে॥

জাগে হিল্লোল          মনে কল্লোল
.                খুশী দোল্ দোল্ দোলে দোলনায়
মন অঞ্চল   হল চঞ্চল
.                রাঙা কুম্ কুম্  মধু-সন্ধ্যায়।

কথা শুন্ ছি জাল বুন্ ছি
আসা-পখ চেয়ে দিন গুনছি
আজ বাড়ে বার সব কাজে ভুল
.                জানি আসবে, ভাল বাসবো॥

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কথা - শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
সুর - কল্যাণ সেন বরাট
শিল্পী - মৃণাল চক্রবর্তী

একদিন চলে যাব অন্য পথে
যে পথে গেলে আর কেউ ফেরে না
যেতে হবে
যেতে দাও                সময় যখন
.                এসে গেছে পৃথিবীর শেষ স্টেশন॥

জীবনের রেলগাড়ি বহু পথ ঘুরে
চলে গেছে দূর থেকে আরও বহু দূরে
ঝড়-জল-বৃষ্টিতে আর রোদ্দুরে
সময় পেরিয়ে গেছে সন্ধ্যা এখন
যেতে হবে
যেতে দাও                সময় যখন
.                এসে গেছে পৃথিবীর শেষ স্টেশন॥

মানুষের হাটে হাটে শেষ বিকিকিনি
আমি তবু রয়ে গেছি আরও বেশি ঋণী
হিসাবের খাতা খুলে কখনো দেখিনি
শোধ করা গেল না তো                কি হবে এখন ?
যেতে দাও                সময় যখন
.                এসে গেছে পৃথিবীর শেষ স্টেশন॥

.               *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কথা - শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
সুর - ভি. বালসারা
শিল্পী - ঊষা উত্থুপ

আমার কবিতা ছবি আঁকে
সঞ্চিত ব্যথা
বঞ্চিত প্রাণ
লাঞ্ছিতদের কাছে ডাকে॥

আমার কবিতা নয় ফাগুনের গান
আমার কবিতা কেঁদে কেঁদে সারা
.                অশ্রুর কলতান
আমার কবিতা যত বেদনার
.                কাহিনী সে লিখে রাখে॥

আমার কবিতা চির-বিদ্রোহী
.                কাল-বৈশাখী ঝড়
আমার কবিতা ভাঙনের মাঝে
.                নতুন কণ্ঠস্বর।

আমার কবিতা অপমানিতের গান
আমার কবিতা অবহেলা-ভরা
.                হৃদয়ের কলতান
আমার কবিতা জলে ঢাকা চোখ
.                গোপনে সে ছুঁয়ে থাকে॥

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কথা - শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
সুর - ভূপেন হাজারিকা
শিল্পী - রুমা গুহঠাকুরতার পরিচালনায় ক্যালকাটা ইউথ কয়্যার এবং পরে ভূপেন হাজারিকা

বিস্তীর্ণ দুপারের অসংখ্য মানুষের হাহাকার শুনেও
.        ও গঙ্গা তুমি বইছো কেন ?
নৈতিকতার স্খলন দেখেও
মানবতার পতন দেখেও
.        নিঃশব্দ অলসভাবে বইছো কেন ?

জ্ঞান-বিহীন নিরক্ষরের, খাদ্যবিহীন নাগরিকের
নেতৃত্বহীনতায় নীরব কেন ?
সহস্র বরষার উন্মাদনার মন্ত্র দিয়ে লক্ষজনেরে
সবল সংগ্রামী আর অগ্রগামী করে তোলোনা কেন ?

ব্যক্তি যদি ব্যক্তিকেন্দ্রিক
সমষ্টি যদি ব্যক্তিত্বরহিত
তবে, শিথিল সমাজকে ভাঙো না কেন ?

স্রোতস্বতী কেন নাহি ও
তুমি নিশ্টয় জাহ্নবী নও
তা হলে প্রেরণা দাও না কেন ?

উন্মত্ত ধরার কুরুক্ষেত্রের শরশয্যাকে আলিঙ্গন করা
লক্ষ কোটি ভারতবাসীকে জাগালে না কেন ?

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কথা - শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
সুর - শৈলেন মুখোপাধ্যায়
শিল্পী - ইলা বসু
১৯৯৫

কোলকাতা কোলকাতা
কিছু গান কিছু কথা
কিছু প্রেম-প্রীতি ভালবাসা দিয়ে গড়া
.        আধুনিক রূপকথা
.        কোলকাতা কোলকাতা॥

হিপি আর হিপিনী মিসিসিপি বিকিনী
আদ্দিস আবাবা    বর্মী কি জাপানী
.        মিলে মিশে একাকার অপরূপ সভ্যতা॥

যত মত তত পথ মিছিলেই হাঁটে পথ

মিলে মিশে একাকার যেন এক গল্প তা’
.        কোলকাতা কোলকাতা॥

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কথা - শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
সুর ও শিল্পী - ভূপেন হাজারিকা
(
ওড়িশার খরা-পীড়িত “কোরাপুট”  ও “কালাহাণ্ডী”র মানুষদের উদ্দেশে নিবেদিত)

আগুন ঝরছে কবিতার সংসারে
কোকিলের লাশ ছড়ানো পথের ধারে
“কোরাপুট” জ্বলে, “কালাহাণ্ডীর” মাঠ
শিল্পী লেখক নায়ক বন্ধু
.        বাড়াও দরদী হাত॥

চোখের সামনে যাবতীয় শোকতাপ
আকাশ এখানে ছড়ায় যে উত্তাপ
কঙ্কাল সে তো মানুষের এক নাম
অনাহারে ভেঙে গেছে জীবনের হাট
শিল্পী লেখক গায়ক বন্ধু
.        বাড়াও দরদী হাত॥

ক্ষুধার ভূগোলে লেখা আছে দুটো নাম
শকুনের ঠোঁটে খুঁজে পাবে তার দাম
চোখের জলে কান্নায় ভেজে পথ
বলরাম কাঁদে কাঁদছে জগন্নাথ
শিল্পী লেখক গায়ক বন্ধু
.        বাড়াও দরদী হাত॥

গায়ক, তোমার তানপুরা তুলে রাখো
শিল্পী, তোমার রঙের তুলিতে আঁকো
কান পেতে শোনো কাঁদছে সুভদ্রা
রেখে দাও কবি প্রেমের কবিতা পাঠ
শিল্পী লেখক গায়ক বন্ধু
.        বাড়াও দরদী হাত॥

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কথা - শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
সুর - কল্যাণ সেন বরাট
শিল্পী - নির্মলা মিশ্র

যাওয়ার আগে যাব না আমি তোমাকে না বলে
শেষ দেখা আর শেষ কথা তাই, হবে না তা’ না হলে॥

কত কথা ছিল তোমাকে বলার
কত সে গল্প বেলা-অবেলার

বলতে গিয়েও পারিনি বলতে
.                সময় গিয়েছে চলে॥

কতবার ডেকে বলেছ --- “শোনো”
শুনতে চাও নি তুমি তা’ কখনো
মনের কথা মনেই রেখেছি
.                যা ছিল মনের অতলে॥

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কথা - শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
সুর ও শিল্পী - ভূপেন হাজারিকা
(
কলকাতার তিন’শ বছর পূর্তি উপলক্ষে রচিত।)

একটু গেলেই অথৈ সাগর
.        পা বাড়ালেই নদী
বুকের মধ্যে কুলুকুলু গঙ্গা ভাগীরথী
.        এই আমাদের কোলকাতা
.                প্রিয়তমা কোলকাতা
গাত বাড়ালেই বন্ধু মেলে
.                প্রেমের কোমলতা॥

মায়ের মত কোলকাতা তার কোলটি পাতা আছে
সবাইকে নেয় আপন করে দূরকে টানে কাছে
.        এই আমাদের কোলকাতা
.        আদরিনী কোলকাতা
ছড়ায় গানে ছড়িয়ে আছে অনের গল্প-কথা॥

