তুমি চাইলে
কবি শুভ দাশগুপ্ত
তুমি চাইলে নীল আকাশ,
অনেক বেশী নীল হয়
তোমার ইচ্ছে হলেই সাগর
: ও মা, জন্মভূমি মা . . . . .
: ও মা, জন্মভূমি মা . . . . .
: ও মা, জন্মভূমি মা . . . . .
ট্রেন
কবি শুভ দাশগুপ্ত
চার বুড়ো মানুষ
রোজ বিকেলে আগরপাড়া স্টেশনের
চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে
আমারই নাম নেই আর॥
দ্রিতীয় বুড়ো ভাবে :
পূজোর সময় তখন কেমন যেতুম প্রতি বছর বেড়াতে।
বউ বাচ্চা নিয়ে পুরী, জয়পুর, আগ্রা, মথুরা।
কতকাল আর যাইনা কোথাও। যাওয়া হয় না॥
তৃতীয় বুড়ো ভাবে :
ভালই আছি। ছেলে আর ছেলের বউ যত্ন-আত্তি করে।
তবু ছেলের মায়ের ছবির সামনে দাঁড়ালেই মনে পড়ে
বড়দিনের সময় বেশ কবার নিয়ে গিয়েছিলাম ওকে
কলকাতার সাহেবপাড়ায়। ট্যাক্সি করে ঘুরিয়েছিলাম
পার্ক স্ট্রিট। চৌরঙ্গী---
কতকাল কলকাতা দেখি না। বাতের ব্যথাটাো বেড়েছে॥
চতুর্থ বুড়ো ভাবে :
কয়লার ইঞ্জিন ছিল। ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে চোখ
রাখলে চোখে কয়লার গুঁড়ো ঢুকত। তবে, ভারি
সুন্দর ছিল সেই আওয়াজ---ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক
অরুণ বরুণ
কবি শুভ দাশগুপ্ত
অরুণ বরুণ কিরণমালা
জীবন মানেই বড্ড জ্বালা
অরুণ বরুণ কিরণমালা
কেউ দেবে না ফুলের মালা
দিদি
কবি শুভ দাশগুপ্ত
তোর নতুন ফ্ল্যাট থেকে ঘুরে এসে

ঐ ফ্রীজটার কথা মা’কে বলিনি।
তোর বিবাহবার্ষিকার উজ্জ্বল সন্ধ্যায় তুই যখন
গা-ভর্তি গয়নায় অপরূপা হয়ে
ফ্রীজের মাথায় হাত রেখে হাসছিলি
তখন যে তোকে কী দারুণ সুন্দর লাগছিল---
মা’কে বলিনি সে কথাও।
বিবাহবার্ষিকীর সন্ধ্যায় তোদের আনন্দ উজ্জ্বল
এ্যাপার্টমেন্টে তুই আর জামাইবাবু যখন ঐ
ফ্রীজটার পাশে দাঁড়িয়ে হাসি হাসি মুখে
মালাবদল করছিলি---
বাবুদের রসিক বন্ধুদের অনুরোধে
আর ক্যামেরার ফ্ল্যাশ ঝিলিক দিয়ে উঠছিল
উপচে পড়া খুশির মত---
তখন, ঠিক তখনই দিদি
আমার চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠছিল
হাসপাতালের করিডোরে বাবার ভেঙে পড়া মুখ।
ভেতরে মা তখন অপারেশনের পর অচৈতন্য।
ডাক্তার এসে বাবাকে বললেন।
চোখটা বোধহয় আর বাঁচানো গেল না। তাও একবার
চেষ্টা করে দেখতে পারেন---মাদ্রাজে---যদিও সে অবশ্য
অনেক টাকার ব্যাপার!
হাঁড়িকাঠে আটকে পড়া অসহায় পশুর মত
করুণ দেখাচ্ছিল তখন বাবার মুখটা।
সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসতে আসতে বাবা
আমার কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন---
কমলাকে সারা জীবন শুধু দুঃখকষ্টই দিলাম।
সুখ দিতে পারলাম না।
আর ওর চোখ দুটোও চলে গেল।
সবই আমার কপাল।
দিদি।
অনেক দরদস্তুর চাপাচাপির পর
তোর বিয়েটা যখন আরো কয়েক ভরি সোনা আর
একটা ফ্রীজের দাবীতে
আটকে পড়েছিল অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে
বাবা তখন কাউকে না জানিয়ে
চড়া সুদে ধার করেছিলেন
অনেক টাকা।
সামান্য মাইনের প্রাইভেট কোম্পানির চাকরি করা বাবা
বেঁচে থাকতে থাকতে অন্তত একটা মেয়েকে পার করার
দুরন্ত আশায় ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছিলেন অনেকটা।
চোখের জল আর রজনীগন্ধার সৌরভকে পেছনে ফেলে
তুই চলে গেলি।
পড়ে রইলাম আমরা, মা আর আমি। আর
পড়ে রইল নগেন দত্ত লেনের অন্ধকার ঘরে

প্রেম
কবি শুভ দাশগুপ্ত
৪ঠা অক্টোবর তাদের দুজনের প্রথম দেখা হল।
তখন বিকেল ঘনিয়ে আসছে। বাতাসে শীতের আমেজ।
১০ই অক্টোবর তাদে দীর্ঘক্ষণ কথা হল টেলিফোনে।
সেদিন ছেলেটি নতুন কেনা টব’এ গোলাপের চারা লাগাল।
৩০শে অক্টোবর রেস্টুরেন্টের নিরালা কেবিনে
ছেলেটি বলল---
তোমাকে আমি ভালবাসি।

১৬ই এপ্রিল মেয়েটি বললো :
---আমার বন্ধুরা বলেছে---তুমি খুউব ভালো। অসাধারাণ, কিন্তু তুমি
সৃষ্টি ছাড়া। তোমার স্বপ্ন সব অর্থহীন।
---আমি জানি।
স্বপ্ন-টপ্ন ছেড়ে দিতে পারো না তুমি ?
---না।
---তাহলে . . . তুমি তো আমাকে হারাবে।
---তোমায় পাইনি তো কখনও!
৫ই মে ছেলেটির মস্তিষ্কে অপারেশন হল। একটু সুস্থ হতে মেয়েটি
এসে বললো :
---ভাল আছ তো ? এখন আর স্বপ্ন দেখছ না তো ?
---দেখছি। আরও সুন্দর সব স্বপ্ন।
---তাহলে তো দেখছি operationটা আদৌ সফল হয়নি!
বাড়ি ফিরে বন্ধুদের ফোন করল মেয়েটি।
বন্ধুরা একবাক্যে বলল : বাঁশি বাজানো, স্বপ্ন দেখা, সবই backdated
সৃষ্টিছাড়া। তুই আর লোক পেলি না ? তুই এত রূপসী।
তোর এত উজ্জ্বল prospect। ভালো যদি চাস তাহলো শিগগির
বিয়ে করে ফেল তোর দাদার সেই বন্ধুকে ---। উনিতো শুনলাম
কানাডাতেই settle করবেন।
. ৭ই জুলাই মেয়েটি আবার জিজ্ঞেস করলো :---
---তুমি সত্যিই কী চাও বলতো ?
---তুমি আরও সার্থক, আরও সুন্দর হয়ে ওঠো।
---ব্যাস্! আর কিছু না ?
---আর! চাই স্বপ্ন দেখতে।
---ওঃ স্বপ্ন তাহলে তুমি ছাড়তে পারবে না ?
---না।
---তাহলে থাকো তুমি স্বপ্ন নিয়ে।
১২ই আগস্ট গোলাপ গাছে ফুল ফুটলো অনেক। সেদিন দুপুরে
ছেলেটির মস্তিষ্কে আবার অপারেশন হল।
১৩ই সেপ্টেম্ব ছেলেটি মারা গেল।
১৪ই সেপ্টেম্বর মেয়েটির শুভবিবাহ সুসম্পন্ন হল কানাডাগামী
