বাংরেজী
তারকনাথ সরকার

হাঁস আর সজারু, হাঁসজারু যদি হয়
বাংলা আর ইংরাজী-- বাংরেজী কেন নয় ?
বাঙ্গালীর সন্তান, মিঠাভাষা পারে নাকো শুদ্ধ
যারা খাঁটি, তারা নাকি অজ-গেঁয়ো - হদ্দ |
ফিরে আয় বাঙ্গালী, মধু কবির পথে
পরম সমাদরে, আত্মবিকাশ যাতে ঘটে |
হয় না যেন ব্যর্থ, রফিক-বরকতের প্রাণ
রক্তে রাঙ্গানো ২১শে ফেব্রুয়ারী-মাতৃভাষার সম্মান |

******************
.                                                                                                       
সুচিতে...   


মিলনসাগর
কবি তারকনাথ সরকার-এর কবিতা
যে কোন গানের উপর ক্লিক করলেই সেই গানটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
এভাবে খুঁড়েছে ? তোমার তুলতুলে গাল  |

তোমার মোলায়েম পিঠখানি ছেয়েছে যে বিজ্ঞাপনে
পাড়ার মেয়েদের চওড়া পিঠ, আজও খোলা-চলমান
বিজ্ঞাপন,
সে দেওয়া যাবে জনে জনে  |

ঢিপির স্ত্তপের দূর্গন্ধ, ফ্যাকাসে-শুষ্ক-ন্যাড়া কংক্রিট
এখানে গাছের পাতা ক্যারিব্যাগে,
কেমন যেন ! সুর-তাল হান যান্ত্রিক |

বস্তির এঁদো গলি, কুচকুচে কালো জল-নরক
পিচ বাঁধানো ইস্পাতের রাস্তা
তবে ঝকঝকে মাল্টিপ্লেক্স, নার্সিংহোম, শপিং মল |

ঠেলাঠেলি, গুঁতোগুতি ব্যস্ততার হুড়োহুড়ি
অশ্বডিমের প্রতিযোগীতা
সবাই কি করেছে দেরী  ?

বাস--ট্যাক্সির হর্ণ, হাজারো মানুষের শব্দ
মোবাইলে একঘেয়ে ঘ্যানোর ঘ্যানোর
কান ব্যাটা হয়েছে বড় জব্দ |

তোমার পাড়ার হাভাতে নেড়ী কুত্তাগুলো লকলকে জিভে
থাকে
ঘাম - রক্ত - মাংস - হাড় যা পাবে  --ছিঁড়বে
যখন যেখানে পাবে আমাকে |

ফাঁকা মাথা, চোখে ছ্যাঁতলা, বুদ্ধিতে ধরেছে যে জং
কষ্টদায়ক, হৃদয়হীন, কৃত্রিম, বিবর্ণ তোমার এ রূপ
আকর্ষণ করে না আজ, আমার এ মন |

.             ******************     
.                                                                                  
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*
বাংলা মা    
তারকনাথ সরকার

কি জানি !  কি জাদু -- এ বাংলায়
আম, কাঁঠালের ছায়ায়,
মৃদু মন্দ শীতল হাওয়ায় |

কি আছে যাদু -- এ বাংলায়
যখন সন্ধ্যা নামে, নদীতীরে আগাছায়,
রঙিন মেঘের ঢেউ ভাসায় |

কি জানি !  কি জাদু -- এ বাংলায়
যখন পাখিরা ক্লান্ত ফেরে বাসায়,
রাখাল ছেলে করুণ বাঁশি বাজায় |

কি আছে জাদু -- এ বাংলায়
যখন পল্লি মেয়েরা দিঘির জলে নায়,
মঙ্গল প্রদীপ হাতে তুলসী তলায় যায় |

কি জানি ! কি জাদু -- এ বাংলায়
যখন গোয়ালা দুধ দোয়ায়,
মেছুয়া নৌকা বেয়ে ধায়

কি আছে জাদু -- এ বাংলায়
যখন আঁধারে গাছেরা চেনা দায়,
নিশাচরে ডানা ঝাপটায় |

কি জানি ! কি জাদু -- এ বাংলায়
যখন জোনাকী, তারারা মিটমিটে চায়,
ঝি--ঝি-র ডাক মেলে স্তব্ধতায় |

কি আছে জাদু -- এ বাংলায়
যখন আরতির ঘন্টা, আজানের সুরে মেলায়
মনোরম স্নিগ্ধ এক জাদু এ মায়ায় ||

.             ******************     
.                                                                                  
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*
রথের দড়ি    
তারকনাথ সরকার

রথের দড়ি টেনে চলেছি -- কত, কত হাজার বছর
সেই কবে কৈশোরে-সংসারের দায়ে - সবই ধুসর |
দেখেছি কলিঙ্গযুদ্ধের ফল, শুনেছি বুদ্ধের বাণী,
সমুদ্রগুপ্তের বীণার ঝংকার আর তুঘলকের পাগলামী |
সেই কবে কৈশরে-সমস্ত সুখ উপেক্ষা করে-হাজার বছর,
পথে-প্রান্তরে, নগরে-বন্দরে  --- আজ সবই ধুসর |
জ্বলেছি ঔরঙ্গজেবের সন্দেহে, পুড়েছি বর্গীয় জ্বালায়,
দড়ি তবু ছাড়িনি, নীলকরের অত্যাচারের ঠেলায় |
বণিক দন্ড, কুটিল ষড়যন্ত্র--রাজবেশে কত লুন্ঠন,
গলদঘর্ম, অবসন্ন-নুজ্য আমি, স্বাক্ষী--সূর্য না ডোবার পতন |
থকথকে রক্তে ভেজা দেশভাগের স্মৃতি-- আজও ভুলিনি,
ভীত সন্ত্রস্ত, ক্ষুধার জ্বালা-- একটু শান্তি-- আজো মেলেনি |
জানি, জানি ওতো শয়তানের অভিনয়, মুখোসপড়া কৃত্রিম হাসি,
নিত্য দাম বাড়া -- জীবনযন্ত্রণা -- কবে হবে আমার ফাঁসী  ?

