কবি শ্বেতা চক্রবর্তীর কবিতা
*
চৈতন্য
কবি শ্বেতা চক্রবর্তী

সেই এক মহালয়া ভোর---
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ এসে দাঁড়ালেন রমেশ পালের
.                                স্টুডিয়োয়,
একজন মন্ত্রে মন্ত্রে অশ্রুজলে কাতর হচ্ছেন,
অন্যজন তুলি হাতে মাকে রং করছেন এমনই
.                                সেকাল।
কে বেশি আনন্দ পেল ? আপনি না আমি ?
বীরেন্দ্র যেমন বলে রমেশের চোখে হাতছানি ;
কে বেশি দুঃখ পেল ? আপনি না আমি ?
আমি! আমি! আমি! আমি!

দু’ শিল্পীর গলার জোরেই হচ্ছে দিন
কুমারটুলিতে আর পটুয়াপাড়ায়,
চাঁদমালা চাঁদমালা চাঁদমালা দিয়ে

মালা গড়ে দিতে পারলে
দেবী আর হাতে ধরবে না, চাঁদমালা
.                                হবে
গলায় দুলবে রূপময়ী ;

দু’ শিল্পীরই প্রেমিকার নাম মৃন্ময়ী!

.         *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ঠাকুরঝি
কবি শ্বেতা চক্রবর্তী

সন্ধ্যায় জেগেছে। একবস্ত্রে ফেলে এলে শীতকাঁথাখানি,
তারার মতন আলো ছিল, ভাল ছিল--- তবুও চাঁদের মতো
অর্থবহ হতে তো পারলে না স্বামীর দেবতার কাছে।
মুখ দেখা---ওরই মধ্যে নিহত নির্মল
---লোকে বলে ; বলুক গে---পেছনে অনন্ত পথ,
সামনে প্রান্তর ; ঝলমলে পোষাকের মুগ্ধ কবুতর,
পদপ্রান্তে ঝোপের মতন পাকুড় শাখার আলো হাতে
যে দাঁড়িয়ে---পথে দেবতা!

.         *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
জোব চার্নকের বিবি
কবি শ্বেতা চক্রবর্তী

কালী, কলি, ঘোর কলি কলকাতা তার নাম
শুকনো পথের মোড়ে মোড়ে ঝিনুক কুড়ালাম

হায় ঝিনুক, যায় ঝিনক মুক্তো কোথা পাই
কোম্পানির আড্ডা বসে বৈঠকখানায়

কাউন্সিলের মিটিং চলছে, সেক্রেটারির হাতে
আরক নামের মদের পাত্র, মাছি বসছে তাতে

তোপধ্বনি পড়ল ঘরে, কারণটা কী---হায়!
পাশের ঘরে বাঙালি মেয়ে একমাথা চুল ছায়

কে দেখেছে কে দেখেছে চার্নক দেখেছে
সোনার ঝাঁপি হাতে ছিল ছুড়ে মেরেছে

পরের কথাটা ক্যালকাটা, খাল কেটে কুমির
চিত্পুরের মোড়ে কমছে সতীদাহের ভীড়

.           *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
নীলা
কবি শ্বেতা চক্রবর্তী

সমস্ত পুরুষ ঘেঁটে যদি একজন পুরুষ পেতাম
যত বিষই থাক তার
দুধকলা দিয়ে পুষতাম!

রাত্রিবেলা চুপি চুপি ঘরে ঢুকে
অন্ধকারে ঝাঁপি খুলে ডাকতাম--- আয়
সে আসত, ফোঁস ফোঁস--- রাত্রি ঘুমোত চারদিকে ;
ভোরবেলা লোকজন ঘর ভেঙে দেখত
আমি নীল, ঝাপি খোলা ;

প্রেমিক গিয়েছে চলে, যেটুকু দেবার তা-ই দিয়ে
‘বিয়ে কবে হয়েছিল ?’ সকলের চোখে প্রশ্ন--- ‘হুঁ’!
নীলা সয় না সকলের, নীলার কি সকলকে সয় ?

.              *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
পরমেষু
কবি শ্বেতা চক্রবর্তী

ও আমার শান্ত অধ্যাপক---তপস্যা ভঙ্গ করতে কতবার ব্রত
.                                                রাখলাম
ফোনে ফোনে সুধাধারা গড়িয়ে দিলাম কানে কানে
কাকাতুয়া কাকা বলে একবারও কেন যে ডাকে না সেটা
হয়তো দুপুর জানে, রাত্রি জানে কিছু
বুঝি যে, বিব্রত করছি--- ছাত্রীটির জন্য আপনার মায়া হত খুব
সলগ্নকুমারী আসত হিড়িম্বার মতো থপথপ
রিল জানি গড়িয়েই যেত, শুধু সুতোর মুখের দিকে
আমার একান্ত লালা, আমারই হাতের ধরা উন্মাদিনী সূচ

.                *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কাজল
কবি শ্বেতা চক্রবর্তী

পোড়ামুখ দেখাবে না বলে
উপুর হয়েছ আর রাতে জেগে আছ ; রাত ?
কাজলের কান্না শোনা যায়
সিঁধেল চোরের মতো দেয়ালের নীচে শুয়ে
শরীর ভরিয়ে দেয় চোখ আর চোখে একাকার
কাজল : সম্ভ্রম নেই, বোধবুদ্ধিহীন
যা পারে তা কালি করে
.                        এমনই পাগল!

.          *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সরস্বতী
কবি শ্বেতা চক্রবর্তী

‘ওরে হাঁদা বোকা ছেলে
কবিতাকে ভালবাসলে সন্দেশও ছেড়ে দেওয়া যায়’

ও ভোলাময়রা, ও সরস্বতী নদী
কোশাকুশী ডোবায়নি বলে কেউ
এত শ্রোত একেবারে বন্ধ করে দিলে!
গঙ্গাজল সইও তোমার
জোড়াব্রিজ বুকে বেঁধে নিয়ে
রাত্রিবেলা কেঁদে ফেরে

নদে শান্তিপুর যত খেউড়ে মজেছে তত তুমি
পয়সা পেয়েছ আর রাত্রিশেষে পতঙ্গের মতো
সরস্বতী নদীতীরে অঝোরে কেঁদেছ
সরস্বতী ধীরে ধীরে লুপ্ত হয়ে গেছে!

.          *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
রামপ্রসাদী
কবি শ্বেতা চক্রবর্তী

দরমার বেড়া ধরে আবার যে দাঁড়াবে কবে
কিছুই জানব না তুমি কে---
বেড়াগুলি ঠিক করবে, বিনিময়ে গান গাইব আমি
হাসবে মোহন হাসি
বিনিময়ে সেই রাত ভালই কাটবে
শকুন, শেয়াল সব, সিঁধচোরও
ফিরে যাবে ঘরে ;
ভোরবেলা বুঝব, তুমি ঠকাতে এসেছ বন্ধু
বন্ধু, কিন্তু মায়ের মতন!

.          *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর