কবি সুশীল মালতী  অবশ্যই তাঁর ছদ্ম নাম। ১৯১১ সালে (১৩১৮ বঙ্গাব্দ) তাঁর, সম্ভবত একমাত্র
কাব্যগ্রন্থ “মন বুলবুল”, প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থের ভূমিকা লিখেছিলেন “তত্ত্বমঞ্জরী” পত্রিকার সম্পাদক
বিজয়নাথ মজুমদার।

কবির ৪০ বছর বয়সে এই বইটির প্রকাশকাল ধরা হলে, তাঁর জন্ম সাল দাঁড়ায় ১৮৭১। সঠিক তথ্য পেলে
আমরা তা শুধরে নেব।

কাব্যগ্রন্থটি পড়ে তাঁর জীবন সম্বন্ধে একটা আবছা ধারণা করা যেতে পারে। যেমন কবির খুব অল্প বয়সে,
বালিকা অবস্থায়, বিয়ে হয় এবং মাত্র ১৪ বছর বয়সেই তাঁর একমাত্র সন্তানের জন্ম হয়। ছেলে কোলে
অবস্থাতে বাপের বাড়ীতে থাকতেই, খবর আসে যে তাঁর স্বামী অসুস্থ। শশুরবাড়ী ফেরার অল্প কিছুদিনের
মধ্যেই তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। এর পর তিনি তাঁর বাপের বাড়ী ফিরে আসেন। সেখানেই তাঁর ছেলে বড় হয়।
কবি তাঁর আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে দার্জ্জিলিং, গঙ্গাসাগর, এলাহাবাদ প্রভৃতি জায়গায় বেড়াতেও  
গিয়েছিলেন। এই সব ভ্রমণ নিয়ে কবিতাও রচনা করেছেন। কবি নিজে এবং তাঁর পরিবারের অনেকেই
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের ভক্ত ছিলেন।

কবি, কলকাতার কোনো সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্যা ছিলেন, তা “মন বুলবুল”-এর ভূমিকায় লেখা আছে। কিন্তু
কোনো কারণবশত তাঁর পরিচয় শেষ অবধি গোপন রাখা হয়। তবুও, কলকাতায় তাঁর মত এক মহিলা
কবির কবিতা নিয়ে তেমন কোনো আলোড়ণ কেন হয় নি, তার কোনো সদুত্তর আমরা এখনো পাই নি,
যদিও ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে (১৯৩০ খৃষ্টাব্দ) প্রকাশিত শ্রী যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত রচিত "বঙ্গের মহিলা কবি" গ্রন্থের
পরিশিষ্টে কবি সুশীল মালতীর শুধুমাত্র উল্লেখ দেখতে পাই।

কবি নিজের জীবনকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু কবিতা লিখেছেন। প্রথম খণ্ডে বেশ কয়েকটি কবিতায়,
তীর্থকেন্দ্র এবং দৃষ্টব্য স্থানে ভ্রমণের পর লেখা। গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডটি সম্ভবত একেবারেই তাঁর ব্যক্তিগত
জীবন ও আধ্যাত্মিক ভাবনা চিন্তা কে কেন্দ্র করে লেখা। কয়েকটি কবিতার পাদটিকায় কবিতার
চরিত্রগুলির পরিচয় উল্লেখও করেছেন। বালিকা বিবাহ, বালিকা বৈধব্য, এ সবই তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার
অংশ। তাঁর ভাষা ছন্দময় এবং আধুনিক।

আমরা
মিলনসাগরে তাঁর কবিতা তুলতে পেরে আনন্দিত | আমরা চাই  দেরীতে হলেও, বাংলা কবিতার
জগতে এই কবির যথাযত মূল্যায়ন করে তাঁর যথাযত স্থান নির্দিষ্ট করা হয়।


আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     

...