কবি সুশীল মালতীর কবিতা
*
চিন্তামণি
সুশীল মালতী
     
( ১ )

অজ্ঞানতা-জালে জীব অন্ধ অনুক্ষণ,
ভুলে থাকে গম্যস্থান কি মোহে মগন ;
মায়ার খেলায় তোর নাহিক বিশ্রাম,
ভোগ্য-দ্রব্যে সদা প্রীতি, তৃষা অবিরাম |


( ২ )

মরীচিকা সম ভোগ্য-বস্তু যে ধাঁধিছে,
মৃগ মৃগী সম জীব তাহাতে মরিছে ;
সজাগ দেহেতে পঞ্চ ইন্দ্রিয় প্রবল,
অবিদ্যার শোক তাপ ভুঞ্জে অবিরল |


( ৩ )

চিনি বালি সংমিশ্রণে অসারেতে সার,
পেতেছেন মহামায়া এ ভব সংসার,
রহস্যময়ীর খেলা নহেত সরল,
জটিল যন্ত্রণাময় বড় কোলাহল |


( ৪ )

অন্তরে কোথায় গুপ্ত চিন্ময় সুন্দর,
রাজিছেন এক ব্রহ্ম সবার ভিতর,
এক ব্রহ্ম পরমাত্মা অসংখ্য খন্ডেতে,
রাজিছেন মূর্ত্তিভেদে মানবে পশুতে |


( ৫ )

চৈতন্য স্বরূপ আমি, আমিই অজ্ঞান,
পরমাত্মা প্রাণ মম, জীবাত্মা প্রমাণ
রমণীয় দৃশ্য আছে আমার ভিতর,
শুক্তি মাঝে গুপ্ত যথা মুকুতা সুন্দর |


( ৬ )

মতান্তর নানা মত ধাঁধিছে সবায়,
পাপ পুণ্য বুঝে উঠা হেথা বড় দায়,
গুরুবাক্য পন্থা  মাত্র, বিশ্বাস সহায়,
আত্মজ্ঞান বিনা বল, কেবা মুক্তি পায়!


( ৭ )

গুরু বলে সুসন্ধান, আত্ম বলে লাভ,
দেন গুরু বুঝাইয়া জলপূর্ণ “ডাব”
জ্ঞান অস্ত্রে ভেদি তাহে, লভ মধুরতা,
হ’ মন ! মনের মত ত্যজ অলসতা |

( ৮ )

সাধি তোর পায়ে মন, ত্যজ অজ্ঞানতা,
বিবেকের পথে রহ, ত্যজ দুর্ব্বলতা,
কাদা-লিপ্ত মর্ম্ম কূপে পরমাত্মা মণি,
রে কাঙ্গাল ! সে ধনেতে হ’রে মহাধনী |


( ৯ )

বিষয় বৈভব সে যে অনন্ত অক্ষয়,
ব্যবধান ভ্রম ঘুচে হবি ব্রহ্মময়,
ত্রিতাপ সংসার-তাপ যাবে তোর ঘুচে,
লভ মণি ভক্তি জ্ঞান, -- ধুয়ে চিনে মুছে |


( ১০ )

জীবাত্মা জড়িত আমি চৈতন্যস্বরূপ,
আমি দীন ঋণী-প্রজা, আমিই ত ভূপ,
মহাভুল --- ভুলে  মূলে ধরিতে না পারি,
ভুলে ভেসে মায়া মোহে হেরি ভববারি |


( ১১ )
জীবনের কূল ব্রহ্ম, তিনি পারাবার,
সে কূলে ঠেকিলে বল কিবা চিন্তা আর ?
চিন্তামণি মণি চিন্তা, শুধু চিন্তা “মণি”
চিন্তিয়ে পাইলে মণি, হবি মহাধনী |


( ১২ )

সে ধনে নিবৃত্তি, শান্তি, স্থিতি, সন্মিলন,
ঘুচে যাবে ব্যবধান এ দেহ-বন্ধন,
জ্ঞান-যোগে লভ মণি ত্যজ অজ্ঞানতা,
ঘুচে যাক সে আলোকে দুঃখ মলিনতা |


( ১৩ )

জীবাত্মা জড়ায়ে এসে পরমাত্মা ধন,
ভব-হাটে কোলাহলে খেলে অনুক্ষণ,
কে তুমি ? জ্ঞানের আঁখি মেল একবার,
ঘুচে যাবে আমি তুমি, হবে একাকার |

.                     *************************                    
.                                                                                
সূচি    


মিলনসাগর
*
স্বপ্ন-মন্দির
সুশীল মালতী
  
( ১ )

মধুর মোহন মরি বরষার নিশি,
চমকি বিজলী যায় জলদেতে মিশি,
ঝিমি ঝিমি, ঝুম্ ঝুম্ ,
ভরা বাদলের ধুম,
প্রকৃতি মাধুরী-লীলা দুনয়ন,
উপাধানে ত়ৃপ্তমনে করিনু শয়ন |


( ২ )

নিঝুম নীরবে আসি আচ্ছন্নের তীরে,
সুষুপ্তির কোলে উঠি স্বপন-মন্দিরে,
অঘোরে ঘুমায়ে থাকি,
ফুটিল মরমে আঁখি,
দেখিনু মধুর এক “কুসুম-সহর”----
ফুলে ফুলে ফুলময়, বড় মনোহর |


( ৩ )

কুসুম পাহাড় শোভে,  পরাগ তটিনী,
গোলাপী গোলাপ-ধূলি অতি সুশোভিনী,
মোহিত বিহ্বল মন,
বসি রই বহুক্ষণ,
অলিকুল গুঞ্জরিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ধায়,
তাদেরি কুসুম-রাজ্য বিরাজে তথায় |


( ৪ )

অলি মধুমক্ষিগুলি মোরে নিরখিয়ে,
পাপিয়া বিহগিটিকে এল সনে নিয়ে,
ঝঙ্কারিয়ে সুমধুর,
পাপিয়ার মধু সুর,
সুধায়---“কেমনে তুমি আসিলে হেথায় ?”
কহিনু ---“কি জানি, কেবা আনিল আমায় |


( ৫ )

হাসিয়া বিহগি “পিয়া”  অতি সমাদরে,
“এস সহচরি !”     বলি দুবাহু প্রসারে,
লইল হৃদয়ে টানি,
চকোরী হইনু মানি,
পরে করে ধ’রে লয়ে চলে সযতনে,
মধুর সুষমা-ভরা কুসুম ভবনে |


( ৬ )

সে দেশ সৌন্দর্য্যময়, চিত্ত বিনোদন,
দীনাহীনা বেশ মম বিশুষ্ক বদন ;
পরাগের সরোবরে,
অবগাহি কলেবরে,
দিল পিয়া ফুলমধু করিনু সেবন,
পিয়ে মধু প্রাণ মন মোহিল কেমন |


( ৭ )

করে ধরি লয়ে চলে সোহাগী পাপিয়া,
উপনীতা মন্ত্রিপদে দোঁহেতে আসিয়া,
“বসন্ত” পাপিয়া পতি,
সেনাপতি হর্ষমতি,
প্রণমি নেহারি তাঁর ফুল্ল প্রাণ মন,
বসিতে পাইনু এক কুসুম আসন |


( ৮ )

পিয়া গিয়া বসন্তের দুটী করে ধরি,
চুপি চুপি বলিল কি পুলকেতে ভরি,
পরক্ষণে সেনাপতি,
সুকোমল স্বরে অতি,
মম পরিচয় চান মধুর হাসিয়ে,
দাঁড়াল পাপিয়া রাণী নিকটে আসিয়ে |


( ৯ )

“কেমনে আসিলে তুমি স্বপন সহরে ?”
সুধালেন সেনাপতি সুমধুর স্বরে ;---
“সংসার ফেলিয়ে আস,
কারে সেথা ভালবাস,
সংসারে কে তব প্রিয় আপনার জন ?
পরিচয় প্রদানিয়ে তৃপ্ত কর মন |”


( ১০ )

প্রণমি কহিনু,-------আর যাবনা তথায়,
সেথা কই ?   কেহ ভাল বাসেনা আমায়,
সুকঠিন সে সংসার,
বাস করা বড় ভার,
জরা, মরা ভরা ধরা অসার কেমন,
মাত্র তথা আছে মোর কুমার রতন |


( ১১ )

নিতান্ত অসার----মিছে সংসার প্রবাস,
পড়েছে গলায় এক মায়া-নাগপাশ
দারুণ দায়িত্ব তার,
কর্ত্তব্যের গুরুভার,
আমার মস্তকোপরি করিয়া অর্পণ,
পশিল মরণ-রাজ্যে জীব এক জন |


( ১২ )

অসার অনিত্য দেহ করিল লুন্ঠন,
আপনি স্বেচ্ছায় দান না করে গ্রহণ ;
পরিণয়ে পরিণাম,
মহা শূন্য ভোগধাম,
ঐহিক সংসারে নাই আমার আলয়,
জ্ঞানী গুণী সুখী হোক্ বালক তনয় |


( ১৩ )

“তথাস্তু” বলিয়া মন্ত্রী করেন প্রস্থান,
পিয়া-রাণী সনে চলে প্রফুল্ল বয়ান ;
মালতী ফোয়ারা ওঠে,
মধুর সুবাস ছোটে,
ফুল ফোয়ারার তলে আসিয়া বসিনু,
এক রাশ ফুল্ল ফুল চয়ন করিনু |


( ১৪ )

গাঁথিনু মালিকা এক মনোমত করি,
হাসিয়া সুধালে মোরে কুসুম সুন্দরী,
“রচিলে কাহার তরে,
যতনে সোহাগ তরে,
কার গলে দিবে তুলে জানিতে মনন,”
কহিলাম ----“সাধে গাঁথি, জানিনা কারণ |”


( ১৫ )

ধীরে চলিলাম উঠে ভবন ভিতরে,
অপূর্ব্ব সৌন্দর্য্য রাশি বিমোহিত করে
তমালে জড়িত লতি,
     হাসে তায় ফুল-সতী,
মধুর মধুর বয় বসন্ত মলয় ;
আনন্দ মঙ্গলপূর্ণ কুসুম আলয় |


( ১৬ )

শোভা হেরি ধীরে চলি আবেশেতে ভরি,
বারে বারে অনুমানি---- হয়েছি চকোরী ;
ভবন ঘুরিয়া শেষে,
ফুল-গেহ মাঝে এসে,
বিস্ময়ে হরষে যেন হইনু কেমন ;
ধীরে ধীরে মুদিলাম যুগল নয়ন |


( ১৭ )

ধরেনা নয়নে শোভা ধরেনা হিয়ায়,
কুসুম-পর্য্যঙ্কে “চন্দ্র”  অঘোরে ঘুমায় ;
ঘুমন্ত শশাঙ্ক রাজ,
বিহ্বল নিরখি আজ,
ফুলরাজ্যে “রাজা চাঁদ” মধুর মোহন,
ঘুমন্ত চাঁদের রূপে ভরেছে ভবন |


( ১৮ )

বিহ্বল হরষে ফুল্ল  তৃপ্ত প্রাণ মন,
নিরখি সকল মম বাসনা পূরণ,
সোহাগে কুসুম হার,
পরানু গলেতে তাঁর,
চন্দ্র পদতলে বসি হইনু শীতল,
অনিমেষে হেরে আঁখি শ্রীমুখকমল  |


( ১৯ )

গর্জ্জিল জীমুত তথা বাঁশরীর সুর,
যূথিকা ফুলের বৃষ্টি হল ঝুর্ ঝুর্ ;
নীরবে একাকী চুপে,
মোহিত বিহ্বল রূপে,
মনে ওঠে ধীরে ধীরে বাল্য-পরিণয়,
বহু অনুরোধে মালা যেচে কে-সে লয় !


( ২০ )

বাসনা-বিমুক্ত প্রাণ শুধু রূপে ভোর,
মালিকা দিলাম চাঁদে করিয়া আদর ;
বসিনু শীতল হয়ে,
দেখি রূপ রোয়ে রোয়ে,
কহিলাম নিজ মনে----“ ঘুমন্ত রাজন্ !
মালতীর মালা ধর সখে নারায়ণ !”


( ২১ )

নির্জীব মার্জ্জার এক করুণ-ক্রন্দন,
ছোটালে সে স্বপ্ন-রাজ্য ফোটালে নয়ন ;
ত্যজি তবে উপাধানে,
বোসে ভাবি ভগ্ন প্রাণে,
ধীরে ধীরে মনে ওঠে কুসুম-সহর,
পাপিয়া, বসন্ত, চাঁদ,------কাঁদিনু বিস্তর |


( ২২ )

হৃদি-তম-নাশ-কারী হে চন্দ্র রাজন্  !
রামকৃষ্ণ প্রাণারাম, সখে নারায়ণ !
স্বপনে চরণে বসি,
শীতল হয়েছি শশী,
চির-তৃপ্ত কর নাথ রাখি শ্রীচরণে :
তুমি “হৃদি-রাজা”  হৃদে আছ সংগোপনে |


( ২৩ )

বিবেক ----বসন্ত মন্ত্রী, শান্তি সে পাপিয়া,
মধুপ-গুঞ্জন---- প্রেম, অশান্তি নাশিয়া,
নিদ্রা------ সব বিস্মরণ,
স্বপ্ন সে নবজীবন,
চিত্ত-প্রফুল্লতা লাভ -----কুসুম-সহর ;
ফোয়ারা সে বীজমন্ত্রে মালা মনোহর |


( ২৪ )

ভবন ঘুরিয়া শেষে কুসুমের গেহ,
রিপুগুলি নিস্কেজিয়া সূক্ষ্ম শুদ্ধ দেহ ;
ঘুমন্ত সে রাজা চাঁদ,
ইষ্টদেব দেখা সাধ,
যোগনিদ্রা গত মম প্রাণ নারায়ণ,
স্বপন কল্পনা-ছবি মসিতে অঙ্কন |

.                     *************************                    
.                                                                                
সূচি    


মিলনসাগর
*
আবাহন
সুশীল মালতী

( ১ )

এস              মহিশমর্দ্দিনী কৈলাশবাসিনী,
নগেন্গ্র-নন্দিনী শিবানী,
এস             আনন্দ-আননী বিশ্বজননী,
শান্তিদায়িনী ভবানী !

( ২ )

এস         ব্রহ্ম সনাতনী শঙ্করী শৈলজে,
মধুর মন্দ-হাসিনী,
এস         মধুময়ী উমা হর মন্মোহিনী,
এস মা সিংহবাহিনি |

( ৩ )

এস        শ্যামল কোমল উরস পাতিয়ে,
অর্চ্চিছে তোমায় ধরণী,
এস        সেফালি কমল অপরাজিতায়,
তুষিবে তোমায় জননি |


( ৪ )

এস        শশাঙ্ক উজলি হাসে ভূরি ভূরি,
পিককন্ঠে মধুরাগিণী,
এস        এস মা শারদে সুহাসি বিমলে,
এস মা শঙ্করভামিনি !