আকাশ যেন “যামিনী রায়” বাতাস “রবি ঠাকুর”
সেই বাতাসে ভাসে আবার অগ্নিবীণার সুর
.        নজরুলের এই কোলকাতা
.        নেতাজীর এই কোলকাতা
কিশোর কবি সুকান্তের ছন্দে সুরে গাঁথা॥

বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর কোলকাতাতে বান
দুঃখ-সুখের কান্না-হাসির ওঠে কলতান
.        “চোখের মণি” কোলকাতা
.        “জ্ঞানের খণি” কোলকাতা
চিরন্তনী ঐ শহরে আছে মানবতা॥

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কথা - শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
সুর ও শিল্পী - ভূপেন হাজারিকা

হে দোলা হে দোলা
আঁকা বাঁকা পথে মোরা কাঁধে নিয়ে ছুটে যাই
.        রাজা-মহারাজাদের দোলা
আমাদের জীবনের ঘামে ভেজা শরীরের
.        বিনিময়ে পথ চলে দোলা
এই হেঁইয়া না, এই হেঁইয়া না, এই হেঁইয়া না।

ঐ দোলার ভেতরে ঝল্ মল্ করে যে
.        সুন্দর পোশাকের সাজ
আর, ফিরে ফিরে দেখ্ তাই ঝিকিমিকি করে যে
.        মাথায় রেশমের তাজ
হায়, মোর ছেলেটির উলঙ্গ শরীরে
.        একটুও জামা নেই---খোলা
দু’চোখে জল এলে মনটাকে বেঁধে যে
.        তবুও বয়ে যায় দোলা
হে দোলা . . . হে দোলা . . . হেঁইয়ো হো . . . হেঁইয়ো হো . . .

যুগে যুগে চলি মোরা কাঁধে নিয়ে দোলাটি
.        দেহ ভেঙে ভেঙে পড়ে
ঘুমে চোখ ঢুলু ঢুলু রাজা-মহারাজাদের
.        আমাদের ঘাম ঝরে পড়ে
উঁচু ঐ পাহাড়ে ধীরে ধীরে উঠে যাই
.        ভাল ক’রে পায়ে পা মেলা
হঠাৎ কাঁধের থেকে পিছলিয়ে যদি পড়ে
.        আর দোলা যাবে না তো তোলা
.        রাজা-মহারাজাদের দোলা
.        বড় বড় মানুষের দোলা॥

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কথা - শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
সুর - অমিতকুমার
শিল্পী - কিশোরকুমার
১৯৮৪

ওরে হো . . . . . .
নাম আমার কিশোরকুমার গাঙ্গুলী,
রবি ঠাকুর যে ভাষাতে বলতো কথা, তাই বলি
নাম আমার কিশোরকুমার গাঙ্গুলী॥
ব্যানার্জী নয়, মুখার্জী নয় --- গাঙ্গুলী
নাম আমার কিশোরকুমার গাঙ্গুলী॥

আহা গল্প হলেও সত্যি কথা, বলছি সবাই শোনো
রূপকাহিনী, রূপকথা নয় আজগুবি নয় কোনো
আমার গানের বন্ধুরা সব, মন দিয়ে আজ শোনো!

এক যে ছিল দুষ্টু ছেলে, বেজায় রকম কালো
কেবল লেখাপড়ায় অষ্টরম্ভা মনটা ছিল ভালো
ও তার মনটা ছিল ভালো
এমনিতে, সে চালাক-চতুর মোটেই সে নয় বোকা
আদর করে ডাকতো সবাই, গাইয়ে বাবু, খোকা।

খাণ্ডোয়া বাসী, বম্বে বাজার
সেই ছেলেটার বাড়ী
তাড়ির দোকান, গাঁজা-গুদাম
সামনে ছিল তারই
পালিয়ে যেত খেলার মাঠে
সেথায় সারা বেলা
বন্ধুরা সব জুটতো এসে
খেলতো নানা খেলা

(সংলাপ)

---- কয়েন তো সেই পোলাডা কেডা ?
ওটা আমি গো আমি
ব্যানার্জী নয়, মুখার্জী নয়, চ্যাটার্জী নয় --- গ্যাঙার্জী
নাম আমার কিশোরকুমার গাঙ্গুলী॥

আমি বম্বেবাসী
আজ, প্রবাসী
তবু খাঁটি বাঙ্গালী
নাম আমার কিশোরকুমার গাঙ্গুলী

আমার বাবা ছিলে রাশভারী লোক
বি.এ. বি.এল. কুঞ্জলাল
উঠ্ লে ক্ষেপে যেতেন রেগে
মুখটা যে তার হত লাল
বাবা ছিলেন পেশায় উকিল
নেশায় যে তাঁর ছিল গান
বন্ধুরা সব আসতো, যেতো
বাবার ছিল দরাজ প্রাণ॥

(সংলাপ)

বাবার খুব শখ ছিল। উকিল বন্ধুদের বাড়িতে ডেকে এনে আসর বসাতেন। আর, সেই আসরে,
ঘুম থেকে টেনে তুলে আমাকে বলতেন --- খোকা, ওরে খোকা, শুনিয়ে দে সকলকে অশোক আর
দেবিকা রাণীর সেই গানটা তাড়াতাড়ি। আর আমি সেই আসরে গান গেয়ে পেয়েছি কত সম্মান,
কত ক্যশ কত কড়ি। তখন আমি কি গান গাইতাম জানেন ?

“ম্যায় বন্ কি চিড়িয়া বনকে বন্ বন্ বঁলু রে
ম্যায় বন্ কা পন্ছি বন কে তন্ তন্ তলু রে . .. .”

“দিয়া জ্বালাও জগমগ জগমগ দিয়া জ্বালাও . . . ”

“নিশীথে যাইও ফুলবনে, ভ্রমরা
নিশীথে যাইও ফুলবনে . . .”

“হৈ লা-লা ঢিং লা-লা হৈ . . .”

দাদামণির গান শুনিয়ে পেতাম একটি টাকা
শচিন কর্তার ভাটিয়ালী গেয়ে পেতাম আড়াই টাকা
চুক্তি ছিল সায়গল সাহেবের গানে পাঁচট্ টাকা॥

সবার যিনি অশোর কুমাক        ---আমার দাদামণি
তাঁর কাছেতেই হাতেখড়ি        ---আমার পরশমণি
আমার দিদিমণির গানের গলা        ---মিষ্টি ছিল ভারি
দিদি আমার গানের গুরু                ---শিষ্য আমি তারই
এমনি করে রঙে-রসে                ---ভরে ছিল দিনগুলি
ছোটবেলার কিশোর এখন কিশোরকুমার --- হারিয়েছে গাঙ্গুলী

(সংলাপ)

--- বুঝলেন না ?
--- বোঝাচ্ছি। আমি গায়ক হলাম, খুব নাম হল। আমি অভিনেতা হলাম --- আরো নাম হল।
হঠাৎ ; হঠাৎ আমার জীবনে উঠল ঝড়। ঝড় না, ঝড় না-কর-আয়কর। আয়কর আমাকে করল
দেশান্তর।

সংসারে সভ সেজে থাকা লাগল না পছন্দ
অবশেষে হয়ে গেলাম স্বামী কিশোরানন্দ
জয় গোবিনদম্ জয় গোপালম্
জয় গোবিনদম্ জয় গোপালম্
পিছে পড় গয়া ইকাম্ ট্যাক্সম্  
পিছে পড় গয়া ইকাম্ ট্যাক্সম্ ॥

(সংলাপ)

তারপর অনেক কিছুই ঘটল। কিছু দিলাম, কিছু পেলাম, কিছু হারালাম।

স্মৃতি নামের রেলগাড়িটা পেছন দিকে ছোটে
আমার মনের পর্দাতে সব ছবি হয়ে ওঠে
বেশ তো ছিলাম ছোটবেলায় মায়ের আঁচল তলে
সেই কথাটি ভেবে এখন ভাসি চোখের জলে॥

শিশু ঘুমালে পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে
গানের সুরে ঘুম পাড়াতো মা যে ভালবেসে
ঘুম পাড়ানি ছড়ায় শিশু এখন ঘুমোয় না
তারার দেশে হারিয়ে গেছে --- স্নেহময়ী মা॥

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর