কবি সুশীল মালতীর কবিতা |
চিন্তামণি সুশীল মালতী ( ১ ) অজ্ঞানতা-জালে জীব অন্ধ অনুক্ষণ, ভুলে থাকে গম্যস্থান কি মোহে মগন ; মায়ার খেলায় তোর নাহিক বিশ্রাম, ভোগ্য-দ্রব্যে সদা প্রীতি, তৃষা অবিরাম | ( ২ ) মরীচিকা সম ভোগ্য-বস্তু যে ধাঁধিছে, মৃগ মৃগী সম জীব তাহাতে মরিছে ; সজাগ দেহেতে পঞ্চ ইন্দ্রিয় প্রবল, অবিদ্যার শোক তাপ ভুঞ্জে অবিরল | ( ৩ ) চিনি বালি সংমিশ্রণে অসারেতে সার, পেতেছেন মহামায়া এ ভব সংসার, রহস্যময়ীর খেলা নহেত সরল, জটিল যন্ত্রণাময় বড় কোলাহল | ( ৪ ) অন্তরে কোথায় গুপ্ত চিন্ময় সুন্দর, রাজিছেন এক ব্রহ্ম সবার ভিতর, এক ব্রহ্ম পরমাত্মা অসংখ্য খন্ডেতে, রাজিছেন মূর্ত্তিভেদে মানবে পশুতে | ( ৫ ) চৈতন্য স্বরূপ আমি, আমিই অজ্ঞান, পরমাত্মা প্রাণ মম, জীবাত্মা প্রমাণ রমণীয় দৃশ্য আছে আমার ভিতর, শুক্তি মাঝে গুপ্ত যথা মুকুতা সুন্দর | ( ৬ ) মতান্তর নানা মত ধাঁধিছে সবায়, পাপ পুণ্য বুঝে উঠা হেথা বড় দায়, গুরুবাক্য পন্থা মাত্র, বিশ্বাস সহায়, আত্মজ্ঞান বিনা বল, কেবা মুক্তি পায়! ( ৭ ) গুরু বলে সুসন্ধান, আত্ম বলে লাভ, দেন গুরু বুঝাইয়া জলপূর্ণ “ডাব” জ্ঞান অস্ত্রে ভেদি তাহে, লভ মধুরতা, হ’ মন ! মনের মত ত্যজ অলসতা | ( ৮ ) সাধি তোর পায়ে মন, ত্যজ অজ্ঞানতা, বিবেকের পথে রহ, ত্যজ দুর্ব্বলতা, কাদা-লিপ্ত মর্ম্ম কূপে পরমাত্মা মণি, রে কাঙ্গাল ! সে ধনেতে হ’রে মহাধনী | ( ৯ ) বিষয় বৈভব সে যে অনন্ত অক্ষয়, ব্যবধান ভ্রম ঘুচে হবি ব্রহ্মময়, ত্রিতাপ সংসার-তাপ যাবে তোর ঘুচে, লভ মণি ভক্তি জ্ঞান, -- ধুয়ে চিনে মুছে | ( ১০ ) জীবাত্মা জড়িত আমি চৈতন্যস্বরূপ, আমি দীন ঋণী-প্রজা, আমিই ত ভূপ, মহাভুল --- ভুলে মূলে ধরিতে না পারি, ভুলে ভেসে মায়া মোহে হেরি ভববারি | ( ১১ ) জীবনের কূল ব্রহ্ম, তিনি পারাবার, সে কূলে ঠেকিলে বল কিবা চিন্তা আর ? চিন্তামণি মণি চিন্তা, শুধু চিন্তা “মণি” চিন্তিয়ে পাইলে মণি, হবি মহাধনী | ( ১২ ) সে ধনে নিবৃত্তি, শান্তি, স্থিতি, সন্মিলন, ঘুচে যাবে ব্যবধান এ দেহ-বন্ধন, জ্ঞান-যোগে লভ মণি ত্যজ অজ্ঞানতা, ঘুচে যাক সে আলোকে দুঃখ মলিনতা | ( ১৩ ) জীবাত্মা জড়ায়ে এসে পরমাত্মা ধন, ভব-হাটে কোলাহলে খেলে অনুক্ষণ, কে তুমি ? জ্ঞানের আঁখি মেল একবার, ঘুচে যাবে আমি তুমি, হবে একাকার | . ************************* . সূচি মিলনসাগর |
স্বপ্ন-মন্দির সুশীল মালতী ( ১ ) মধুর মোহন মরি বরষার নিশি, চমকি বিজলী যায় জলদেতে মিশি, ঝিমি ঝিমি, ঝুম্ ঝুম্ , ভরা বাদলের ধুম, প্রকৃতি মাধুরী-লীলা দুনয়ন, উপাধানে ত়ৃপ্তমনে করিনু শয়ন | ( ২ ) নিঝুম নীরবে আসি আচ্ছন্নের তীরে, সুষুপ্তির কোলে উঠি স্বপন-মন্দিরে, অঘোরে ঘুমায়ে থাকি, ফুটিল মরমে আঁখি, দেখিনু মধুর এক “কুসুম-সহর”---- ফুলে ফুলে ফুলময়, বড় মনোহর | ( ৩ ) কুসুম পাহাড় শোভে, পরাগ তটিনী, গোলাপী গোলাপ-ধূলি অতি সুশোভিনী, মোহিত বিহ্বল মন, বসি রই বহুক্ষণ, অলিকুল গুঞ্জরিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ধায়, তাদেরি কুসুম-রাজ্য বিরাজে তথায় | ( ৪ ) অলি মধুমক্ষিগুলি মোরে নিরখিয়ে, পাপিয়া বিহগিটিকে এল সনে নিয়ে, ঝঙ্কারিয়ে সুমধুর, পাপিয়ার মধু সুর, সুধায়---“কেমনে তুমি আসিলে হেথায় ?” কহিনু ---“কি জানি, কেবা আনিল আমায় | ( ৫ ) হাসিয়া বিহগি “পিয়া” অতি সমাদরে, “এস সহচরি !” বলি দুবাহু প্রসারে, লইল হৃদয়ে টানি, চকোরী হইনু মানি, পরে করে ধ’রে লয়ে চলে সযতনে, মধুর সুষমা-ভরা কুসুম ভবনে | ( ৬ ) সে দেশ সৌন্দর্য্যময়, চিত্ত বিনোদন, দীনাহীনা বেশ মম বিশুষ্ক বদন ; পরাগের সরোবরে, অবগাহি কলেবরে, দিল পিয়া ফুলমধু করিনু সেবন, পিয়ে মধু প্রাণ মন মোহিল কেমন | ( ৭ ) করে ধরি লয়ে চলে সোহাগী পাপিয়া, উপনীতা মন্ত্রিপদে দোঁহেতে আসিয়া, “বসন্ত” পাপিয়া পতি, সেনাপতি হর্ষমতি, প্রণমি নেহারি তাঁর ফুল্ল প্রাণ মন, বসিতে পাইনু এক কুসুম আসন | ( ৮ ) পিয়া গিয়া বসন্তের দুটী করে ধরি, চুপি চুপি বলিল কি পুলকেতে ভরি, পরক্ষণে সেনাপতি, সুকোমল স্বরে অতি, মম পরিচয় চান মধুর হাসিয়ে, দাঁড়াল পাপিয়া রাণী নিকটে আসিয়ে | ( ৯ ) “কেমনে আসিলে তুমি স্বপন সহরে ?” সুধালেন সেনাপতি সুমধুর স্বরে ;--- “সংসার ফেলিয়ে আস, কারে সেথা ভালবাস, সংসারে কে তব প্রিয় আপনার জন ? পরিচয় প্রদানিয়ে তৃপ্ত কর মন |” ( ১০ ) প্রণমি কহিনু,-------আর যাবনা তথায়, সেথা কই ? কেহ ভাল বাসেনা আমায়, সুকঠিন সে সংসার, বাস করা বড় ভার, জরা, মরা ভরা ধরা অসার কেমন, মাত্র তথা আছে মোর কুমার রতন | ( ১১ ) নিতান্ত অসার----মিছে সংসার প্রবাস, পড়েছে গলায় এক মায়া-নাগপাশ দারুণ দায়িত্ব তার, কর্ত্তব্যের গুরুভার, আমার মস্তকোপরি করিয়া অর্পণ, পশিল মরণ-রাজ্যে জীব এক জন | ( ১২ ) অসার অনিত্য দেহ করিল লুন্ঠন, আপনি স্বেচ্ছায় দান না করে গ্রহণ ; পরিণয়ে পরিণাম, মহা শূন্য ভোগধাম, ঐহিক সংসারে নাই আমার আলয়, জ্ঞানী গুণী সুখী হোক্ বালক তনয় | ( ১৩ ) “তথাস্তু” বলিয়া মন্ত্রী করেন প্রস্থান, পিয়া-রাণী সনে চলে প্রফুল্ল বয়ান ; মালতী ফোয়ারা ওঠে, মধুর সুবাস ছোটে, ফুল ফোয়ারার তলে আসিয়া বসিনু, এক রাশ ফুল্ল ফুল চয়ন করিনু | ( ১৪ ) গাঁথিনু মালিকা এক মনোমত করি, হাসিয়া সুধালে মোরে কুসুম সুন্দরী, “রচিলে কাহার তরে, যতনে সোহাগ তরে, কার গলে দিবে তুলে জানিতে মনন,” কহিলাম ----“সাধে গাঁথি, জানিনা কারণ |” ( ১৫ ) ধীরে চলিলাম উঠে ভবন ভিতরে, অপূর্ব্ব সৌন্দর্য্য রাশি বিমোহিত করে তমালে জড়িত লতি, হাসে তায় ফুল-সতী, মধুর মধুর বয় বসন্ত মলয় ; আনন্দ মঙ্গলপূর্ণ কুসুম আলয় | ( ১৬ ) শোভা হেরি ধীরে চলি আবেশেতে ভরি, বারে বারে অনুমানি---- হয়েছি চকোরী ; ভবন ঘুরিয়া শেষে, ফুল-গেহ মাঝে এসে, বিস্ময়ে হরষে যেন হইনু কেমন ; ধীরে ধীরে মুদিলাম যুগল নয়ন | ( ১৭ ) ধরেনা নয়নে শোভা ধরেনা হিয়ায়, কুসুম-পর্য্যঙ্কে “চন্দ্র” অঘোরে ঘুমায় ; ঘুমন্ত শশাঙ্ক রাজ, বিহ্বল নিরখি আজ, ফুলরাজ্যে “রাজা চাঁদ” মধুর মোহন, ঘুমন্ত চাঁদের রূপে ভরেছে ভবন | ( ১৮ ) বিহ্বল হরষে ফুল্ল তৃপ্ত প্রাণ মন, নিরখি সকল মম বাসনা পূরণ, সোহাগে কুসুম হার, পরানু গলেতে তাঁর, চন্দ্র পদতলে বসি হইনু শীতল, অনিমেষে হেরে আঁখি শ্রীমুখকমল | ( ১৯ ) গর্জ্জিল জীমুত তথা বাঁশরীর সুর, যূথিকা ফুলের বৃষ্টি হল ঝুর্ ঝুর্ ; নীরবে একাকী চুপে, মোহিত বিহ্বল রূপে, মনে ওঠে ধীরে ধীরে বাল্য-পরিণয়, বহু অনুরোধে মালা যেচে কে-সে লয় ! ( ২০ ) বাসনা-বিমুক্ত প্রাণ শুধু রূপে ভোর, মালিকা দিলাম চাঁদে করিয়া আদর ; বসিনু শীতল হয়ে, দেখি রূপ রোয়ে রোয়ে, কহিলাম নিজ মনে----“ ঘুমন্ত রাজন্ ! মালতীর মালা ধর সখে নারায়ণ !” ( ২১ ) নির্জীব মার্জ্জার এক করুণ-ক্রন্দন, ছোটালে সে স্বপ্ন-রাজ্য ফোটালে নয়ন ; ত্যজি তবে উপাধানে, বোসে ভাবি ভগ্ন প্রাণে, ধীরে ধীরে মনে ওঠে কুসুম-সহর, পাপিয়া, বসন্ত, চাঁদ,------কাঁদিনু বিস্তর | ( ২২ ) হৃদি-তম-নাশ-কারী হে চন্দ্র রাজন্ ! রামকৃষ্ণ প্রাণারাম, সখে নারায়ণ ! স্বপনে চরণে বসি, শীতল হয়েছি শশী, চির-তৃপ্ত কর নাথ রাখি শ্রীচরণে : তুমি “হৃদি-রাজা” হৃদে আছ সংগোপনে | ( ২৩ ) বিবেক ----বসন্ত মন্ত্রী, শান্তি সে পাপিয়া, মধুপ-গুঞ্জন---- প্রেম, অশান্তি নাশিয়া, নিদ্রা------ সব বিস্মরণ, স্বপ্ন সে নবজীবন, চিত্ত-প্রফুল্লতা লাভ -----কুসুম-সহর ; ফোয়ারা সে বীজমন্ত্রে মালা মনোহর | ( ২৪ ) ভবন ঘুরিয়া শেষে কুসুমের গেহ, রিপুগুলি নিস্কেজিয়া সূক্ষ্ম শুদ্ধ দেহ ; ঘুমন্ত সে রাজা চাঁদ, ইষ্টদেব দেখা সাধ, যোগনিদ্রা গত মম প্রাণ নারায়ণ, স্বপন কল্পনা-ছবি মসিতে অঙ্কন | . ************************* . সূচি মিলনসাগর |
আবাহন সুশীল মালতী ( ১ ) এস মহিশমর্দ্দিনী কৈলাশবাসিনী, নগেন্গ্র-নন্দিনী শিবানী, এস আনন্দ-আননী বিশ্বজননী, শান্তিদায়িনী ভবানী ! ( ২ ) এস ব্রহ্ম সনাতনী শঙ্করী শৈলজে, মধুর মন্দ-হাসিনী, এস মধুময়ী উমা হর মন্মোহিনী, এস মা সিংহবাহিনি | ( ৩ ) এস শ্যামল কোমল উরস পাতিয়ে, অর্চ্চিছে তোমায় ধরণী, এস সেফালি কমল অপরাজিতায়, তুষিবে তোমায় জননি | ( ৪ ) এস শশাঙ্ক উজলি হাসে ভূরি ভূরি, পিককন্ঠে মধুরাগিণী, এস এস মা শারদে সুহাসি বিমলে, এস মা শঙ্করভামিনি ! ( ৫ ) এস রাজরাজেশ্বরী সিংহবাহিনী, দানব-দলনী দামিনী, এস হেরম্ব কমলা ভারতী কার্ত্তিকে, দুভাগ উজল শোভিনি ! ( ৬ ) এস শারদী প্রভাতে মঙ্গল-রাগিণী, তুলিছে সানাই সুধ্বনি, এস সোনার কৈলাশে চিন্ময়ী বিমলে, এস মা মৃন্ময়ী ধরণী | ( ৭ ) এস ষড়পদ্মে রাজ’ অভয়ে শারদে, মানসেতে মনোমোহিনী, এস বক্ষে চক্ষে মিলি হোক একাকার, রাজগো ত্রিদিবা যামিনী | ( ৮ ) এস সারাটা বরষ ঘুরে ফিরে এল, এস মা আনন্দদায়িনি ! এস প্রাণ পুষ্পে তারা অর্পিব অঞ্জলি, তুলে নিও বিশ্ব-জননি ! . ************************* . সূচি মিলনসাগর |
প্রেম-উন্মাদী সুশীল মালতী ( ১ ) দিগ্বসনা শোন্ বাসনা, আমায় পাগল ক’রে তোল, আমি দিবানিশি বোকে মরি, হরি হরি হরিবোল | কাজ কি তার দিব্যজ্ঞানে, নানা মতে ধাঁধাঁ আনে, আমি সব ভুলে গো পাগলী হব, কোর্ ব সুধু গন্ডগোল, ছড়িয়ে দিব পথে ঘাটে, মধুর হরিনামের রোল | ( ২ ) কান্য-কুমারিকা হোতে ঘুর্ বো হিমালয়ের কোল, মাখ্ ব গায়ে পথের ধুলি, লজ্ঝা ঘৃণা যাব ভুলি, পাগ্ লী হোয়ে কাটিয়ে লব সমাজের এ নীতি-বোল, ক্ষুধা তৃষ্ণা ভুলে যাব----- মিটে যাবে সর্ব্ব গোল | ( ৩ ) কেশে জটা ধর্ বে আমার, থাক্ বেনাক আঁটাআঁটি, শুষ্ক হবে দেহখানা, ঘুচে যাবে বাবুয়ানা, গাছের তলে দিন কাটাব, মাটিই আমার শিতলপাটী | ( ৪ ) পাগল-প্রিয় বালকগুলি সবাই আমার ধোর্ বে ছেকে, করে তালি দিয়ে মরি, আমার বোলে বোল্ বে “হরি”, হরি হরি মহা গোলে, আস্ বে হরি গোলোক থেকে | ( ৫ ) ভুলে যাব ভাষার এমন নানা রকম বাঁধন-ছাঁদন, শুধু দুটি অক্ষরেতে, মিশিয়ে আমি রব মেতে, বিস্মৃতি দে মহামায়া ! ভোলাও মায়া-মোহের বদন | ( ৬ ) পূজার মন্ত্র, গম্ভীরতা, পরবোনাক আমি তারা ! নাক টিপে প্রাণ হাঁপিয়ে ওঠে, গৃহ-গোলে শ্রবণ ছোটে, জোর কোরে মন হয়নাক বশ, আছি হোয়ে তোমা-হারা | ( ৭ ) আস্তে চলে আয়ুঃ তপন, ভাঙ্গ্ বে কবে দেহ-কারা, আবার নূতন কারায় পূরে, পাঠিয়ে দেবে এ সুদূরে, ঐহিক অতৃপ্ততায় ফেলে, কোর্ বে আমায় কাঁদিয়ে সারা | ( ৮ ) এ জীবনে নামে পাগল---- প্রেমে আমার ঝরাও আঁখি ; সব হরি, দাও অক্ষর দুটী, ডাকি হোয়ে করপুটি, বিশ্বমাঝে ঘুরে বেড়াই পথের ধূলি অঙ্গে মাখি | ( ৯ ) আসে যেন শেষের দিনে, ভিতর থেকে হরি-শমন, দ্রবময়ীর শীতল নীরে, দেহ ডুবে যাবে ধীরে, হয়না যেন এ দেহখান্ সাজিয়ে চিতা তাহে দহন | ( ১০ ) সংসারেতে জ্যান্ত মরা, দহন আমার হোয়ে আছে, এ দেহটা ডুবিয়ে শেষে , মিশব তোমার পাদ-দেশে, যা বলাও তাই তোমায় বলি, সুবিচার মা, তোমার কাছে | . ************************* . সূচি মিলনসাগর |
সুন্দর সুশীল মালতী ( ১ ) যোগাসনে নাথ ! স্তিমিত নয়ন,. বিশ্ব মাঝারে বিশ্ব ভুলি, ধরিয়া রেখেছে সমাধিস্থ ছবি, শিষ্য-সৌভাগ্যের মধুর তুলি | ( ২ ) অন্তরে বাহিরে হেরিব তোমায়, সুধীর সুপ্রেমী হৃদয়নিধি, অশ্রুজলে জলে ধুয়ে গেছে কত, সিংহাসন কর এ মম হৃদি | ( ৩ ) হৃদিপদ্মাসনে চিণ্ময় সুন্দরে, নেহারি রতন হইব স্থির, অভ্যাসেতে যদি ঝরে ত ঝরিবে, আনন্দ প্রেমেতে নয়ন-নীর | ( ৪ ) উল্লাসে উথলি মর্ম্ম-মন্দাকিনী, ভাসাবে মধুর হৃদিপদ্মাসন, রাজিবে সুন্দর চিণ্ময় মূরতি, “রামকৃষ্ণ ব্রহ্ম” মধুর মোহন | ( ৫ ) লীলার কারণ মূঢ় জীব পায়, মায়া-ভরা দুটী আঁখি, সংসারের লীলা সাঙ্গ রুচি নাই, দু চোকে দেখিনু ফাঁকি | ( ৬ ) খোল খোল মন তৃতীয় নয়ন, অসারে মজনা আর, ভোগে মহা-ভোগ, এ অশান্তি রোগ, কর্ম্মফল হাহাকার | ( ৭ ) ভোগে জন্ম মম, ভোগেতে পালিত, ভোগেতে ধমনী বয়, ত্যাগের রাগিণী ধর মন-বীণে, ধীরে তোল তান লয় | মন ! . ত্যাগ ! কিবা ত্যাগ ? ত্যাজ্য কি তোমার, ত্যাজ্য শুধু অজ্ঞানতা, অবিদ্যা আঁধারে অন্ধ মায়ামুগ্ধ, ত্যাজ আমি তুমি ( ভুল ) কথা ( ৯ ) “চিন্মণি” জড়িত জীবাত্মা সকল, মম প্রিয় প্রাণাধার, এস বিশ্ববাসি ! অসংখ্য বা এক, আমি তুমি ভিন্নাকার | ( ১০ ) ভোগ ? ভোগ কিবা ? কিবা ভোগ্য মন! ভোগ “রামকৃষ্ণব্রহ্ম” নাম ভোগ নামামৃত উপভোগ সুখ, চিত্ত স্থির প্রাণারাম | ( ১১ ) হে সুন্দর ! আজি বসন্ত রজনী, চন্দ্রকরোজ্জ্বলা ধরা, নিঝুম নিঝুম শান্তিময় গেহ, তব “চিত্রে” আলো করা | ( ১২ ) গুঞ্জে চরণে এ মন ভ্রমরী, “প্রাণারাম কৃষ্ণ-রাম” বসন্ত মলয় পূরিত ধরণী, মধুময় বিশ্বধাম | ( ১৩ ) মধুর নিশীথে স্মরিয়া সুন্দরে, চিত্ত-চকোর ভোর, নিত্য ডাকিও আমারে সুন্দর, খুলে নাও মোহ ডোর | . ************************* . সূচি মিলনসাগর |
জলধি সুশীল মালতী ( পূরীর-সমুদ্র-তীর ) ( ১ ) সীমা শূন্য নভঃ জল, ধোঁয়াকার মেশামিশি বসেছি বালির বাঁধে, নীলাজ দেখার সাথে, আঁধারে ডুবেছে চাঁদ, পোহাল পোহাল নিশি | ( ২ ) হিমানী পৌষ রাতি, কৃষ্ণপক্ষ অন্ধকার, পাশে যে সঙ্গিনী বালা, তার ভবে ভ্যাস্তা পালা. ঊর্দ্ধে নভঃ, সন্মুখেতে গর্জ্জিতেছে পারাবার | ( ৩ ) গর্জ্জন তরঙ্গ ভঙ্গ, ফেনপুঞ্জ তুলাকার, বিরাম বিশ্রাম নাই, অনিমেষে হেরি তাই, দেখিতে দেখিতে দেখি. আলোকিত চারিধার | ( ৪ ) জ্যোতির্ম্ময়ী উষা ভাসে, নীলিমা সাগর বুকে, শিখীর কন্ঠের রং, তরঙ্গের ভাঙ্গা ঢং, ফোটেনা সে ছবিখানি, মসিতে লেখনী মুখে | (৫ ) মধু মধু ভাবময়, নীলাম্বু জলধি মরি, জল হোতে রাঙ্গা “রবি” উঁকি দিল মধু ছবি, ( যেন ) অতলের তল হতে, ধীরে উঠে নভোপরি | ( ৬ ) আধখানি জলে ডোবা, উদিত আধেকটুকু, রমনীয় মধু শোভা, মরি কিবা মনোলোভা, সে ব্রহ্ম-মুহূর্ত্তে তৃপ্ত, নেহারি মোহিত বুক ( ৭ ) মনোহর নীল জল, গর্জ্জন তরঙ্গোচ্ছ্বাস, এক ভাব দিন রাত, কূলে ঘাত প্রতিঘাত, নেহারি নীলাভ সিন্ধু, মুখে নাহি স্মরে ভাষ | ( ৮ ) রত্নের ভান্ডার সিন্ধু, রোয়েছে বালির বাঁধে, অস্থায়ী অনিত্য ধন, লোয়ে ব্যস্ত জীবগণ, ( তবু ) প্রতি পলে মৃত্যু নরে, আয় বোলে ডাকে সাধে | ( ৯ ) বিশ্বপতি মহারাজা, ভবেশ করুণাধার ! কি শোভার “রাজধানী”, তোমার “বসুধা” খানি, সাগর ভূধর বন, সকলি সুষমাসার | ( ১০ ) এহেন সুন্দর রাজ্য, সে রাজা কি মনোহর ! অচিন্ত্য অব্যক্ত রূপ, হে চির সুন্দর ভূপ, ওহে জ্যোতির্ম্ময় ব্রহ্ম, প্রণমি চরণ পর | . ************************* . সূচি মিলনসাগর |
নীলাবরণ সুশীল মালতী ( পশ্চিম সিমুলতলা ) ( ১ ) ক্ষুদ্রতম মরি উন্নত নত, শিলাখন্ড নীল ভাতিছে, তদুপরি শ্যাম, তরুটি সুন্দর ক্ষুদ্র তরু শোভা দানিছে | ( ২ ) মধুর মন্দ হিমানী সমীর, শূন্যে শূন্যে বহিছে, ঝুরু ঝুরু সুরে, ক্ষীণা ‘কাঠুরিয়া’* বালুকাবাসিনী গাহিছে | ( ৩ ) বহু দূর গত ধুম্র গিরিশ্রেণী, নভো ছুঁয়ে যেন বহিছে, নিরজন ঠাঁই, শান্তি রসভরা, বিহগ-গীতিতে ভোরেছে | ( ৪ ) ( যেন ) প্রক়তি রাণীর প্রিয় খেলা ঘর এ “নীলাবরণ” ভাতিছে, মধু সুষমায়, প্রীতি উছলয়, ফিকি ফিকি রাণী হাসিছে | ( ৫ ) হিমানী হেমন্তে ‘প্রমোদ’ ‘সুষমা’ ‘মালতী’ এ তিন জনে, ছুটাছুটি হাসি, মধু কোলাহলে, রাজিল আনন্দ মনে | ( ৬ ) আনন্দেতে নাম লেখে শীলা-গায়, ‘সুষমা’ চপলমতি, ক্ষীণা কাঠুরিয়া, ছেনি জল খেয়ে, ফিরিনু হরষে অতি | ( ৭ ) সুন্দর বিশ্বের না জানি কতই, মধুময় বিশ্বপতি, ভক্তিভরে নাথ, শত প্রণিপাত, পদে রাখ এ “মালতী” | . ************************* . সূচি * কাঠুরিয়া নদী মিলনসাগর |
আনন্দযাত্রা সুশীল মালতী ( গঙ্গাসাগর ) ( ১ ) গৃহ-দুর্গে বদ্ধা সদা ‘প্রমোদ’ (১) ‘মালতী’, ঝালাপালা হোয়ে ভাবে শমন সুন্দরে, কোলাহল ভরপূর সহরে বসতি, ফিরি’য়ালা কন্ঠ শুধু শোনে বসে ঘরে | ( ২ ) নিয়তি ভুলিল ক্ষণে একঘেয়ে ভাব, কৃপা কটাক্ষেতে চান বিশ্বরাজ নাথ, “মা শীতলা” চাহিলেন মন্ডা চিনি ডাব, আটাশে পৌষ এল দ্বাদশী প্রভাত | ( ৩ ) ইচ্ছাময় ঊর্দ্ধে রাজা বিভু দয়াময়, উপলক্ষ অবতার ভ্রাতা “শ্রীউপেন”, সুসময় মন্দ-ভালে হইল উদয়, সহায় স্বরূপ পুত্র “শ্রীমান নরেন (২) |” ( ৪ ) “কিরণ” জাহাজ রাজ্যে শ্রীউপেন্দ্র রাজা, ঝটিতি তোরেতে গেল রাজ্যের তল্লাসে, আধ-পেটা নাকে মুখে খেয়ে লুচি ভাজা, অন্তরঙ্গ ‘তুলসীদাস’ লয়ে সখা পাশে | ( ৫ ) আপদ বালাই জোটে “নরেন্দ্রর” ভালে, দিদিমা, মাসীমাদ্বয় যাত্রী সাগরের, তাড়াতাড়ি নেয়ে খেয়ে শীতের সকালে, সঙ্গে চলে তিন নারী মোট-মাট ঢের | ( ৬ ) আরমানি-ঘাটেতে আসি থামিল শকট, কুলির কুলিশ-বাণী অহঙ্কার মাখা, থামিল সে কুলি-বুলি মোদের নিকট, মোট দৃষ্টে বলেছিলে লব তিন টাকা | ( ৭ ) রাজা ভাই (৩) সনে তবে হইল মিলন, সাদরে চলিল লয়ে দ্বিতলের হলে, ঊর্দ্ধে থেকে দেখি অধে যাত্রীর গমন, হুড়া তাড়া কোলাহলে ওঠে পড়ে চলে | ( ৮ ) আসিল কিকণ-রাজ্য গঙ্গা স্রোতে ভেসে, রাজা ভাই উঠে গেল কিরণ-রাজ্যেতে, মোটগুলি উঠে গেল, যাব মোরা শেষে, হা অদৃষ্ট, মিশে গেনু বিপুল ভিড়েতে | ( ৯ ) হাঁ করে রহিনু চেয়ে কিরণ সচল, ভেসে গেল রাজা সনে সম্পত্তি মোদের, সরস কমলালেবু, সন্দেশ কোমল, ট্রাঙ্কগুলি গেল ভাল, শান্তি আপদের | ( ১০ ) ক্ষণপরে আসে ভেসে সুন্দরী “ষোড়শী”, সেই সে ষ্টিমার রাজ্যে ‘শ্রীনলিন্’রাজা, মোরা রাজ্য পেয়ে হাতে উঠিলাম বসি, অচেনা এ শ্রীনলিন্ দেখি রাজা সাজা | ( ১১ ) সতেরো আঠারো তার হইবে বয়স, রামকৃষ্ণভক্ত ধীর নম্র মিষ্টভাষী, নূতন কার্য্যেতে হেরি বড়ই হরষ, শ্রীনরেন সনে তবে কথা কয় আসি | ( ১২ ) গীতি মুখরিত নিশি ‘ষোড়শীর’ বুকে (৪) কভু বা ঘুমন্ত, কভু জাগি দু’সঙ্গিনী, পোহাল মধুর নিশি নিরাপদ সুখে, হরষে উছলে গঙ্গা দুকূলপ্লাবনী | ( ১৩ ) প্রভাতে আসিয়া পড়ি সাগরের কুলে, বালুকা সৈকত ভূমে অবতরি সবে, উপেন্দ্রের পথ চাহি থাকি আঁখি তুলে, আসিল স্নেহের ভ্রাতঃ হাসিমুখে তবে | ( ১৪ ) সৈকতে মিলিল এক ছত্র সম ঘর, বসিলাম সবে তায় আনন্দিত মনে, বালুকা গদিতে টোপ রঞ্জিত কাঁকর, নেহারি সে মধু-শোভা হাসি দুটি বোনে | ( ১৫ ) ডাগর সাগরে যাই স্নান হেতু তবে, ভাটার সে কাদা-জল দিলাম মাথায়, লবণাক্ত হোয়ে ফিরে আসিলাম যবে, কাতর হইনু মোরা বড়ই তৃষায় | ( ১৬ ) বয়সী গৃহিণী সাথে হরষি দু’বোনে, চড়ায় চড়িল তবে আহার্য্য খিচুড়ী, “শ্রীনরেন্দ্র” ( খোকাবাবু ) শ্রান্ত ক্লান্ত মনে, ব্যাগসহ হারাইল ভাল দামি ঘড়ী | ( ১৭ ) সে নিঠুর চোরে প্রভু দাও দিব্যজ্ঞান, সদয় প্রসন্ন হও তাহার উপর, দয়া মায়া জ্ঞানে পূর্ণ হোক তার প্রাণ, হোলো মহা মন-দুঃখ সুখের ভিতর | ( ১৮ ) সুনিদ্রায় নিশি ভোর উঠিনু প্রভাতে, সাগরে জোয়ার এল কূলে কূলে জল, তরঙ্গ সৈকতে খেলে ঘাত প্রতিঘাত, সাগর দেখিয়া ফুল্ল, শুষ্ক হৃদিতল | ( ১৯ ) দু’বোনে কোমর বাঁধি ঢেউ সনে চলি, নাকে বালি, কাণে বালি, বালি চোখে মুখে, কেশ হোতে ঝড়্ ঝড়্ বালি ঝেড়ে ফেলি, উথলে আনন্দসিন্ধু দু’সঙ্গিনী বুকে | ( ২০ ) মুনিবর “কপিলের” পাষাণ মূরতি, সিন্দুরে রঞ্জিত কায় নমি পদে তাঁর, বাতাসা এলাচদানা প্রিয় তাঁর অতি, নিতেছেন খুরী তরি দান সবাকার | ( ২১ ) আসিল জোছনা নিশি শশাঙ্ক-শোভিতা, তারকা উঠিল ফুটি নীল নভোপরে, অকস্মাৎ নিশিযোগে হট্টগোলে ভীতা, “বাঘমামা” ভাগ্নাভাগ্নি কারে তাড়া করে | ( ২২ ) আমরি ক্ষুধায় জীব হইয়া কাতর, শীকার দেখিয়া আসে নিবারিতে ক্ষুধা, মানবের কেন হয় ভয় দুঃখকর, ( এ পশুরে ) দাও প্রভু নরজন্ম, দাও নামসুধা | ( ২৩ ) সহস্র শঙ্খের ধ্বনি, বাজিল কাঁসর, সজাগ সাগর যাত্রী আছিল যতেক, “বাঘমামা” ছুট দিল বনের ভিতর, দ্বিতীয় রজনী ভোর হোলো অতঃপর | ( ২৪ ) তৃতীয় দিবসে মোরা স্নান সেরে এসে, বসিলাম কুটীরেতে আনন্দিত মনে, দেদার নাগার দল দেখে মরি হেসে, শোভিছে কেমন তারা বসনে ভূষণে | ( ২৫ ) আনন্দে দিবস গতে গোধূলি সময়, কূলে এসে বোসে বলি ষোড়শী তরাও, কূলে মহা গন্ডগোল লোকারণ্যময়, ডাকি “রামকৃষ্ণ প্রভু” কৃপা-নেত্রে চাও | ( ২৬ ) বহু কষ্টে বহু ক্ষণে “ষোড়শীতে” এসে, উত্তম স্থানেতে বসি হাঁপ ছেড়ে বাঁচি, পরদিন প্রাঃকালে আসিলাম ভেসে, ‘ষোড়শী’ সমুদ্রে পড়ি চলিল যে নাচি | ( ২৭ ) উত্তাল তরঙ্গভঙ্গ নীলাভ সলিল, কিনারায় কূল যেন শৈবাল ভাসিছে, মিশেছে আকাশ জল, উড়ে পাখী চিল, বর্ষিয়া কিরণ রবি মধূর হাসিছে | ( ২৮ ) স্বপনের রাজ্য ধরা কতই মধুর, স্বর্ণময়ী প্রকৃতির বিমল মাধুরী, কি শিল্প ! নয়নমুদ্ধ পরাণবঁধুর, শিল্প দেখাইয়া শিল্পী প্রাণ করে চুরি | ( ২৯ ) বিশাল জলধি বক্ষে মধুর কম্পন , কুলেতে কি ভীমাঘাৎ ফেনপুঞ্জ রাশি, ব্রহ্ম সমুদ্রেতে মিশি অনন্ত মিলন, দূরে থেকে ডাকা নাথ, কভু কাঁদি হাসি | ( ৩০ ) দেখিতে দেখিতে এল নদী সুরধুনী, নিশি প্রাতে এনে দিল বিকট সহরে, আবার আজিকে ঘরে আসিল রজনী, ধরেছি লেখনী মসি বসি ঘরে করে | ( ৩১ ) উপেন্দ্র ভায়ার জয়, জয় সাগরের, প্রমোদী, মালতী প্রাণে আনন্দ সঞ্চয়, নরেন্দ্রের ধনক্ষয়, এ বড় দুঃখের, সবে মিলি মিশি বল “রামকৃষ্ণ জয় |” . ************************* . সূচি ১ - কবির সমভাগ্যা ভগ্নী, ২ - কবির ভগ্নীর পুত্র নরেন্দ্র, ৩ - "কিরণ" ষ্টীমারে ভলেন্টিয়ার রামকৃষ্ণভক্ত উপেন্দ্রনাথ কবির কনিষ্ঠ ভ্রাতা, ৪ - হিন্দুস্থানীরা সমস্ত রজনী ভজনসঙ্গীত গাহিতেছিল। মিলনসাগর |
গুরুভক্তি সুশীল মালতী ( ১ ) নৃত্যময়ী ছল ছল নদী সুরধুনী, শান্তিময় “রারাণসী” কূল, কূলেতে “শঙ্কর” দিনমণি, জ্ঞানময় উপমা অতুল | ( ২ ) আর কূলে শিষ্য “সনন্দন” মাঝে গঙ্গা বক্ষে জলোচ্ছ্বাস, ডাকিলেন শ্রীগুরু তখন, ‘সনন্দন’ ‘সনন্দন’ ভাষ | ( ৩ ) সনন্দন-শ্রবণে পশিল, ডাকে শিষ্য হইল আকুল, “শীঘ্র এস সনন্দন” পুন যে শুনিল. গুরুবাক্য মহামন্ত্র মূল | ( ৪ ) গঙ্গাবক্ষে না হেরিল “না”, ডাকিলেন গুরু বিশ্বনাথ, উত্তাল তরঙ্গে দিল পা, “জয় গুরু” স্মরি যোড়হাত | ( ৫ ) চরণ পরশি আহামরি, গঙ্গাবক্ষে ফুটিল কমল, আনন্দেতে ভক্তিতে প্রেমে ভরি, আসি নমে গুরুপদতল | ( ৬ ) ধন্য গুরু শ্রীগুরু শঙ্কর, ধন্য ভক্ত শিষ্য সনন্দন, “পদ্মপাদ” নাম অতঃপর, দেন শিষ্যে শঙ্কর তপন | ( ৭ ) জন্মজ্ঞানী অবতার নাথ. নরকায়ে দেবতা শঙ্কর, কার পদে শত প্রণিপাত. জ্যোতির্ম্ময় নমঃ যোগেশ্বর | ( ৮ ) ( যবে ) গৃহত্যাগী “শঙ্কর তপন”, উপনীত নর্ম্মদার তীরে, সমাধিস্থ গুরু কূলে র’ন, উচ্ছ্বাসিয়া আসে নদী শিরে | ( ৯ ) সমাধির বাধা কল্লোলিনী, ভাবি মনে কাতর শঙ্কর, কন শান্ত হও তরঙ্গিনী, বারে বারে যোড় করি কর | ( ১০ ) নদী আসে ভীমনাদ-করি , ব্রহ্মতেজে বালক শঙ্কর, নর্ম্মদারে কমন্ডলে ভরি, শক্তি ভক্তি দেখান সুন্দর | ( ১১ ) মহাযোগ ভাঙ্গিল যোগীর, কন “বত্স ! মরে জলচর” , কমন্ডলু হোতে জল ঢালেন নদীর, গুরু আজ্ঞা রাখিল শঙ্কর | ( ১২ ) নর-হর শ্রীশঙ্কর শত প্রণিপাত, অবতার ! ভক্তিভরে নমি পদ’পরে , ভাষ্য তব বিরাজিছে নাথ, হৃদিতমঃ হরে ভাস্য -করে . ************************* . সূচি মিলনসাগর |
হরিদ্বারে সুরধুনী সুশীল মালতী ( ১ ) হিম হিমাচল হিমকায় হোতে, নিঃসৃতা হোয়ে জননী, পবিত্রা মধুরা শীতলা গঙ্গে, চোলেছে সাগর-আননী | ( ২ ) চির একসুর, চির এক তান, সাত্বিকী-ভাব রাগিণী, সৃষ্টির প্রথম হইতে জননী, .. গাহিছে কি গীতি জানিনি | ( ৩ ) ( সেথা ) জলে স্থলে আহা অনিলে আকাশে, . তরুতে চলেছে গান, . বোঝাতে পারে না, সে ভাব---সে ভাষা, . এ মুঢ় মানব প্রাণ | ( ৪ ) ( সেথা ) নির্ঝুম নিচল নীরব নির্ভীক, . নিরালা তরু দাঁড়ায়ে, . নীলাকাশ নত নিশিদিন সেথা, . চুম্বন মুখ বাড়ায়ে | ( ৫ ) নীরবে বসুধা পাতিয়া হৃদয়, ধ্যানস্থ মগন প্রায়, চন্দ্র হাসিছে, তপন জ্বলিছে, তারকা ফুটিয়ে চায় | ( ৬ ) ( কভু ) ঘোর ঘনঘটা ঝিমি ঝিমি ধারা, . মুহুর্মুহু খেলে দামিনী, . চিরনূতনের মাঝে চির ওঠে, . চির এক সুর রাগিণী | ( ৭ ) পুণ্য পূতবারি পিয়ে এ জীবন, শষ্য-শ্যামলা মেদেনী, সাধি কর্ম্ম মাত, এক সুর তানে, বিহ্বলা সিন্ধ গামিনী | . ************************* . সূচি মিলনসাগর |