চলতে চলতে...
কবি তাপস মন্ডল
( এই প্রথম প্রকাশ )

চলতে চলতে...
রোমান্টিকতাকে পিছনে ফেলে
দু-একটা শান বাঁধানো শ্যাওলার ঘাট পেরিয়ে ,
শালুকের দীঘিটাকে বাঁয়ে রেখে
ছোট ছোট কয়েকটা গোলাবাড়ি ক্রস করে
আজ পৌঁছেছি -
কালো জল জমে থাকা ড্রেনটার পাশে
একা একা...

.   ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
কবি তাপস মন্ডল-এর কবিতা
*
আমি এক
কবি তাপস মন্ডল
( ‘কবিজন্ম’ পত্রিকা, জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা, ১৪২১, সম্পাদক- ফিনিক্স, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-
বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগ )

আমি      এক আহত
          ক্লান্ত বৃক্ষের মত
          আশাহীন ।

আমি      অনুর্বরা মাটি
          অতি উষ্ণতা
          আর নোনা জলের সিঞ্চনে –
          নিহত বীজের মত
          অস্তিত্বহীন ।

আমি      সংকীর্ণ রাস্তার পাশে জমে থাকা
          দু একটা জঞ্জালের স্তুপের মত
          অগ্নীহীন ।
          আর চড়া রৌদ্রে দাঁড়িয়ে থাকা
          লালা ক্ষরণকারী চারপেয়ে জীবের মত
          ভারসম্যহীন ।

তবুও      পোড়খাওয়া
          ক্ষীন ঘূর্ণায়মান লাটিমের মত
          সভ্যতার লাঙলের ধারালো ফলার কাছে
          শুধু ধুঁকছি
          কষ্ট হলেও...

.           ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
তুমি চলে গেলে বলে...
কবি তাপস মন্ডল
( এই প্রথম প্রকাশ )

তুমি চলে গেলে বলে...
সেই মেঠো পথ, কাক ডাকা ভোর,
পাঠশালা, অবনী স্যারের অনবরত ছড়ি ঘোরানো,
দু-এক মুঠো শুকনো মুড়ি চিবানো, আর
সেই অ-আ-ক-খ...
এক-এ চন্দ্র, দু’-এ পক্ষ...
পেছনে ফেলে চলছি –
আজ এ ‘পিচ্ গলা’ রাস্তায় ।
সেই পুরানো ডাক বাক্সের দিকে
একা একা...
যেন, গোবী-সাহারার তপ্ত বুকে
চেরাপুঞ্জী থকে ধার করে আনা একটুকরো মেঘের আশায় ।

.               ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
অসহ্য রাতের অনুভূতি
কবি তাপস মন্ডল

মাঝরাতে হঠাৎ যন্ত্রনাটা বেড়ে উঠল,
অসহ্য যন্ত্রনা
ঠিক বুকের বাম দিকে ।

কোনমতে শরীরটাকে বিছানা থেকে ছাড়িয়ে
বালিশটাকে কোমরের নিচে আড়াআড়ি ভাবে নিয়ে
বসে থাকলাম কিছুক্ষণ
ঝাপসা চোখে ।
অনুভব করলাম-এক হাস্যময়ী নারীমূর্তীকে
-যে কিনা আমার শরীরটা খনন করে চলেছে
ক্লান্তিহীন ভাবে; অনবরত
তার কঠিন কোমল হাত দিয়ে-
আমার বুকের ঠিক বাম অঞ্চলে ।

সত্যিই, অনবরত বিরামহীন হাতে
আ-মা-র পাঁজরটা...
হ্যাঁ, ঠিক বাম দিকের বুকের পাঁজরটা
উপড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে কোন এক অন্ধ গহ্বরে ।
তবুও আমি নির্বাক ।

ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে
চেয়ে দেখি-
অসহ্য যন্ত্রনায় বুকে হাত চাপা দিয়ে
বিছানায় আমি একা।

আর সবই ঝাপসা...

.    ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
এক জোড়া পা
কবি তাপস মন্ডল
( ‘কবিজন্ম’ পত্রিকা, জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা, ১৪২১, সম্পাদক- ফিনিক্স, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-
বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগ )

রাস্তার প্যাঁচানো একটা বাঁক
রাত্রির পথ চলা –
ক্লান্ত হতাশ একজোড়া পা
ত্রিফলা আলোর নিচ দিয়ে
ক্রমাগত  হেঁটে চলেছে – নুইয়ে পড়েছে
অথবা, খোঁচা খাওয়া কেন্নোর মত গুটিয়ে ...

জড়িয়ে যাচ্ছে তার পথচলা –
তবুও চলেছে সেই আলোহীন পথে ।

রেড্ সিগন্যাল ।
ক্রসিং । বিশ্রামী পা জোড়া
অস্বস্তি, পথ এখনো অনেক বাকি ।

সবুজ আলো ।
ছুটোছুটি করে রাস্তা পার হওয়া
ক্লান্তিহীন পায়ে কিছুটা এগিয়ে যাওয়া –
আবার সেই ত্রিফলা আলো,
আলোহীন পথ, আর –
ক্লান্ত এক জোড়া পা ।

হঠাৎ, তিনকোনা ধারালো কুচিতে
আটকে যায় সেই এক জোড়া পা ।
টকটকে লাল রক্ত গড়িয়ে পড়ে
মেরুদন্ড বেঁকে যায়
সজ্ঞাহীন মস্তক ক্রমশ উদ্ধত রাস্তার চোখে
চোখ রেখে ঢলে পড়ে ।
তবুও চলে –
আলোহীন পথে
রেড্ সিগন্যালের অপেক্ষায় ।
একটু হলেও বিশ্রামের – শান্তির আশায় ।

.           ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ঘুম পেতে চায় ‘বিজুরি-রেহা’
কবি তাপস মন্ডল
( প্রথম প্রকাশ )

আজ গা-ঝিমঝিমে ভরদুপুরে
একেবারে একান্তে আমি একা।
ক্লান্ত শরীরটাকে অপেক্ষমান বিছানার দিকে
এলিয়ে দিয়ে,
দু-চারবার চোখ বোজানোর চেষ্টায়
শুয়ে আছি।

ঘুম পায়
তবে, আসেনা...
আসেনা এ পৃথিবীর তপ্ত বুকে
কোনো এক ঈশাণের পুঞ্জমেঘের ‘বিজুরি-রেহা’।

.           ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কিন্তু, আমি -
কবি তাপস মন্ডল
( প্রথম প্রকাশ )

এখোনো নব রবির স্পর্শ লাগেনি গায়ে
প্রকৃতির অশান্ত ঘুম প্রতি পায়ে পায়ে
হয়তো রৌদ্র্য ঘুম;
হয়তো বা ক্লান্তি বশত।
কেননা হয়নি ঘুম বহুদিন ধরে
আমাদের তরে।

তবু কেন অশান্ত এ ঘুম ?

যে করে আমাদের তরে,
তার লাগি কে বা করে ?
এ ধরিত্রীর লাগি, কেউ নয় নব রবি
.       -এ যাতনার ছবি
.                 অশান্ত ঘুম।
কেননা, মানুষই তো এক অসুখের অসুখ
সে তো চায় না সুখ,
চায় সে আত্ম সুখ।
তাই আজ বিশ্বাস-
জানালা খুলে দাও, আলো...
আরো আলো আসুক।

কিন্তু, আমি-
.           নর্দমার গলা পচা আস্তরণে;
.           মৃতপ্রায় শ্বাসাঘাতে-
.           পড়ে আছো হে ধরিত্রীর দেবী
.           আমি তো পারিন বাঁচাতে
.           আমি এক মর্মাহত ছবি।

.           ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সুস্বাদ-প্রতিবাদ
কবি তাপস মন্ডল
( ‘প্রত্যূষ’ পত্রিকা, শারদীয়া  সংখ্যা, ১৪২০, সম্পাদিকা- বিভা গোস্বামী,  
সাগর মহাবিদ্যালয় )

দেওয়ালে হেলান দিয়ে
দূর পানে চেয়ে-
ভাবি মনে বারবার
আমরা তাঁদের যেন আসল খাবার।

হেনকালে,
    কোথা থেকে এল এক ঝাঁক
    প্রকৃতির ঝাড়ুদার দশ-বারোটা কাক।
          কারো নেই এক পা,
          কারো নেই ডানা;
          কেউ আবার কাঁদো কাঁদো,
          কেউ করে মানা।

চোখ ফিরিয়ে মেঝেতে বসি
কষি আমি হৃদপেশী
মনে ভাবি বাররার-
আমরাই তাঁদের আসল খাবার।
   -এ খাবারে ঝাঁঝ নেই, নেই প্রতিবাদ
     তাঁরা পায় এতে দুর্দান্ত সুস্বাদ

হঠাৎ ই, মন আমার দেয় এক পাক
একটা কাকের ডাক...
সে যেন বলে ওঠে, পরষ্পরের ঠোঁটে ঠোঁটে
     ‘ভাতৃত্বের মোহে মোরা পড়িব বন্ধন।
      করব তাঁদের নাশ-
      যাঁরা মোদের বারোমাস
                     ক্রন্দনের কারণ ’।

তখনই আবার ভাবি, আমি এক ভুল
ভোমরা কি খায় চুষে সব কটি ফুল ?
কেননা বুঝতে পারি
ন্যায়ের-ই হাত ধরি
যে খাবার সুস্বাদ-
  সেই আবার প্রতিবাদ।

.        ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কালতরঙ্গিনী
কবি তাপস মন্ডল
( "কবিজন্ম" পত্রিকা, বৈশাখ সংখ্যা, ১৪২১, সম্পাদক- ফিনিক্স, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-
বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগ )

একদিন
চোখ- মুখ- ঠোঁট, আর
হরিণ শাবকের মত শরীর নিয়ে
ঘোলাটে রঙেও
অনেকটাই সুন্দর ছিলো সে।

হাতে কয়েকট টাকা গুঁজে
কেউ না কেউ তার পিছু নিত
তার খিদে মেটাতে।

এখন
চোখ- মুখ- ঠোঁটে সময়ের গাড় কালো দাগ;
তার ছেঁড়া অস্থিপ্রায় শরীর খুঁজে ফেরে
সেই বিবর্তনের ইতিহাসকে-
সেই ঘোলাটে রঙ কে...

আজ আর কেউ আসে না। তাকে
প্রায় জড়িয়ে যাওয়া ফ্যাকাসে চোখে
খদ্দেরের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়
কাট-ফাটা রোদের চাদড় মুড়ি দিয়ে।
অনুভব করে-
শরীরের প্রত্যেক রোমকূপ থেকে বেরিয়ে আসা-
দু-এক ফোঁটা জলের নোনাটো স্বাদের তিক্ততাকে...

তবুও
তার কোন শোক নেই।

যত শোক এই মানব জীবনের...

.        ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
যে ছেলেটা বাড়ি বাড়ি ইস্তেহার পাঠায়
কবি তাপস মন্ডল
( প্রথম প্রকাশ )

যে ছেলেটা বাড়ি বাড়ি ইস্তেহার পাঠায়
তাকে একদিন...
পরপর দুটো গুলির শব্দে...

তার প্রতিবাদ ছিল-
ধর্ষকদের কঠোর সাজা
ধর্ষিতাদের সুবিচার।
এক থানা থেকে আরেক-
তবুও বিচার মেলেনি; বিচার মেলেনি
আজও।
আজও ইস্তেহার পাঠায় বাড়ি বাড়ি সেই ছেলে।

কিন্তু, সে তো একদিন...
তাহলে !

প্রতিবাদীর মৃত্যু হয়, প্রতিবাদের নয়।

.        ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*