বেগম সুফিয়া কামালের কবিতা ও ছড়া
*
ঈদ
বেগম সুফিয়া কামাল

আমার নিশীথের আধার সিন্ধু পাড়ি দিয়ে এল তরী
ফিরদৌস হতে সওগাত লয়ে গগন
কিনার ভরি
কত উত্সুক মানব মনের শান্তি কামনা লয়ে,
দ্বিতীয়ার চাঁদ অস্ত গগনে পাবক প্রতীক হয়ে।

মাহে রমজান মোবারক হোক প্রতি মানুষের তরে
সিয়ামের শেষে ঈদের খুশীতে মন আনন্দে ভরে
সাম্যের গানে আকাশে বাতাসে ঝরায়ে সোনালী আভা
উত্সব আনে মাঠে, মসজিদে, মানব হৃদয় কাবা
প্রার্থনা রত! প্রতি মানুষের তরে সুখ ব্যাথা ভার
বহন করিয়া এনেছে ঈদের ক্ষীণ চাঁদ দ্বিতীয়ার।

বার মাস ভুখা, রোজা, তার তরেএনে দিল ইফতার
হে ধনিক! তুমি আজিকার দিনে রুদ্ধ রেখো না দ্বার
মিলনের দিনে আজিকে তোমার মুক্ত হৃদয় হাতে
তুমি মুসলিম! তুমি যে মানুষ! সব মানুষের সাথে
ফিত্রাবিলায়ে, শিরিন শিরনী আতর গোলাপ বাসে
দীন বলে যারে সরায়েছ দূরে তাহারে ডাকিয়া পাশে
কর কোলাকুলি, উঠুক উজলি সিয়াম ক্লান্ত মুখে
প্রীতি মাধুরিমা, দিব্য জ্যোতি আত্মা পরম সুখে
উদার অসীম শান্তিতে ভরি এই হেলালের তলে
সব মানুষের মিলন তীর্থে মিলে এসে দলে দলে
ভুখারে খাদ্য, নিঃস্বেরে দিয়ে সঞ্চিত ধনভাগ
সব মানুষের অন্তরে আনো অনন্ত অনুরাগ।

রিক্তের মুঠি ভরিয়া উঠুক, নিঃস্ব লভুক বল
মানুষের পাশে মানুষ দাঁড়াক, আছে আছে সম্বল
একের ব্যাথার অপরে অংশ নিলে তরে লঘু ভার
হৃদয় আবার নতুন করিয়া পথ পাবে বাঁচিবার
যত ঈদগাহে জামাত জমিবে, যতেক মুসলমান
জাতির জীবনে মিলনের গানে উন্নত সুমহান।

ঐক্য, সাম্য, প্রীতি, সেবা দানে হেলালে প্রতীক করি
সারা জাহানের মুসলিম জাগো, আর করিয়ো না দেরী
অমা নিশীথের আধার কেটেছে, হেলাল হাসিছে নভে
সব মুসলিম মানুষ, জামাতে বলিবে সবে।

.    
           **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
শুধু খেলা নয়
বেগম সুফিয়া কামাল

খেলাঘরে শুধুই খেলা
ভেবো না তা কেউ
দেখবে এসো কত কাজ আর
কত খুশীর ঢেউ।
ভাই আসছে বোন আসছে
আসছে নানা নানী
সবাই হাসে সকল কাজে
কত কী যে জানি।
সুখে দুখে সবার সাথে
হাসা কাঁদার খেলা
এই জগতে খেলাঘরের
খেলা আছে মেলা।
ধম্ম কম্ম সেবা সাম্যে
হৃদয় যেন ভরে---
এই গানটা গাইছে সবাই
নিত্য খেলাঘরে।

.  **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
তোমার সে প্রেম
বেগম সুফিয়া কামাল

মৃত্তিকার ভণ্ড ভরি’ উচ্ছ্বসিত তোমার সে প্রেম
তারে আমি ভরিয়া নিলেম
আমার নয়ন ভ’রে, আমার হৃদয় ভ’রে
আর ভ’রে আমার দু’কর!
কী দুঃসহ সে আনন্দ, সেই প্রেম কী যে তীব্রতর!
হিরণ্ময় জ্যোতি তার শর সম লেগে
বিকাশে অন্তর কুঁড়ি, শম্পাসম বেগে
উদ্ভাসিয়া চিত্তে মোর এনে দেয় বিত্ত মণিময় ;
তাই তো ঐশ্বর্যময়ী আমি, মোর আনন্দ অক্ষয়।
নিত্য নব নব রূপে আমারে তুষিতে এই ধরা,
প্রশস্তি দানিছে পুষ্পে সুগন্ধি মধুক্ষরা।
দিবসের সূর্য়ালোক, নিশীথের প্রতি যামে যামে,
প্রহরে প্রহরে তব প্রেমলিপি ল’য়ে ল’য়ে নামে।
নিত্য শুনি নব নব বাণী
হৃদয় উদ্বেল হয়---তাই রচি মোর প্রেমে প্রতিলিপিখানি।
সিন্ধু তটিনীতে যার মেঘে মেঘে তপ্ত স্নিগ্ধ সিক্ত সমীরণ
নিত্যকার প্রেমলিপি আনে, নেয় করিয়া বহন।
উত্কণ্ঠ অন্তর হয় অনুরাগী অনূঢ়ার মতো
তাই তো রচিতে চাই নিত্য নব প্রীতি আর
.                        প্রণয়ের বাণী শত শত।

অন্তর আনন্দ ভরে, হৃদয় মুখর করে,
.                        তাই আমি কুড়ায়ে নিলেম
মর্ত্যের মৃত্তিকা হ’তে, দিগন্ত বিথার হ’তে
উচ্ছ্বসিত, উদ্ভাসিত তোমার সে প্রেম।

.  
       **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
ছড়া
বেগম সুফিয়া কামাল

ছড়া ছড়া কলার ছড়া, পাকলে পরে খাও,
খালের পাড়ের হিজল ছড়া গলায় পড়ে নাও।
আম গাছেতে জাম গাছেতে ফলতো নিকি ছড়া,
তাল গাছেতেই এখন নাকি ফলবে তালের বড়া।
হাত বাড়িয়ে মুখে দিলেই লাগবে নাকি মজা,
আখের ক্ষেতে চিনির রসে ফলছে জিভে গজা।
মৌমাছিরা মৌচাকেতে করছে মধু জড়ো,
সেইখানেতেই আছে নাকি রসগোল্লা বড়।
দুধ দুইয়ে গোয়ালারা রাখছে ভরে ঘড়া,
সেইখানেই যাচ্ছে পাওয়া রসঝরা, রসবড়া,
এত মজার খাবার জিভে রস টসটস করে,
খেতে গেলে পয়সা লাগে, দিলাম ছড়ায় ভরে।
চোখে চোখে খেতে পারলে পাবে সবার স্বাদ,
সত্যিকারের চাইলে খেতে বাড়বে অপরাধ,
আরও আছে ঘড়ার মধ্যে পান্তা ভাতে ঘি,
হবুচন্দ্র রাজার দেশে আর খাবেটা কি ?

.        
    **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর