কবি স্বর্ণকুমারী দেবীর কবিতা
|
তাপটুকু রেখে গেছে,
. প্রভাতের আলো নিয়ে,
হাসি যত নিয়ে গেছে
. অশ্রুজল রেখে দিয়ে ;
সন্ধ্যা করে দিয়ে গেছে
. সন্ধ্যার হরিয়ে তারা,
আঁধার পড়িয়ে আছে
. সুষমা হইয়ে হারা!
ফুলটি সে নিয়ে গেছে
. ফেলে গেছে কাঁটা দুটি,
বিরহ কাঁদিয়ে সারা
. নয়ন মেলিয়ে উঠি!
. ****************
. সুচিতে...
মিলনসাগর
কেন গো শুধাও ?
(কবিতা ও গান কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া)
স্বর্ণকুমারী দেবী
কেন গো শুধাও
কি দুখে বহিছে
এমনি কাঁদিয়া চির
এমনই সুখ-শান্তি
এ জীবন পড়িবে
নিভিবে না হৃদয়ে
জনমেছি অশ্রুজল
কাঁদিবও অশ্রুজ
কাঁদিতে দাও গো
শুধায়ো না কারণ
কেন হৃদে জ্বলিছে
কেন বহে নয়নেতে
কেন যে গো সারা
এ হৃদয় গায় দুখ
জানে না তা জানে
কি আর বলিব
শুনিয়ে কি আর
শুনিলে গো যে দুঃ
সুখী হৃদে জাগাই
কেন তা শুধাও
জানি না কি দুঃখে
কাঁদে পরাণ আমা
. ****************
. সুচিতে...
মিলনসাগর
অধরে অধরে
(কবিতা ও গান কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া)
স্বর্ণকুমারী দেবী
এমন চাঁদি
পুলক কম্পি
এমনি বিজ
মুখেতে চাঁ
দীপ্ত আঁখি
চেয়েছিল
কুঞ্চিত অ
ঈশৎ দোদু
অঞ্চলে ব
আধে গাঁথা
হাতের বা
লুটাইছে চ
তুলিয়া কু
সঁপিলাম ক
অনন্ত খুলি
মুহুর্ত্তে বন্ধ
অপূর্ণ হই
স্পর্শ হোল
. ****************
. সুচিতে...
মিলনসাগর
বাল্যসখী (কবিতা ও গান কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া) স্বর্ণকুমারী দেবী
|
উড়াইয়া অলি, তুলি বেলকলি, তলিয়ে কত কি ফুল, কুসুমের সাজে সাজাইতে তোরে গেঁথেছি মালিকা দুল |
আহা লো কতই হরষিত হৃদে কতই আমোদে মেতে, লতিকার বিয়ে দিয়েছি যতনে অশোক তমাল শাখে |
সরসীর কূলে বসে দুজনায়, গাঁখিতে গাঁথিতে মালা, পাপড়ি ভাসায়ে দেখিতাম সুখে কেমন করিত খেলা |
মলয় সমীর ফুল ছুঁয়ে তোর দোলাত কানের দুল, মৃদুল মৃদুল ও মুখ চুমিয়া দুলিত অলক চুল!
মরি কি মধুর সাজিত তখন কমল বদন খানি! উজলিয়া রূপে কুসুম কানন শোভিতিস বনরাণী!
আবার যখন সাঁঝের গগণে পরিয়া তারকামালা, দেখা দিত মধু ছড়াইত মধু জোছনায় করি আলা |
|
কুজিয়া মোহিত প্রাণ, সেই মধু সুরে মিলাইয়া বীণা দুজনে গেয়েছি গান |
আপনা ধ্বনিতে মোহিত হইয়া আপনা হয়েছি হারা ; ভুলেছি জগতে আছে আর কেহ আমরা দুইটি ছাড়া |
হৃদয় দুইটি একটি সুরেতে বাঁধা গো আছিল হেন, ছুঁইলে একটি হৃদয়ের তার দুইটি বাজিত যেন |
সারাদিন গেছে বনেতে কাটিয়া দুজনে বনের বালা, জানিতাম না তো তখন আমরা কেমন বিষাদ জ্বালা |
সে সুরের দিন কোথায় এখন, সজনি লো বল দেখি ? হৃদয়ের ধন তুই বা কোথায় আমি বা কোথায় সখি!
একটি বোঁটায় দুইটি কুসুম আছিল কেমন ফুটি, কে ছিঁড়িল, আহা! একটি গো তার দুইটি হৃদয় টুটি |
সকলি ত হায়, তেমনি রয়েছে! তেমনি ফুটিছে ফুল, এ ফুলে ও ফুলে মধু খেয়ে খেয়ে ছোটে ত মধুপ কুল ;
সেই ত বহিছে তেমনি করিয়া সমীরণ মৃদু মৃদু, সেই ত তারকা উজনে বিমান, অমৃত ঢালিছে বিধু ;
|
বিরহ
(কবিতা ও গান কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া)
স্বর্ণকুমারী দেবী
ঝটিকা
(কবিতা ও গান কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া)
স্বর্ণকুমারী দেবী
কত রজনীতে কত ঝটিকায়
সাহসী দয়ার্দ্র সোয়ামী তার
কত মরণেরে করেছে বারণ
কতই বিপদ করিয়ে সার |
সমুখে জাগিল সেই সব ছবি,
পরাণ ভরিয়া গাহিল জয়,
পরাণ ভরিয়ে ডাকিল হরিরে,
“তার” এ বিপদে করুণাময় |
চলিল তরণী তুফাণে তুফাণে,
কভু পড়ে পুনঃ উঠিছে কভু ;
অটল-হৃদয় সাহসী ধীবর,
কোন ভয় ডর নাহিক তবু!
মনে তার শুধু জাগে সে রোদন,
ঝটিকা তুফাণে চেয়ে না চায়,
কেবলি ডাকিছে “কোথায় রে তোরা ?
ভয় নেই আর, নে যাব আয়”!
উত্তর তবু নাহি দিল কেহ,
রোদনও আর ত শোনা না যায় ;
অধীর হৃদয়ে বাহি চলে জেলে,
ঝটিকায় তরী রাখাও দায় |
সহসা অশনি কড় মড় কড়
ঘোষিল ভেদিয়া আঁধার নিশি,
নিবিড় জলদ ভীম গরজনে
সঘনে কাঁপায়ে তুলিল দিশি!
বীর পরাক্রমে এদিকে ওদিকে
মাতিয়ে বহিল পবনরাশি,
ধাঁধিয়ে দিগন্ত বেড়াইছে ছুটে
সুবিকট ঐ দামিনী হাসি |
নাহি সে তটিনী প্রশান্ত মূরতি,
ভীষণ সংহার মুরতী তার ;
সফেণ তুফাণে আকেরমিছে বেলা,
দুদ্দাড় ভাঙ্গিয়া ফেলিছে পাড়!
সহসা উঠিল করুণ ক্রন্দন,
তরী একখানি যেন রো ডোবে ;
কাঁপিয়া উঠিল ধীবর-দম্পতি
হৃদয় দহিল দারুণ ক্ষোভে |