শুনেছি রেলগাড়িতে জন্মেছিল সে কবি সুচিত্রা মিত্র রেলগাড়িতে সুচিত্রা মিত্র জন্মেছিলেন বলে পরবর্তীকালে তিনি তাঁর জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে নিজেরই লেখা একটা ছড়া
শুনেছি রেলগাড়িতে জন্মেছিল সে দুই পায়ে তাই চাকা সারাজীবন ছুটেই গেলাম হয়নি বসে থাকা, যাই যদি আজ উত্তরে ভাই কালকে যাব দক্ষিণে পশ্চিমে যাই দিনেরবেলা রাত্তিরে ঘুরি পুবকে চিনে, হিল্লি-দিল্লি স্বদেশ বিদেশ চক্কার আর নাইরে শেষ প্রাণটা বাঁচে চাকা দুটো কেউ যদি ভাই নেয় কিনে, প্রায়ই ভাবি আপন মনে ফুরোবে পথ কোন্ বিজনে ছোটা ফেলে ছুটির আশায় রই চেয়ে তাই নির্নিমেষ— --- চাকা লাগানো পায়ে বলেই ছুটছি
গান গান গান কবি সুচিত্রা মিত্র প্রিয় বন্ধু কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে সুচিত্রা মিত্রর একটি ছড়া
গান গান গান কেবল গান---- সুরের মাদকতায় নেশা-ধরানো গান | এক পলকেই উন্মুক্ত হয় অসীম আকাশ বিস্তীর্ণ প্রান্তর সুখে-দুঃখে জড়ানো জীবনের কত-না উপলব্ধি | বিশ্বতানে যে ধ্রুবপদ বাঁধা তাই এসে মিলে যায় জীবন গানে অথবা নিত্যপ্রবাহিত যে আনন্দধারা জীবনকে ভরে দিয়েছে কত-না দাক্ষিণ্যে কিংবা গান দিয়ে দ্বার খোলাবার মন্ত্র যার সুধানির্ঝর কন্ঠে উচ্চারিত তাকে বারে বারেই জানাই আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা | বিস্মিত সত্তা আমার খুঁজে পায় বেঁচে থাকবার আনন্দ এ গানের বাঁকে বাঁকে | বড় কাছের মানুষ তবু অনেক দূরের কারণ গানের লীলাক্ষেত্রে সে তো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে | নামেই শুধু মোহর নয় | তার গানেও লেগেছে নিখাদ সোনার ছোঁয়া আর তাই এক অনুরাগী শ্রোতার অভিনন্দন জানাই আমি তাকে |
রবির সাথে মিলন কবি সুচিত্রা মিত্র কলকাতা ৫.৯.১৯৯৬ সুচিত্রা মিত্রের গানের স্কুল “রবিতীর্থ”র সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে লেখা কবিতা
ছোট্ট শিশু এল যেদিন . আমাদের এই ছোট্ট ঘরে--- কোলে তুলে নিলাম তারে, . অনেক যত্নে, আদর ক’রে | কোন নামে যে ডাক্ ব তারে . ভেবে না পাই কূলকিনারা --- নামটি দিলেন কালিদাস নাগ, . চিন্তা-ভাবনা হ’ল সারা | রবীন্দ্র অন্বেষণে যেথায় . সবাই এসে মেলে, সেই তো আসল তীর্থস্থান, . তাই “রবিতীর্থ” পেলে |
শুধুই তো গান নয়, রামধনুর ওই নানান রঙে . কতই না সৃষ্টি ! বস্তুবাদের ক্ষুদ্রতাকে . ফেলরে দূরে ফেল---- তবেই পাবি এই জীবনের . অন্তরদৃষ্টি | . বলি, সবায় ডেকে এদিক –ওদিক – সেদিক থেকে সম্পূর্ণ মানুষটাকে দেখে . তবেই চেনা যায়— কে যে ছোট, কে যে বড়ো ? . বিচার তখন হয় | জ্ঞান-আহরণ হয়নারে ভাই . খন্ডাংশের মিথ্যে সাধনায় ! আজকে যখন একলা বসে . পিছন ফিরে চাই, পুরোনো সেই মানুষগুলোয় . দেখতেই না পাই | কালের স্রোতে হারিয়ে গেছেন . পাশেই ছিলেন যাঁরা “রবিতীর্থ”র পাঁচটি দশক . দেখলেনই না তাঁরা | জনম হল “রবিতীর্থ”র . তাঁদেরই উদ্যমে এই কথাটি থাকবে মনে, . ভুলবনাকো ভ্রমে | কতই বাধা, কতই বিবাদ, . কতই পরমাদ – ভেঙে ফেললাম, উড়িয়ে দিলাম . নিন্দা–পরিবাদ !
এখন আ-দিগন্ত পথে নেমে . চলছি দলে দলে যেথায় দূরে দূরে মিষ্টি মধুর সুরে রবির কিরণ ছন্দে ছন্দে . ঝিক্ মিকিয়ে জ্বলে! এ চলার যে শেষ নেই ভাই। এ শেখারই বা শেষ পোথা পাই? . তাই চলতে – চলতে – চলতে – চলতে . পৌঁছলো যে পঞ্চাষেতে অনেক বড় হোক সে শিশু . রইনু সেই আশেতে। যাত্রাটি তার হয়নি তো শেষ, রবিঠাকুরের পায়নি সে লেশ, . তাই আরও তাকে হাঁটতে হবে--- ওই দূর দিগন্ত দূরেই রবে--- ওখানে যে যেতেই হবে . নয়তো কেমন করে রবির সাথে . রবিতীর্থর মিলন হবে? . ************************* . সূচিতে . . .