একে একে খুলে দিলে প্রথমে আঁচল শেষে অন্তর্বাস--- অনাবরণের কাছে মেলে ধরলে তুমি।
সমস্ত বাতাস স্তব্ধ, আকাশ দু’চোখ মেলে রাখে, সেই দুইচোখে সুরঞ্জিত নীলাঞ্জন আভা। একই ঐকতানে গড়া নদী আর ফসলের মাঠ আর তোমার শরীর।
পূর্ণতার কাছাকাছি তুমি।
দুটো কি একটি কুঁড়ি ফুটিয়ে তোলবার ঠিক আগেকার ক্যাকটাসের মত তোমার নিটোল ভারি স্তন। বহুদিন বৃষ্টি হলে পরে যেমন অদ্ভুত এক স্নিগ্ধতায় ভরে যায় প্রান্তরের ঘাস তেমনি তোমার ত্বক আশ্বাসের, বিশ্রামের মত। গভীর হলের শেষে মাটির অদ্ভুত গাঢ় রহস্যের মত---যৌনতার, জীবনের অন্ধকার উষ্ণতার আবহমানের তীব্র অসহ্য সংকেত। একই ঐকতানে গড়া নদী আর ফসলের মাঠ আর তোমার শরীর।
বশ্যতার গণতন্ত্রে কবি শুভ বসু রাত যায় পূবে কাব্যগ্রন্থ থেকে
বিহারের পাটনা জেলার অন্তর্গত বেলচি গ্রামে একদল লোক তেরোজন হরিজনকে পুড়িয়ে মারে। আরো একজনকে তারা প্রথমে গুলি করে ও পরে আগুনে ফেলে দেয়। . ---সংবাদ, ৪ঠা জুন ১৯৭৭ এই ভারতবর্ষের সামগান গাওয়া নীল আকাশের নীচে ওরা কারা মানুষ আর পশুদের সংজ্ঞাকে গোলায় ? ওরা কারা রাক্ষসের অহংকারে যজ্ঞের সমিধে ছড়ায় শোণিত, মাংস, কলুষতা, পাপ ?
ভারতবর্ষের যারা সবচেয়ে ভারতীয়। যারা প্রকৃতিপুঞ্জের মত স্থায়ী, শান্ত, বীর, অসহায় তারা ছাই--- সময়ের সবচেয়ে কুত্সিত অসুখে।
সেই ছাই-এর গৌরব গায়ে মেখে সামন্ততন্ত্রের শব নগরপালের বেশে মঞ্চের ওপরে ঘোরো ফেরে, হাততালি আর কুর্ণিশ আর বশ্যতার শব্দে রৈ রৈ করে ওঠে প্রক্ষাগার, সফলতা, সাজ।
এদিকে শহর জুড়ে গণতন্ত্র জমে। পেশাদার কলমচির অতর্ব মুদ্রায় গণতন্ত্র নৃত্যপরা, ফিটফাট বাবু সে গণতন্ত্রের তৃপ্তি মাদুলির মত বুকে রেখে
শেয়ালদা স্টেশন কবি শুভ বসু বিষপ্রহর কাব্যগ্রন্থ থেকে
ঝকঝকে একজন টেকনোক্র্যাটের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে।
যে যায় সে যায় খুব দারুণ সম্ভ্রমে একটু কুর্ণিশ ক’রে, রোগাপাতলা ট্রাম রুপোলি পিঁপড়ে ব’নে দুইখণ্ড শরীরের জাঁক ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে যায়---ঠাট্টায় ?
জবরদস্ত ভাবে তার জাঁদরেল দাঁড়ানো---আনকোরা। একটু দূরত্ব রেখে দোকান রেস্তরাঁ আর হোটেলবাড়ির লাল রঙটা কিছু তোবড়ানে দোমড়ানো বয়স্কতা ঝাঁক বেঁধে ড্যাবড্যাব দেখে, উন্নাসিকতায় তার হালফ্যাসানের দারুণ জৌলুস মার্কারি ঠিকরে হাসে, জমকালে ডবলডেকারও ঘাবড়ে গিয়ে অকস্মাৎই পোড়ানো ডিজেলে গরগর ক’রে ওঠে, শিকারীর সামনে যেন বাঘ।
প্রত্যেক দিন সকালসন্ধ্যী হাজারগণ্ডা মানুষ তার পায়ের নিচ দিয়ে ঝুঁকে ও ধুঁকে যায় নানা জীবিকায়, সে তার গম্ভীর মুরুব্বীয়ানায় প্রায় কিছুই দেখে না।
কখনো অনেক রাতে, যখন বেশ্যারা প্রায় ঘুমচোখে খদ্দের ছাড়াই ফেরে, হকারের শেষ ক্লান্ত হাঁকও থেমে আসে, কনস্টেবলের তাড়া খেয়ে ভাড়া দিতে অক্ষম কোনো খুব বিপন্ন বাউণ্ডুলে দাঁতে দাঁত চেপে বলে : টাকার শ্রাদ্ধ যত! কী দরকার এই সব বিলাতি ফাটের আমাদের মত যত গরিবগুর্বোর যদি কাজেই না আসে ?
যেসব আঙুল আগে আশ্চর্য জাদুতে মেশিনের শরীরেও জননের রোমাঞ্চ আনত, তারা পাঁচজন মিলে এখানে ওখানে কৌটো নাড়ে, আধুলি বা সিকির আকারে টুংটাং ঝরে পড়ে শহরের চৌকস আবেগ।
এসব সত্ত্বেও সেই তিনজন, যারা খুব হতাশায় জীবনের দায় মিটিয়েছে, তারা কেন এ টুকু বুঝল না শহরের ভানুমতী আশ্চর্য বিবেক একদিন লোকসভায় তুলকালাম কাণ্ড করে দেবে,
রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যের স্বাস্থবতী মা লক্ষ্মীর স্মিতহাস্য প্রশ্রয়ে আদরে রিমঝিম রিমঝিম শব্দে নেচে উঠবে আবার মেশিন।
রবীন্দ্রনাথ কবি শুভ বসু নশ্বরতাকে দুয়ো দি কাব্যগ্রন্থ থেকে
ক্ষিতি মাটি জানে শিকড়ের পিপাসাতাড়িত শ্রম, ফুল ফোটাবার স্বপ্নে অধীর শাখায় কিছু উজ্জ্বল কৌতুক এনে দিতে হলে, তাকে গভীরে চারিয়ে যেতে হবে।
অপ যা দিয়েছে সমস্তই সমুদ্র দিয়েছে, একথাও ভুলে গেলে নিজেকে চেনার আশা নেই, গাছটি একথা জেনে আষাঢ়ের দিকঢাকা আকাশগঙ্গায় অবগাহনের ধ্যানে মগ্নতায় স্হির জেগে থাকে।
তেজ যখন আঙুলগুলি, হাত, গাঢ় হিম হয়ে আসে, শোণিতকণায় গর্জায় গূঢ় নিয়তির সন্ত্রাস, তখন তোমার অনন্য অগ্নির, শ্রাবণদিনেও যার শিখা নেভে না কাছে গেলে, নিজেকেই ফিরে পাওয়া উজ্জীবনে, শ্রমে।
মরুৎ আমাদের বেঁচে থাকা তোমার সৌজন্যে, তবি দিবসরজনী ঘিরে তোমার অপার ঘিরে থাকা ভুলে থাকি, প্রাণমন তোমার শুশ্রূষা গোপনে অর্জন করে, ডালপালাগুলি খেলে, কুসুমকলিতে নক্ষত্র প্রতিমা হয়ে ফোটবার স্বপ্ন দুলে ওঠে।
ব্যোম সামান্যের পরিসরে প্রাণধারণের গ্লানি ভোলাতে নীলিমা আমাদের দৈনন্দির প্রভাতে সন্ধ্যায় চুপিসাড়ে অক্লান্ত পাখার ছবি বিলি করে, পক্ষবিধুনন শুনে ফেলে, তিমিরজাতকও আজ বুঝে যায় আরো কিছু দিন আছে, যা যক্ষপুরীতে নেই, অন্য কোনখানে তবু আছে।
জীবনের কাছে নিরুপায় কবি শুভ বসু জীবনের কাছে নিরুপায় কাব্যগ্রন্থ থেকে
মানুষের কাছে, শুধু মানুষেরই সমীপে যাবার জন্য সারাটা শরীর জুড়ে টানটান হয়ে থাকে এর তৃষ্ণা।
সেই বেদনার থেকে আমাদের নিস্তার নেই এ-কথা জানার অভিশাপে গূঢ় কান্নাকণিকা, হাহাকার ধ্বনি ছড়িয়ে কোথায় উড়ে চলে যায়, দূরে চলে গিয়ে ফিরে পায় আয় ফিরে আয় ডাক।
আজন্ম এই চাওয়া ও পাওয়ার সংশয় ঘিরে রাখে এই আয়ু। সে আয়ুর জাদু যখন জীবনে নিয়ে আসে জাঁক তখনই হঠাৎ কোন অজানার থেকে ছুটে আসে অমোঘ সে তীর। আয়ু অক্ষয় এই আশ্বাস খানখান করে দিয়ে যায় যেন এক মুহুর্তে।
আমাদের এই নাছোড় নিবিড় আয়ুর শিয়রে প্রত্যেক দিন একই রোয়াবে উঠে বসবার জেদের ভঙ্গি দেখতেই অসহায় একলা সবিতা ঘুরে ঘুরে আসে নিরুপায় কোনো নিয়তিতাড়িতবৎ। . ****************** . সূচিতে . . .