কবি সুব্রত রুদ্রর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
তোমার চোখের পাতাছোঁয়া হাওয়া

তোমার চোখের পাতাছোঁয়া হাওয়া
.                        আমার কাছে আসে |
যে পিঁপড়ে পায়ের পাশ ঘুরে গিয়েছিল
.            সে আমাকে বলে , তুমি কিভাবে
.                         পা ফেলো , কোথাও দাঁড়াও |
সন্ধে হবার আগে কখন আকাশের দিকে একবার
.                      তাকাবে, আমি আকাশ দেখলে বুঝতে পারি |


তুমি ব্যথা পেলে আমি টের পাই |

.                   ****************                                                            
উপরে   


মিলনসাগর
*
আমার আর কেউ নেই

আমার আর কেউ নেই, কেবল তুমি আছো |
চোখ বুজলে তুমি, চোখ খুললে তুমি
.                   বুকে দাঁতের মালা বসেছে |
স্নানের সময় মুখে লাগলে সাবান
.                    মনে হয় তুমি তেতো  |

.                   ****************                                                            
উপরে   


মিলনসাগর
*
জ্বালামুখী

সংসারের অকল্যাণ হবে মাকে ধরে মারলে
মাকে আর মেরো না, দোহাই,  তোমাদের পায়ে ধরি
মায়ের দিকে ওভাবে তাকিও না

ছেলেমেয়েকে যতই কাছে পেতে চাক মা, তারা থাকবে না

--- জ্বালামুখী জননী, উদ্ধার পাবে কী ক’রে  ?
.   বছরের পর বছর কেটে গেল, কত দিন যে গেল  |
.   ছেলের আসল দাঁত গেল আমার নকল দাঁত
.   নাতনির দুধ উথলেছে
.    কোথাকার আপাদমস্তক ভিখারিনী দরজায়
.    কোলের ছেলেমেয়ে ভিক্ষে চাইছে-----
.    এখন চতুর্দিকে শান্ত পাগলাগারদ

.                   ****************                                                            
উপরে   


মিলনসাগর
*
বড়ো বাড়ি

দেশ তো একটা বাড়ি যেখানে আমরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারব
আমাদের যেমন নিজেদের বাড়িতে নিশ্চিন্তে থাকি
দেশ মানে তো আর কিছু এইরকম একটা খুব বড়ো বাড়ি
আমরা এক ঝাঁক যাই, এক ঝাঁক ফিরে আসি ভোর হতে না হতেই

.                   ****************                                                            
উপরে   


মিলনসাগর
*
ঢাকা-কলকাতা

মা বাপ বাদ দিয়ে লেখা ?   সে  আমি পারব না-----
মা বাপ টাটকা জল-পোশাক পরা যায় না  |

স্বাস্থ্য ফেরাবার জন্য আমি মা বাপের প্রেম শুরু করি
খালি  না না বলতে পারি না  |
একটা হ্যাঁ বলতে পারি মা বাপ

মা বাপ এক হবে কিনা  ?  কার স্বার্থে ?
মা বাপ এক হ’লে আমি আর খেতে পাব না  ?

.                   ****************                                                            
উপরে   


মিলনসাগর
*
জ্বর

জ্বর আসছে , প্রিয় বলরাম
ধুইয়ে দাও
সবাই সবাইকার বন্ধু জলপটি

শুধু দেখতে পাব, দেখতে কার না ইচ্ছে হয়
--- মুক্তোর মতন আত্মীয় বৃষ্টি
--- ধাক্কা দেওয়া ঝড়
--- সীমা ছাড়িয়ে যায় আকাশ
---- কিছুই চায় না কিছু মানুষ
--- যাদের কোনো চোখ নেই , কেঁদে ফ্যালে ঝরঝর ক’রে
----মৃতদেহ টেনে নিয়ে যায় হরিনাম
----ছেলেমেয়েদের মেলামেশা
--- ওপারে ধানক্ষেত
সবাই সবাইকার বন্ধু জলপটি

.                   ****************                                                            
উপরে   


মিলনসাগর
*
মাথা

গোত্র আর ধর্মে তুমি পাহাড়
চূড়া তোমার আকাশ ছুঁয়েছিল |

যারা বরাবর বামন দেখেছে দালাল দেখেছে,
.          তারা জানে না
.          আত্মহত্যার এক রকম অহংকার আছে ;

গলা তুলে যে কথা বলে
.           ইচ্ছেমতো সে নিজের গলা
.           ছিঁড়ে নিতে জানে ধড় থেকে  |

.           ধড় দেয়, জ্যান্ত মাথা দেয় না  |

.                   ****************                                                            
উপরে   


মিলনসাগর
*
স্মৃতিসভা

আমি শান্ত হ’য়ে গিয়েছি
মধ্যরাতের মদে;
এতে আমার অনেক সহ্যশক্তি বেড়েছে |
এটাই একটা ভালো লক্ষণ  |

‘আমি একজন স্বাধীন লেখক’
শুধু এই কথাটা বললেই তো
অনেক কথা বলা হ’য়ে গেল
আজ এই বাংলা দেশে ;   মানিকবাবু ?

.                   ****************                                                            
উপরে   


মিলনসাগর
*
সুদর্শনের শরীর

অমাবস্যার রাতে সাদা থান পরে চারু মজুমদার
ধানক্ষেতের আল ধরে মার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন
তিনি কেবলই যাচ্ছেন আর ফোঁটা ফোঁটা
রক্ত পড়ছে

মা তাকিয়ে আছেন দরজার দিকে
পৃথিবী কী যেন বোঝাচ্ছে |  তুমি শুনতে পাও ?
ফুল ঝরে পড়ার অনেক কথা
পৃথিবী একা কতক্ষণ জেগে থাকবে  ?

তুমি পৃথিবীর কাটা  ঘাস নও,
তুমি পুরনো কাস্তে নও,
তুমি পৃথিবীর খুলে বলবার সময়, তুমি তৈরি,
তুমি মুহূর্ত

তুমি ভারতবর্ষ নও,  ভারতবর্ষের জেল একটা
ছোট্ট খাঁচা পাঁচ ফুট চওড়া কাগজ
তুমি ফুলের গায়ে মাখা রক্ত
হাওয়া দিচ্ছে, মনে থাকে যেন তুমি সুদর্শনের শরীর |

.                   ****************                                                            
উপরে   


মিলনসাগর
*
মেঘবৃষ্টি


অন্ধ কিশোরী বলছে অন্ধ কিশোরকে বৃষ্টি হ’লে জানিস অদ্ভুত একটা কান্ড হয়
আমার গাছগুলো ধক্ ক’রে খানিকটা বাড়ে
রোজ জল দিচ্ছি তাতে কিছু হয় না তাতে একটু বাড়ে
বৃষ্টির জল পেলেই চট ক’রে বেড়ে যায় খাবার পাক আর না পাক
শুনে অন্ধ কিশোর বলছে, তোকে ছুঁলেই ধরতে পারি কখন আসবে মেঘের ডাক


.                  
      ****************                                                            উপরে   


মিলনসাগর
*
ছেলেমেয়ে

বাতাসমেয়ের সঙ্গে সুগন্ধছেলেটির খুব ভাব
যত কাছে হয় তারা দুটিতে, তখন অন্তরে অন্তরে
একরকম ফুল ফোটে, ফুলের নাম চন্দ্রপ্রভা তার পাপড়িগুলি বাঁকানো
যেন ছোট্ট টিয়ার ঠোঁট
যার অন্তরে যেমন রঙ সে রঙ পায় চন্দ্রপ্রভা , তবে তার
শাদাভাব চোখে পড়েছিল আমার
একটি ফুল দুটি ফুল ওদের স্ত্রীপুরুষদের আর আলাদা ক’রে
চিনতে পারা যায় না

বাতাসমেয়ে না থাকলে সুগন্ধছেলে নিজেকে
বুঝতে পারতো না
সুগন্ধছেলে আবার বাতাসমেয়েকে একটা চেহারা দিচ্ছে
বাতাসমেয়ে সুগন্ধছেলেকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে ব’লে
বাতাসমেয়ে তার নিজের একটা চেহারা পাচ্ছে
বাতাসমেয়ে একা থাকলে তার কী হ’তো, তার যেন রূপ থাকে না
সুগন্ধছেলেটি তাকে রূপ দিচ্ছে
পিঠের পালক প্রেমে উড়ছে আর উড়ছে আয়ুর সঙ্গে
বাতাসমেয়েটি শূন্যতা পছন্দ করে না
কোনো জায়গায় শূন্য এসে গেলে সে ধেয়ে আসে
জড়িয়ে ধরে


.                        ****************                                                            
উপরে   


মিলনসাগর
*
তপস্যা

যুগ যুগ ধরে তোমাকে দেখছি
আর আমাকে হারিয়ে মিশে গেছি জনস্রোতে

রাধার যুগে জন্মে তুমি হয়েছিলে রাধিকার ধাইমা
ধোপাপুকুরের পশ্চিমে ননুয়ার মাঠে তুমি ধানের কচি চারা বুনেছিলে
গান গেয়ে গেয়ে রামীর বোন হ’য়ে
কষ্টহারিণীর ঘাটে তুমি ছিলে মনকষ্টের মেয়ে
সে ঘাটে স্নান করতে করতে এক জীবন চলে গেল তোমার
মা গঙ্গা কষ্ট হরণ করেনি
বিধবা হয়ে কতকাল এঁকেছো স্বর্গের ঘরকেনা
মরার পর বৈকুন্ঠে নিজের ঘর পাবে
এখানে আমার ঘর থাকতে কোথায় যাও ?

আমি তোমার চোখের আবেগ কান্নারূপের কারখানা
সারারাত হেমন্তের আকাশে আমার প্রদীপখানি উঁচু আকাশে তুলে
তোমার আরতি করেছি
মাঠে মাঠে ধান পাকতে শুরু করছে তুমি রাস্তা চিনে আসবে ব’লে
তোমার পুজোর কোনো ফুল পাইনি খুঁজে
সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলিতে একটিও পাতা নেই তারা
ঝড়ে শিলাবৃষ্টিতে উড়ে গেছে
ফুলের অভাবে পাতায় ডাকা হ’লো না আমার
গাছে ফল দেখে মনে হয়নি তাকে পাড়ি
ফলের পরিণাম জানিনি শূন্যহাতে ঠায় দাঁড়িয়ে
তোমার পুজোয় হাতে আমার ফল নেই
কুশাসনে তোমার ধ্যান করবো ভেবে যেই কুশের কাছে গেছি তাকে ছুঁতে
সোজা ডাঁটা সরুপাতা দীর্ঘায়ু কুশ আমাকে
আরো জন্ম জন্ম তপস্যার শিক্ষা নিতে ব’লে সরে যায়

.                        ****************                                                            
উপরে   


মিলনসাগর
*
মায়ের শেয়ার

দেশ যে আলাদা হয়ে গেল দেশের ছেলে থেকে |
---- আমাকে তুমি বার বার শাদা পৃষ্ঠায় নিয়ে এসে কেন জেরা কর ?
কত জন্মিল বিষ কে রাখে তার পরিমাণ

বাড়িতে তুমি যে ঘরটায় থাক, সেটা
তোমার মায়ের শেয়ারের |
---- কোন্ মা  ?
---- তোমার বাংলা

মা নিজে ডাকল  |   নিজের ঘরে
বিছানা ছেড়ে মেঝেতে শুলো

বাংলা গাছের সারি বাংলা ধানের গোলা,  গাই গরুর গোবর

গোবর গুহ তুমি কবে থেকে ভবিষ্যতের
চিন্তা করতে শিখবে ?

--- কারু কারু ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়
.   অনেক রাত থেকে শুরু করা দরকার  |

--- বাংলার সবার ইচ্ছামৃত্যু  |

.                        ****************                                                            
উপরে   



মিলনসাগর
*
সবকিছুর ওপর

আমি কবিতার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম  |  যেভাবে কবিতা
তার নামসমূহ ও গুণাবলীর সঙ্গে বিরাজমান এবং মনে মনে
তার যাবতীয় আদেশ ও বিধান মেনে নিলাম জীবনে  |

আমি কবিতা ও তার শব্দগণ, তার থাকার সব বইগুলো তার
লেখকগণ, বিচারদিবস, ভাগ্যের ভালোমন্দ কবিতার তরফ থেকে
হওয়া এবং মৃত্যুর পর জেগে ওঠার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করলাম  |

কবিতা ছাড়া কোনো প্রভু নেই

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,  কবিতা ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই,
কবিতার কোনো অংশীদার নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি,
আমি তার দাস ও প্রেরিত |

সমস্ত সাম্রাজ্য তার |
সমস্ত প্রশংসা কবিতার |
জীবনদান করে মৃত্যুদান করে
তার হাতে সমস্ত কল্যাণ এবং সে সবকিছুর
ওপর |

.                        ****************                                                            
উপরে   



মিলনসাগর
*
ভিটে

সম্পত্তি বলতে বই
দেয়াল জুড়ে বাবা সিমেন্টের তাক ক’রে দিয়েছিল
খোকা বই রাখবে

ভিটেয় এখন বড়ো ফ্ল্যাট বাড়ি

একটা তলায় দুভাগ---- এক ভাগে মেয়ে অন্য ভাগে আমি
তৈরি  ব়্যাক্ ট্যাক্ না থাক মেয়ের মেঝে তো আছে
বাক্সবন্দী বইয়েরা শ্বাস ফেলে বাঁচবে
থাকছে না কেউ ওরা থাক
জানি স্বদেশ ছাড়া মেয়ে ফিরবে না এখনই
ফোনে নিশ্চিন্ত হয়ে বলেছিলাম মাঝের পাঁচিলটা এখন
দিতে বারণ করেছি  |
ওদিকে কিছুক্ষণ চুপ |  লাইনটা কি কেটে গেল  ?
চেঁচিয়ে বলি, কী বলেছি শুনেছো  ?
রাগী স্বর ব’লে ওঠে, কেন বারণ ক’রেছো, কে বলেছে তোমাকে,
পারবে পরে টাকা খরচ করতে ?

না এখনই পাঁচিল তুলে দাও
আমার অংশ আলাদা ক’রে দাও  |

মনে হ’লো খাওয়ার থালার মধ্যে পাঁচিল তুলে দিতে বলছে কেউ |
খাবো কেমন ক’রে আর কী খেয়ে বাঁচবো
শুধু ভাত-তরকারি খেয়ে কি কেউ বাঁচে ?
সে ভালোবাসা খায় বিশ্বাস খায় চেটেপুটে,
কেবল অবিশ্বাসে, ভয়ে, সন্দেহে দূরে দূরে স’রে যাওয়া
নিঃস্ব ক’রে দেয়

বাবার সেই জীর্ণ বাড়ির ভিটেমাটিটুকুতে
দাঁড়ালে রাজা মনে হ’তো
আজ বড়ো বাড়ির পাঁচিল তোলা ছোটো ঘরে দাঁড়িয়ে
মাছির মতো লাগে
জেগে জেগে দমবন্ধ হয়ে আসে
পাঁচিল তুলে দাও পাঁচিল তুলে দাও
বুকের ওপর যেন গেঁথে চলেছে
এক দীন কবি চেয়েছিল এন আর আই মেয়ের কাছে
মাঝের পাঁচিলটা এখন মুলতুবি থাক
তারপর সবই তো তোমার

সেই অবিশ্বাসী গলা  :  পাঁচিল তুলে দাও
পাঁচিলটা তুলে দাও এক্ষুনি
বুক ফেটে মুখে খই  ফুটলো আমার
কনক ধানের খই ছড়িয়ে দিলাম
নীচু হ’তে হ’তে তোমার কাছে ঝাঁটার ডগায় এসেছিলাম
একটু ঠেলে  চৌকাঠ পার ক’রে দিলে  |

আমি তো আমার বাবার বাড়িতে ফিরছি-----
আজি শুভদিনে পিতার ভবনে
আনন্দসদনে চলো যাই  |

.                        ****************                                                            
উপরে   



মিলনসাগর
*
ধুনি

তেঁতুলগাছের ছায়ায় বসে পড়াতাম তোমাদের
আমার ঘরনী তেঁতুলপাতা সেদ্ধ ক’রে দিত
অন্নের বদলে কোনোদিন তাই খেতাম
নিজেরা পাতার কুটির বেঁধে বাস করতে এখানে
তেঁতুলপাতার ঝোল খেয়ে খেয়ে
থানকুনিপাতা খুঁজে আনতে ছুটতে
সেই পাতাবাটা উষ্ণ সামান্য অন্নে মেখে তৃপ্তি পেতে
জঙ্গলের আমরুলি শাকে গুরুমায়ের হাতের ঝোল হ’লে নেচে বেড়াতে |

লোক চক্ষুর আড়ালে
জীবনধারা বইয়ে দিলাম নিজের বিশ্বাসে |
মানুষ করি তোমাদের
অন্যের অর্থে নয়
কারোর দান নিলে
বিনিময়ে আনুগত্য দিতে হয় |

টোল বেঁচে থাকলে আমার মরণ নেই
এক যাবে এক আসবে
এই আশায় তোদের জন্য ধুনি জ্বালিয়ে বসে আছি
আজ আমি আছি কাল তোরা কেউ বসবি তেঁতুলগাছের ছায়ায়  |

গাছ কি কাটা পড়বে ততদিনে
ছায়া কি অদৃশ্য হয়ে যাবে মাথার ওপর থেকে ?
টোল কি উঠে যাবে
.             বন কেটে সব বসত হবে ?
নির্জনের তপস্যায় আর কি কেউ বসবে না ?
ধুনি জ্বলবে অন্য কোথাও অন্য কোনোভাবে
সেই আলো দেখে ছুটে আসবে কেউ কেউ |

.                        ****************                                                            
উপরে   



মিলনসাগর
*
দেহদান

কবিতা লিখে এজীবন কাজে লাগলো না
মরার পর এদেহ যদি কাজে লাগে
দেহটাকে ভালোবাসি সাজাই গোছাই আদরযত্ন করি

যতই বয়েস বাড়ে ভাবি
---- দে দিয়ে দে, জীবনে কিছুই দিলি না অন্তত তোর
.   শরীরটাই দিয়ে যা

ঘরে বসে শুধু কবিতা লিখে কিছু হয়নি তোমার
দেহটা দিলেই তোমার নিচ্ছে কে ?
ফুটিফাটা জীবনের শরীর মজুত রাখার খরচা অনেক
এত শব আসে ওয়ারিশ বেওয়ারিশ -----
----- এখানেও আবার নিজের বই ছাপার মতো খরচ ?

তাকিয়ে দেখি মড়ার পাহাড়
আমার দেহ কি পাহাড়ের এক টুকরো হবে ?

এক কবি দেহ দিয়ে গিয়েছিল
জানতে চাই কী হ’লো তার
কোন কিশোরী চোখ পেল,  কোন যুবক শিখলো
.                                 রুগী বাঁচানোর কায়দাকানুন
না কি অবহেলায় খরচের ভয়ে,
লাশ আবারও

মড়ার পাহাড় থেকে উঁকি মারে বুড়ো কবি অরুণ মিত্র
তার কী হ’লো

আমি ভাবি দেহের কোনো গতি নেই
পোড়া নেই মাটি নেই দানও নেই
নিজে নিজে ক্ষয়ে যাওয়া ছাড়া |

.                        ****************                                                            
উপরে   



মিলনসাগর
*
উত্তরাধিকারী

বাড়ির ছাদ দেয়াল ফাটিয়ে বট-অশথের গাছ
ছাদের অর্ধেক জুড়ে পাতার বাহার ছড়িয়েছে  |

বটপাতার পুরুষগম্ভীরভাব তার পাশে
অশথপাতা হালকা ছিপছিপে লাবণ্যময়ী
বট-অশথের বিয়ে দিলে পুণ্য হয়
ওরা কারো পুণ্য অর্জনের অপেক্ষা রাখেনি
নিজেরাই বিয়ে ক’রে জড়াজড়ি ক’রে ঘর সংসার পেতেছে

বট-অশথের মিলনে অশথের এক শিশু জন্মালো
জন্মেই সে বড়ো বড়ো চোখ মেলে তাকিয়ে
বাবা মার চোখে বিনিময় করে তাদের ভাষা
তার একদিন বয়েস বাড়ার পর সে টের পায়
তাদের ভাষার সঙ্গে আর কোন্ এক অপরিচিত ভাষা
জন্ম নিচ্ছে-------
ছাদের হাওয়ায় পাশের বস্তিতে
কোলাহলের মধ্যে
যেন কিছু আবিষ্কার করছে-----
ফাঁকা বাড়িতে ইঁদুরের দৌড়োদৌড়ি
টিকটিকির নিঃসঙ্গ ডেকে ওঠা-----
তার কৌতূহল বাড়িয়ে দিচ্ছে
সে ভাবছে যে  ছাদের ওপর জন্মেছে
তার নীচে কোনো রহস্য আছে-----
শেকড় ঢুকিয়ে দিয়ে দেখতে হবে

প্রতীক্ষায় বছর ঘুরে যায়

একদিন সত্যি ঢুকে পড়ে ছাদের ভিতর দিয়ে অন্ধকার
.                                 স্যাঁতসেতে দমবন্ধকরা ঘরে

শেকড় দেখতে পায় নষ্ট হওয়া পচে যাওয়া ফুলে ওঠা
রাশি রাশি কবিতার বই পান্ডুলিপি ছেঁড়াপাতা খোলা কলম
হাতলভাঙা একটা ইজিচেয়ার
বুঝতে পারে কেন সে গাছের ভাষা ভুলে গিয়ে
অন্য ভাষায় ভাবে

এঘরে এক কবি ছিল
সেই কবি কি ভাবতো মানুষই কবির উত্তরাধিকারী
কবির উত্তরাধিকারী তো একজন কবিই
যেমন আমি একটা গাছ  |

.                        ****************                                                            
উপরে   



মিলনসাগর
*
মা

কচি কচি কুসুমপাতার বরণ বাংলা ভাষা
তাকে ছাড়া আর কোন্ ভাবে সান্ত্বনা দিতে জানি আমি
দই মিষ্টি চিনি মিষ্টি
সবচেয়ে বেশি বাংলা মুখের বচন

সন্ধেবেলায় মশারি টাঙিয়ে দিত মা আমাদের মশা কামড়ানোর ভয়ে
আমাকে পড়াতো মা তখন
মশারির ভিতর সবুজজামা গায়ে কিশলয়, হলুদ পোষাকে নব গণিত
আবিররঙা ধারাপাত শেষ ক’রে পাশে বসে থাকা
মায়ের কোলে গল্প শুনতাম
বাঙালি মনীষীদের গল্প

যেভাবে গড়তে চেয়েছে মা আমাকে
আমি হয়ে উঠিনি
পাওয়ার মধ্যে মুখের বচনটি শুধু পেয়েছি

মামার বাড়িতে থাকতাম
মামার বাড়ি ছিল কাঁন্দিতে, বাড়ি থেকে আধ মাইল
হাঁটলে রামেন্দ্রসুন্দরের ভিটে
মা বলেছিল---- তোর জন্ম দোসরা ভাদ্র রামেন্দ্রসুন্দরের জন্ম
তার তিন দিন পর, একদিন তোকে ভিটেটা দেখিয়ে আনবো |
----- রামেন্দ্রসুন্দর কে মা ?
------এক বাঙালি
রবি ঠাকুর বলেছিলেন তাঁকে তোমার হাস্য সুন্দর
.                               তোমার ভাস্য সুন্দর
শুধু ভালো নাম হ’লে হয়না খোকা, স্বভাবে সুন্দর হবি
এই যে তোর সুব্রত নাম,  আমার মা রেখেছে
তুই এমন হবি ব’লে তো

তারপর এক বর্ষার বিকেলে মা মেঘের দেশে চলে গেল
আমার সঙ্গে দেখা হয়নি
আমি বালক কলকাতার রাস্তায় আর পার্কে শোভা বাড়াই গাছেরতলায়
একটা মায়ের মতো গাছকে খুঁজেছি হারানো মায়ের আশ্রয় ভেবে
একদিন পেয়ে গেলাম হৃৎপিন্ডের মতো দেখতে এক গাছের পাতাকে
যেন মায়ের পানপাতাটি
.                  উড়ে উড়ে এসে পড়লো কোলে
ডালপালার ডগা থেকে পাখিদের ছানাগুলো
.         পাখা নেড়ে বলল -----
.                না জানি কী সরল সত্যে মায়ের প্রাণ যায়
.                এই নাও
.                তোমার ওষুধ গাছের পাতা

.                        ****************                                                            
উপরে   



মিলনসাগর
*
ওই দেখা যায় বাড়ি আমার

উত্তরমুখো দোতলা বাড়ি | নামেই দোতলা, বাড়িটার
কোনো ছিরিছাঁদ নেই | মা--র তো
অভিযোগের অন্ত ছিল না  বড়োলোক বাড়ির মেয়ে | বলতো
এ বাড়িতে সবাই পয়সাকড়ি বলে, আমরা বলতাম
টাকাকড়ি | কথা দিয়ে একটা বাড়ির হাল বোঝা যায়  |
ইংরেজি পড়া মেয়ে বলতো , ক্রিপিল হাউস | দিদি বলতো বাপি কারো কথা শোনেনি
----- না হ’লে এমন বাড়ি হয় |
শুধু বাবা আর আমি ছিলাম বাড়ির অন্ধ ভক্ত |  বাবা তার
সারা জীবনের সঞ্চয় ঢেলে তার ছোট্ট দোতলা বাড়ির
নিজের একলা থাকার দক্ষিণের ঘরে বেশ গর্ব নিয়ে
বেঁচে থাকতো  | মা--র ঘর আলাদা, দিদির আলাদা আর আমি
নীচের তলার একছত্র অধিপতি | বাড়িটা যে হতশ্রী
বিবর্ণ হাজার একটা অসুবিধে কিছুই মনে থাকতো না | প্রায়
দেড়কাঠার ওপর বাড়ি আর দেড়কাঠার ওপর সামনে বাগান
দক্ষিণ কলকাতায় এমন এক অসম্ভব বাড়ি
আমার বাবা বানিয়েছিলেন আস্ত একটা বাগানওয়ালা বাড়ি | ফ্ল্যাট বাড়ির
জমানায় |
পাম্প ছিল না বাড়িতে | বড়ো বড়ো বালতি ক’রে দোতলায় নিজের জল তুলে নিত বাবা |
বাবার বয়েস বাড়ে | ধীরে ধীরে ছোটো হতে থাকে বালতি |
তখনও ঠিক বুঝিনি বাবার
চলে যাবার সময় হয়ে এসেছে |
একদিন বেশ রাতে হঠাৎ
দোতলায় উঠেছি খাবার জলের বোতল নিতে |
বাবা আমাকে দেখতে পায়নি | পিছন ফিরে
ঘরের দেওয়ালে ঠাকুর প্রণাম করছিল ঘুরে ঘুরে | দাঁড়িয়ে পরলাম |
খালি গায়ে দীর্ঘ রোগা জীর্ণ শীর্ণ বাবা, এককালে ছিল
সিনেমার নয়কের মতো | আজ শির ওঠা চামড়া নরম হয়ে ঝুলে পড়েছে লম্বা
লম্বা আঙুল | দুহাত জোড় ক’রে বলে চলেছে ঠাকুর আর পারছিনা
আমাকে তুলে নাও |
খুব নিভৃত উচ্চারণ |  বাবাকে কখনো কারো
সামনে মৃত্যুকামনা করতে দেখিনি | আশি বছর পর্যন্ত সংসারের
জোয়াল টেনে চলেছে | মা-র সঙ্গে নিত্য খিটিমিটি |
কারো কাছে মাথা না-নোয়ানো সেই বাবা আজ আকুল হয়ে প্রার্থনা ক’রে
চলেছে ভগবান আমাকে তুলে নাও | কেউ এ কথা জানবে না, বাবার
এই গোপন আর্ত মৃত্যু কামনা আমাকে সারা জীবন কষ্ট দেবে |
আমি বাবার কষ্ট দূর করতে পারিনি |
বাবা বড়ো অসহায় | বাবা বড়ো বাঁচতে
চেয়েছিল আশি পেরিয়েও |
বাবা যতদিন বেঁচে ছিল সংসারের কাঠামোটা
বজায় ছিল | বাবা যে কত বড়ো ছাতা বোঝাই যায়নি | বরং এমন
অনেকের মনে হতো এ মরলে সংসারটা আরো একটু সুখী হবে |
আরো একটু সুবাতাস বইবে | হাঁপ ছাড়ার জায়গা মিলবে | সারাক্ষণ
ঝগড়াঝাঁটি আর নেই--নেই--এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে |
স্বপ্ন দেখেছে সবাই, বাস্তব দেখেনি |
প্রায় বিনা চিকিত্সায় বাবার মৃত্যুর পর সবার সামনে
অথৈ সংসার --- এক মুহূর্তে গভীর গর্তের মুখোমুখি আমরা |
আমি বাড়ি ছাড়া বাবা বেঁচে থাকতেই |  এবার
দিদিও চললো দিল্লি, সঙ্গে মা কিছুদিনের জন্য |
বাড়ি থেকে যাবনা ব’লে বসেছিল মা | ছোটোমাসি এসে অনেক বুঝিয়ে
রাজি করালো | স্টেশনে পৌঁছে ট্রেন প্রায় ছাড়ার মুখে
কুলি আর আমি পাঁজাকোলা ক’রে কোনোমতে ট্রেনের ভিতর
ঢুকিয়ে দিতে পেরেছিলাম মাকে

সেই মা--র কথা ভাবলেই একটা ছবি ভাসে
চোখের সামনে বাড়ি ছেড়ে চলে আসছি আমি বাড়িটায় মা একা
ঘরের জানালা ধরে দাঁড়িয়ে |
মা আবিষ্কার করেছিল বাবার বাড়ি আর
পেনশনের টাকাটাই তার একমাত্র ভরসা |  একটু হাঁকাডাকা প্রকৃতির মা
কত যে শক্ত মনের তা জানতাম না | দিদি না আমি না |
মা কারো কাছে থাকতে চায়নি |
সত্তর পেরোনো প্রায় হাঁটা চলা করতে না পারা
একটা মানুষ একা থাকার কথা ভাবে | বাবার ভিটে ছেড়ে কোথাও নড়তে চায়নি
মা | বুঝেছিল মৃত্যুরও
সম্মান আছে | ঘরে খাটে শুয়ে মৃত্যু এক, আর পরের
বোঝা হয়ে মরে যাওয়া আর এক | এই স্বাধীনতার দাম মাকে
দিতে হয়েছিল একা একা মরে | কেউ ছিল না পাশে |
খাট থেকে নেমেছিল হয়তো, গিয়েছিল বাথরুমে বা অন্য কোথাও |
ফিরে খাটের পাশে উঠতে আর পারেনি |
মেঝেয় বসে খাটের ওপর পুব দিকে মুখ ক’রে হাতে মাথা রেখে
চিরদিনের মতো ঘুমিয়ে পড়েছিল মা |
আমি পেয়েছিলাম বরফে শোয়া মাকে |

তারপর থেকে এ বাড়িটা বেশি সময়ই একা থাকে
ঘরে ঘরে ভর্তি আসবাব আর অঢেল স্মৃতি
নীচে আমার পড়ার ঘরের কত কত বই মূক হয়ে দেখে যায়
এ ওর দশা |
রোদ জল ঝড় হিম সব কিছু গায়ে মেখে মেখে
ক্লান্ত বিষণ্ণ বিধ্বস্ত বাড়িটা আমার বাবারই মতো শীর্ণ হাত তুলে
প্রার্থনা করে এবার আমাকে নাও |
এক এক বর্ষা যায় পুজো আসে ছুটি আসে
বাড়িতে ছুটে এসে দেখি আমার বাড়ি আরো বিবর্ণ
আরো মলিন হ’য়ে কষ্টে আছে |
ঘরে জল দেওয়াল বেয়ে জল, বটের
সরু সরু গোছা গোছা শেকড় ঘরে ঢুকে দখল নিচ্ছে
শুকনো গোছানো রাশি রাশি বই ছত্রাকে
ভঙ্কুর স্যাঁতস্যাঁতে মৃতপ্রায় |
বই পত্রিকার মৃত্যুমিছিল আমার বইয়ের ঘর জুড়ে
প্রবাস থেকে ঘরে আসতাম আমার একটা বাড়ি আছে ভেবে |
আজ ফিরতে ভয় পাই | একটু একটু ক’রে গড়ে তোলা
স্বপ্নের মৃত্যু কী ক’রে দেখবো | বাবা-মা-র মৃত্যু আমাকে নাড়া দিয়েছে
ঠিকই, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিণত মৃত্যু ধাতস্তও হয়েছে |
কিন্তু যে মৃত্যু সময়ের নয়, যাকে রোধ করা যেত, চেষ্টা করলে বাঁচানো যেত যাদের
তাদের অসহায় খসে পড়া ঝরে যাওয়া, ছত্রাকে ক্ষত হ’য়ে যাওয়া
বইয়ের পাতাগুলো মৃত্যুর সামনে
ঢলে ঢলে পড়ছে | এদের ভাবনা মাথার ভেতরে পেরেক ঠুকে
চলে দিনরাত | যন্ত্রণা কুরে কুরে
খায় | প্রিয় প্রিয় শরীর কুষ্ঠে গলে গেছে বুঝি
সব শেষ হ’য়ে সব নষ্ট হ’য়ে এবার এই বাড়িটার এক ভিন্ন গতি হবে |
টাকা হবে ঝকঝকে ছোটোমোটো  ফ্ল্যাট হবে | হবে হয়তো |
কলকাতার বাড়িতে প্রায় মাটি থাকে না আর আমার বাগান ভর্তি
কতরকমের গাছগাছালি | একজন বলেছিল এ বাড়ির
মাটি খুব ভাল, ফলে স্বাদ হয় ফুলে রঙ হয় | অল্প আয়াসে
মাটিতে গাছ লাগে | আমি কোনো দেশের বাড়ি ছেড়ে আসিনি | আমার
কোনো বড়ো পুকুর বাগান দেখা ছোটোবেলা নেই | আমার ছিল
এই সোনার মতো মাটিওয়ালা বাবার তিনকাঠার বাড়ি | ফলসা, রঙ্গন
লাল হলুদ শাদা জবা, জুঁই বেল গন্ধরাজ, নাম না জানা বিদেশীফুল,
হরেক দেশী লতাপাতা, কলা পেঁপে পেয়ারা, আর ছিল
বিশাল বড়ো এক বনঝাউ |
আমার  বিদেশে-থাকা বন্ধু দেখে বলেছিল ঠিক ওদেশে যেমন দেখা যায়
তেমনই দেখতে এটা এক কবির বাড়ি
ওই দেখা যায় বাড়ি আমার

.                        ****************                                                            
উপরে   



মিলনসাগর
*
প্রেম

অন্ধকারে চোখ মেলে কই অন্ধকারই দেখি
যদি আইলেন প্রেম যাইবেন কেন কাণার চক্ষু নিতে
ছোটো বাছুরের গলায় ফাঁস নিরাশ হবে তারা
গাছের নেই পাতা বেচারি পাখির নেই ডিম
ছুঁলে কেউ মরে না আর না-ছুঁলে কেউ মরে |

.          
     ****************                                                            উপরে   



মিলনসাগর
*
কৃষ্ণ আর আমি

এই যে কবিরা এত পাতার পর পাতা কবিতা লিখে গেছে
.                                                  রাধাকৃষ্ণ রাধাকৃষ্ণ
বাছবিচার ক’রে তার মোদ্দাকথা যেটা দাঁড়ায় তা হ’লো-----
প্রেম পেয়ে সুখী এক সৌভাগ্যবানের সারাটা জীবন

আজ এর মধ্যে আমি কোথায় ? কেনই বা আমি তাকে নিয়ে
ভাববো  ?
তার জীবনে একজন নিবেদিত প্রাণপ্রেমিকা আছে
আর একজন আছে তার সুখদুঃখের ঠিকঠাক বউ সত্যভামা
আর কৃষ্ণের কোনো বন্ধু নেই, তার জীবনে একটাই বান্ধবী
সে হচ্ছে দ্রৌপদী
---- আমি ভাবতেই পারি না এটা আমার জীবনে !
আর কী চাই তার পুরুষহিসেবে ?

কেমন মেয়ে পছন্দ কৃষ্ণের ?
যেসব মেয়ের নিজস্ব বুদ্ধি ছিল ব্যক্তিত্ব ছিল, যারা
স্পষ্ট বোঝাতে পারতো নিজেকে
সেইসব সতেজ নারীরা কৃষ্ণের ভালোবাসার পাত্রী
হয়ে উঠতো
---- আমি এত সংখ্যায় সুন্দরী গুণবতী বুদ্ধিমতী মেয়েদের
.    কখনো পাইনি যাদের মধ্যে থেকে কোনো বিশেষ কাউকে
.    বেছে নিতে পারি

আমি কি আদপে এসব কিছু চেয়েছিলাম
এক সামান্য মেয়ের চরণ ছাড়া ?


.               ****************                                                            
উপরে   



মিলনসাগর