বাংরেজী তারকনাথ সরকার হাঁস আর সজারু, হাঁসজারু যদি হয় বাংলা আর ইংরাজী-- বাংরেজী কেন নয় ? বাঙ্গালীর সন্তান, মিঠাভাষা পারে নাকো শুদ্ধ যারা খাঁটি, তারা নাকি অজ-গেঁয়ো - হদ্দ | ফিরে আয় বাঙ্গালী, মধু কবির পথে পরম সমাদরে, আত্মবিকাশ যাতে ঘটে | হয় না যেন ব্যর্থ, রফিক-বরকতের প্রাণ রক্তে রাঙ্গানো ২১শে ফেব্রুয়ারী-মাতৃভাষার সম্মান | ****************** . সুচিতে... মিলনসাগর |
কবি তারকনাথ সরকার-এর কবিতা যে কোন গানের উপর ক্লিক করলেই সেই গানটি আপনার সামনে চলে আসবে। |
কালীনগরের বটগাছ তারকনাথ সরকার আমি সেই বটগাছ প্রাচীন কালীনগরে আজও আমি যে নবীন | যে দিন জেগে ছিল কচি দুটি পাতা মাটির বুক চিড়ে চেয়ে ছিল আমার ছোট্ট মাথা | সেদিন কেউ ভাবেনি--এতবড় হবো বিশাল গুড়ি আর হাজারো ঝুড়ি নামাবো কালীনগরের গর্ব আমি, মাথা তুলে দাঁড়িয়ে শীতল ছায়া দিচ্ছি, ডালপালা ছাড়িয়ে | কত শত পাখি, গিরগিটি বা হনুমান নিয়েছে আশ্রয় দেখতেই তো পান | পাখির কিচিক-মিচির, ছাত্র-ছাত্রীর হইচই বাজারের ব্যস্ততা- কাটছে দিন ভালই | সারারাত জ্বলে থাকে বড় বড় আলো ঘুচেছে অন্ধকার, যা- ছিল কালো | শতবর্ষের ইতিহাস কালীনগরের গর্ব প্রাচীনত্বে সকলকে আমি যে করেছি খর্ব | কীর্তন, মিটিং, অনুষ্ঠান - হয় মোর পদতলে সকলকে ধন্যবাদ দেব কী বলে ? ****************** . সুচিতে... মিলনসাগর |
কালবৈশাখী তারকনাথ সরকার গ্রীষ্মের দাবদাহ প্রাণ যখন অতিষ্ঠ পশ্চিমের এক চিলতে কালো মেঘ করে দিল তিষ্ঠ, ধূলো আর ধূষর ঝড়ে ভরে উঠল দেশটা কালবৈশাখী নিয়ে এলো প্রবল বৃষ্টি শেষটা | শোঁ-শোঁ শব্দ আর মেঘের ঝিলকানি ক্যালেন্ডার ছিঁড়বে আমি কি তা জানি ? ফুলদানী আর কাগজপত্র যা ছিল ঘরে এক দমকায় গেল চলে উড়ে | আমিও ছুটে এসে করি জানালা দরজা বন্ধ একি? ঘরের হাল, কেটেছে যে ছন্দ | ছাদ থেকে পড়ে গেল যাছিল ফুলের টব নীচে আওয়াজ হলো শুধু ধপ-ধপ | বৃষ্টির সাথে এল বড়-বড় শিলা তারপর শুরু হল অদ্ভূত এক লীলা | সে কী নাচ, যেন হাজারো ঘুঙুর তালে-তালে পা ফেলে বাজছে নূপুর | প্রবল জোড়ে হল এক কড়কড়াৎ লোডশেডিং হয়ে গেল তৎক্ষণাৎ | গাঢ় আরো গাঢ় হয় ঘোর অন্ধকার মনে হয় যেন মহা প্রলয়ের হাহাকার | ****************** . সুচিতে... মিলনসাগর |
স্বাধীনতার প্রকার তারকনাথ সরকার তোমরা যে বড়াই কর, স্বাধীন ভারতবাসী | আমি বলি পরাধীন, শতকরা আশি | তবে তোমার প্রশ্ন হবে - কেন ? আগে তাহলে স্বাধীনতা কত প্রকার ? জান | শুধু মাত্র ব্রিটিশ মুক্তি, স্বাধীনতা নয়, একে রক্ষা করতেও জানতে হয় | যদি তুমি জেলে যাও, হবে পরাধীন, জীবনে প্রতিষ্ঠিত না হলে--হবে নাকো স্বাধীন | অসুস্থতা গ্রাস করে - পরাধীনতার শৃঙ্খল, সত্যি কথা স্পষ্ট করে প্রকাশ্যের বল | স্বাধীনতার আরেক নাম, পছন্দের নেতা নির্বাচন, বাদ দিলে হবে নাকো - নিজ ধর্ম আচরণ | চাহিদা পূরণের সক্ষমতা স্বাধীনতার ফসল, সামাজিক নিরাপত্তা যদি না হয় অচল | ****************** . সুচিতে... মিলনসাগর |
বর্ষারাণী তারকনাথ সরকার ঋতুর রাণী দ্বিতীয়া, নবযৌবনা বর্ষা, নিম্নচাপে মুখভার, আকাশ হবে নাকো ফর্সা | ভোর থেকেই টিপটিপ, ঝিরঝির, লেগেছে যে বর্ষণ, ব্যাঙের গ্যাঙর গান, ডুহুকের ডাক-- এ যে ভরা শ্রাবণ | স্যাঁতস্যাঁতে, ভেজা ভেজা -- প্যাঁক প্যাঁকে কাদায়, আন্ত্রিক আর আমাশা -- বড়ই ভোগায় | মাঠ-ঘাট থৈ থৈ, যোগাযোগ ছিন্ন, এ যে ঋতুর রাণী, সকলের ভিন্ন | প্রবল ঝোড়ো হাওয়া আর বর্ষণ মুষলধারে, ঝড়-জলের ঝাপ্ টা, ঢাকলো অন্ধকারে | শোঁ-শোঁ শব্দ আর বিদ্যুৎ এর ঝলক, কড়কড়াৎ শব্দে-- নড়ল যে টনক | গাছ পালার মাতামাতি, আওয়াজ বিকট, ভেঙে গেল মোটা ডাল, তাই মট্ মট্ | রাস্তায় হাঁটু জল, উথাল পাতাল ঢেউ, গর্তে হোঁচট খেয়ে, পড়ল কেউ কেউ | ছিঁড়েছে তার, ঢুকছে জল, ভাসছে ঘর-বাড়ি, খিচুরি আর বেগুনভাঁজা, এ যে ঋতুর রাণী | ****************** . সুচিতে... মিলনসাগর |
মাতৃভাষা তারকনাথ সরকার ওরে বুক পেতে সব দাঁড়া, বাঁচার মতো বাঁচবো না যে, মাতৃভাষা ছাড়া | বাংলা ভাষার বর্ণমালা - রক্তে ভেজায় যারা, দলে দলে ঝাপিয়ে পড়ে -- ওদের কে সব তাড়া | ভুলব নাকো রক্তঋণ -- অমর একুশ বা উনিশ, বুকের গভীর ভালোবাসা -- শতকোটি কুর্নিশ | মাম্মিভাষার চামচে ছেড়ে-বাধছে যারা বর্ণমালার গান, মাতৃভূমি ধন্য -- তাদের হাজারো সালাম | রক্তে ভেজা মিষ্টিভাষা -- মায়ের মুখের বুলি, বুক পেতে দাঁড়া তোরা -- ফুরাবে ওদের গুলি | দিকে দিকে আছো যতো -- শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি, একসাথে ঝাঁপাই চলো -- যেমন আলোর পথে রবি || ****************** . সুচিতে... মিলনসাগর |