কবি শুদ্ধসত্ত্ব বসু-র কবিতা
*
সীমা
কবি শুদ্ধসত্ত্ব বসু

আমাকে নামিয়ে দাও এখানে, বিকেলে
আমাকে নিও না আর অনির্দিষ্ট উত্তাল উজানে,
সমুদ্র কাছেই হবে, কিছু দূর গেলে
এমনি আঁকড়ে ধরবে তরঙ্গে-কল্লোলে-গানে,
আমি তার থেকে মুক্তি পাব না কখনো ;
তার চেয়ে এখানে নামিয়ে দাও, এই নদী
বহুক চিরটা কাল ধমনীতে। শোনো,---
অসীম থাকনা দূরে, নাগালের অনেক বাইরে।
নদীর এ স্বচ্ছ প্রেম, মানুষের অনুভব ছুঁয়ে ছেনে
প্রবাহিত ; তবু, তবু হায়---
নিজেকে সে টেনে
অকূল সমুদ্র চায়।
দুই তীরে এত পেয়ে,--- এত দিয়ে ভরে নি অন্তর ;
সীমা নয় অসীমেই মিলতে উত্সুক!
আমি ঠিক বিপরীত তার, পথ নয়, তাই ঘর
উপাস্য আমার, প্লেটনিক প্রেম নয়, বাস্তবতা মেনেছি যে সুখ!

.                   *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
আশ্চর্য
কবি শুদ্ধসত্ত্ব বসু

সকালে উঠুক সূর্য, পত্রে পুষ্পে কুয়াশা ঝরুক,
তবু সে আশ্চর্য নয় ? কোথাকার অমোঘ ইঙ্গিত
টুঁটি ধ’রে নিয়ে যায় জীবনের রুটির সন্ধানে,
ঊর্মিল মাটির ক্ষেতে আদিগন্ত ফলাতে ফসল,
কিংবা সাগর থেকে তুলে দিতে রোশনাই রাঙা
অথবা দুপুরবেলা ভদ্রবেশে বিকোতে জীবন---
ঘোরায় প্রলুব্ধ পথে মহাজনী কথার জৌলুষে ;---
আমার দু-চোখ থেকে মুছে নেয় আশ্চর্য দিবস!
বিকালে আশ্চর্য মেঘ রেখে যায়বিভঙ্গ বর্ণের,
আরো কত আশ্চর্যের ঢঙ তোলে সাগরের মেয়ে,---
নির্জন গাছের ভিড়ে লঘুপক্ষ হাজার পাখিরা
গানের আশ্চর্য গ’ড়ে সন্ধ্যাকাশে বাজায় কোরাস!
এরও চেয়ে আশ্চর্য দেখেছি, --- মহাজন-জহ্নুমুনি
শুষে নেয় আমাদের আশ্চর্যের ভরা ভাগীরথী!

.               *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
মাসকাবার হলে
কবি শুদ্ধসত্ত্ব বসু

একটি আশ্চর্য সন্ধ্যা অকস্মাৎ দাঁড়ালো দুয়ারে
গ্যাসের আলোয় যেন স্পষ্ট হলো গলির আঁধার,
যাই যাই করে তবু তোতলার চিলের কোঠায়
লেগেছিল পীত রোদ, অভিমানে নিভে গেল সেও।
বকুল ছড়ালো গন্ধ নিতান্ত সে অবহেলা করে,
আকাশও জোনাকি জ্বেলে ব্যঙ্গ করে গেল বুঝি এই
অনাদৃত গলিটার সরাসরি সংকীর্ণ উপরে,
ধোঁয়ার হাঁসুলি দেখি সরে গেল দূরের দিগন্তে।
প্রকৃতিও স্পর্ষ করে এই গলি এই জীর্ণ মেস---
ছ’জনের বাস-করা বালিখসা কুঠুরিতে দেখি
সন্ধ্যার আমেজ আসে, পিতলের ঘড়ার চায়েও
বকুলের গন্ধ মেলে, অকৃপণ পশ্চিম আকাশ
মুঠো মুঠো সোনা এনে জমা করে মেঘের থলেতে ;
মাসের পয়লা কাল, এ সোনার পাব এক কণা ?

.               *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
আদিতেই আছো তুমি
শুদ্ধসত্ত্ব বসু
(বিদ্যাসাগরকে উত্সর্গ করা কবিতা)

আদিতেই আছো তুমি, আছো তুমি অন্তিমে অপার
ধরতে গেলে জীবনের প্রতিপর্বে, হাতে খড়ি থেকে
অ, আ, ক, খ, কর, খল, ঘট, পট, ----এক পাশে রেখে
জল পড়ে, পাতা নড়ে----- মন্ত্রগুলি কানে এলে আর
কি এক রহস্য বাজে প্রকৃতিকে দেখা ও শোনার !
আমরা মুখোশ পরে সারাক্ষণ থাকি মুখ ঢেকে
শুষ্ক কন্ঠে নিজেদের প্রতাপ জানাতে ডেকে হেঁকে
গলাবাজি করতেই ধরা পড়ে কি ধাতু আমার  !
একান্ড ঘটতে থাকে যখনই তোমার কাছে আসি
বিশ্বের দর্পণ তুমি, তোমার ও চোখের দৃষ্টিতে
তাবৎ মানুষ দেখি ধরা পড়ে মুহূর্তে চকিতে
প্রতিফলিতেরা শুধু নত মুখে প্রচন্ড বিশ্বাসী-----
আমরা যে কত ছোট ---- সাগরের দরাজ আর্শিতে
বুঝে নিই | অন্ততঃ এ জন্যে তাই জানাই প্রণাম !

.               *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ছায়াশরীর
কবি শুদ্ধসত্ত্ব বসু
(কবিতাটি পর্বান্তর পত্রিকার ২৭.১.২০১১ তারিখের সংখ্যায় প্রকাশিত হয় )

এখনো অস্পষ্ট তোমার মুখ
.        চারিদিকে শুধু ছায়াশরীরের ভীড়
কুয়াসার বাগান ঘিরে
.        উঁকি ঝুঁকি দিয়ে যায় কখনো জোনাকী

তোমার মুখের প্রতিটি বিন্দু ধরে ধরে
.        আমি পেয়েছি কত দীর্ঘ পথ
.                কত এলোমেলো স্রোত
.                        স্রোত ভেঙে তুলে এনেছি
.                                রহস্য আলো . . .

ছায়াশরীর, নাগপাশ, স্তব্ধতা
.        এখনো পরস্পরের খুব অচেনা নয়

শিকড়ের নিম্নমুখী টানে গাছেরা
.        আজও আলোকমুখী

.          *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর