মাঝরাতে হঠাৎ যন্ত্রনাটা বেড়ে উঠল, অসহ্য যন্ত্রনা ঠিক বুকের বাম দিকে ।
কোনমতে শরীরটাকে বিছানা থেকে ছাড়িয়ে বালিশটাকে কোমরের নিচে আড়াআড়ি ভাবে নিয়ে বসে থাকলাম কিছুক্ষণ ঝাপসা চোখে । অনুভব করলাম-এক হাস্যময়ী নারীমূর্তীকে -যে কিনা আমার শরীরটা খনন করে চলেছে ক্লান্তিহীন ভাবে; অনবরত তার কঠিন কোমল হাত দিয়ে- আমার বুকের ঠিক বাম অঞ্চলে ।
সত্যিই, অনবরত বিরামহীন হাতে আ-মা-র পাঁজরটা... হ্যাঁ, ঠিক বাম দিকের বুকের পাঁজরটা উপড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে কোন এক অন্ধ গহ্বরে । তবুও আমি নির্বাক ।
ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে চেয়ে দেখি- অসহ্য যন্ত্রনায় বুকে হাত চাপা দিয়ে বিছানায় আমি একা।
এখোনো নব রবির স্পর্শ লাগেনি গায়ে প্রকৃতির অশান্ত ঘুম প্রতি পায়ে পায়ে হয়তো রৌদ্র্য ঘুম; হয়তো বা ক্লান্তি বশত। কেননা হয়নি ঘুম বহুদিন ধরে আমাদের তরে।
তবু কেন অশান্ত এ ঘুম ?
যে করে আমাদের তরে, তার লাগি কে বা করে ? এ ধরিত্রীর লাগি, কেউ নয় নব রবি . -এ যাতনার ছবি . অশান্ত ঘুম। কেননা, মানুষই তো এক অসুখের অসুখ সে তো চায় না সুখ, চায় সে আত্ম সুখ। তাই আজ বিশ্বাস- জানালা খুলে দাও, আলো... আরো আলো আসুক।
কিন্তু, আমি- . নর্দমার গলা পচা আস্তরণে; . মৃতপ্রায় শ্বাসাঘাতে- . পড়ে আছো হে ধরিত্রীর দেবী . আমি তো পারিন বাঁচাতে . আমি এক মর্মাহত ছবি।
দেওয়ালে হেলান দিয়ে দূর পানে চেয়ে- ভাবি মনে বারবার আমরা তাঁদের যেন আসল খাবার।
হেনকালে, কোথা থেকে এল এক ঝাঁক প্রকৃতির ঝাড়ুদার দশ-বারোটা কাক। কারো নেই এক পা, কারো নেই ডানা; কেউ আবার কাঁদো কাঁদো, কেউ করে মানা।
চোখ ফিরিয়ে মেঝেতে বসি কষি আমি হৃদপেশী মনে ভাবি বাররার- আমরাই তাঁদের আসল খাবার। -এ খাবারে ঝাঁঝ নেই, নেই প্রতিবাদ তাঁরা পায় এতে দুর্দান্ত সুস্বাদ
হঠাৎ ই, মন আমার দেয় এক পাক একটা কাকের ডাক... সে যেন বলে ওঠে, পরষ্পরের ঠোঁটে ঠোঁটে ‘ভাতৃত্বের মোহে মোরা পড়িব বন্ধন। করব তাঁদের নাশ- যাঁরা মোদের বারোমাস ক্রন্দনের কারণ ’।
তখনই আবার ভাবি, আমি এক ভুল ভোমরা কি খায় চুষে সব কটি ফুল ? কেননা বুঝতে পারি ন্যায়ের-ই হাত ধরি যে খাবার সুস্বাদ- সেই আবার প্রতিবাদ।
কালতরঙ্গিনী কবি তাপস মন্ডল ( "কবিজন্ম" পত্রিকা, বৈশাখ সংখ্যা, ১৪২১, সম্পাদক- ফিনিক্স, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়- বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগ )
একদিন চোখ- মুখ- ঠোঁট, আর হরিণ শাবকের মত শরীর নিয়ে ঘোলাটে রঙেও অনেকটাই সুন্দর ছিলো সে।
হাতে কয়েকট টাকা গুঁজে কেউ না কেউ তার পিছু নিত তার খিদে মেটাতে।
এখন চোখ- মুখ- ঠোঁটে সময়ের গাড় কালো দাগ; তার ছেঁড়া অস্থিপ্রায় শরীর খুঁজে ফেরে সেই বিবর্তনের ইতিহাসকে- সেই ঘোলাটে রঙ কে...
আজ আর কেউ আসে না। তাকে প্রায় জড়িয়ে যাওয়া ফ্যাকাসে চোখে খদ্দেরের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কাট-ফাটা রোদের চাদড় মুড়ি দিয়ে। অনুভব করে- শরীরের প্রত্যেক রোমকূপ থেকে বেরিয়ে আসা- দু-এক ফোঁটা জলের নোনাটো স্বাদের তিক্ততাকে...