কবি সুশীল মালতীর কবিতা
*
অরুচি
সুশীল মালতী

( ১ )
তারা গো বিষম অরুচি,-----
         কচ্ছে আমার গা ঘিন্ ঘিন্ ,
       যাচ্ছে যত বেশী গো দিন,
  ( আমি ) স্নান কোরে তোর কৃপাসরে,
হব গো শুচি  |


( ২ )

তারা গো নিম্ তেতো সংসার,-----
          এই কি মা তোর লীলাকানন !
        মাগো এ যে বিচুটি বন,
                       ছট্ ফোটিয়ে মলেম আমি,  
                                             থাক্ বনাকো আর  |




( ৩ )

তারা গো ওল কচু কানন,-----
   মিষ্টি মধুর লাগেনা কার,
    চাক্ লে পরে গলা ধরায়,
( আবার )  সমাজ রূপী  শত বিছে
কোত্তেছে দংশন |


( ৪ )

তারা গো বহুরূপী সং,------
  তেতো পচা খরা ধসা,
বিদ্ কুটে টক,  বোদা কসা,
    ( আমার ) ফাট্ ছে ছাতী, ঝরছে নয়ন,
দেখে শুনে ঢং |


( ৫ )

তারা গো চোর ডাকাত ভরা,-----
তোষামুদে পাঁপর ভাজায়,
ধনে প্রাণে ফাঁসায় মাজায়,
( কেবল ) শিশু কড়াই ভাজাগুলি,
                        সবার মন-হরা |

( ৬ )

তারা গো আছি তাই বেঁচে,-----
  কুপত্তিতে মায়ার ঘোরে,
        কড়াই ভাজা ভোলায় মোরে,
( যদি ) সেগুলি হয় ছাই ভস্ম,
পাই দুঃখ কেঁচে |


( ৭ )

তারা গো পতির কেমন স্বাদ  ?
অপ্রেমেতে অজ্ঞানতায়,
একজামিনে হেরেছি তায়,
( ও তাই ) পতি-তত্ত্বে নীরব আমি
                                         সোণা কি সে খাদ !


( ৮ )

তারা গো আত্মীয় স্বজন,-----
  স্বার্থে ভরা লৌকিকতা,
      দেতো হাসি,  ছেঁদো কথা,
 সাষ্টাঙ্গেতে  প্রণমি গো,
তাঁদের শ্রীচরণ |


( ৯ )

তারা গো একটী যে মধুর,----
ভাল লাগে সংসারে যা,
খাঁটী জিনীস আদর্শ  “মা”,
                   এই পচা জলের সংসারে    “মা”
     মিশ্রিত কর্পূর  |


( ১০ )

তাঁরা যা আম্র আঙ্গুর ফল, ----
মধুর কানন নির্ঝুমতা,
জড়িয়ে যথা গাছে লতা,
শৈল-বুকে নিঝর ঝরে,
পাখীর কোলাহল |


( ১১ )

তারা গো বিশুদ্ধ “সন্দেশ”----
মহৎ সাধু যোগে বসি,
নাইকো বুকে দাগা মসি,
( এমন ) একটীর গুঁড়া চেকেছি মা,
               সুমধু সরেশ্ !
( ১২ )

তারা গো মনেই অরুচি,----
   বাসনা আর অজ্ঞনতা,
        লুকিয়ে বুকে পেশে জাঁতা,
   ( আমার ) ইচ্ছা করে,  কেটে কেটে
                                            করি গো কুচি !


( ১৩ )

তারা গো অশ্বরূপী মন, -----
ধর্ম্মকাজে কুঁড়ে অতুর,
    তোলে কেবল কাঁদুনে সুর,
উঠ্ তে বস্ তে দুঃখের ছপ্ টি
                             খাচ্ছে অনুক্ষণ |


( ১৪ )

তারা  গো মরবো কি তবে !----
এ অরুচি বাড়ছে ক্রমে,
অজ্ঞনতার বিষম ভ্রমে,
আমার চিত্তে বিকার বাড়ুক তীব্র,
তোমার ত সবে ?



( ১৫ )

মা তারা, তরা গো আমায়,-----
 কৃপাপ্যাপি ঔষধে তোর,
  এ অরুচি দূর হবে মোর,
( তোর ঐ ) অমল কমল পদের মধু,
                        মন অলি চায় |

.                                               *************************                                   
সূচি    


মিলনসাগর
*
চন্দ্রাবলী
সুশীল মালতী


       ( ১ )

নয়নের জলে যদি হইত দরিয়া,
.       সখে হে, তটিনী করি,
.       রাখিতাম ভরি ভরি,
যত অশ্রু নিশিদিন যেতেছে ঝরিয়া,
তোমারি সোহাগে মজি, তোমারে স্মরিয়া  |


        ( ২ )

রাখিতাম নাম তার “প্রেমাশ্রু তটিনী”
.         প্রস্তরের বাঁধ দিয়ে,
.         প্রকাশিয়া এই হিয়ে,
দেখাতাম বোঝাতাম মর্ম্ম  কল্লোলিনী,
এই মত খেলি সখে,  দিবস যামিনী  |


       ( ৩ )

রোপিতাম সারি সারি ঝাউতরু তীরে,
.          এ দীরঘ শ্বাসগুলি,
.          রাখিতাম তাতে তুলি,
হা হুতাশ হৃদিভাষা প্রকাশিত ধীরে,
ফেলেছ কি দুঃখ-নীরে আজি অভাগীরে  |


        ( ৪ )

মেশাতাম পবনেতে বিষাদের সান,
.          উছলি তটিনী জল,
.          সোপানেতে অবিরল,
গাহিত বিষাদী সুরে তুলি ভাঙ্গা-তান,
প্রকাশিত গুপ্তভাব ললনার প্রাণ |

               
        ( ৫ )

একদা আমার নিশি ঘোর বরষায়,
.          যথায় তথায় রও,
.          কভু হৃদি ছাড়া নও,
উজলিয়া নারায়ণ হাসিছে হিয়ায়,
মানস আঁখিতে সদা নিরখি তোমায় |
            

        ( ৬ )

প্রেমাশ্রু তটিনী তীরে বসাতাম হায়,
.        বলিতাম হে মাধব !
.        দেখ জল অশ্রু সব,
নেহার তটিনী মম অন্তর লীলায়  !
পাষাণের বাঁধে জল সদা উছলায় |


            ( ৭ )

বসাতাম প্রস্তরের সোপানের পরে,
.         বলিতাম দেখ চেয়ে,
.            তরঙ্গ আসিছে ধেয়ে,
প্রস্তরে আঘাৎ খেয়ে দেখ সখে মরে,
বুকেতে বিরাট সিন্ধু বদ্ধ এ অধরে |


          ( ৮ )

ধৈর্য্য বাঁধ ঐ মত হৃদয়ে আমার,
.         হে মনোমোহন নিধি !
.             আকুলি ব্যাকুলি হৃদি,
তব প্রেমে পূর্ণ হোয়ে বাজে মর্ম্ম-তার,
হৃদি-চাঁদ শ্যামাচাঁদ তুমি মম সার |


               ( ৯ )

বরষা বাতাসে ঝাউ উহুঃ হুঃ হুঃ গায়,
.          বোঝাতাম হা-হুতাশা,
.          অবসাদে এ নিরাশা,
তোমা লাগি নারায়ণ  !  বহে উভরায় |
আজি সে মরম ভাব এ তরু জানায় |


              ( ১০ )

অভাগী এ চন্দ্রা,  প্রাণ অর্পেছে ও পায়
.           হে সুন্দর !   নব ঘন,
.           মম এ চকোরী মন,
তোমার ও মুখশশী  নিরখিতে চায়,
সাধে বাদ হয় বোলে আঁখি ভেসে যায়  |


                ( ১১ )

বলিতাম, ---- দেখ সখে তটিনী গভীর,
.          ভাল কোরে দেখ দেখ,
.          পারত মরমে লেখ,
ভালবেসে শেষে এত নয়নের নীর,
শোন ঝাউ তরুপরে শ্বাস উদাসীর |

                     
                  ( ১২ )

রাজার কুমারী হোয়ে উদাসিনী নারী,
.         শ্যামেরে বাসিয়া ভালো,
.         নিবেছে হাসির আলো,
বিষাদে বিরহে তব ঝরে অশ্রু-বারি,
বিভোর উদাস আমি রূপধ্যানে তাঁরি  |


.            *************************                                                   
সূচি    


মিলনসাগর
*
অমানিশি
সুশীল মালতী


.                (  ১ )

আঁধারের গায় ঠেকেছে আঁধার,
.      ভুবন ভরিয়া আঁধার বয়,
জ্বলিছে জোনাকী গাছের পাতায়,
.      ধীরি ধীরি গতি মলয় বার |


.                ( ২ )

গগনে কোথায় শশাঙ্ক ঘুমায়,
.      বিরল আলোকে নক্ষত্র হাসে,
তরু তুলি মাথা দাঁড়ায়ে আঁধারে,
.      ঘোর অন্ধকার চৌদিকে ভাসে |


.                ( ৩ )
  
বাহিরে আঁধার, হিয়ায় আঁধার
.       আঁধারে আঁধারে মিশিয়ে রয়
আজি এ আঁধার ছড়াছড়ি যায়,
.       আঁধারে বসুধা তামস-ময় |


.                ( ৪ )

ভন্ ভন্ করি গায় মশাগণ,
.       সুমধুর তানে শয়ন গৃহে,
প্রাণের ভিতর কত কথা ওঠে,
.       দর দর ধারা দুনয়নে বহে  |
       

.                ( ৫ )

ডাকিছে পেচক, ভগ্ন গৃহ-ছাদে,
.       কর্কশ কন্ঠেতে উঠিছে ধ্বনি,
আসিছে ভাবনা লয়ে দীর্ঘ শ্বাস,
.       আমার পাশেতে দেখে একাকিনী  |


.                ( ৬ )

ভাবনা দেখিয়া নিদ্রা যে পালায়,
.        রাখিয়া আমার ভাবনা কাছে,
বৃশ্চিকের দল রোয়েছে যে চেয়ে,
আমার তরেতে ভাবনা পাছে |


.                ( ৭ )

অমানিশি তোরে বড় ভালবাসি
.        তাই থাকি চেয়ে তোমারি পানে,
নেহারি তোমার আঁধার মূরতি,
.        কত স্মৃতি মম ওঠে যে প্রাণে |


.                ( ৮ )

যারা ফোটাফুল আছে বৃন্ত’পরে,
.       তাহারা হাসিবে জোছনা উদিলে,
আমি বৃন্তচ্যূতা দলিত কুসুম,
.       জেগে রব ঐ আঁধার দেখিলে |


.                ( ৯ )

চন্দ্রমার আলো নাহি লাগে ভাল,
.        জোছনায় হৃদি দহিয়ে যায়,
হৃদয়ের চাঁদ গিয়াছে ডুবিয়ে,
.        স্মৃতির আলোটি জ্বলিছে হায় |
           

.                 ( ১০ )

বার মাস মম হৃদয় মাঝারে,
.       উদয় হোয়েছ কৃষ্ণপক্ষ নিশি,
ডুবেছে চন্দ্রমা নাহিত জোছনা,
 সকলি গিয়েছে আঁধারে মিশি |


.                ( ১১ )

কুহরে না পিক, ফোটেনাকো ফুল,
.        হাসেনাকে লতা মধুর হাসি,
হৃদি কুঞ্জবন আগুনে পুড়েছে,
.        আছে শুধু ছাই ভশ্মের রাশি |


.                ( ১২ )

আশার লতাটি নিরাশা বিষেতে,
.       হৃদয় মাঝারে জ্বলিয়া গেছে,
হাসির কুসুম শুকায়ে ঝরিল,
.       শান্তির মলম কোথা পালায়েছে  |


.                ( ১৩ )

তপ্ত দীর্ঘশ্বাস আছে  ত হৃদয়ে,
.       তৃপ্তি কোথা আজি গিয়াছে চলি,
চিন্তা হোলো রাণী হৃদয় মাঝারে,
.       আছে দুঃখ  কান্না আছে সকলি |


.                ( ১৪ )

বেশ বেশ ধরিয়াছে বেশ,
.       আঁধার বসনে ঢেকেছে মুখ,
নিরখি তোমার ওরূপ সজনি,
.           উছলিছে হের আমারি বুক |


.                ( ১৫ )

ক্ষণপরে সখি হারাব তোমায়,
.       তাই সই মম হতেছে ভয়,
তোমারে সরাবে, আমারে কাঁদাবে,
.       রূপবতী ঊষা হয়ে উদয়  |


.                ( ১৬ )

সখিরে আমার প্রভাত জীবন,
.       আঁধার কোরেছে মেঘেতে ঢাকি,
আঁধার মাখিয়া সর্ব্বাঙ্গে সজনি,
আঁধারের কোলে পড়িয়া থাকি |


.                ( ১৭ )

মনে পড়ে মোর প্রভাত জীবনে,
.        হেসে ছিল এক তরুণ রবি,
কাল-মেঘ দল ঢেকেছে তাহারে,
.        হৃদে আঁকা মম আছে সে ছবি  |


.                ( ১৮ )

তাই  ভালবাসি আঁধার যামিনী,
,        হিয়ার বাহিরে হয় মেশামিশি,
তোমারে ধরিয়ে,  তোমারি আঁধারে,
.        এস তব কোলে ডুবে যাই নিশি  !

.            *************************                                                   
সূচি    


মিলনসাগর
*
শরৎ  সন্ধ্যা
সুশীল মালতী


.                        ( ১ )

.      কিবা শোভা শরতের এ নব সন্ধ্যায়,
শশাঙ্ক কিরীট শিরে,          যামিনী হাসিছে ধীরে,
.        পরিয়া জোছনবাস মধুর শোভায়,
প্রকৃতির নব শোভা,             সুশ্যামল মনোলোভা,
.         কূজিছে বিহগকুল তরুর শাখায়,
.         কিবা শোভা শরতের এ নব সন্ধ্যায়  |


.                        ( ২ )

ফুটেছে  গোলাপ বেলি,        সেফালি চাঁপা চামেলি,
.         ছুটিছে মধুর বাস মৃদু মলয়ায়,
প্রকৃতির নব সাজে,              কেনরে পরাণে বাজে,
.         মরমের মাঝে স্মৃতি বিষাদ জাগায়,
.         কিবা শোভা শরতের এ নব সন্ধ্যায়  |


.                        ( ৩ )

নিরখি শরৎ চাঁদে,              কেনরে পরাণ কাঁদে,
.         বেসুরা হৃদয়-বীণা বিষাদেতে গায়,
কেনরে আঁখিতে জল,          মথিয়া  মরম তল,
.          ধৈরযের বাঁধ মম ট্ টে যে গো যায়,
.          কিবা শোভা শরতের এ নব সন্ধ্যায়  |


.                        ( ৪ )

থাক  স্মৃতি ঢাকা থাক,          পায়ে ধরি জেগ নাকো,
.       শরতের সন্ধ্যারাণী  শান্তি দে আমায় |
হায়রে হৃদয়-বীণা,                তবু তুই ক্ষমিলিনা,
.        ফুকারি উঠিছ আধ অস্ফুট ভাষায়,
.         কিবা শোভা শরতের এ নব সন্ধ্যায়  |


.                        ( ৫ )

( তবে ) গাও বীণা দুঃখ গান,      তুলিয়া ভগন তান,
.           বেসুরা  বিষাদী   সুরে মরম ব্যথার,
হারায়ে শরৎকাল,            হইয়া আমার কাল,
.           কালিমা দিয়েছে ঢেলে সে ফুল্ল হিয়ায়,
.           জেগে উঠে ,সব স্মৃতি এ নব সন্ধ্যায়  |


.                        ( ৬ )

সেই যে ঊষার সনে,          সড় করি সংগোপনে,
.        মেঘে জলে ঢাকি দিক মিলি দুজনায় |
পাছে আমি ফেলি দেখে,     তাই ঊষে মেঘে ঢেকে,
.        লুকালে সুবর্ণ ছটা ডুবে তমসায়,
.        জাগিছে অতীত স্মৃতি এ নব সন্ধ্যায় |


.                        ( ৭ )

অবশ পরশ মোর,       কি ভাবে আছিনু ভোর,
.          সারা নিশি জেগে বসে চাঁদে চেয়ে হায়,
চুপে চুপে এসে ঊষা,     ধরিয়া ভীষণ ভূষা,
.         ডুবালি  “শরৎচাঁদে”  কে জানে কোথায় !
.         জাগিছে অতীত স্মৃতি এ নব সন্ধ্যায় |


.                        ( ৮ )


অধরে অরুণ হাসি,       না, ফুটিল রূপ রাশি,
.       নীরব  পাপিয়া   শ্যামা  প্রভাতী  না গায়  |
ভীম  নাদে  নব  ঘন,         করে  গুরু  গরজন,
.       বসুধা তমসাময়ী শরৎ ঊষার,
.       জাগিছে   অতীত  স্মৃতি  এ  নব সন্ধ্যায়  |


.                        ( ৯ )

হায়রে শরৎশশী,        শরৎ  ঊষায খসি,
.       রাহুগ্রস্ত  চিরতরে  ডুবেছে কোথায় !
প্রিয়  সখি সন্ধ্যা সতি,        শশাঙ্ক  তোমার পতি,
.       তাই আজি দুটো কথা শুধাই তোমায়,
.       হাস তুমি সন্ধ্যা সতী নব সুষমায়  |


.                        ( ১০ )

দেবস্থান চন্দ্রলোকে,            মধুর দিব্যালোকে,
.       তোমার চাঁদের পাশে  রেখেছ কি তায় ?
দেখা করে তাঁর সাথে,         বল সখি   মম নাথে,
.       আঁধারে  আঁধারে হেথা মালতী শুকায়,
.       হাসলো  শরৎ সন্ধ্যা  নব সুষমায়  |

.            *************************                                                   
সূচি    


মিলনসাগর
*
হতাশা
সুশীল মালতী    

.                ( ১ )

যার প্রাণে ছায় এই ব্যাধি, তার----
.                আকুল তাকানি,
নিম্-তেতো তার মরমে রস,
গা ঝিম্ ঝিম্ সদাই অবশ,
দুম্ কা  শ্বাসে হৃদয় হুহু------
.                  নিত্তি ফোঁপানি |

.                ( ২ )        
যে কাজে যায়, -------ব্যাগার ঠেল
চুকিয়ে বসে  ভবের খেলা,
মুখের আগায়  ফুট্ ছে ক্ষণে,
.              ‘উহুঃ’  দু  বাণী  |

.                ( ৩ )
মরমটা হয় ভস্মীভূত,
দেত হাসি,   মিথ্যে ছুত,
দুয়ের বারে  পোড়ে থাকে,
.              শিরে ঘা হানি  |

.                ( ৪ )
এ রোগ দেখি যেখানে যার,
রোগের কিছু নাই প্রতীকার,
যাবৎ জীবন তাবৎ দেখি,
.               এমনি  ভোগানি  |

.                ( ৫ )
( তার ) পরমব্রহ্ম বৈদ্যরাজের,
“কৃপা বটি”  বড্ড কাজের,
পরশে হয়  রোগ নিবারণ,
.               সঠিক এ বাণী  |

.                ( ৬ )

আর এক কাজে স্হগিত থাকে,
সম ব্যথিত দেখ যাকে,
গলাগলি করে কাঁদ,
.            জুরাক পরাণি  |

.                ( ৭ )
কবি বলে হৃদয়মূল,
দেখাই কি রোগ মরম খুলে,
কেমনেতে কোন ভাষাতে,
.               জানাই না জানি |

.            *************************                                                   
সূচি    


মিলনসাগর
*
আক্ষেপ
সুশীল মালতী    

.                ( ১ )

.      আবদ্ধা পিঞ্জর-বাসী,
.      আঁখি নীরে  সদা ভাসি,
কুক্ষণে গর্ভেতে মোরে ধরিল জননী  |
.       জন্মিলেই----- বোলে মেয়ে,
.       তাচ্ছল্যে দেখিল চেয়ে,
আত্মীয় স্বজন আদি গ্রামস্থ রমণী  |


.                ( ২ )

.        নারী বোলে উপেক্ষিতা,
.        বোকা হেয় অশিক্ষিতা,
দ্বিতীয় ভাগেতে হোলে শিক্ষা বিসর্জ্জন  |
.        মোর মত রামী শ্যামী,
.        কুমুদী ভাবিনী বামী,
নিয়ত  মরণ-প্রার্থী  কাঁদি অনুক্ষণ |


.                ( ৩ )

.         না মুছিতে বালা-হাসি,
.        উপাধি মিলিল  “দাসী”,
সংসার মাঝারে পশি যাবত জীবন |
.             পোহালে সে নিশীথিনী,
.         চলিনু যে একাকিনী,
ছাড়িয়া সুখদ চির পিতার ভবন  |


.                ( ৪ )

.        মুখেতে ঘোম্ টা টানি,
.        কিবা দোষে কিবা জানি,
হাতে লৌহ-বেড়ী দিয়ে করালে বন্ধন,
.        পোহালে সে নিশীথিনী,
.        চলিনু যে একাকিনী,
ছাড়িয়া সুখদ চির পিতার ভবন  |


.                ( ৫ )

.        এর নাম হোলো  “বিয়ে”,
.        পতি চলিলেন নিয়ে,
চির  তরে বধূদন্ডে হোলে দ্বীপান্তর  |
.             সে অচেনা দ্বীপ মাঝে,
.        বধূরূপী হোয়ে রাজে,
বঙ্গনারী ভাগ্যে জ্বালা ঘটে যে বিস্তর  |


.                ( ৬ )

.        সহে নানা মত জ্বালা,
.        হোয়ে নিতি ঝালাপালা,
কেহ দেয় গলে দড়ি,  কেহ বিষ খায় |
.        বাঘিনী ননদী রাণী,
.        নমস্কার হার মানি,
নিরখি আসামী বধূ আতঙ্কে শুকায় |


.                ( ৭ )

.        নাগিনী সতিনী কার,
.        প্রাণে বাঁচা ভার তার,
তাহাতে পতিটি যদি হইল মাতাল |
.        মণিকাঞ্চনের যোগ,
.        তার আর কর্ম্ম ভোগ,
বঙ্গ ঘরে ঘরে হেন সমুজ্জ্বল ভাল |


.                ( ৮ )

.       আচলে একুশ ছেলে,
.       কোথা বা জুড়াবে ফেলে,
মায়ারূপী কুহকিনী জননীর বুকে  |
.           কার বা বাসর ঘরে,
.       শমনে হরিল  “বরে”,
জীবন্তে মরিল বালা চিরতরে দুঃখে |


.                ( ৯ )

.        হা ধিক্ জনমে ধিক্,
.        বিষ খেয়ে মরা ঠিক,
তিলেক জীবন ভার------- এখনিই মরি |
.           এবার আমারে বিধি,
.        সৃজিও পুরুষ নিধি,
কাতরে চরণোপরি এ মিনতি করি |


.                ( ১০ )

.       খোকাবাবু সোণা বোলে,
.       সবে মোরে লবে কোলে,
বংশধর  সুকুমার  কত না সুন্দর  !
.           পাঁচে হবে হাতে খড়ি,
.       স্কুলে বসে  “অ  আ” পড়ি,
সে সুখ-কল্পনা  মরি  কত  সুখকর |


.                ( ১১ )

.       যৌবনে মধুর সাজে,
.       সহপাঠী  দল  মাঝে,
হরষে কলেজে সবে করিব গমন
.       এম্ , এ,  বি,  এল,  দিয়ে,
.       তবে ত করিব বিয়ে,
সরলা বালিকা বধূ রূপে অতুলন |


.                ( ১২ )

.       শ্বশুর ভবন যেই,
.       সুখদ নন্দন সেই,
না থাকিবে ননদিনী  ;   শালিকাসুন্দর -----
.       মুখে মৃদু মধু-হাসি,
.       কথা কবে কাছে আসি,
দেয় দেবে কাণে হাত, তাও মনোহর |


.                ( ১৩ )

.         মধুর নিশীথে আসি,
.       “ শ্রী মতী সেবিকা দাসী”,
নিত্য-কর্ম্ম পদ-সেবা করিবে তাহার |
.             নিদ্রায় স্বপন-দেশে,
.         ভ্রমিব হরষে ভেসে,
এ জনম দুঃখ দূরে যাবে যে আমার  |


.                ( ১৪ )

.       স্বাধীন ব্যবসা লব,
.          নবীন উকীল হব,
ধরিব মোহন বেশ ধড়া চূড়া পরি  |
.          শোভিবে চশমা চোখে,
.          রুমালে চামেলি বোকে,
ফ্যাসানে কাটিব সিঁতি সুনিখুঁত করি  |



.                ( ১৫ )

.          শোভিব সমাজ মাঝে,
.          রব দেশহিত কাজে,
সন্ধ্যায় শশাঙ্ক আমি নিজ নিকেতনে |
.           পিঞ্জরে পাপিয়া পাখী,
.           মৃদু সন্ধ্যানিল মাখি,
তুষিবে যে পিউ পিয়া মধুর কুজনে  |


.                ( ১৬ )

.         হবে ধন দিব দীনে,
.         প্রাণ ভরি দিনে দিনে,
মধুর    বচনে  সবে তুষিব সদাই  |
.              না জানি কি মহাপাপে,
.         পুড়িতেছি মনস্তাপে,
আক্ষেপ বিলাপে দিন কাটাইয়ে যাই  |

.            *************************                                                   
সূচি    


মিলনসাগর
*
জলাঞ্জলি
সুশীল মালতী    

.                ( ১ )
                      
প্রাণটা নিয়ে আর কত দিন,
.        থাক্ ব তারা কারাবাসে ?
দেখ্ ছি  নিতি পান্থরা সব,
.        কেউ বা গেল কেউ বা আসে |
  

.                ( ২ )

আমার যে আর দিন কাটে না,
.        চিত্ত-বিকার বিষম ব্যাধি,
ঔষধি দে,  ও মা শ্যামা,
.        কৃপাময়ি,  তোমায় সাধি |


.                (৩ )

থাক্ তে তোমার তিনটী নয়ন,
.        চাইবে নাকো রবে মুদে,
এ বাজারে হার হোলো মা,
.        মলেম বুঝি দেনা শুধে  |


.                ( ৪ )
                 
কেউ চাহেনা স্নেহ চোখে
.        খরা  চাওয়া হেথা ধারা,
আর পাকরি না হর-রমা,
.        জ্বোলে  পুড়ে হলেম সারা |


.                ( ৫ )

নিত্য নূতন জ্বালা সোয়ে,
.        মরমটা মোর ভস্মীভূত,
বৃথা কেঁদে দিন গেল মা,
.        আস্ বে কবে রবিসুত |


.                ( ৬ )

পাঠিয়ে দেছ তাই এসেছি,
.        ডাক্ দিলে মা অম্নি যাব,
তাই য়ে ভাবি ত্রিনয়নি !
.        হিসাব নিকাশ কি বুঝাব !


.                ( ৭ )

জলাঞ্জলি এ সংসারে,
.        দুঃখের অকূল জলে ভাসি,
দহন  জুড়া  মা তারিণি !
.        পুষ্পাঞ্জলি ------  প্রাণ নে আসি |

.            *************************                                                   
সূচি    


মিলনসাগর
*
নব বধু
সুশীল মালতী

( ১ )

অতীতল স্মৃতিতে হেরি কে তুমি রতন !
নবোঢ়া কূলের বধু,
অধরে সুহাসি মধু,
চপল হিয়ার ভাষ প্রকাশে নয়ন |
কনক ভূষণ গায়,
অলক্ত রঞ্জিত পায়,
সিঁতির সিন্দুর বিন্দু উজলে কেমন,
অতীত স্মৃতিতে হেরি কে তুমি রতন !


( ২ )

কবরীতে ফুলমালা,
কে দিল জড়ায়ে বালা,
পরিধানে মনোরম রঙ্গিল বসন,
কোমল হৃদয় তলে,
কি নব উচ্ছ্বাস চলে,
সুখ শান্তি প্রফুল্লতা মুখে বিকীরণ,
অতীত স্মৃতিতে হেরি কে তুমি রতন !


( ৩ )

পর ঘরে ভয়ে বাস,
মৃদু হাসি চুপি ভাষ,
বসনে বয়ান ঢাকা সুধীরে চলন
প্রদোষে নিশীথে ভোরে,
শঙ্কুচিতা হেরি তোরে,
ভয়ে জরসড় যবে পতির মিলন,
অতীত স্মৃতিতে হেরি কে তুমি রতন !


( ৪ )

ভ্রূকুটি দাম্ভিকা বেশে,
কথায় কথায় হেসে,
কলহ জড়ান তোর যত সম্বোধন,
পতিত্বের অভ্যর্থনা,
কভু তুমি সাধিলে না,
কেবলি ঝগড়া ঝাঁটি  ছিল আলাপন,
অতীত স্মৃতিতে হেরি কে তুমি রতন !


( ৫ )

মধুর বাসন্তী রাতি,
শশাঙ্কের স্নিগ্ধ ভাতি,
ঝিল্লিরবে মুখরিত ঘুমন্ত ভুবন |
কে তোরে স্নেহের ডোরে,
বাঁধিয়া যতন কোরে,
ঢালিত শ্রবণে মধু সোহাগ বচন,
অতীত স্মৃতিতে হেরি কে তুমি রতন !


( ৬ )

কোহিনুর পেয়ে করে,
নিতি কত অনাদরে,
দু’দিনে কোথায় হায় দিলি বিসর্জ্জন ;
পেয়ে নিধি চিনিলিনা,
রে অধমা ভগ্যহীনা,
সে সকল কর্ম্মফল ভুগিচ এখন |
অতীত স্মৃতিতে হেরি কে তুমি রতন  !


( ৭ )

অতীত আমারে হায়,
আপনিই  চেনা  দায়,
কোথা মধু নববধু জীবন সে মন ?
ভেঙ্গেছে স্বপন ঘোর,
জ্বলিছে হৃদয় মোর,
নিশিদিন এ সংসার করার রোদন,
বর্ত্তমানে দীনাহীনা অভাগী এখন  |


( ৮ )

সুখের সে বধূ-কালে,
জড়ায়ে কুবুদ্ধি-জালে,
করি নাই পতি-পায় আত্ম-সমর্পণ |
দুটো দিন অনিচ্ছায়,
কাটিয়া গিয়াছে হায়,
বৈধব্যতে ভেঙ্গে চূরে  গড়িল এ মন,
বর্ত্তমানে দীনাহীনা অভাগী এখন |


( ৯ )

অকালে  কঠোর  হৃদি ,
লভে  নাই প্রেম নিধি,
কখনো  ভাবিনি পতি দুর্ল্লভ রতন |
তুষানলে  পুড়ি ধীরে,
ভাসি সদা অশ্রু নীরে,
হাতে পেয়ে হতাদর, এখন রোদন----
কঠোর নিয়তি লেখা, ভীষণ জীবন !

.                                      *************************                                  
সূচি    


মিলনসাগর
*
নবীনচন্দ্র
সুশীল মালতী

( ১ )

খসেছে নবীন-চাঁদ কাব্য কাননের,
জন্ম গোধূলিতে উঠি,
বাল্য সাঁজে ছুটাছুটি.
মধুর যৌবন রাতে দাস কল্পনের ;
কল্পনা উচ্ছ্বাস বায়,
হৃদয় মাতায়ে হায়,
গেয়েছিলো মধুময় গীতি কবি ঢের,
কাল-রাহু মৃত্যু আসি,
সে নবীন শশী গ্রাসি,
ছিলত রজনী কেন শেষ সে শীতের!
খসেছে নবীন-চাঁদ কাব্য কাননের |


( ২ )

হারায়েছি মোরা হায় সে কবি-রতন !
এ সংসার খেলাঘরে,
নরনারী খেলা করে,
পুতুলের  মত  প্রাণ  ছুটিছে  কখন ;
দুদিন করিয়া কেলি,
গীতি ছড়াইয়া ফেলি,
মৃত্যু-মুখে যায় আসে জড়ায়ে জীবন |
অবকাশ রঞ্জিনীর,
“সুখী কে”  গো সে গীতির,
মধুর ললিত তানে তিরপিত মন,
হারায়ে ফেলেছি মোরা সে কবি-রতন |

( ৩ )
কল্পনে! কপালে বাজ পড়েছিলো তোর,
“রৈবতক”  “কুরুক্ষেত্র”,
“প্রভাসে” পড়িলে নেত্র,
পড়িতে সে কৃষ্ণপ্রেম সবে হয় ভোর ;
“পলাসীর যুদ্ধ”  ছবি,
আঁকিল মসিতে কবি,
ছবি রাজে, কবি হরে সে কৃতান্ত চোর,
কল্পনে কপালে বাজ পড়েছিলো তোর !

( ৪ )

কেন মানবের হেন ক্ষণিকের প্রাণ ?
ধরি বর্ণ-পরিচয়,
ভাষা সাথে ভাব হয়.,
বর্ণবোধে বোধ-জ্ঞান লভিনু সন্ধান  |
একে একে কবিদের,
পড়িলাম গন্থ ঢের,
পাঠেই প্রীতিতে ভরি মধুময় গান,
মার পদ-বৃন্ত ‘পরে,
সৌরভ গৌরব ভরে,
ফুটিয়া গাহিল কত বাণীর সন্তান,
কেন মানবের হেন ক্ষণিকের প্রাণ ?

( ৫ )

একে একে ঘুমাইল কতগুলি কবি,
দেখা চেনা ঘুমাইল,
কৃতান্ত  হরিয়া নিল,
ভূতপূর্বের কত শত রেখে যান ছবি,
“মধু”র মাধুরী ঘটা,
কবিতায় “হেম” ছটা,
“নবীনের”  নব  রস মধুময়  সবি      
“ দীনবন্ধু”  “ঈশ্বরের”
ছন্দে মধুরতা ঢের,
উপন্যাসী সে বঙ্কিম শুয়েছে জাহ্নবী,
বিদ্যার সাগর কত ঘুমাইল কবি |

( ৬ )

কাঁদিবনা মোরা আর মুছি আঁখিনীর,
বুঝিগো  স্বরগ’পর,
আছে ঠাঁই মনোহর,
কুসুমের গৃহ তায় কুসুম প্রাচীর,
পারিজাত গন্ধরাশি,
মলয়ায় আছে ভাসি,
সঙ্গীতের সম তান সে মন্দাকিনীর,
কুপিছে অপ্সরাগুলি,
অমিয় মাখান বুলি,
বুঝিগো সে স্বর্গধাম আনন্দ-মন্দির.
আর না কাঁদিব মোরা মুঝি আঁখি-নীর |

( ৭ )

উদ্দেশে প্রণমি পদ প্রেমিক বিভুর,
দেখিনা জানিনা আজ,
শুনি সর্ব্বভূতে রাজ,
শুনিয়াছি আছে কোথা আনন্দের পুর,
তেমনি মধুরে মিশি,
থাকিতে দিবস নিশি,
তাই বুঝি যায় সবে দেশ বহু দূর |
ত্রিতাপ যন্ত্রণা ভরা,
কারাগার সম ধরা,
শোক তাপ দুঃখে হৃদি হয় ক্ষণে চূর,
উদ্দেশে প্রণমি পদ প্রেমিক বিভুর |

.                                         *************************                                  
সূচি    


মিলনসাগর
*
টোপাকুল
সুশীল মালতী

( ১ )

স্কুলের ধারে পুকুর পারে,
.                গাছটি ভরা টোপাকুল,
সঙ্গে সাথী লোভী সবে,
হরষ সরস কলরবে
কুলতলাতে প্রাণটা প’ড়ে,
.                হ’য়ে যেত লেখার ভুল |

( ২ )

টিফিন্ খেতে ঘন্টা না ত ,
.                কুলতলাতে হরির লুট,
ছুটে গিয়ে কুড়িয়ে খাওয়া,
লোলুপ ভাবে ঊর্দ্ধে চাওয়া,
ছুটি পেলেই দলবলেতে
.                কুলতলাতে লম্বা ছুট !

( ৩ )

বিষম নাড়ায় কুলগুলি সব,
.                টুপ্ টুপা টুপ্ তলায় পড়ে,
লুণ্ না জোটে অন্মি মুখে,
চোখ-ঝাম্ টি দিয়ে সুখে,
ধাওয়া ধায়ি খাওয়া খায়ি,
.                কেউ কারুকে সরায় চড়ে |

( ৪ )

গন্ডগোলে কর্ণ-পথে
.                পৌঁছিলে পর ঘন্টাধ্বনি,
হাঁপিয়ে ছুটে ক্লাসে এসে,
ম্যাপে বোর্ডে মন নিবেশে,
লিখি পড়ি আমরা সবে,
.                বেতের ভয়ে লক্ষ্ণীমণি |

( ৫ )

সে দিন কেন্ গেল আহা,
.                প্রাণটা কোথা হারিয়ে গেছে,
ছোট খাট সে কলেবর,
সরল মধুর মিষ্টি সে স্বর,
কোমল তরল বিমল হৃদয়,
.                কোন চোরেতে কেড়ে নেছে |


( ৬ )

টোপাকুলের গাছ গিয়েছে,
.                পুকুর-বুকে চাপা মাটি,
সে সুখ হোতে ছিনিয়ে নিয়ে,
পর ধ’রে “বর” বিয়ে দিয়ে,
পরিণামে পোড়া ভালে,
.                জাগল শুধু কান্নাহাসি |

( ৭ )

কান্না কিনে কাঁদ্ ছি বোসে,
.                ভাবছি কত জ্বলেছি কত,
বাল্যকালের মধুর জীবন,
কৈশোরেতে ভাঙল স্বপন,
শৈশবেতে সুখে মেতে,
.                সে দিনগুলিই  মনের মত |

( ৮ )

সঙ্গিনীরা সবাই দুঃখী,
.                তেমন হৃদয় আছে কি আর !
কেউ বা ক্ষণিক খেদ গো করে,
কেউ দুঃখিনী  কেঁদে মরে,
ফল ফোলেছে কর্ম্মক্ষেত্রে,
.                জীবন পথে যেমন যার |



( ৯ )

কূল দে কালী কুন্ডলিনী,
.                অকূলে যে যাচ্ছি ভেসে
দীনাহীনা এ অধমমার,
তারিণি ! তোর চরণই সার,
ভবের হাটে ভ্যাস্তা আমি,
.                কু-যাত্রাতে এবার এসে |



( ১০ )

ভবনদীর কূলে বসি,
.                কূল দে তারা ডাকি তোরে,
ক্ষয় হতেছে জীবনের মূল,
কচ্ছি সকল কাজেতে ভুল,
কবে মৃত্যুদিনে শণ্ভু এসে,
.                হ’রবে জীবন ত্রিশূল ধ’রে |

( ১১ )

মনটা আমার থেকে থেকে,
.                কেমন যেন শিউরে উঠে ;
যার যে বৃথা দিন-তারিণি |
কেমন করে তোমায় কিনি,
কোথায় তারা, কোন সুপথে,
.                তোমার চরণ কমল ফোটে |


( ১২ )

কৃপা সুগন্ধিতে মজি,
.                মত্ত হ’য়ে মন অলি,
রক্ত কমল চরণ’পরে,
প’ড়ে থাকুক চিরতরে,
প্রেমময়ীর চরণামৃতে,
.                প্রেমে জীবন যাবে গলি |


( ১৩ )

বাজ্ রা পোরা টোপাকুলে,
.                মেটেনা আর মানস ক্ষুধা,
তেমনতো আর মিষ্টতা নাই,
আজ( ও ) বরষ বরষে খাই,
স্কুলের ধারে পুকুর পাড়ে,
.                ছিল গাছে ঢালা সুধা |

.                 *************************                                                 
সূচি    


মিলনসাগর
*
ঘেঁটুফুল
সুশীল মালতী

( ১ )

সুন্দরী বসুধা বুকে,
ফুটে হাসে মন-সুখে,
গোলাপ যূথিকা বেলি চামেলি বকুল,
চম্পক সেউতি জাঁতি,
ফুল-কুলে শ্রেষ্ঠ জাতি,
কমল কুমুদী এরা শোভায় অতুল |
মল্লিকার মধু শোভা,
সূর্য্যমুখী মনোলোভা,
সুমধুর পরিমলে দেবতা আকুল |

( ২ )

না পোহাতে দুট’ রাতি,
মন্দিরে নিবিল বাতি,
পালালো দেবতা ফেলি উত্সর্গীতা ফুল,
আমি ক্ষুদ্র ফুলকণা,
মনে বুঝি ধরিল না,
জানিনা পবিত্র কত চরণের মূল |
সে চরণ ছাড়া হ’য়ে,
রয়েছি যাতনা স’য়ে,
চন্দন-চর্চ্চিত দেহে মাখি এবে ধূল |

( ৩ )

দেবতার দুটি পায়,
ঝরিলে এ দুঃখ যায়,
হইতাম ফুলফুলে ভাগ্যবতী ফুল,
এযে কাঁদি মন দুঃখে,
আছি এই পোড়ামুখে
শুক্ নো নিরস হৃদি বিষাদে ব্যাকুল |
সকলের দূর ছাই
জুড়াবার স্থান নাই,
সংসারে বালাই আমি, শমনের তুল |

.                                     *************************                           
সূচি    


মিলনসাগর
*
প্রভাতী
সুশীল মালতী

( ১ )

মধুর কিরণ ঝিকিমিকি তাতি,
উদিল অরুণ পোহাইল রাতি,
গাহিল বিহগ মধুর   প্রভাতী,
প্রাণারাম বিভুগান |

( ২ )

ফুটিয়া উটিল কুসুম কুঞ্জে,
বিটপী-ব়ৃন্তে পুঞ্জে পুঞ্জে,
বিভোর মধুপ সোহাগে গুঞ্জে,
তুলি গুন্ গুন্ তান |

( ৩ )

বহিছে মৃদুল মলয় বায়,
ফুল পরিমল মাখিয়ে গায়,
নাচায়ে পল্লব তরু শাখায়.,
কি সুন্দর বিশ্ব-শোভা !

( ৪ )

কলনাদে নদী বহিয়ে যায়,
মরাল কমল হৃদে ভাসায়,
লহরী তুলিয়ে বিভুগুণ গায়,
মরি কিবা মনোলোভা |

( ৫ )

জাগিল বসুধা প্রভাত পরশে,
ধরিল সুবেশ মাতিল হরষে,
লুকায়ে খদ্যোৎ মালিকা উরসে,
পরিল কুসুমহার |

( ৬ )

ত্যজিল সুন্দরী তিমির বসন,
পরি নব বাস সোণালি বরণ,
সাজিল-সুন্দর রূপে অতুলন,
মধুর সুষমা তার |

( ৭ )

বহে শৈল বুকে মৃদুল নির্ঝর,
অবিরাম ধারা ঝরে  ঝর,
কি গীতি গাহিছে প্রাণ-মন-হর,
বিজন বিপিনে বালা |

( ৮ )

মহীরুহ হৃদে লতিকা সুন্দরী
কোমলে কঠিনে মধুর মাধুরী,
প্রভাতে কনক-বরণী  বল্লরী,
অরুণ কিরণ ঢালা ||

( ৯ )

মধুর বিমল প্রভাতী  শোভায়,
মাতা কে দিয়েছে বিভু হে আমায়,
শোভায় আধার তব তুলিকায়,
শোভেছে আধার তব তুলিকায়,
শোভিছে বসুধা সতী  |

( ১০ )

কত মধুময় তুমি পরমেশ,
লুকান না রয় মাধুরী অশেষ,
বসন্তে বসুধা ধরেছে কি ক্লেশ,
প্রেমময় বিশ্বপতি !

( ১১ )

তরু-লতা-চ্যুত মুকুলের বাস,
চারু কুসুমের সুমধুর হাস,
কুহু পিউ মধু বিহগের ভাষ,
জাগায় পরাণে প্রীতি |

( ১২ )
উদ্দেশে প্রণমি তোমা প্রেমময়,
মধুময় লীলা তব লীলাময়,
বিভোরা বসন্ত  প্রভাতী সময়,
গাহি এ প্রভাতী-গীতি |

.                                     *************************                           
সূচি    


মিলনসাগর
*
শিক্ষিতা
সুশীল মালতী

( ১ )

সুশিক্ষার শত গুণ দেখিবারে পাই,
সাধ আশা শিক্ষা লভি অপরে শিখাই,
সুশিক্ষা সুফল হয়,
গৃহধর্ম্ম সুধাময়,
অশিক্ষিতা গব্বিতা গো বড়ই বালাই  |

( ২ )

নাড়া চাড়া  “ক, খ”,  বই,
শিক্ষালাভ শেষ ওই,
তারপর মেজে ঘসে “প্রণয় পত্রিকা”,
সুরসিকে সুসৌখিনে,
আঠার পোষাক দিনে,
শ্রীমতী সুবুদ্ধিহীনা পলাশ-কলিকা |

( ৩ )

বটতলা আবিষ্কারে,
গেল দেশ ছারখারে,
দামে কম গুড়েমন্ডা পড়িতে সহজ,
কোথা সে পুরাণ পুরু,
সংস্কৃত কটু গুরু,
কেবা পড়ে হিড়্বি বিড়ি, এত কি গরজ !

( ৪ )

বাবুনী সোহাগে গড়া,
মুখে পেটে মিষ্টি ছড়া,
বেয়াড়া ঢংয়েতে কাটে অর্দ্ধেক জীবন----
শুধু কুশিক্ষার দোষ,
হৃদে মম এ আপ্ শোস্,
মোদের বয়স কালে এমনি পতন |

( ৫ )

ভাঙ্গিলে যৌবন সরা,
পরীক্ষার স্থল ধরা,
দেয় সমুচিত সাজা জ্ঞানেতে তখন,
অথবা কাহার হায়,
সে দশা রহে বজায়,
বিপরীত বুদ্ধি বৃদ্ধা হইল যখন  |

( ৬ )

অর্দ্ধাঙ্গিনী ভার্য্যা জায়া,
আধা প্রাণ আধা কায়া,
গুণবতী শুদ্ধমতি সুমিষ্ট ভাষিণী,
গৃহলক্ষ্ণী হৃদি-লক্ষ্ণী,
মনোহর শুক পক্ষী,
শিক্ষিতা ঘরণী হয় আনন্দদায়িনী |

( ৭ )

অল্প বিদ্যাবতী নারী,
তার চেয়ে গো-বেচারি,
ভাল বটে একেবারে অচেনা অক্ষর |
অল্প জলে চুনা-পুঁটি,
করে বড় ছুটাছুটী,
অগাধ সলিলে রুই মধুর সন্তর |

( ৮ )
মোর শক্ত খেদ কথা,
ঔষধিতে তিক্ত যথা,
বুঝিলে বুঝিবে ভাল বুদ্ধিমতিগণ
সুশিক্ষার সুধা ফল,
কুশিক্ষায় হলাহল,
হের দেখ “সাবিত্রী” ও “মন্থরা” দুজন |

( ৯ )

সকলে সকলে দেখ,
সবে মিলি মিশি শেখ,
সবে হই এস মোরা মধুর মোহন,
নাহি মোর শক্তি হায়,
শুধু সাদ ক্ষ্যাপা-প্রায়,
কি করিব আমি বড় দীনা হীনা জন |

.                                     *************************                           
সূচি    


মিলনসাগর
*
উত্তপ্ত-হৃদয়
সুশীল মালতী

( ১ )

ভব-ভান্ডে কি বিষাক্ত
সংসার-মদির,
তারা গো তিয়াষা দিলি,
হতাশে পুড়ায়ে নিলি,
জ্বোলে পুড়ে ভস্মীভূত,
মরম অধীর ;
আর যে পারিনা শ্যামা,
মুছিতে এ নীর |


( ২ )

প্রেমময়ি | ব্রহ্মময়ি,
সবই তব হাত,
মদির-সংসার নরে,
বিভোর বেঁহুস করে,
ছুটে য়ায় নেশা, প্রাণে
পাইলে আঘাত
তিমিরবরণি | নাশো
অজ্ঞানতা রাত |


( ৩ )

রোদন পূরিত আজি
আঁধার ভবনে,
আজিকের আয়োজন,
বাজে প্রাণে কি ভীষণ,
অনিত্য সংসার ছার,
জাগে যে গো মনে,
নেশায় বিভোর নর,
এ মায়া-কাননে |


( ৪ )

সংসার কারায় তারা,
দিবি কত তাপ,
ধরে না মরমে আর,
নয়নে শোকাশ্রুভার,
দাও শান্তি শান্তিময়ি,
ত্যজ অভিশাপ,
দাও জ্ঞান, দাও দৃষ্টি,
চিনি পুণ্য পাপ |


( ৫ )

ফুলের মতন ছিল
শৈশবে পরাণ,
কৈশরে পোড়ালি তারা,
এবে ভস্মীভূত পারা,
ধূ ধূ প্রজ্জ্বলিত জ্বালা,
হৃদয় শ্মশান,
লেখনীর মুখে ফোটে,
বুকভাঙ্গা তান |


( ৬ )

কেন মা !   না দিলি  মোরে
ফেলি মরুভূমে,
উত্তপ্ত বালুকারাশি,
মধ্যাহ্ন তপন আসি,
জুড়াইয়ে দিত মোরে,
মরণের ঘুমে,
পিপাসিত প্রাণ তৃপ্ত
হোতো মৃত্যু চুনে |


( ৭ )

শান্তির প্রথম তীর্থে,
পতির চরণ,
ভবের মেলায় এসে,
ঠেকিনু সে পদে ভেসে,
দুদিনে ভাঙিয়া গেল,
সে মহা স্বপন,
লাভ শুধু প্রাণভরা,
হতাশ বেদন |


( ৮ )

তীর্থফল আনি এক,
বাঁধিয়া আঁচলে,
চুমিয়া শিশুর মুখে
পিতা ধরিলেন বুকে,
সে স্নেহ আদর হেরি
হৃদয়  উথলে,
অভাব জানেনি শিশু
কচি হৃদিতলে |


( ৯ )

কোথা স্নেহময় পূজ্য
সে পিতা আমার,
হেমন্ত প্রভাতীকালে,
মাতার বিমল ভালে,
বৈধব্য কালিমা ঢেলে,
নিল শোভা তাঁর,
পিতৃহীন ভ্রাতা ভগ্নী------
করি হাহাকার |


( ১০ )

অতীব স্নেহের সুত,
সুতার নন্দন,
“ধীরু”  “বিজু” এরা দুটী,
কাঁদিল ধূলায় লুটি,
হারায়ে ফেলেছি মোরা,
কসিত কাঞ্চন,
দশপূজ্য পিতা মোর-----
অমূল্য রতন |


( ১১ )

নাহি আমি পিতৃহীনা,
পিত পরমেশ !
পিতার পিতাও তুমি,
ও পদ কলম চুমি,
মত্ত হোক্ মন-অলি,
তৃপ্তি সে অশেষ,
মরণে মিলিবে মোর.,
সে আনন্দ দেশ |


( ১২ )

যথা শান্তি সুধা খাটী
নাহি ফাঁকি জ্বালা,
সে আনন্দধামে যেতে,
বাকী এ অশান্ত প্রাণে,
গাঁথি নাম মালা,
সারা-ধন  প্রাণারাম,
মোর কালী কালা  |


( ১৩ )

ধরায়. আসিয়া তারা,
সহি কত দুঃখ,
পূর্ণ হোক্ ইচ্ছাময়ি,
তব ইচ্ছা হোক জয়ী,
সহিতে শকতি দাও,
বেঁধে দাও বুক,
দুদিনের খেলা হেথা,
কি দুঃখ কি সুখ  |


.                                     *************************                           
সূচি    

** ১৩১৫ সাল , ২৬শে কার্ত্তিক , বুধবার , পিতার স্বর্গারোহণ উপলক্ষে |


মিলনসাগর
*
বাসন্তী-ষষ্ঠী
সুশীল মালতী

.                ( ১ )

বাসন্তী যষ্ঠীর নব প্রভাতী কিরণ,
.        ছড়ায়ে সুষমা হাসি,
.        কুসুম হইল বাসি,
মৃদু লমীরণ আসি করি আবাহন,
.        সোনার প্রতিমাখানি,
.        নির্ম্মল নলিনী রাণী,
শৈশবে সঙ্গিনী মম সোদরা রতন |
.        শ্মশানে চিতার পরি,
.        প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করি,
অনল সাগরে শেষে হোলো বিসর্জ্জন,
সরেনা লেখনী , ঝরে যুগল নয়ন |


.                ( ২ )

বিষাদে গাহরে বীণ্ মরম বেদন,
.         অন্তিমে মধুর বেশ,
.         এলায়ে পড়েছে কেশ,
উজল সিঁন্দুর ঢালা সিঁতী সুশোভন,
.        ভাগ্যবতী এয়োরাণী,
.        সে চারু প্রতিমা খানি,
কি ঘুমে বিমল সুখে মুদিল নয়ন,
.       আর না সে দিল সাড়া,
.       সে হোলো জগত ছাড়া,
পিত পরমেশ পায় আত্মার মিলন,
চির তরে হারায়াছি ভগিনী রতন |


.                ( ৩ )


শৈশবের কোলে মোরা আছিনু যখন,
.        কত মধুরতা ভরা,
.        হাসিমুখ  মনোহরা,
শান্তিরসে  ডুবে ছিল ক্ষুদ্র প্রাণ মন,
.         খেলা-ঘর পাতি হায়,
.         দুজনে খেলেছি তায়,
ক্ষণে সে মধুর দ্বন্দ্ব বাধিত কেমন,
.          মধুর  সরল হাসি,
.          ভাঙ্গিয়ে বিবাদ রাশি,
কোথা সে শৈশব, কোথা ভগিনী রতন |


.                ( ৪ )

কুক্ষণে কৈশোর দোঁহে দিল দরশন,
.        সে গেল কাঁদিয়া চ’লে,
.        হা-হুতাশে কত ব’লে,
রোগ শয়নেতে কত বিলাপ রোদন,
.        শিশু পুত্র কন্যা লাগি,
.        রোগ শয়নেতে জাগি,
মাগিত বিভুর পায় আপন জীবন,
.        দোঁহারি কৈশোর বেলা,
.         অসম্পূর্ণ ভব খেলা,
দোঁহারিতে সুখসাধ হোলোনা পূরণ,
সে গেল কাঁদিয়া চলে,  কাঁদিছে এ জন |

.                ( ৫ )

মরণে অনন্ত তৃপ্তি, ভার  এ জীবন,
.        দুর্ভাগা অধমা অতি,
.        জানি না,  না চিনি পতি,
অজ্ঞানে দেখিনু পতি, অভাগা এখন-------
.        সজ্ঞানে কাঙ্গাল হোয়ে,
.        কত মন-ব্যথা স’য়ে,
মায়া স্নেহে ঝরিতেছে যুগল নয়ন |
.         ছিঁড়িয়া আশার পাল,
.         ছাড়িয়া সুখের হাল,
মনতরী চাহে শুধু শ্রীকৃষ্ণ-চরণ,
কে জানে এ ভবে ছুটি পাইব কখন |


.                ( ৬ )


এক পথে যাওয়া, কেহ রবেনা ত মন,
.         দিদি মোর গেল  আগে,
.         আমি যাব পরভাগে,
সেখানে উভয়ে   পুনঃ হবে দরশন,
.         এ সংসার পান্থবাসে,
.         বিদেশী অতিথি আসে,
দুদিনে চলিয়া যায়,  স্থায়ী কোন্ জন !
.         এ ধরাটি জেলখানা,
.         কৃতান্তের পাশে থানা,
কৈফিয়ৎ কিবা দিব হোলে দরশন,
করুণা নয়নে চাও প্রভু নারায়ণ |



.         *************************                                                   
সূচি    

**স্বর্গীয়া দিদির স্মৃতি-গাঁথা |  ১৩১৫ সাল, বৈশাখ, বাসন্তী-ষষ্ঠী |


মিলনসাগর