( ৫ )

এস        রাজরাজেশ্বরী সিংহবাহিনী,
দানব-দলনী দামিনী,
এস      হেরম্ব কমলা ভারতী কার্ত্তিকে,
দুভাগ উজল শোভিনি !


( ৬ )

এস         শারদী প্রভাতে মঙ্গল-রাগিণী,
তুলিছে সানাই সুধ্বনি,
এস        সোনার কৈলাশে চিন্ময়ী বিমলে,
এস মা মৃন্ময়ী ধরণী |


( ৭ )

এস        ষড়পদ্মে রাজ’ অভয়ে শারদে,
মানসেতে মনোমোহিনী,
এস        বক্ষে চক্ষে মিলি হোক একাকার,
রাজগো ত্রিদিবা যামিনী |


( ৮ )

এস         সারাটা বরষ ঘুরে ফিরে এল,
এস মা আনন্দদায়িনি !
এস        প্রাণ পুষ্পে তারা অর্পিব অঞ্জলি,
তুলে নিও বিশ্ব-জননি !

.                     *************************                    
.                                                                                
সূচি    


মিলনসাগর
*
সংসার-সন্ন্যাস
সুশীল মালতী

হে সংসারি !      তুমি কার,
.                কে তব আপন ?
মহামায়া ঘোরে শুধু,
.                দেখিছ স্বপন |
সুফলা ধরার বুকে,
.                বেঁধেছ সংসার,
দারা সুত সুতা লভি,
.                লও  গুরুভার |
আলেয়ার আলো সম,
.                ধাঁধিছে নয়ন,
মায়া মোহ নাগপাশ,
.                করিছে বন্ধন  |
কুমার কোমল কান্তি,
.                শশধর প্রায়,
ভবেশের মধুদান,
.                ছলিতে তোমায়  |
রমণী---- মোহন ভাবো,
.                ঘোর অবিদ্যায়----
তোমার অজ্ঞান-জালে,
.                ঘেরিল তোমায় |
প্রকৃতি অঙ্কেতে হোলে,
.                শৈশবে পালন,
যৌবনে আকৃতি ভেদে,
.                বিবাহ বন্ধন |
হে সংসারি !    ঘৃণ্য নহ,
.                বড় তুমি দুঃখী,
নিত্যানন্দে কর লক্ষ্য,
.                হবে নিত্য-সুখী  |
এ সংসার-ধর্ম্ম, এ যে -----
.                কঠোর মধুর,
ভীষণ পরীক্ষা-স্থল,
.                প্রেমিক বিভুর  |
( ভাব )   এ সংসারে কেন মেশে----
.                পুরুষে প্রকৃতি,
কেন বা বিবাহে হয়,
.                সংসারেতে ব্রতী  |
সদাশিবে অন্নপূর্ণা,
.                লক্ষ্ণী নারায়ণে,
সেই প্রেম,  সেই ভাব
.                সে  স্মৃতি-বন্ধনে |
সংসারি !  তোমার কার্য্য---
.                বিধাতা আদেশ,
শোধ তব মহাঋণ,
.                কর্ত্তব্য অশেষ |
শুদ্ধমতি জায়া নারী,
.                রাণী সংসারের,
গুরু-সেরা দেবার্চ্চনা,
.                কার্য্য তাঁর ঢের |
অতিথির মাতা তিনি,
.                ভান্ডার দয়ার,
অতিথি সংসারী-অন্নে,
.                মুষ্টি অংশীদার |
অন্নপূর্ণা সম নারী,
.                নর সদাশিব,
হেন কর্ত্তব্যতে বদ্ধ,
.                এ সংসারী  জীব |
কর্ত্তব্য সাধিয়া চল,
.                কি ভয় তোমার,
তব মুক্তি সুবিচার,
.                হাতে বিধাতার  ||

সন্নাসি !

সংসার আকরে  “রত্ন”,
.                হে যোগী সন্নাসি !
লভে শান্তি সংসারীরা .
.                পদতলে আসি |
মূর্ত্তি তব শিবময়,
.                বাক্য সুমঙ্গল,
সংসারীর লক্ষ্য-শান্তি,
.                উন্নতি সম্বল  |
দয়াময় সাধু-মূর্ত্তি,
.                ব্যক্ত ভগবান,
তপস্যায় রহে ধরা,
.                জীবের পরাণ |
সংসারেতে বহু তাপ,
.                নিত্য কোলাহল,
বিষয় জড়িত চিত্ত,
.                সদাই চঞ্চল |
দেহভরা রিপু গোল,
.                বিবেকেতে নাশি,
হে সুধীর জ্ঞানময়,
.                হয়েছ সন্নাসী  |
সংসারে সামান্য গোল,
.                গোল দেহ মনে,
কাঞ্চনে জড়তা রাজে,
.                আসক্তি জীবনে |
এ শত্রু শরীর সনে,
.                মিত্রতা বন্ধন,
জ্ঞানালোকে হোয়ে গেল,
.                অবিদ্যা ভঞ্জন |
হে সন্ন্যাসি !       পূর্ণ ব্রহ্ম  |
.                সজীব ঈশ্বর |
ভক্তি ভরে বার বার,
.                নমি পদ পর |
সংসারে উত্পত্তি তব,
.                রত্ন কহিনুর ,
পবিত্র মধুর দান,
.                প্রেমিক বিভুর  !
(আগে)  ছিলনাক জটাভার,
.                জ্ঞান ত্রিনয়ন
ছিলনাক বেদবাক্য
.                স্থির পদ্মাসন !
সাধুর দয়ায় মুক্তি,
.                মাত্র সংসারীর,
সাধু ভগবান পাশে,
.                নত রবে শির |
সংসারী সন্নাসী সনে
.                হোলে সম্মিলিত,
ধর্ম্মের সংসার তাহে,
.                হইবে গঠিত |


.        *************************                    
.                                                                        
সূচি    


মিলনসাগর
*
প্রেম-উন্মাদী
সুশীল মালতী

( ১ )

দিগ্বসনা শোন্ বাসনা,
আমায় পাগল ক’রে তোল,
আমি দিবানিশি বোকে মরি,
হরি হরি হরিবোল |
কাজ কি তার দিব্যজ্ঞানে,
নানা মতে ধাঁধাঁ আনে,
আমি সব ভুলে গো পাগলী হব,
কোর্ ব সুধু গন্ডগোল,
ছড়িয়ে দিব পথে ঘাটে,
মধুর হরিনামের রোল |


( ২ )

কান্য-কুমারিকা হোতে
ঘুর্ বো হিমালয়ের কোল,
মাখ্ ব গায়ে পথের ধুলি,
লজ্ঝা ঘৃণা যাব ভুলি,
পাগ্ লী হোয়ে কাটিয়ে লব
সমাজের এ নীতি-বোল,
ক্ষুধা তৃষ্ণা ভুলে যাব-----
মিটে যাবে সর্ব্ব গোল |


( ৩ )

কেশে জটা ধর্ বে আমার,
থাক্ বেনাক আঁটাআঁটি,
শুষ্ক হবে দেহখানা,
ঘুচে যাবে বাবুয়ানা,
গাছের তলে দিন কাটাব,
মাটিই আমার শিতলপাটী |


( ৪ )

পাগল-প্রিয়  বালকগুলি
সবাই আমার ধোর্ বে ছেকে,
করে তালি দিয়ে মরি,
আমার বোলে বোল্ বে “হরি”,
হরি হরি মহা গোলে,
আস্ বে হরি গোলোক থেকে |


( ৫ )

ভুলে যাব  ভাষার এমন
নানা রকম বাঁধন-ছাঁদন,
শুধু দুটি অক্ষরেতে,
মিশিয়ে আমি রব মেতে,
বিস্মৃতি দে মহামায়া !
ভোলাও মায়া-মোহের বদন |


( ৬ )

পূজার মন্ত্র,  গম্ভীরতা,
পরবোনাক আমি তারা !
নাক টিপে প্রাণ হাঁপিয়ে ওঠে,
গৃহ-গোলে  শ্রবণ ছোটে,
জোর কোরে মন হয়নাক বশ,
আছি হোয়ে তোমা-হারা  |


( ৭ )

আস্তে চলে আয়ুঃ তপন,
ভাঙ্গ্ বে কবে দেহ-কারা,
আবার নূতন কারায় পূরে,
পাঠিয়ে দেবে এ সুদূরে,
ঐহিক অতৃপ্ততায় ফেলে,
কোর্ বে আমায় কাঁদিয়ে সারা |


( ৮ )

এ জীবনে নামে পাগল----
প্রেমে আমার ঝরাও আঁখি ;
সব হরি, দাও অক্ষর দুটী,
ডাকি হোয়ে করপুটি,
বিশ্বমাঝে ঘুরে বেড়াই
পথের ধূলি অঙ্গে মাখি |


( ৯ )

আসে যেন শেষের দিনে,
ভিতর থেকে হরি-শমন,
দ্রবময়ীর শীতল নীরে,
দেহ ডুবে যাবে ধীরে,
হয়না যেন এ দেহখান্
সাজিয়ে চিতা তাহে দহন |


( ১০ )

সংসারেতে জ্যান্ত মরা,
দহন আমার হোয়ে আছে,
এ দেহটা ডুবিয়ে শেষে ,
মিশব তোমার পাদ-দেশে,
যা বলাও তাই তোমায় বলি,
সুবিচার মা, তোমার কাছে |

.                     *************************                    
.                                                                        
সূচি    


মিলনসাগর
*
ঋণী-প্রজা
সুশীল মালতী

.                ( ১ )

আসে জীব  ধরাবাসে ঋণে বদ্ধ হোয়ে,
.     তুই মন ! ঋণী-প্রজা,  দিন যায় বোয়ে ;
রাজা মহারাজা সেই ব্রহ্ম পারাত্পর,
.      প্রাণাধার গুপ্ত মম হিয়ার ভিতর |


.                ( ২ )

একাদশ ঋণে জীব বদ্ধ প্রভু পাশে,
.     শুধিতে---সঞ্চয়ে আসে এ মূর্ত্ত প্রবাসে ;
শোধে সেই এক ঋণ কর্ম্মক্ষেত্রে এসে,
.      মহাজন মোক্ষ দেন, ব্রহ্ম সনে মেশে |


.                ( ৩ )

মহাজন সে দয়াল  কত মধুময়,
.    এক ঋণ শুধিলেই  জীব মুক্ত হয় ;
ছাড়ি দশ, চান এক, প্রজাদের পাশে,
.    এমন দয়াল রাজা মম হৃদাকাশে |


.                ( ৪ )

শ্রবণা, কীর্ত্তনা, সখা, অর্চ্চনা, সেবনা,
.     স্মরণ, বন্দনা, দাস্য, আত্মনিবেদনা,
তন্ময়া, কান্তা, এই শক্তি একাদশ,
.    শুধি ঋণ মোক্ষলাভ আনন্দ হরষ |


.                ( ৫ )

সাক্ষ্য সব একাদশ শক্তিধরগণ,
.     দেখ মন, একে একে নম সে চরণ |
শ্রবণা-শক্তিতে  মুক্ত  রাজা  পরীক্ষিত,
.     কীর্ত্তনায় শুকদেব মুক্ত হরষিত |

           
.                ( ৬ )

সখ্য-শক্তি  অর্জ্জুনের,  পৃথুর অর্চ্চনা,
.   দেবী কমলার দেখ আসক্তি সেবনা ;
স্মরণে শ্রীহরি লভে ভকত প্রহ্লাদ,
.    দাস্য-ভাবে হনু পায় পরম আহ্লাদ |


.                ( ৭ )

আত্ম-নিবেদনা  শক্তি সে বলিরাজার,
.    ভকত অক্রুর শুধু বন্দনে উদ্ধার ;
তন্ময়া শক্তিতে র’ন নিজে মহেশ্বর,
.    কান্তা ভাব শ্রীরাধার ধুম মনোহর |


.                ( ৮ )

আশু মৃত্যু ব্রহ্মশাপে রাজা পরীক্ষিত,
.     ভারত শ্রবণে হন মুক্ত, হরষিত ;
নাম-গুণ কীর্ত্তনেতে শুকদেব স্বামী,
.     অনন্তদেবের সনে শ্রীবৈকুন্ঠ গামী  |


.                ( ৯ )

অর্জ্জুনের সখ্যে বদ্ধ জগতের পতি,
.     কুরুক্ষেত্র রথোপরি শ্রীহরি সারথি ;
পৃথুরাজ পান মুক্তি উত্সব পূজায়,
.     লক্ষ্মীর অনন্ত তৃপ্তি শ্রীপদ সেবায় |
ভকত প্রহ্লাদ মুক্ত সতত স্মরণে,
.      দাস হনু  তৃপ্ত  সদা  শ্রীহরি সেবনে |


.                ( ১০ )

হনুর সেবায় তুষ্ট হোয়ে ভগবান,
.     কন “হনু আয় তোরে মোক্ষ করি দান ;”
হনু কয় “মোক্ষ কিবা ?”   কন  প্রভু তবে,
.     “আমাতে মিশিয়া যাবে, ভিন্ন নাহি রবে |”


.                ( ১১ )

চিন্তিয়া কহিল হনু যোড় করি হাত,
.    “তাহোলে সেবিতে তোমা না পারিব নাথ !”
ধন্য দাস, ধন্য হনু, মধু সেবা হায়,
.     অনন্ত মধুর তৃপ্তি  পেয়েছ সেবায় |


.                ( ১২ )

ভজন পূজন  হীন ভকত অক্রুর,
.     অবিরত জোড়পাণি  “ নমি হে ঠাকুর !”
হেন বন্দনায় তুষ্ট হন ভগবান,
.     আত্ম-নিবেদন করি বলি  মুক্তি পান |

                   
.                (১৩ )

অনুক্ষণ  মহাদেব আছেন তন্ময়,
.      নয়ন ভ্রূযুগ  মাঝে স্থিরভাবে রয় ;
কান্তা  ভাব শ্রীরাধার,   মধু হোতে  মধু,
.      একাত্মা শ্রীহরি মরি প্রাণসখা, বধুঁ |


.                ( ১৪ )

একাদশ পদে ধরি মন আমার চল,
.    সুধা ত্যজি ভ্রমে তুমি লভ’না গরল
সংসারে প্রলাপ বকি হইছ কাতর,
.    চিন্ময় চৈতন্যে লভ হিয়ার ভিতর |


.                ( ১৫ )

ব্রহ্ম কৃপা   ব্রহ্ম কৃপা,  ব্রহ্ম কৃপাবলে,
.   যদি এ লেখনী  মন,  কীর্ত্তনেতে চলে,
নমি তোমা ভগবান শুকদেব স্বামি !
.   এ মন পথিকে কর তব পথগামী |


.                ( ১৬ )

কীর্ত্তনে মধুর গুণ,  গুণসিন্ধুরাজে,
.     চিত্তপ্রসন্নতা লভি হেরি হৃদি-মাঝে,
ভক্তি মর্ম্ম-মন্দাকিনী মাঝে রত্ন লাভ,
.     যাবে বৃথা হাহাকার ঘুচিবে অভাব |


.                ( ১৭ )

বিশ্ব ভরা ঋণী-প্রজা, আয় সবে আয়,
.   একাদশ পথে, মন যার যাতে যায়,
ঋণ মুক্তি, মহাধনী মুক্তি মোক্ষ ফলে,
.   নশ্বর এ দেহ রবে পড়ি ধরাতলে |

.          *************************                    
.                                                                        
সূচি    


মিলনসাগর
*
সুন্দর
সুশীল মালতী

( ১ )

যোগাসনে  নাথ !     স্তিমিত নয়ন,.
বিশ্ব মাঝারে বিশ্ব ভুলি,
ধরিয়া রেখেছে সমাধিস্থ ছবি,
শিষ্য-সৌভাগ্যের মধুর তুলি |


( ২ )

অন্তরে বাহিরে হেরিব তোমায়,
সুধীর সুপ্রেমী হৃদয়নিধি,
অশ্রুজলে  জলে ধুয়ে গেছে কত,
সিংহাসন কর এ মম হৃদি |


( ৩ )

হৃদিপদ্মাসনে চিণ্ময় সুন্দরে,
নেহারি রতন হইব স্থির,
অভ্যাসেতে যদি ঝরে ত ঝরিবে,
আনন্দ প্রেমেতে নয়ন-নীর |


( ৪ )

উল্লাসে উথলি মর্ম্ম-মন্দাকিনী,
ভাসাবে মধুর হৃদিপদ্মাসন,
রাজিবে সুন্দর চিণ্ময় মূরতি,
“রামকৃষ্ণ ব্রহ্ম”  মধুর মোহন |


( ৫ )

লীলার কারণ মূঢ় জীব পায়,
মায়া-ভরা দুটী আঁখি,
সংসারের লীলা সাঙ্গ রুচি নাই,
দু চোকে দেখিনু ফাঁকি |


( ৬ )

খোল খোল মন তৃতীয় নয়ন,
অসারে মজনা আর,
ভোগে মহা-ভোগ, এ অশান্তি রোগ,
কর্ম্মফল হাহাকার  |


( ৭ )

ভোগে জন্ম মম, ভোগেতে পালিত,
ভোগেতে ধমনী বয়,
ত্যাগের রাগিণী ধর মন-বীণে,
ধীরে তোল তান লয় |
মন !                                                    .
ত্যাগ !   কিবা ত্যাগ ?   ত্যাজ্য কি তোমার,
ত্যাজ্য শুধু অজ্ঞানতা,
অবিদ্যা আঁধারে অন্ধ মায়ামুগ্ধ,
ত্যাজ আমি তুমি ( ভুল ) কথা

( ৯ )
“চিন্মণি”   জড়িত জীবাত্মা সকল,
মম প্রিয় প্রাণাধার,
এস বিশ্ববাসি !   অসংখ্য  বা এক,
আমি তুমি ভিন্নাকার |


( ১০ )

ভোগ ? ভোগ কিবা ? কিবা ভোগ্য মন!
ভোগ “রামকৃষ্ণব্রহ্ম”   নাম
ভোগ নামামৃত উপভোগ সুখ,
চিত্ত স্থির প্রাণারাম |


( ১১ )

হে সুন্দর !   আজি বসন্ত রজনী,
চন্দ্রকরোজ্জ্বলা ধরা,
নিঝুম  নিঝুম  শান্তিময় গেহ,
তব “চিত্রে”  আলো করা |


(  ১২ )

গুঞ্জে চরণে এ  মন ভ্রমরী,
“প্রাণারাম  কৃষ্ণ-রাম”
বসন্ত মলয় পূরিত ধরণী,
মধুময় বিশ্বধাম |

( ১৩ )

মধুর নিশীথে স্মরিয়া সুন্দরে,
চিত্ত-চকোর ভোর,
নিত্য ডাকিও আমারে সুন্দর,
খুলে নাও মোহ ডোর |

.                     *************************                    
.                                                                        
সূচি    


মিলনসাগর
*
জলধি
সুশীল মালতী

( পূরীর-সমুদ্র-তীর )

( ১ )

সীমা  শূন্য নভঃ জল,
ধোঁয়াকার  মেশামিশি
বসেছি বালির বাঁধে,
নীলাজ দেখার সাথে,
আঁধারে ডুবেছে চাঁদ,
পোহাল পোহাল নিশি |


( ২ )

হিমানী পৌষ  রাতি,
কৃষ্ণপক্ষ অন্ধকার,
পাশে যে সঙ্গিনী বালা,
তার ভবে ভ্যাস্তা পালা.
ঊর্দ্ধে নভঃ, সন্মুখেতে
গর্জ্জিতেছে পারাবার |


( ৩ )

গর্জ্জন তরঙ্গ ভঙ্গ,
ফেনপুঞ্জ তুলাকার,
বিরাম বিশ্রাম নাই,
অনিমেষে হেরি তাই,
দেখিতে দেখিতে দেখি.
আলোকিত চারিধার |


( ৪ )

জ্যোতির্ম্ময়ী উষা ভাসে,
নীলিমা সাগর বুকে,
শিখীর  কন্ঠের রং,
তরঙ্গের ভাঙ্গা ঢং,
ফোটেনা সে ছবিখানি,
মসিতে লেখনী মুখে |


(৫ )

মধু মধু  ভাবময়,
নীলাম্বু জলধি মরি,
জল হোতে রাঙ্গা “রবি”
উঁকি দিল মধু ছবি,
( যেন )  অতলের তল হতে,
ধীরে উঠে নভোপরি |


( ৬ )

আধখানি জলে ডোবা,
উদিত আধেকটুকু,
রমনীয় মধু  শোভা,
মরি কিবা মনোলোভা,
সে ব্রহ্ম-মুহূর্ত্তে তৃপ্ত,
নেহারি মোহিত বুক


( ৭ )

মনোহর  নীল জল,
গর্জ্জন তরঙ্গোচ্ছ্বাস,
এক ভাব দিন রাত,
কূলে ঘাত প্রতিঘাত,
নেহারি নীলাভ সিন্ধু,
মুখে নাহি স্মরে ভাষ |


( ৮ )

রত্নের ভান্ডার সিন্ধু,
রোয়েছে বালির বাঁধে,
অস্থায়ী অনিত্য ধন,
লোয়ে ব্যস্ত জীবগণ,
( তবু )  প্রতি পলে মৃত্যু নরে,
আয় বোলে ডাকে সাধে |


( ৯ )

বিশ্বপতি মহারাজা,
ভবেশ করুণাধার !
কি শোভার “রাজধানী”,
তোমার  “বসুধা”  খানি,
সাগর ভূধর বন,
সকলি সুষমাসার  |


( ১০ )

এহেন  সুন্দর রাজ্য,
সে রাজা কি মনোহর !
অচিন্ত্য অব্যক্ত রূপ,
হে চির সুন্দর ভূপ,
ওহে জ্যোতির্ম্ময় ব্রহ্ম,
প্রণমি চরণ পর |

.                     *************************                    
.                                                                        
সূচি    


মিলনসাগর
*
নীলাবরণ
সুশীল মালতী

( পশ্চিম সিমুলতলা )

( ১ )

ক্ষুদ্রতম মরি উন্নত নত,
শিলাখন্ড নীল ভাতিছে,
তদুপরি শ্যাম,               তরুটি সুন্দর
ক্ষুদ্র তরু শোভা দানিছে |


( ২ )

মধুর মন্দ হিমানী সমীর,
শূন্যে শূন্যে বহিছে,
ঝুরু ঝুরু সুরে,                  ক্ষীণা ‘কাঠুরিয়া’*
বালুকাবাসিনী  গাহিছে |


( ৩ )

বহু দূর গত ধুম্র গিরিশ্রেণী,
নভো ছুঁয়ে যেন বহিছে,
নিরজন ঠাঁই,             শান্তি রসভরা,
বিহগ-গীতিতে ভোরেছে |


( ৪ )

( যেন )  প্রক়তি  রাণীর প্রিয় খেলা ঘর
এ  “নীলাবরণ”   ভাতিছে,
মধু সুষমায়,               প্রীতি উছলয়,
ফিকি  ফিকি  রাণী হাসিছে |


( ৫ )

হিমানী হেমন্তে ‘প্রমোদ’   ‘সুষমা’
‘মালতী’   এ তিন জনে,
ছুটাছুটি হাসি,      মধু কোলাহলে,
রাজিল  আনন্দ মনে |


( ৬ )

আনন্দেতে নাম লেখে  শীলা-গায়,
‘সুষমা’ চপলমতি,
ক্ষীণা কাঠুরিয়া,    ছেনি জল খেয়ে,
ফিরিনু হরষে অতি |


( ৭ )

সুন্দর  বিশ্বের  না জানি কতই,
মধুময় বিশ্বপতি,
ভক্তিভরে নাথ,     শত প্রণিপাত,
পদে রাখ এ “মালতী”  |

.                     *************************                    
.                                                                        
সূচি    


* কাঠুরিয়া নদী



মিলনসাগর
*
আনন্দযাত্রা
সুশীল মালতী

( গঙ্গাসাগর )

( ১ )

গৃহ-দুর্গে বদ্ধা সদা ‘প্রমোদ’
(১)  ‘মালতী’,
ঝালাপালা হোয়ে ভাবে শমন সুন্দরে,
কোলাহল ভরপূর সহরে বসতি,
ফিরি’য়ালা কন্ঠ শুধু শোনে বসে ঘরে |

( ২ )

নিয়তি ভুলিল ক্ষণে একঘেয়ে ভাব,
কৃপা কটাক্ষেতে চান বিশ্বরাজ নাথ,
“মা শীতলা” চাহিলেন মন্ডা চিনি ডাব,
আটাশে পৌষ এল দ্বাদশী প্রভাত |

( ৩ )

ইচ্ছাময় ঊর্দ্ধে রাজা বিভু দয়াময়,
উপলক্ষ অবতার ভ্রাতা “শ্রীউপেন”,
সুসময়  মন্দ-ভালে হইল উদয়,
সহায় স্বরূপ পুত্র “শ্রীমান নরেন
(২) |”

( ৪ )

“কিরণ”  জাহাজ রাজ্যে শ্রীউপেন্দ্র রাজা,
ঝটিতি তোরেতে গেল রাজ্যের তল্লাসে,
আধ-পেটা নাকে মুখে খেয়ে লুচি ভাজা,
অন্তরঙ্গ ‘তুলসীদাস’  লয়ে সখা পাশে |

( ৫ )

আপদ বালাই জোটে “নরেন্দ্রর” ভালে,
দিদিমা, মাসীমাদ্বয় যাত্রী সাগরের,
তাড়াতাড়ি নেয়ে খেয়ে শীতের সকালে,
সঙ্গে চলে তিন নারী মোট-মাট ঢের |

( ৬ )

আরমানি-ঘাটেতে আসি থামিল শকট,
কুলির কুলিশ-বাণী অহঙ্কার মাখা,
থামিল সে কুলি-বুলি মোদের নিকট,
মোট দৃষ্টে বলেছিলে লব তিন টাকা |

( ৭ )

রাজা ভাই
(৩) সনে তবে হইল মিলন,
সাদরে চলিল লয়ে দ্বিতলের হলে,
ঊর্দ্ধে থেকে দেখি অধে যাত্রীর গমন,
হুড়া তাড়া কোলাহলে ওঠে পড়ে চলে |

( ৮ )

আসিল কিকণ-রাজ্য গঙ্গা স্রোতে ভেসে,
রাজা ভাই উঠে গেল কিরণ-রাজ্যেতে,
মোটগুলি উঠে গেল, যাব মোরা শেষে,
হা অদৃষ্ট, মিশে গেনু বিপুল ভিড়েতে |

( ৯ )

হাঁ করে রহিনু চেয়ে কিরণ সচল,
ভেসে গেল রাজা সনে সম্পত্তি মোদের,
সরস কমলালেবু, সন্দেশ কোমল,
ট্রাঙ্কগুলি গেল ভাল,  শান্তি আপদের |

( ১০ )

ক্ষণপরে আসে ভেসে সুন্দরী  “ষোড়শী”,
সেই সে ষ্টিমার রাজ্যে ‘শ্রীনলিন্’রাজা,
মোরা রাজ্য পেয়ে হাতে উঠিলাম বসি,
অচেনা এ শ্রীনলিন্ দেখি রাজা সাজা |

( ১১ )

সতেরো আঠারো তার হইবে বয়স,
রামকৃষ্ণভক্ত ধীর নম্র মিষ্টভাষী,
নূতন কার্য্যেতে হেরি বড়ই হরষ,
শ্রীনরেন সনে তবে কথা কয় আসি |

( ১২ )

গীতি মুখরিত নিশি ‘ষোড়শীর’ বুকে
(৪)
কভু বা ঘুমন্ত, কভু জাগি দু’সঙ্গিনী,
পোহাল মধুর নিশি নিরাপদ সুখে,
হরষে উছলে গঙ্গা দুকূলপ্লাবনী |

( ১৩ )

প্রভাতে আসিয়া পড়ি সাগরের কুলে,
বালুকা সৈকত ভূমে অবতরি সবে,
উপেন্দ্রের পথ চাহি থাকি আঁখি তুলে,
আসিল স্নেহের ভ্রাতঃ হাসিমুখে তবে |

( ১৪ )

সৈকতে মিলিল এক  ছত্র সম ঘর,
বসিলাম সবে তায় আনন্দিত মনে,
বালুকা গদিতে টোপ রঞ্জিত কাঁকর,
নেহারি সে মধু-শোভা  হাসি দুটি বোনে |

( ১৫ )

ডাগর সাগরে যাই স্নান হেতু তবে,
ভাটার সে কাদা-জল দিলাম মাথায়,
লবণাক্ত হোয়ে ফিরে আসিলাম যবে,
কাতর হইনু মোরা বড়ই তৃষায় |

( ১৬ )

বয়সী গৃহিণী সাথে হরষি দু’বোনে,
চড়ায় চড়িল তবে আহার্য্য খিচুড়ী,
“শ্রীনরেন্দ্র”  ( খোকাবাবু )  শ্রান্ত ক্লান্ত মনে,
ব্যাগসহ হারাইল ভাল দামি ঘড়ী |

( ১৭ )

সে নিঠুর চোরে প্রভু দাও দিব্যজ্ঞান,
সদয় প্রসন্ন  হও তাহার উপর,
দয়া মায়া জ্ঞানে পূর্ণ হোক তার প্রাণ,
হোলো মহা মন-দুঃখ সুখের ভিতর |

( ১৮ )

সুনিদ্রায় নিশি ভোর উঠিনু প্রভাতে,
সাগরে জোয়ার এল কূলে কূলে জল,
তরঙ্গ সৈকতে খেলে ঘাত প্রতিঘাত,
সাগর দেখিয়া ফুল্ল, শুষ্ক হৃদিতল |

( ১৯ )

দু’বোনে কোমর বাঁধি ঢেউ সনে চলি,
নাকে বালি, কাণে বালি,  বালি চোখে মুখে,
কেশ হোতে ঝড়্ ঝড়্ বালি ঝেড়ে ফেলি,
উথলে আনন্দসিন্ধু দু’সঙ্গিনী বুকে |

( ২০ )

মুনিবর “কপিলের”  পাষাণ মূরতি,
সিন্দুরে রঞ্জিত কায় নমি পদে তাঁর,
বাতাসা এলাচদানা প্রিয় তাঁর অতি,
নিতেছেন খুরী তরি দান সবাকার |

( ২১ )

আসিল জোছনা নিশি শশাঙ্ক-শোভিতা,
তারকা উঠিল ফুটি নীল নভোপরে,
অকস্মাৎ নিশিযোগে হট্টগোলে ভীতা,
“বাঘমামা”  ভাগ্নাভাগ্নি কারে তাড়া করে |

( ২২ )

আমরি ক্ষুধায় জীব হইয়া কাতর,
শীকার দেখিয়া আসে নিবারিতে ক্ষুধা,
মানবের কেন হয় ভয় দুঃখকর,
( এ পশুরে ) দাও প্রভু নরজন্ম, দাও নামসুধা |

( ২৩ )

সহস্র শঙ্খের ধ্বনি, বাজিল কাঁসর,
সজাগ সাগর যাত্রী আছিল যতেক,
“বাঘমামা”  ছুট দিল বনের ভিতর,
দ্বিতীয় রজনী ভোর হোলো অতঃপর |

( ২৪ )

তৃতীয় দিবসে মোরা স্নান সেরে এসে,
বসিলাম কুটীরেতে আনন্দিত মনে,
দেদার নাগার দল দেখে মরি হেসে,
শোভিছে কেমন তারা বসনে ভূষণে |

( ২৫ )

আনন্দে দিবস গতে গোধূলি সময়,
কূলে এসে বোসে বলি ষোড়শী তরাও,
কূলে মহা গন্ডগোল লোকারণ্যময়,
ডাকি “রামকৃষ্ণ প্রভু”   কৃপা-নেত্রে চাও |

( ২৬ )

বহু কষ্টে বহু ক্ষণে “ষোড়শীতে” এসে,
উত্তম স্থানেতে বসি হাঁপ ছেড়ে বাঁচি,
পরদিন প্রাঃকালে  আসিলাম ভেসে,
‘ষোড়শী’ সমুদ্রে পড়ি চলিল যে নাচি |

( ২৭ )

উত্তাল  তরঙ্গভঙ্গ নীলাভ সলিল,
কিনারায় কূল যেন শৈবাল ভাসিছে,
মিশেছে আকাশ জল, উড়ে পাখী চিল,
বর্ষিয়া কিরণ রবি মধূর হাসিছে |

( ২৮ )

স্বপনের রাজ্য ধরা কতই মধুর,
স্বর্ণময়ী প্রকৃতির বিমল মাধুরী,
কি শিল্প !   নয়নমুদ্ধ পরাণবঁধুর,
শিল্প দেখাইয়া শিল্পী প্রাণ করে চুরি |

( ২৯ )

বিশাল জলধি বক্ষে মধুর কম্পন ,
কুলেতে কি ভীমাঘাৎ ফেনপুঞ্জ রাশি,
ব্রহ্ম সমুদ্রেতে মিশি অনন্ত মিলন,
দূরে থেকে ডাকা নাথ, কভু কাঁদি হাসি |

( ৩০ )

দেখিতে দেখিতে এল নদী সুরধুনী,
নিশি প্রাতে এনে দিল বিকট সহরে,
আবার আজিকে ঘরে আসিল রজনী,
ধরেছি লেখনী মসি বসি ঘরে করে |

( ৩১ )

উপেন্দ্র ভায়ার জয়, জয় সাগরের,
প্রমোদী, মালতী প্রাণে আনন্দ সঞ্চয়,
নরেন্দ্রের ধনক্ষয়, এ বড় দুঃখের,
সবে মিলি মিশি বল “রামকৃষ্ণ জয় |”


.                     *************************                    
.                                                                        
সূচি    

১ - কবির সমভাগ্যা ভগ্নী,
২ - কবির ভগ্নীর পুত্র নরেন্দ্র,
৩ - "কিরণ" ষ্টীমারে ভলেন্টিয়ার রামকৃষ্ণভক্ত উপেন্দ্রনাথ কবির কনিষ্ঠ ভ্রাতা,
৪ - হিন্দুস্থানীরা সমস্ত রজনী ভজনসঙ্গীত গাহিতেছিল।



মিলনসাগর
*
গুরুভক্তি
সুশীল মালতী

( ১ )

নৃত্যময়ী ছল ছল নদী সুরধুনী,
শান্তিময় “রারাণসী”  কূল,
কূলেতে “শঙ্কর” দিনমণি,
জ্ঞানময় উপমা অতুল |


( ২ )

আর কূলে শিষ্য “সনন্দন”
মাঝে গঙ্গা বক্ষে জলোচ্ছ্বাস,
ডাকিলেন শ্রীগুরু তখন,
‘সনন্দন’  ‘সনন্দন’ ভাষ |


( ৩ )

সনন্দন-শ্রবণে পশিল,
ডাকে শিষ্য হইল আকুল,
“শীঘ্র এস সনন্দন” পুন যে শুনিল.
গুরুবাক্য মহামন্ত্র মূল |


( ৪ )

গঙ্গাবক্ষে না হেরিল  “না”,
ডাকিলেন গুরু বিশ্বনাথ,
উত্তাল তরঙ্গে দিল পা,
“জয় গুরু”  স্মরি যোড়হাত |


( ৫ )

চরণ পরশি আহামরি,
গঙ্গাবক্ষে ফুটিল কমল,
আনন্দেতে  ভক্তিতে প্রেমে ভরি,
আসি নমে গুরুপদতল |


( ৬ )

ধন্য গুরু শ্রীগুরু শঙ্কর,
ধন্য ভক্ত শিষ্য সনন্দন,
“পদ্মপাদ”  নাম অতঃপর,
দেন শিষ্যে শঙ্কর তপন |


( ৭ )

জন্মজ্ঞানী অবতার নাথ.
নরকায়ে দেবতা শঙ্কর,
কার পদে শত প্রণিপাত.
জ্যোতির্ম্ময় নমঃ যোগেশ্বর |


( ৮ )

( যবে )  গৃহত্যাগী “শঙ্কর তপন”,
উপনীত নর্ম্মদার তীরে,
সমাধিস্থ গুরু কূলে র’ন,
উচ্ছ্বাসিয়া আসে নদী শিরে |


( ৯ )

সমাধির বাধা কল্লোলিনী,
ভাবি মনে কাতর শঙ্কর,
কন শান্ত হও তরঙ্গিনী,
বারে বারে যোড় করি কর |


( ১০ )

নদী আসে ভীমনাদ-করি ,
ব্রহ্মতেজে বালক শঙ্কর,
নর্ম্মদারে কমন্ডলে ভরি,
শক্তি ভক্তি দেখান সুন্দর |


( ১১ )

মহাযোগ ভাঙ্গিল যোগীর,
কন “বত্স !  মরে জলচর” ,
কমন্ডলু হোতে জল ঢালেন নদীর,
গুরু আজ্ঞা রাখিল শঙ্কর |


( ১২ )
নর-হর  শ্রীশঙ্কর শত  প্রণিপাত,
অবতার ! ভক্তিভরে নমি পদ’পরে ,
ভাষ্য  তব বিরাজিছে নাথ,
হৃদিতমঃ হরে ভাস্য -করে


.                     *************************                    
.                                                                        
সূচি    





মিলনসাগর
*
হরিদ্বারে  সুরধুনী
সুশীল মালতী

( ১ )

হিম হিমাচল হিমকায় হোতে,
   নিঃসৃতা হোয়ে জননী,
পবিত্রা মধুরা শীতলা গঙ্গে,
          চোলেছে সাগর-আননী |


( ২ )

চির একসুর, চির  এক তান,
    সাত্বিকী-ভাব  রাগিণী,
সৃষ্টির প্রথম হইতে জননী,
..                গাহিছে  কি গীতি জানিনি |


( ৩ )

( সেথা )   জলে স্থলে আহা অনিলে আকাশে,
.         তরুতে চলেছে গান,
.                 বোঝাতে পারে না, সে ভাব---সে ভাষা,
.         এ মুঢ় মানব প্রাণ |


( ৪ )

( সেথা )    নির্ঝুম নিচল নীরব নির্ভীক,
.                  নিরালা তরু দাঁড়ায়ে,
.               নীলাকাশ নত নিশিদিন সেথা,
.                      চুম্বন মুখ বাড়ায়ে |


( ৫ )

নীরবে বসুধা পাতিয়া হৃদয়,
ধ্যানস্থ মগন প্রায়,
চন্দ্র হাসিছে, তপন জ্বলিছে,
তারকা ফুটিয়ে চায় |

( ৬ )

( কভু ) ঘোর ঘনঘটা ঝিমি ঝিমি ধারা,
.            মুহুর্মুহু খেলে দামিনী,
.       চিরনূতনের মাঝে চির ওঠে,
.              চির এক সুর রাগিণী  |

( ৭ )

পুণ্য পূতবারি পিয়ে এ জীবন,
শষ্য-শ্যামলা মেদেনী,
সাধি কর্ম্ম মাত, এক সুর তানে,
বিহ্বলা সিন্ধ গামিনী |

.                     *************************                    
.                                                                        
সূচি    





মিলনসাগর
*
উমানন্দ ভৈরব
সুশীল মালতী

.                ( ১ )

আষাঢ়ের ‘ব্রহ্মপুত্র’ কি নিত্য তান্ডব !
ঘূর্ণিত তরঙ্গময় চাপা গোঁ গোঁ রব,
লতা সুবেষ্টিত এক ক্ষুদ্র মনোহর,
জাগিছে নদের মাঝে মধুর শেখর |


.                ( ২ )

পাহাড়ের মাঝে রাজে সুন্দর মন্দির,
বরষার জল গ্রাসে অর্দ্ধাঙ্গ গিরির,
নাচিয়ে চৌদিকে জল ভৈরব মূরতি,
মাঝে রাজে গিরিবর মনোহর অতি |


.                ( ৩ )

গিরির গুহায় সিঁড়ি নামি অতঃপর,
দীপ পুষ্প চন্দনেতে মোহিত অন্তর,
চৌকণা সুন্দর স্থান চন্দ্রাতপ মাঝে,
লিঙ্গমূর্ত্তি উমানন্দ শ্রীদেবতা রাজে |


.                ( ৪ )

রৌপ্য ছত্র শিরোপরি শোভিত সুন্দর,
রৌপ্য অর্দ্ধচন্দ্র শিরে অতি মনোহর,
রৌপ্য বিল্বপত্র এক তাহে শোভামান,.
শোভে মহেশের শিরে পাঁচটি বয়ান |


.                ( ৫ )

তাঁর পাশে রৌপ্য মূর্ত্তি অতি মনোহর,
অশ্বোপরি পঞ্চমুখ স্বরূপ সুন্দর,
শিরেতে রজত ছত্র অর্দ্ধচন্দ্র আর,
বিল্বপত্র তার’পরি শোভার আধার |
                          

.                ( ৬ )

সৌগন্ধে পূরিত স্থান কুসুম চন্দনে,
পূজিনু হরষে দেবে তৃপ্ত প্রাণ মনে,
উমানন্দ ভৈরবেরে নমি বারেবার,
জাগিল প্রাণের মাঝে আনন্দ অপার |


.                ( ৭ )

আষাঢ়ের অম্বুবাচী তৃতীয় প্রহর,
খর সূর্য্য দীপ্তিমান দিবা গ্রীষ্মকর,
কামাখ্যা-দেবীর দ্বারে আসিয়া বসিনু,
যাত্রী সমাগম ব’সে আনন্দে দেখিনু |


.                ( ৮ )

দুরন্ত সে ব্রহ্মপুত্র নদে নমিলাম,
নমি উমানন্দ শিব দিব্য তব ধাম,
দেবী শ্রী ভুবনেশ্বরী রাজিছেন যথা,
পাহাড়ের উচ্চ চূড়ে, শান্তিময় তথা |


.                ( ৯ )

নয় পীঠে নয় দেবী নমি বার বার,
নমি মা কামাখ্যাদেবী চরণ তোমার,
সৌভাগ্য কুন্ডের তীরে মন্দির সুন্দর,
মুদ্রামূর্ত্তি রাজিছেন তাহার ভিতর |

.         *************************                    
.                                                                        
সূচি    





মিলনসাগর
*
বারাণসী-বিশ্বনাথ
সুশীল মালতী

.                ( ১ )

নমি রাজা বিশ্বনাথ বারাণসী-পতি,
সদানন্দ জ্ঞানময় পবিত্র শঙ্কর,
হর হর ব্যোম্ ব্যোম্ অগতির গতি,
উর্দ্ধে অধে আসেপাশে নমি মহেশ্বর |


.                ( ২ )

রাজ্য তব শান্তিময় ওহে শান্তিনাথ,
পবিত্রা গঙ্গার নীর তৃপ্তিময় অতি,
মহাদেব হর হর শত প্রণিপাত,
শিবশম্ভু এ মৃঢ়ের স্থির কর মতি |


.                ( ৩ )

প্রত্যহ প্রভাতে স্নান করিয়ে গঙ্গায়,
গঙ্গানীর বিল্বপত্র করি আহরণ,
যেই নর নিত্য পূজে মহেশ তোমায়,
অবসরে করে সদা গীতা আলোচন----



.                ( ৪ )

সেই নর উপযুক্ত বারাণসী-বাসী,
রাজা,তব প্রিয় শিষ্য বিশ্বাসী সুধীর,
কি করিতে পারে তার মৃত্যুদিন আসি,
বারাণসী-পুর-পতি পায়ে তার শির |


.         *************************                    
.                                                                        
সূচি    





মিলনসাগর