কবি শিবরাম চক্রবর্তীর কবিতা
|
অরণ্যরোদন
শিবরাম চক্রবর্তী
কোথায় মোদের মিলন যে হবে চাও যদি তুমি জানতেই,
এর পরে কবে মিলব?
নয়কো লেকের, নয় শহরের নির্জন কোনো প্রান্তেই-
ফের পরে মিলব। মিলনসাগর
কোথায় মিলব? ধরো যদি মিলি হাওড়া ব্রিজের মাঝটায়
ঘন জনতার স্রোতে?
কিংবা যেখানে হাজার-হাজার মিনিটে-মিনিটে আসে যায়-
হাওড়া শেয়ালদাতে?
জনারণ্যের মতন এমন জনহীন আর ঠাঁই কই?
কার চোখে আর পড়বে?মিলনসাগর
হাজার মুখের ঢেউয়ের ওপরে ভাসবে ও মুখ-পদ্ম-
শুধু মোর চোখ ভরবে। মিলনসাগর
হাজার মুখের মুখর ঢেউয়ের ওপরে দুলবে ওই মুখ-
আর তার দোলা লেগে হায়,
হাজার মনের গহন স্রোতের তলায় দুলবে এই বুক
কোন্ তরঙ্গ-দোলনায়!
তুমি কি জানো যে এই লোকালয় এমনিই হয় জনবিরল
তুমি কাছে এসে দাঁড়ালে? মিলনসাগর
এত ট্রাম-বাস- ঊর্ধ্বশ্বাস ঘর্ঘর আর কোলাহল,
কোথায় পালায় আড়ালে। মিলনসাগর
জনারণ্যের মতন বল না এমন কী আর নির্জন?
কার চোখ আর টানবো?
কানে-কানে কথা বলার ছলায় করো যদি ভুলে চুম্বন,
তুমি আর আমি জানবো। মিলনসাগর
. ****************
. সূচীতে . . .
মিলনসাগর
তুমি আর আমি
শিবরাম চক্রবর্তী
তোমার অসাধ্য কিছু নেই!
ছুঁচের ছ্যাঁদার ভেতর দিয়ে হাতি গলাতে তুমি পারো।
তুমিই কেবল পারো ;
তোমার ভক্তেরা বলে থাকেন,
আস্ত হাতিকে গলাতে পারো তুমি, অবলীলায়,
একটুখানি ছ্যাঁদার ভেতর দিয়ে।
আর আমি পারি।
আমিও পারি গলিয়ে দিতে -আস্তে-আস্তে।
কর্মের কৌশলই হচ্ছে যোগঃমিলনসাগর
ছুঁচের ছ্যাঁদার ভেতর দিয়ে যোগাযোগ শ্রীমান হাতিরঃ
আমিও করতে পারি সুকৌশলে!
আমিও পারি ছুঁচের ভেতর দিয়ে গলিয়ে দিতে
হাতিকে হাতি-মিলনসাগর
যদি একবার মেরে ওকে লাট করতে পারি-
তুলোর মতন ধুনে পিঁজে নিয়ে পাট করতে পারি -
তারপর তক্ লির পিঁজরেয় ফেলে পাকিয়ে
সুতোয় লোপাট করে আনতে পারি একবার!
তখন সূচীভেদ্য সেই হাতিকে-
বা হাতির সূত্রাকারকে-মিলনসাগর
ছুঁচের ছ্যাঁদায় গলাতে আমার কতক্ষণ?
হাতি তো হাতি-স্বয়ং তুমি-তোমাকেও হাতে পেলে....
বুঝি সেই ভয়েই তুমি আমার হাত এড়িয়ে রয়েছো!
কিন্তু এড়াতে পেরেছো কি?
খোদ ব্রহ্মকেও সূত্ররূপে বানিয়ে টেনেছিলো কে একান্তে ?
টানাটানির তকলিফে-
সূত্রযজ্ঞের ছুতোয়-
ভূর্জপত্রের আওতায়-
সেই কি আহা আমার বাহাদুরিতে,
তোমার প্রথম সূত্রপাত নয়?
তোমার সেই শ্লোকান্তরলাভ?
ব্রহ্মসূত্র কার রচনা?
কস্য খোদকারি?
আমিই তো!
. ****************
. সূচীতে . . .
মিলনসাগর
দুটি কবিতা
শিবরাম চক্রবর্তী
||১||
ও...ওই বাড়ির ছাদে একটি মেয়ে।
আর আমি একলা এখানে মিলনসাগর
আমার ব্যালকনির ডেক চেয়ারে ।
মেয়েটি আমার দিকে ভুলেও কখনো তাকায় না।
কিন্তু আমি তাকালেই সে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
কী করে যে টের পায় কে জানে!
||২||
একটা বয়েস এলেই নাকি ব্যর্থতাবোধ এসে যায়।
কিন্তু কেউ-কেউ আবার ব্যর্থতাবোধ নিয়েই জন্মায় ;
সে খুব ভাগ্যবান। মিলনসাগর
সে কিছুই আশা করে না, কেননা তার পাবার কিছু নেইকো,
পাওনা নেই তার কোনোখানেই। মিলনসাগর
(তবুও এই দুনিয়ায় একেবারেই কিছু না পেয়ে
শুধু হাতে যাবার কারো জো আছে নাকি?)
তাই যখন সে যা পায় তাই তার কাছে অভাবিত;
তাই তার কাছে পরমাশ্চর্য-পরমার্থ-উপায় !
কেননা কোনো কিছুর পরেই নেই তার কোনো দাবি তো ;
তাই একটুখানি বর্ষণেই তার ধূসর মরু প্লাবিত।
তাই সর্বদাই তার মনে হয় সে বুঝি ব্যর্থ নয়,
পড়ে-পাওয়া চৌদ্দ আনার ষোলো আনাই ফাঁকি ||
. ****************
. সূচীতে . . .
মিলনসাগর
বিধাতার চেয়ে বড়ো
“মানুষ” (১৯২৯) কাব্যগ্রন্থ থেকে
শিবরাম চক্রবর্তী
অণুতে অণুতে দীপ্ত অন্ধ ক্ষিপ্ত মিলন-আবেগে
. আকাশের বিক্ষুব্ধ বাসনা!
. আজি হতে লক্ষ বর্ষ পরে
.তার বনারণ্যে তার পর্বতে প্রান্তরে,
. কলস্বনা স্রোতস্বিনী-তীরে,
. জীবনের কুটিরে কুটিরে
. যে আনন্দ মৃত্যু-বন্ধ দলি’
. স্বতঃ ছন্দে উঠিবে উছলি,
. নব নব প্রাণের স্বরূপে,
. তারই মাঝে আজি চুপে চুপে
. অনন্তের রহিল গোপন
. সে দিনের সকল স্বপন |
. প্রথম যে দিন এই ধরণীর বুকে
. জাগিল মানুষ-রূপে নব নীহারিকা---
নব সম্ভাবনা |
. নিঃসীম আকাশ ছিল চেয়ে তারি মুখে!
. অগোচরে তারি ডালে ছিল জয়টীকা
. অনন্তের মর্মের কামনা,
. মর্মান্তিক খুশ্---
. ‘বিধাতার চেয়ে বড়ো হবে এ মানুষ |’
. সাগর সেদিন তারে দেয় নাই পথ
. গতি রোধি’ দাঁড়ায়েছে প্রাচীন পর্বত,
. পশুযূথ করেছে সন্দেহ---
. ভাবিয়াছে বিধাতার প্রতিদ্বন্দ্বী কেহ |
. চারিদিকে বস্তু পিন্ড সুস্তর বিস্তার
. রচেয়ে বিচিত্র বাধা যেন প্রতিবাদ ;
. শ্রাবণের খর ধার, শীতের তুষার
. নিদাঘে প্রখর রবি করে নাই স্নেহ |
যতো বাধা হইয়াছে জড়ো,
. ততো তার চিত মথি’ জেগেছে উন্মাদ
. উদ্ধত এ সাধ---
. ‘হতে হবে, হতে হবে, মোরে এ সবার
. ইহাদের বিধাতার বড়ো |’
. মানুষ গাহিল যবে এই আদি সাম
. সেই ক্ষণে
. জন্ম নিল তার মনে
. আদিম বিধাতা!
. শুন নিজ গাথা
. আপনারে আপনি সে করিল প্রণাম!
. উন্মথি’ চেতনা তার জগিল উদ্দাম
. নব-সৃষ্টি-কাম সুমহৎ---
. য়ে পৃথিবী আছিল বন্ধুর
. অরণ্য প্রচুর,
. রচিল সে তারি বুকে মানুষের চলিবার পথ---
. চলার দিগন্ত ভবিষ্যৎ |
. বিধাতার গাড়িল মন্দির, আপনার বাঁধিল শে গ্রাম |
. স্বয়ম্ভুরা ধরিত্রীরে
. নব সৃষ্টি করিল সে ফিরে
. আরো পথ, আরো পথ, রচি আরো পথ
. চলিল সে দুরন্ত দুর্বার---
. অনন্তের অনন্ত বিষ্ময়!
. যে বিধাতা শত্রু ছিল তাহারে সে করিল বিজয়,
. ক্ষমা করি করিল আত্মীয় ;
. যে বিধাতা ছিল হিংস্র, ভয়াল বর্বর,
. তাহারে সে ভালোবেসে করিল সুন্দর-
. অংশ দিয়া আপন আত্মার
. তিলে তিলে জননীর স্নেহে ;
. আপন দরদ ভরি দিয়া
. তাহারে করিল দরদিয়া-
. মরমিয়া মরমের প্রিয় ;
.বিধাতারে সৃজিয়া মানুষ বড়ো হল বিধাতার চেয়ে |
.বিধাতারে ‘বিধাতা’ বলিয়া মানুষ করিল সম্ভাষণ |
. হাতে দিল রাজদন্ড তার,
. আপনি দাঁড়াল জোড় করে ;
. রচিল তাহার সিংহাসন
. মর্মান্ত ব্যথায় কূলে, আপনার মর্মের মর্মরে |
. আপন সৃষ্টিরে করি আপনার চেয়ে মহীয়ান
. কে বা জানে কাহারে সে করিল সন্মান
. বিধাতারে কিম্বা বিধাতারে |
. কেহ জানিল না
. কাহারে সে করিল বঞ্চনা
. আপনারে কিম্বা বিধাতারে |
. আমি দেখি আজ
.বিধাতার সিংহাসনে মানুষেরই আপন প্রতিমা |
. দীন, খর্বাকার |
. অনন্ত ঐশ্বর্য নাই তার,
. আছে তার সমাপ্তি ও সীমা---
তাই সে যে এত অসহায়, তাই তার এত অবিচার,
. মানুষেরই কামনা দুর্বার
. পূর্ণতার লাগি,’
. চেয়েছে ধরিতে যেন বিধাতার অপরূপ রূপ!
. মানুষেরই সৃজন মহিমা
বিধাতার অমরত্বে জাগি
. ঢাকিতে চেয়েছে যেন আপনার মরণের লাজ!
. ক্ষীণ, খর্ব, দরিদ্র বিধাতা
. সিংহাসন হতে আজ নামি
. তারি কাছে দাঁড়ায়েছে থামি-
. পথে যার ধূলি শয্যা পাতা
. ব্যথাতুর আতুর মানুষ!
. তারি কানে কহিছে সে কথা-
. ‘দূর করো গ্লানি মোর, দূর করো সকল কলুষ,
. মুছে দাও পঙ্কিলতা যুগে-যুগে-জমা
. মাগি আমি আজিকে পূর্ণতা |’
. - যেথা কারাগারে
. কাঁদে বন্দী শৃঙ্খলের ভারে
. লৌহ তন্ত্র শাসনের ডোরে
. সেথা গিয়া কহিছে সে -‘করো মোরে ক্ষমা
. মুক্তি মাগি,মুক্তি দাও মোরে |’
. -শ্রম-ক্লান্ত শ্রমিকের দল
. যেথা নিত্য-ক্ষুদায় চঞ্চল
. দাঁড়াল সে তাদের দুয়ারে,
. পূঞ্জীভূত যেথা আবর্জনা;
. কহিল সে -‘করিয়ো মার্জনা
. অসহায় দীন বিধাতারে,
. এই শুধু চাই!
. নব সৃজনের, বন্ধু, শক্তি মোর নাই
. কোনো কালে ছিল না তা,
. কহি সত্য কথা,
. পুরানো জগত্ আর অথর্ব বিধাতা
. মাগে মুক্তি, মাগে সম্পূর্ণতা,
. নবীন যৌবন মাগে তোমাদের দ্বারে |’
আমি যে তোমারে ভালবাসি
শিবরাম চক্রবর্তী
তোমারে বন্দনা করি
পারিলেও পারিতাম ধরিবারে বুকে
. কোথায সে পালালো এখনি!
দুই চোখে জাগে মোর নিরশ্রু ক্রন্দন-
. এ কাহার চাওয়া মোর আঁখে ?
. সে চির- উদাসী
. সুন্দর বাজায়ে গেল বাঁশী-
. পলকে হারালো পথ বাঁকে |
-যে হারালো তারে আর পাব না জীবনে |
. ডানা নাই,মানা মোর চরণে চরণে,-
. জনতা আমায় ঠেলে সদা পিছু ডাকে
. মোর প্রতিদ্বন্দ্বী সে যে আমারি অন্তরে!
হায এ ভুবনে মিলনসাগর
সুন্দর সুন্দর শুধু,-সত্য শুধু মাটির বন্ধন-
. সুন্দরেরও বড়ো চরাচরে ;
তবু ভাবি বারেকের তরে মিলনসাগর
. আমার একটি কথা তারে কহিতাম-
. পথের ব্যথার কথা পথিকের কাণে!
জনস্রোতে রচিতাম মুহুর্ত্ত বিশ্রাম
. সে কথার উপকথা- লোকে,-
. সে কথাটি ব্যস্ত মস্ত পৃথিবীর চোখে
ঠেকিত কি খাপছাড়া - নাই যেন মানে!
. যে শুনিত তারো কাছে রহস্য তেমন
. সে কথাটি -একটি চুম্বন !
তোমারে চেয়েছি আমি আমার একান্ত অনুরাগে!
. -তাই আমি হেথা আসিয়াছি,
. তাই আমি বাঁচি |
আমার রক্তের সাথে মিশে আছে নোর এ চেতনা,
. আমার স্বপ্নের কুঞ্জ ভ’রে |
. তারি সাথে সদা মনে জাগে
তোমারে পাইনি আমি আমার ভুবন পূর্ণ ক’রে-
. মোর জীবনের সর্ব্বক্ষণে !
. যে মুহূর্ত্তে তব আলো আসি
. আমারে ছুঁয়েছে-আমি জেগেছি তখনি
. অপমৃত্যু অন্ধকার হতে;
জেনেছি তোমারি আমি, তোমারেই আমি ভালোবাসি |
প্রত্যহের তুচ্ছতা,দীনতা- জনতার কোলাহলধ্বনি
. সেদিন স্পর্শেনি মোরে ;
. অপরের দ্বেষ হিংসা ঘৃণা
. সেদিন দাঁড়ায়েছিল স’রে |
তোমার পরশমনি পরশি নবীন জন্মলভি
. সেদিন উঠেছি আমি ঊর্দ্ধে এক অপূর্ব্ব জগতে,
চিরন্তনী মানসী সেদিন আসিল যে আমার জীবনে!
সেদিন সামান্য আমি নহি, ক্ষয়-ক্ষতি-হীন ক্ষুদ্রমনা,
. সেদিন আমার হাতে বাল্মিকীর বীণা
. রচিয়াছে তোমারি বন্দনা
. চিরন্তন কবি |
যেই গ্রহ আলো নাহি দেয় সেই গ্রহে তুমি দিলে আলো
. ক্ষণিকের হইয়া প্রবাসী !
তোমার নয়ন হ’তে সেই আলো ধার ক’রি ল’য়ে
. মানুষআপন চিত্তে প্রদীপ জ্বালালো!
মোর কন্ঠে সেই আলো ফুটেচে তোমারি স্তব হ’য়ে
তোমার আলোক আমি হেরিনু ও চিনিনু তোমারে ;
. এ জীবনে ফিরিনু উদাসী
. কেবল তোমারে ভালোবাসি |
সুন্দর তোমার দেহে সাধিয়া করেছে আত্মদান
. লো রূপসী নারী,
তোমার দেউলদ্বারে আনিয়াছি অর্ঘ্য-মোর গান,
. সেই সুন্দরেরি এ পুজারী !
তোমারে দেখিনি কোথা ? দেখিয়াছি পথে যেতে যেতে
. চকিত আঁখির চলকেতে
হেরিয়াছি দরিদ্রের সাথে, যাযাবর ভিখারীর দলে-
সব খানে হেরিনু তোমারে অপরূপ আপন প্রভা’তে!
. -যখনি মিলেছি মোরা নয়নে নয়নে
. সে-প্রথম-ক্ষণে
. হে মানসী নারী,
তুমি কি চিনেছো মোরে-এ পথিক তোমারি ভিখারী ?
. সেই ক্ষণে তুমি জেনেছ কি,
. এ ভুবনে, সখী
. বিধাতার কাম্য ছিল মোদের মিলন ?
. তবু মোরা মিলিতে পারিনি,-
অনন্তের কাছে মোরা রয়ে গেনু ঋণী-
. হারালো অসীমকালে সে পরম ক্ষণ |
. সেদিন কে জেনেছিল বিধাতার প্রীতি
. চেয়েছে মোদের গৃহে হইতে অতিথি
. আমাদেরি রূপে
. মোদের অধরে চুপে চুপে,
গোপনে চেয়েছে পেতে আপন চুম্বন
. জেগেছে তাঁহার সাধ আমাদের মাঝে,-
. তবু মোরা অচেনার লাজে
. মিলিতে পারিনি !
. হে আলোকলতা,
তারে মোরা ভালো চিনি চোখে যারে চিনি
. প্রথম পলকে-
তার চেয়ে বড়ো পবিচয় নাই-নাই- নাই মর্ত্ত্যলোকে |
. হে বিমূঢ়া নারী,
তুমি কি জানোনি- আজ আসিল যে তোমারি পূজারী ?
. আমি তো চিনেছি সেই ক্ষণে-
তোমার আননে মোর হাসিতেছে জীবন-দেবতা
. সেদিন আসিতে যদি আমার জীবনে
. কহিতাম আমি এক অপূর্ব্ব কাহিনী !
সে কথা আজিও কেহ শোনেনি শ্রবণে
. পরমা রহস্যময়ী অপরূপা বাণী-
. অনন্তের গোপন বারতা!
আমার অন্তরে বহি আসিনু জগতে
. তোমারে বলিতে সেই কথা-
আসিয়া হেরিনু রূপ-পালঙ্ক-শয়নে
. তুমি সুখ-তন্দ্রাতুরা,লো সুন্দরী রাণি ;
ভুলে আছো আপনারে আপন স্বপনে |
সেদিন এলেনা তুমি বিধাতার হোলো পরাজয়-
. -যে কথা শোনার কুতুহলে
. সে আকাশে আড়ি পাতিয়াছে,-
সে কথা শুনিবে মোর কাছে-
. তোমারে শোনাবো আমি ব’লে
. দু’জনে বাহির হনু ভুবনের পথে-
---সে কথা নেহারি তুমি আমার নয়নে
. লভিতে আপন পরিচয়,---
আপনি হইতে তুমি আপনার নবীন বিস্ময়!
. ---চিরদিন চিররাত্রি ধ’রে
অকথিত সে ভারতী ভারসম রহিল অন্তরে |
এ মোর সান্ত্বনা নহে --- আজ তুমি নাহি এলে যদি
. একদা আসিবে,
---বিপুলা ধরণী আর কাল নিরবধি!
. হায় এই নিরবধি কাল
তোমার আমার মাঝে রচিবে আড়াল---
. আমার দেবতা রবে আমার ভূবনে
. হায় যবে আমি চলে গেছি!
---তখনো সে আসিবে সুন্দর
. তার লাগি রেখে গেনু মোর কণ্ঠস্বর
. আমার এ কবিতার সনে |
. সেদিন সে কথা জানিবে---
আমি তারে ভালো যে বেসেছি!
. আমার হৃদয়ে মিলনসাগর
. ছিল শুধু তাহারি আসন
. তারি পায়ে মোর আত্মদান!
সেদিন সে যেন নাহি হেন ভুল করে
. অরূপ সুন্দর তরে আমার এ গান!
যে অরূপ বন্দী হ’লো সুন্দর তনুতে
. তারে আমি বেসেছিনু, চেয়েছিনু ছুঁতে,
. চুমিতে চেয়েছি ;
আমার ভাষায় আমি তারেই করেছি সম্ভাষণ
. অন্য নহে, অন্য কেহ নহে |
আমি নাহি বুঝি কবে কে-বৈষ্ণব-কবি
. অরূপ দেবতা লাগি গাহিলেন গান---
পাশে তাঁর ছিল যবে সুন্দরী মানবী!