কবি সুশীল মালতীর কবিতা |
অরুচি সুশীল মালতী ( ১ ) তারা গো বিষম অরুচি,----- কচ্ছে আমার গা ঘিন্ ঘিন্ , যাচ্ছে যত বেশী গো দিন, ( আমি ) স্নান কোরে তোর কৃপাসরে, হব গো শুচি | ( ২ ) তারা গো নিম্ তেতো সংসার,----- এই কি মা তোর লীলাকানন ! মাগো এ যে বিচুটি বন, ছট্ ফোটিয়ে মলেম আমি, থাক্ বনাকো আর | ( ৩ ) তারা গো ওল কচু কানন,----- মিষ্টি মধুর লাগেনা কার, চাক্ লে পরে গলা ধরায়, ( আবার ) সমাজ রূপী শত বিছে কোত্তেছে দংশন | ( ৪ ) তারা গো বহুরূপী সং,------ তেতো পচা খরা ধসা, বিদ্ কুটে টক, বোদা কসা, ( আমার ) ফাট্ ছে ছাতী, ঝরছে নয়ন, দেখে শুনে ঢং | ( ৫ ) তারা গো চোর ডাকাত ভরা,----- তোষামুদে পাঁপর ভাজায়, ধনে প্রাণে ফাঁসায় মাজায়, ( কেবল ) শিশু কড়াই ভাজাগুলি, সবার মন-হরা | ( ৬ ) তারা গো আছি তাই বেঁচে,----- কুপত্তিতে মায়ার ঘোরে, কড়াই ভাজা ভোলায় মোরে, ( যদি ) সেগুলি হয় ছাই ভস্ম, পাই দুঃখ কেঁচে | ( ৭ ) তারা গো পতির কেমন স্বাদ ? অপ্রেমেতে অজ্ঞানতায়, একজামিনে হেরেছি তায়, ( ও তাই ) পতি-তত্ত্বে নীরব আমি সোণা কি সে খাদ ! ( ৮ ) তারা গো আত্মীয় স্বজন,----- স্বার্থে ভরা লৌকিকতা, দেতো হাসি, ছেঁদো কথা, সাষ্টাঙ্গেতে প্রণমি গো, তাঁদের শ্রীচরণ | ( ৯ ) তারা গো একটী যে মধুর,---- ভাল লাগে সংসারে যা, খাঁটী জিনীস আদর্শ “মা”, এই পচা জলের সংসারে “মা” মিশ্রিত কর্পূর | ( ১০ ) তাঁরা যা আম্র আঙ্গুর ফল, ---- মধুর কানন নির্ঝুমতা, জড়িয়ে যথা গাছে লতা, শৈল-বুকে নিঝর ঝরে, পাখীর কোলাহল | ( ১১ ) তারা গো বিশুদ্ধ “সন্দেশ”---- মহৎ সাধু যোগে বসি, নাইকো বুকে দাগা মসি, ( এমন ) একটীর গুঁড়া চেকেছি মা, সুমধু সরেশ্ ! ( ১২ ) তারা গো মনেই অরুচি,---- বাসনা আর অজ্ঞনতা, লুকিয়ে বুকে পেশে জাঁতা, ( আমার ) ইচ্ছা করে, কেটে কেটে করি গো কুচি ! ( ১৩ ) তারা গো অশ্বরূপী মন, ----- ধর্ম্মকাজে কুঁড়ে অতুর, তোলে কেবল কাঁদুনে সুর, উঠ্ তে বস্ তে দুঃখের ছপ্ টি খাচ্ছে অনুক্ষণ | ( ১৪ ) তারা গো মরবো কি তবে !---- এ অরুচি বাড়ছে ক্রমে, অজ্ঞনতার বিষম ভ্রমে, আমার চিত্তে বিকার বাড়ুক তীব্র, তোমার ত সবে ? ( ১৫ ) মা তারা, তরা গো আমায়,----- কৃপাপ্যাপি ঔষধে তোর, এ অরুচি দূর হবে মোর, ( তোর ঐ ) অমল কমল পদের মধু, মন অলি চায় | . ************************* সূচি মিলনসাগর |
নব বধু সুশীল মালতী ( ১ ) অতীতল স্মৃতিতে হেরি কে তুমি রতন ! নবোঢ়া কূলের বধু, অধরে সুহাসি মধু, চপল হিয়ার ভাষ প্রকাশে নয়ন | কনক ভূষণ গায়, অলক্ত রঞ্জিত পায়, সিঁতির সিন্দুর বিন্দু উজলে কেমন, অতীত স্মৃতিতে হেরি কে তুমি রতন ! ( ২ ) কবরীতে ফুলমালা, কে দিল জড়ায়ে বালা, পরিধানে মনোরম রঙ্গিল বসন, কোমল হৃদয় তলে, কি নব উচ্ছ্বাস চলে, সুখ শান্তি প্রফুল্লতা মুখে বিকীরণ, অতীত স্মৃতিতে হেরি কে তুমি রতন ! ( ৩ ) পর ঘরে ভয়ে বাস, মৃদু হাসি চুপি ভাষ, বসনে বয়ান ঢাকা সুধীরে চলন প্রদোষে নিশীথে ভোরে, শঙ্কুচিতা হেরি তোরে, ভয়ে জরসড় যবে পতির মিলন, অতীত স্মৃতিতে হেরি কে তুমি রতন ! ( ৪ ) ভ্রূকুটি দাম্ভিকা বেশে, কথায় কথায় হেসে, কলহ জড়ান তোর যত সম্বোধন, পতিত্বের অভ্যর্থনা, কভু তুমি সাধিলে না, কেবলি ঝগড়া ঝাঁটি ছিল আলাপন, অতীত স্মৃতিতে হেরি কে তুমি রতন ! ( ৫ ) মধুর বাসন্তী রাতি, শশাঙ্কের স্নিগ্ধ ভাতি, ঝিল্লিরবে মুখরিত ঘুমন্ত ভুবন | কে তোরে স্নেহের ডোরে, বাঁধিয়া যতন কোরে, ঢালিত শ্রবণে মধু সোহাগ বচন, অতীত স্মৃতিতে হেরি কে তুমি রতন ! ( ৬ ) কোহিনুর পেয়ে করে, নিতি কত অনাদরে, দু’দিনে কোথায় হায় দিলি বিসর্জ্জন ; পেয়ে নিধি চিনিলিনা, রে অধমা ভগ্যহীনা, সে সকল কর্ম্মফল ভুগিচ এখন | অতীত স্মৃতিতে হেরি কে তুমি রতন ! ( ৭ ) অতীত আমারে হায়, আপনিই চেনা দায়, কোথা মধু নববধু জীবন সে মন ? ভেঙ্গেছে স্বপন ঘোর, জ্বলিছে হৃদয় মোর, নিশিদিন এ সংসার করার রোদন, বর্ত্তমানে দীনাহীনা অভাগী এখন | ( ৮ ) সুখের সে বধূ-কালে, জড়ায়ে কুবুদ্ধি-জালে, করি নাই পতি-পায় আত্ম-সমর্পণ | দুটো দিন অনিচ্ছায়, কাটিয়া গিয়াছে হায়, বৈধব্যতে ভেঙ্গে চূরে গড়িল এ মন, বর্ত্তমানে দীনাহীনা অভাগী এখন | ( ৯ ) অকালে কঠোর হৃদি , লভে নাই প্রেম নিধি, কখনো ভাবিনি পতি দুর্ল্লভ রতন | তুষানলে পুড়ি ধীরে, ভাসি সদা অশ্রু নীরে, হাতে পেয়ে হতাদর, এখন রোদন---- কঠোর নিয়তি লেখা, ভীষণ জীবন ! . ************************* সূচি মিলনসাগর |
নবীনচন্দ্র সুশীল মালতী ( ১ ) খসেছে নবীন-চাঁদ কাব্য কাননের, জন্ম গোধূলিতে উঠি, বাল্য সাঁজে ছুটাছুটি. মধুর যৌবন রাতে দাস কল্পনের ; কল্পনা উচ্ছ্বাস বায়, হৃদয় মাতায়ে হায়, গেয়েছিলো মধুময় গীতি কবি ঢের, কাল-রাহু মৃত্যু আসি, সে নবীন শশী গ্রাসি, ছিলত রজনী কেন শেষ সে শীতের! খসেছে নবীন-চাঁদ কাব্য কাননের | ( ২ ) হারায়েছি মোরা হায় সে কবি-রতন ! এ সংসার খেলাঘরে, নরনারী খেলা করে, পুতুলের মত প্রাণ ছুটিছে কখন ; দুদিন করিয়া কেলি, গীতি ছড়াইয়া ফেলি, মৃত্যু-মুখে যায় আসে জড়ায়ে জীবন | অবকাশ রঞ্জিনীর, “সুখী কে” গো সে গীতির, মধুর ললিত তানে তিরপিত মন, হারায়ে ফেলেছি মোরা সে কবি-রতন | ( ৩ ) কল্পনে! কপালে বাজ পড়েছিলো তোর, “রৈবতক” “কুরুক্ষেত্র”, “প্রভাসে” পড়িলে নেত্র, পড়িতে সে কৃষ্ণপ্রেম সবে হয় ভোর ; “পলাসীর যুদ্ধ” ছবি, আঁকিল মসিতে কবি, ছবি রাজে, কবি হরে সে কৃতান্ত চোর, কল্পনে কপালে বাজ পড়েছিলো তোর ! ( ৪ ) কেন মানবের হেন ক্ষণিকের প্রাণ ? ধরি বর্ণ-পরিচয়, ভাষা সাথে ভাব হয়., বর্ণবোধে বোধ-জ্ঞান লভিনু সন্ধান | একে একে কবিদের, পড়িলাম গন্থ ঢের, পাঠেই প্রীতিতে ভরি মধুময় গান, মার পদ-বৃন্ত ‘পরে, সৌরভ গৌরব ভরে, ফুটিয়া গাহিল কত বাণীর সন্তান, কেন মানবের হেন ক্ষণিকের প্রাণ ? ( ৫ ) একে একে ঘুমাইল কতগুলি কবি, দেখা চেনা ঘুমাইল, কৃতান্ত হরিয়া নিল, ভূতপূর্বের কত শত রেখে যান ছবি, “মধু”র মাধুরী ঘটা, কবিতায় “হেম” ছটা, “নবীনের” নব রস মধুময় সবি “ দীনবন্ধু” “ঈশ্বরের” ছন্দে মধুরতা ঢের, উপন্যাসী সে বঙ্কিম শুয়েছে জাহ্নবী, বিদ্যার সাগর কত ঘুমাইল কবি | ( ৬ ) কাঁদিবনা মোরা আর মুছি আঁখিনীর, বুঝিগো স্বরগ’পর, আছে ঠাঁই মনোহর, কুসুমের গৃহ তায় কুসুম প্রাচীর, পারিজাত গন্ধরাশি, মলয়ায় আছে ভাসি, সঙ্গীতের সম তান সে মন্দাকিনীর, কুপিছে অপ্সরাগুলি, অমিয় মাখান বুলি, বুঝিগো সে স্বর্গধাম আনন্দ-মন্দির. আর না কাঁদিব মোরা মুঝি আঁখি-নীর | ( ৭ ) উদ্দেশে প্রণমি পদ প্রেমিক বিভুর, দেখিনা জানিনা আজ, শুনি সর্ব্বভূতে রাজ, শুনিয়াছি আছে কোথা আনন্দের পুর, তেমনি মধুরে মিশি, থাকিতে দিবস নিশি, তাই বুঝি যায় সবে দেশ বহু দূর | ত্রিতাপ যন্ত্রণা ভরা, কারাগার সম ধরা, শোক তাপ দুঃখে হৃদি হয় ক্ষণে চূর, উদ্দেশে প্রণমি পদ প্রেমিক বিভুর | . ************************* সূচি মিলনসাগর |
ঘেঁটুফুল সুশীল মালতী ( ১ ) সুন্দরী বসুধা বুকে, ফুটে হাসে মন-সুখে, গোলাপ যূথিকা বেলি চামেলি বকুল, চম্পক সেউতি জাঁতি, ফুল-কুলে শ্রেষ্ঠ জাতি, কমল কুমুদী এরা শোভায় অতুল | মল্লিকার মধু শোভা, সূর্য্যমুখী মনোলোভা, সুমধুর পরিমলে দেবতা আকুল | ( ২ ) না পোহাতে দুট’ রাতি, মন্দিরে নিবিল বাতি, পালালো দেবতা ফেলি উত্সর্গীতা ফুল, আমি ক্ষুদ্র ফুলকণা, মনে বুঝি ধরিল না, জানিনা পবিত্র কত চরণের মূল | সে চরণ ছাড়া হ’য়ে, রয়েছি যাতনা স’য়ে, চন্দন-চর্চ্চিত দেহে মাখি এবে ধূল | ( ৩ ) দেবতার দুটি পায়, ঝরিলে এ দুঃখ যায়, হইতাম ফুলফুলে ভাগ্যবতী ফুল, এযে কাঁদি মন দুঃখে, আছি এই পোড়ামুখে শুক্ নো নিরস হৃদি বিষাদে ব্যাকুল | সকলের দূর ছাই জুড়াবার স্থান নাই, সংসারে বালাই আমি, শমনের তুল | . ************************* সূচি মিলনসাগর |
প্রভাতী সুশীল মালতী ( ১ ) মধুর কিরণ ঝিকিমিকি তাতি, উদিল অরুণ পোহাইল রাতি, গাহিল বিহগ মধুর প্রভাতী, প্রাণারাম বিভুগান | ( ২ ) ফুটিয়া উটিল কুসুম কুঞ্জে, বিটপী-ব়ৃন্তে পুঞ্জে পুঞ্জে, বিভোর মধুপ সোহাগে গুঞ্জে, তুলি গুন্ গুন্ তান | ( ৩ ) বহিছে মৃদুল মলয় বায়, ফুল পরিমল মাখিয়ে গায়, নাচায়ে পল্লব তরু শাখায়., কি সুন্দর বিশ্ব-শোভা ! ( ৪ ) কলনাদে নদী বহিয়ে যায়, মরাল কমল হৃদে ভাসায়, লহরী তুলিয়ে বিভুগুণ গায়, মরি কিবা মনোলোভা | ( ৫ ) জাগিল বসুধা প্রভাত পরশে, ধরিল সুবেশ মাতিল হরষে, লুকায়ে খদ্যোৎ মালিকা উরসে, পরিল কুসুমহার | ( ৬ ) ত্যজিল সুন্দরী তিমির বসন, পরি নব বাস সোণালি বরণ, সাজিল-সুন্দর রূপে অতুলন, মধুর সুষমা তার | ( ৭ ) বহে শৈল বুকে মৃদুল নির্ঝর, অবিরাম ধারা ঝরে ঝর, কি গীতি গাহিছে প্রাণ-মন-হর, বিজন বিপিনে বালা | ( ৮ ) মহীরুহ হৃদে লতিকা সুন্দরী কোমলে কঠিনে মধুর মাধুরী, প্রভাতে কনক-বরণী বল্লরী, অরুণ কিরণ ঢালা || ( ৯ ) মধুর বিমল প্রভাতী শোভায়, মাতা কে দিয়েছে বিভু হে আমায়, শোভায় আধার তব তুলিকায়, শোভেছে আধার তব তুলিকায়, শোভিছে বসুধা সতী | ( ১০ ) কত মধুময় তুমি পরমেশ, লুকান না রয় মাধুরী অশেষ, বসন্তে বসুধা ধরেছে কি ক্লেশ, প্রেমময় বিশ্বপতি ! ( ১১ ) তরু-লতা-চ্যুত মুকুলের বাস, চারু কুসুমের সুমধুর হাস, কুহু পিউ মধু বিহগের ভাষ, জাগায় পরাণে প্রীতি | ( ১২ ) উদ্দেশে প্রণমি তোমা প্রেমময়, মধুময় লীলা তব লীলাময়, বিভোরা বসন্ত প্রভাতী সময়, গাহি এ প্রভাতী-গীতি | . ************************* সূচি মিলনসাগর |
শিক্ষিতা সুশীল মালতী ( ১ ) সুশিক্ষার শত গুণ দেখিবারে পাই, সাধ আশা শিক্ষা লভি অপরে শিখাই, সুশিক্ষা সুফল হয়, গৃহধর্ম্ম সুধাময়, অশিক্ষিতা গব্বিতা গো বড়ই বালাই | ( ২ ) নাড়া চাড়া “ক, খ”, বই, শিক্ষালাভ শেষ ওই, তারপর মেজে ঘসে “প্রণয় পত্রিকা”, সুরসিকে সুসৌখিনে, আঠার পোষাক দিনে, শ্রীমতী সুবুদ্ধিহীনা পলাশ-কলিকা | ( ৩ ) বটতলা আবিষ্কারে, গেল দেশ ছারখারে, দামে কম গুড়েমন্ডা পড়িতে সহজ, কোথা সে পুরাণ পুরু, সংস্কৃত কটু গুরু, কেবা পড়ে হিড়্বি বিড়ি, এত কি গরজ ! ( ৪ ) বাবুনী সোহাগে গড়া, মুখে পেটে মিষ্টি ছড়া, বেয়াড়া ঢংয়েতে কাটে অর্দ্ধেক জীবন---- শুধু কুশিক্ষার দোষ, হৃদে মম এ আপ্ শোস্, মোদের বয়স কালে এমনি পতন | ( ৫ ) ভাঙ্গিলে যৌবন সরা, পরীক্ষার স্থল ধরা, দেয় সমুচিত সাজা জ্ঞানেতে তখন, অথবা কাহার হায়, সে দশা রহে বজায়, বিপরীত বুদ্ধি বৃদ্ধা হইল যখন | ( ৬ ) অর্দ্ধাঙ্গিনী ভার্য্যা জায়া, আধা প্রাণ আধা কায়া, গুণবতী শুদ্ধমতি সুমিষ্ট ভাষিণী, গৃহলক্ষ্ণী হৃদি-লক্ষ্ণী, মনোহর শুক পক্ষী, শিক্ষিতা ঘরণী হয় আনন্দদায়িনী | ( ৭ ) অল্প বিদ্যাবতী নারী, তার চেয়ে গো-বেচারি, ভাল বটে একেবারে অচেনা অক্ষর | অল্প জলে চুনা-পুঁটি, করে বড় ছুটাছুটী, অগাধ সলিলে রুই মধুর সন্তর | ( ৮ ) মোর শক্ত খেদ কথা, ঔষধিতে তিক্ত যথা, বুঝিলে বুঝিবে ভাল বুদ্ধিমতিগণ সুশিক্ষার সুধা ফল, কুশিক্ষায় হলাহল, হের দেখ “সাবিত্রী” ও “মন্থরা” দুজন | ( ৯ ) সকলে সকলে দেখ, সবে মিলি মিশি শেখ, সবে হই এস মোরা মধুর মোহন, নাহি মোর শক্তি হায়, শুধু সাদ ক্ষ্যাপা-প্রায়, কি করিব আমি বড় দীনা হীনা জন | . ************************* সূচি মিলনসাগর |
উত্তপ্ত-হৃদয় সুশীল মালতী ( ১ ) ভব-ভান্ডে কি বিষাক্ত সংসার-মদির, তারা গো তিয়াষা দিলি, হতাশে পুড়ায়ে নিলি, জ্বোলে পুড়ে ভস্মীভূত, মরম অধীর ; আর যে পারিনা শ্যামা, মুছিতে এ নীর | ( ২ ) প্রেমময়ি | ব্রহ্মময়ি, সবই তব হাত, মদির-সংসার নরে, বিভোর বেঁহুস করে, ছুটে য়ায় নেশা, প্রাণে পাইলে আঘাত তিমিরবরণি | নাশো অজ্ঞানতা রাত | ( ৩ ) রোদন পূরিত আজি আঁধার ভবনে, আজিকের আয়োজন, বাজে প্রাণে কি ভীষণ, অনিত্য সংসার ছার, জাগে যে গো মনে, নেশায় বিভোর নর, এ মায়া-কাননে | ( ৪ ) সংসার কারায় তারা, দিবি কত তাপ, ধরে না মরমে আর, নয়নে শোকাশ্রুভার, দাও শান্তি শান্তিময়ি, ত্যজ অভিশাপ, দাও জ্ঞান, দাও দৃষ্টি, চিনি পুণ্য পাপ | ( ৫ ) ফুলের মতন ছিল শৈশবে পরাণ, কৈশরে পোড়ালি তারা, এবে ভস্মীভূত পারা, ধূ ধূ প্রজ্জ্বলিত জ্বালা, হৃদয় শ্মশান, লেখনীর মুখে ফোটে, বুকভাঙ্গা তান | ( ৬ ) কেন মা ! না দিলি মোরে ফেলি মরুভূমে, উত্তপ্ত বালুকারাশি, মধ্যাহ্ন তপন আসি, জুড়াইয়ে দিত মোরে, মরণের ঘুমে, পিপাসিত প্রাণ তৃপ্ত হোতো মৃত্যু চুনে | ( ৭ ) শান্তির প্রথম তীর্থে, পতির চরণ, ভবের মেলায় এসে, ঠেকিনু সে পদে ভেসে, দুদিনে ভাঙিয়া গেল, সে মহা স্বপন, লাভ শুধু প্রাণভরা, হতাশ বেদন | ( ৮ ) তীর্থফল আনি এক, বাঁধিয়া আঁচলে, চুমিয়া শিশুর মুখে পিতা ধরিলেন বুকে, সে স্নেহ আদর হেরি হৃদয় উথলে, অভাব জানেনি শিশু কচি হৃদিতলে | ( ৯ ) কোথা স্নেহময় পূজ্য সে পিতা আমার, হেমন্ত প্রভাতীকালে, মাতার বিমল ভালে, বৈধব্য কালিমা ঢেলে, নিল শোভা তাঁর, পিতৃহীন ভ্রাতা ভগ্নী------ করি হাহাকার | ( ১০ ) অতীব স্নেহের সুত, সুতার নন্দন, “ধীরু” “বিজু” এরা দুটী, কাঁদিল ধূলায় লুটি, হারায়ে ফেলেছি মোরা, কসিত কাঞ্চন, দশপূজ্য পিতা মোর----- অমূল্য রতন | ( ১১ ) নাহি আমি পিতৃহীনা, পিত পরমেশ ! পিতার পিতাও তুমি, ও পদ কলম চুমি, মত্ত হোক্ মন-অলি, তৃপ্তি সে অশেষ, মরণে মিলিবে মোর., সে আনন্দ দেশ | ( ১২ ) যথা শান্তি সুধা খাটী নাহি ফাঁকি জ্বালা, সে আনন্দধামে যেতে, বাকী এ অশান্ত প্রাণে, গাঁথি নাম মালা, সারা-ধন প্রাণারাম, মোর কালী কালা | ( ১৩ ) ধরায়. আসিয়া তারা, সহি কত দুঃখ, পূর্ণ হোক্ ইচ্ছাময়ি, তব ইচ্ছা হোক জয়ী, সহিতে শকতি দাও, বেঁধে দাও বুক, দুদিনের খেলা হেথা, কি দুঃখ কি সুখ | . ************************* সূচি ** ১৩১৫ সাল , ২৬শে কার্ত্তিক , বুধবার , পিতার স্বর্গারোহণ উপলক্ষে | মিলনসাগর |