কবি তপন করের কবিতা
*
দাগ
কবি তপন কর

সমস্ত পাথরের দাগ মুছেও ঝাঁঝির
রসিকতা লেগে থাকে বুকে |
প্রপিতামহের নিপূণ কোঠার ফাঁকে
অশথ্বের শিকড়ে এসিড ঢেলে মারতে পারি না
প্রতিটি অবাঞ্ছিত |

সবকিছু ভাঙে, বয়সের গাছপাথর থেকে
অশোকের শিলালিপি, মঙ্গলের হলোগ্রাম
অজানা থাকে না, যন্ত্রঅভিচালিত
যোগাযোগ ব্যবস্থায় পারদর্শী হয়ে উঠি

অথচ জলের দাগ মুছতে গেলে
হৃদয়েও দাগ পড়ে!

.           *************************      
.                                                                      
সূচিতে . . .   
.                            
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সূচির পাতায় . . .   



মিলনসাগর   
*
পুতুল
কবি তপন কর

আমার মা প্রতিদিন নির্বাসন ফিরে
গুছিয়ে রাখেন আমার বিদ্যালয় ফেরত ভৌগলিক
অভিপ্রায়গুলি, পূর্ববঙ্গের অভ্যাসমতো
মাটির উপর ছক কেটে অতিক্রম করতে বলেন
বাবার লাম্পট্যময় জীবনের যাবতীয় দাগ
আমি লাইটপোস্টে হাত রেখে
আলোর দিকে তাকিয়ে থাকি
আর দেখতে পাই আমার মা
পার বাংলার জল কাদায় ভিজে
একটা পুতুল গড়ে নেবার চেষ্টা করছেন.....

.           *************************      
.                                                                      
সূচিতে . . .   
.                            
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সূচির পাতায় . . .   



মিলনসাগর   
*
সিঙ্গুর কথা
কবি তপন কর

সর্গ : এক

অভিযোজন পারদর্শী যৌনাচার মুখর রাতে
নিমের ফুল ফোটে গর্ভাঙ্কুরে, তূর্ণ জল প্রপাতে
ভাসমান সাপের রতি বিলাস
নখাঘাতে বিক্ষত উরুর পলাশ
ঝরে-প্রথম ঋতু স্নান সারে কিশোরী
বয়স ; আজ খ্যাত অহংকারে জ্যোত্স্নার পরী
বেসিন বিহারে, বিবেক তেজবান ঘোড়ার খুরে
বে সামাল তিরস্কার করে নিজেকে তীরে
তরী ডোবে, ডাহুকের কান্নায় শুকিয়ে যায়
আগ্নেয় লাভা, নোড়ায় শিলে বাটেন
লিঙ্গের মেরুশিকড় ; ভগন্দরে ব্যথা
অশ্ব শৃঙ্গের পাঁচন চাই --- শিরদাঁড়া নিংড়ে
ভি-টনিক, দিল খুস টান টান গিমিক
এখন ফুলবাবু সে ধোপদুরস্ত, অস্ত্রোপচার নেই
নিমেশে উপশম, সমস্যা মিটবেই
ঘেন্না সঘেন্নায় ভোট প্রচার
ব্যালট বাক্সের চাবি চাই --- জমি-দুর্বার
আন্দোলন ও প্রক্ষালন করলেই
মন্ত্রী, পরের বার হাত জুড়ে
নাগরিক উদ্ধার, সম্মেলন গলির মোড়ে
বিরোধীর কুশপুত্তলিকা, ইত্যাদি ---
গুহ্যে দাদ, পায়ে হাজা, গোপন অঙ্গে সিফিলিস্
গদি চাই, পাপোষে খুরধার বচন মুছে
উদ্বাস্তু কলোনীর ধর্ষিতা মেয়ের কাছে
উদ্ধার কর্তা হয়ে যান কমিউনিষ্ট নেতা
বাইরে বেরিয়ে আসে লক্ষ জনতা

ব্রহ্মচারীর অঙ্গুলি নির্দেশে
কোন ছুৎ মার্গ নেই নন্দনের মেয়েছেলে নিমেষে
চলে যায় ময়দান মঞ্চের লাল বেদীতে
ফেলে যায় সাম্যবাদী রেতস্খালনে ভেজা অন্তর্বাস
হাতে লোহার দণ্ড, তাই ছিঁড়ে
শিল্পায়নের লাল পতাকা ওড়ায় '০৬-এর
রাইটার্সে, ছাতা ধরে মাথার উপরে রাখে
চাষী অস্থি-আধার ; এখন কাকে দ্যাখে কে ?
মূত্রালয় উদ্বোধন করে দেয়ালে শৈল্পিক মূত্রাঘাত |
ছুন্নৎ সংস্কৃতির বলীবর্দ বাজার মাত
করে রবীন্দ্রসদনে, কবিপক্ষ জন্মোত্সব
গোমূত্রে ধুয়ে সিঙ্গুরের শব
তিনি বাড়ি ফেরেন, স্ত্রীর বিছানায় এ কে ৪৭ হাতে
অরিন্দম ব্ ল্যাক ক্যাট ; শুতে
পারেন না, ঘুম মাটি তাই
বাতানুকুল ব্যবস্থা সস্তার পাম সড়কে
আমলাশোলে রুটি নেই অতএব পাঁচতারা হোটেলে
রাতের ডিনার সেরে সাস্থ নিবাসে গেলে
গোবলেট ভাঙে ইতালিয়ান পাথরে
নিজের গতরে খেটে সরকারি যৌনযোজনায়
খাদ্যের বিনিময় কাজ চায় গ্রামবাসী
উত্তরবঙ্গে পার্বত্য পরিষদ
পূজোয় স-পার্ষদ ছুটি কাটান, সরকারী খরচ বাঁচে
গাড়ি ঘোড়া বন্ধ অশ্বলিঙ্গের ছাঁচে
রেশান ব্যবস্থায় গাড়ি, তুমুল খাদ্য সম্ভার
ন্যায্য মূল্যের দোকানে মাছ, মাংস, শপিংমলে বাংলার বাহার

লিঙ্গ কেটে কার সর্বনাশ
গুহ্য ফুঁড়ে গুহ্য দ্বারে কাশ
তুচ্ছ ফোড়ায় অষ্টম গর্ভপাত
উল্টে দিয়ে পোঁদেই পদাঘাত ||


সর্গ : দুই

পয়ঃপ্রণালীর স্রোতধারা মিশে যায়
পরিশুদ্ধ পানীয়ে, নাগরিক তৃষ্ণায়
ছড়িয়ে পড়ে অগ্নি নির্বাপক বাণী
আলোর গতিবেগ মাপে স্থাপক কমিশন
ন্যূনতম মূল্যে অনগ্রসর
শ্রেণীর বিধবা রাঁড় সর্বক্ষণের পার্টিকর্মীর
কাছে বাঁধা থাকে, দিনের বেলায় ধ্বজভঙ্গের তাবিজ
এবং গর্ভপাতের শিকড় বেচে
সান্ধ্যপথ সভায়
নেতার ধাতু দুর্বল হয়
করিত্কর্মা সাম্যবাদীর "দুঃসময়"
দেখতে ছুটে যায় হা-ঘরে যুবক
সস্তার চমক কাটে
পরের দিনের সংবাদ পত্রে
যত্রতত্র বিবৃতি নিষিদ্ধ হয়
সাংবাদিক সন্ধ্যায়
অশ্বের যৌন ব্যভিচার বন্ধ করে মহাজাগতিক প্রচার
আপত্কালিন সতর্কতা
এখন ধর্মীয় কথকতা

লণ্ডভণ্ড তিন সান্ কি
বাগড়া মেরে নিজেই খান্ কি
নিজের বিচি নিজের নোড়ায়
শুদ্ধ হাতে নিজেই বাটায়

জনগণের শ্রাদ্ধবাসরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে
হাঁটুর ব্যথায় গোময়ের তোপমারি জাপ দিয়ে
কঠোর হাতে নির্দেশ আসে
মন্ত্রী সকাশে
দেখা করেন বেশ্যার দালাল
কিন্তু চালান
যেতে হয় না, বিদেশের শিল্পপতি এসে
ক্ষেতের সর্ষে কাটে, বারমাস ফসল
তালুর ঘাস সমূল
তুলে নেমে আসেন তথাগত বুদ্ধ
নিবাণে পরিশুদ্ধ
রক্তবীজ রাক্ষস
সাহস
থাকলে মুখোমুখি মাটির উপরে
দাঁড়াতে পারিস সন্মুখ সমরে ?

আদল বদল ন্যাংটা রাজা
মড়ার মাথায় কর্ত্তা ভজা
গুহ্য ফুঁড়ে গুহ্যদ্বারে কাশ
এই ছিল তোর গোপন অভিলাষ ?


সর্গ : তিন

ভগন্দরে গলগণ্ড
নাভির নিচে খণ্ড খণ্ড
সর্পাঘাতে সর্বহারা
জন্ম দিয়ে কম্ম সারা ?

লিঙ্গ ধুয়ে বনসৃজন
শয্যাতুলে রেতস্খালন !
শীর্ষাসনে পদ্মাসন
যোগমূদ্রায় জনমন !

.           *************************      
.                                                                      
সূচিতে . . .   
.                            
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সূচির পাতায় . . .   



মিলনসাগর   
নন্দীগ্রামবাসী
কবি তপন কর

সমস্ত ভয় ও বিড়ম্বনা তোমাকে দিয়ে দেবার পর
মাটিতে পা রেখেছি, মায়ের গোপনতাগুলি
বাজারে খুলে রেখেছি দ্যাখো, এরপর আমার
কিছুই দেবার নেই !

যেখানে ভারসাম্য রেখে মায়ের সম্মান হারিয়েছি
সে মাটি দেব না, আর যা চাও নিয়ে যেতে পারো
গুলির শব্ দ  চিনে সদ্য কিশোর বাড়িয়ে নিচ্ছে
ঘরে ভিজিয়ে রেখে অধিকারের বীজ চলে যেতে পারি
কিন্তু জমি চাইলে দিতে পারবো না---ক্ষমা করবেন !

.           *************************      
.                                                                      
সূচিতে . . .   
.                            
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সূচির পাতায় . . .   



মিলনসাগর   
*
মেঘদূত
কবি তপন কর

নদীকে পাব বলে জলের কাছে যাই, তুমি জান না তা
নুনের দ্রাব্যতা পেয়ে আমিও জল তুমি গভীরতা
বর্ষার হিসেব নিয়ে বৃষ্টি ফোঁটায় রাখি ভীরু হাত
জল বাড়ে না | শুধু শেণিতের বাষ্প জমে বৃষ্টিপাত
নদীও তখন দূরে মাতলার চরে হারিয়েছে সব উচ্ছ্বাস
কথা রেখেনি,  তোমাকে জানায়নি কোনও অভিলাষ

তোমাকে পাব বলে ঝিনুকে রেখেছি বালি সেও কণামাত্র
শালুক পাতার জল শিশিরের কথা ভোলে সর্বত্র
মনে পড়ে না, তোমার বুকের কাছে জমেছে কতখানি
জল কলস্বর, কথা তো হবে না কোনও দিন সেও অভিমানী
নদীকে কাছে পেতে ডাহুক যুবতীর সাথে পত্র বিনিময়
এস্ এম্ এস্ ইন্টারনেট ঘেঁটে যাবতীয় সুদূর পরিচয়

তবুও দূরে মেঘমল্লার বাজে আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে
সুউচ্চ বহুতলে মেশে অনন্ত আকাশ তুমি পরবাসে |

.                 *************************      
.                                                                      
সূচিতে . . .   
.                            
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সূচির পাতায় . . .   



মিলনসাগর   
*
প্রেমকথা
কবি তপন কর

নখখোঁটা চালে নবান্নের ভাত রেঁধেছি
তুমি অতিথি হলে নুনের দানা ফেলে অমৃত খাব
জলের বদলে তোমার উপস্থিতির মেহেন্দি মেখে সাধ্যমতো
তোমাকে সাজাব ধানের গুচ্ছ রেখে কানে

.               দিন গেল .... পৌষ পার্বণ শেষ
.               নিছক বাহানা করে কাটালে সময়
.                দরমার সিলিং ভেঙে পেরেকের উঁকিমারি
.                                     চোখের মাথা খাও, দেখে যাও
.                                     সুখের ভীষণ আড়াআড়ি

নুনের পাথরবাটি ভরে গেছে জলে, বর্ষাও সমাগত
পুকুরের মৌরলা-সরপুঁটি ঘাটের আদার খেয়ে
রূপলাগি প্রতিমা হল,  পোয়াতি গাভী-----ভরা ভাদর মাহ

.                 *************************      
.                                                                      
সূচিতে . . .   
.                            
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সূচির পাতায় . . .   



মিলনসাগর   
*
সমাস
কবি তপন কর

তোমাকে নক্ শি কাঁথায় সেলাই আঁকতে দেখে
চেপে রাখি সুতোর খুঁট, পথের ত্রিমোহনায়
আটকে গেছে দুরন্ত কিশোর ! বয়সের তুলনায়
প্রাজ্ঞ অথচ প্রেমাতুর ! ভালোবাসার বিশ্বাস
রেখে তলপেটে স্বভাবসুলভ নদীর জল কাটি
ক্ষাত্র তেজে ! দ্বারঘটের পল্লব থেকে গ্রাম্য
স্ত্রী আচারে পারদর্শী হয়েও তোমার ভর্ৎসনার
লক্ষ্মণরেখা ছুঁতে পারি না ; দুপুরের রোদ পড়ে
কার্নিসে, প্রলুব্ধ কাকের আকাঙ্ক্ষা হয়ে
চোখের পরকলায় ছিটকে যায় আলো—
এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল দূরেও তুমি
কাছাকাছি থেকে যেতে পার, আশ্চর্য উদাহরণ
হয়ে, ব্যতিহার বহুব্রীহি !

.                 *************************      
.                                                                      
সূচিতে . . .   
.                            
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সূচির পাতায় . . .   



মিলনসাগর   
*
উপবাস
কবি তপন কর

খুব সাবধানে কাছে এসেও বলতে পারি না কিছু
অকপট, ধরা পড়া চোরের সংকোচ থাকে ঠোঁটে
যত্নে টানা বোরখার মতো উৎসবে পাটভাঙা

তুমি দেখতে পাও জলের মাছ, অন্তরের বুদ্বুদ
না বলা কথার অনুবাদ, দুর্বোধ্য পুঁথির অলঙ্কার
তোমার অচেনা থাকে না প্রাচ্য পান্ডুলিপি প্রাচীন

শুধু আমাকে বোঝ না বলে নিরন্ন থেকে যাই !

.                 *************************      
.                                                                      
সূচিতে . . .   
.                            
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সূচির পাতায় . . .   



মিলনসাগর   
*
অবুঝ
কবি তপন কর

তোমাকে দেবার ছিল তাই ফুল ফুটেছে দেখ
জ্যোত্স্নার বেলাভূমি থেকে জলের চুম্বন-ক্ষত মুছে
হাজার এক পদ্ম রেখেছি, আগত অকালবোধন

ভূর্জপত্রে লিখে নাম বর্ষাবিধৌত চোখের পাতা ঢাকি
অবুঝ ব্যসনে মুগ্ধ নীলাচল, ধূপে ও আগুনে
ভীষণ মাখামাখি চরাচর, আকাশও সমর্পিত

তোমাকে দেবার ছিল তাই ফুল ফুটেছে এখন
কাঁটার তীক্ষ্ণতা ভুলে বাড়ালে হাত রক্ত ঝরেছে
যত ততোধিক ভালোবাসি শস্যকণার মতো অন্যতম

.                 *************************      
.                                                                      
সূচিতে . . .   
.                            
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সূচির পাতায় . . .   



মিলনসাগর   
*
কবিতা
কবি তপন কর

বিস্ময়ের মুঠো ভরে
জলে নেমেছি, অন্ধকার !
অন্ধকার  আমার জন্মবৃত্তান্ত !

পিতার মৃত্যু লেখা প্যাপিরাস
খুঁজে পাইনি বলে মাটিতে
শুয়ে থাকি-----

মাটিও হন্তারক, শোকগাথা
শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়
ঘুমে মৃত্যু পরিক্রমণ

দীর্ঘ পথ আমাকে একা
পুষ্পপত্রহীন সন্ত্রাস পেরিয়ে
শব্দের কাছে আসতে হয়েছে |

.      *************************      
.                                                                      
সূচিতে . . .   
.                            
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সূচির পাতায় . . .   



মিলনসাগর   
*