.                    ******************     
.                                                                                  
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*
মহাকাল জয়ী    
তারকনাথ সরকার

এ কোন কবিতা নয় -- জীবনের ছেঁড়া পাতা
হাজার হাজার বছরের -- দীর্ঘ যন্ত্রণা আর বঞ্চনার কথা |
জানি, জানি -- হয়তো তোমরা শুনবে না -- উদাসীনে যাবে ধেয়ে,
আপন মনে কাজ করে যাব -- কালের স্রোতে বেয়ে |


মাকে খুঁজে পাবে -- হরপ্পার ধ্বংসস্তুপে ইটের পাঁজায়,
রামেশ্বরম-জুম্বা-বুলন্দ-দিলওয়ারার-কিম্বা অজন্তা গুহায় |
শীতের বরফে মধ্যরাত্রে কার্গিলে, দ্রাসে- সারিবাঁধা সৈনিকের পাশে,
গ্রীষ্মের দুপুরে পাথর ভাঙ্গতে, গনগনে ইস্পাতের চুল্লির গ্রাসে |
বৃষ্টি ভেজা পোষ্টম্যান - রিক্সাওয়ালা বা খেতমজুরের মাঠে,
কাক-ভোরে পেপারওয়ালা, মেছুয়ার ঘাটে ঘাটে |
কান পেতে শুনতে পাবে -- হাতুরির ঠুকঠাক শব্দ-কাঠুরিয়ার গান,
এখনও টাটকা, শুকায়নিকো -- গায়ের দুর্গন্ধ -- ঘাম |


এ কোন কবিতা নয়-- জীবনের ছেঁড়া পাতা,
মরচেপড়া স্বপ্ন-মরিচিকা, মা
ড়শার জালে ভাঙাফ্রেম--শতছিন্ন কাঁথা,
নামহীন-গোত্রহীন ইতর-- মহাকালকে করেছি জয়,
সারা দুনিয়ার বোঝা বইতে, আর নেইতো কোন ভয় ||

.                    ******************     
.                                                                                  
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*
কালীনগরের বটগাছ
তারকনাথ সরকার

আমি সেই বটগাছ প্রাচীন
কালীনগরে আজও আমি যে নবীন |
যে দিন জেগে ছিল কচি দুটি পাতা
মাটির বুক চিড়ে চেয়ে ছিল আমার ছোট্ট মাথা |
সেদিন কেউ ভাবেনি--এতবড় হবো
বিশাল গুড়ি আর হাজারো ঝুড়ি নামাবো
কালীনগরের গর্ব আমি, মাথা তুলে দাঁড়িয়ে
শীতল ছায়া দিচ্ছি, ডালপালা ছাড়িয়ে |
কত শত পাখি, গিরগিটি বা হনুমান
নিয়েছে আশ্রয় দেখতেই তো পান |
পাখির কিচিক-মিচির, ছাত্র-ছাত্রীর হইচই
বাজারের ব্যস্ততা- কাটছে দিন ভালই |
সারারাত জ্বলে থাকে বড় বড় আলো
ঘুচেছে অন্ধকার, যা- ছিল কালো  |
শতবর্ষের ইতিহাস কালীনগরের গর্ব
প্রাচীনত্বে সকলকে আমি যে করেছি খর্ব |
কীর্তন, মিটিং, অনুষ্ঠান - হয় মোর পদতলে
সকলকে ধন্যবাদ দেব কী বলে ?

******************     
.                                                                                                       
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*
ঊষা    
তারকনাথ সরকার

প্রত্যহ প্রত্যুষে, গভীর কাল রাত্রি শেষে,
আধো আধো হেঁসে, হামাগুড়িতে এসে,
জড়িয়ে গলা-ভালবেসে, রাঙিয়ে মন নীল আকাশে,
বলবে ঊষা- “ওঠো” - ভোর হয়েছে শেষে |

সিঁদুর টোকা গালে - শিশুর সরল হাঁসি,
উঠবে বেজে, পাখির কিচির-মিচির, কনসার্ট আর বাঁশি,
যা ছিল ভয়, অন্ধকার আর সীমাহীন কালো,
ভাস্বর দেহের পরশে-- শাশ্বত নিখিলের আলো |

মৃতপ্রায় জীবগণ ঘুমিয়ে -- যারা ছিল অচেতন,
জীয়নকাঠির সঞ্জিবনী - ফিরে পাবে নবজীবন |
অনির্বাণ খোকন সোনা, ও আমার ঘুম ভাঙানো পাখি,
সকলের সূর্যিমামা---দায়িত্বে দেওনা এত টুকোও ফাঁকি |

জ্যোতিষ্কলোকের নয়নমণি -- চিরন্তন প্রভাত আঁখি
ধুসর অতীতের কত ঘটনার আজও নীরব সাক্ষী,
অনাবিল নৈসর্গিক শোভা -- ঝকঝকে অক্ষয় হাসি
ভবিষ্যতেও নিয়ে এসো-- আলোর ভূবন-শান্তি আর খুশি |

.                    ******************     
.                                                                                  
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*
কালবৈশাখী
তারকনাথ সরকার

গ্রীষ্মের দাবদাহ প্রাণ
খন অতিষ্ঠ
পশ্চিমের এক চিলতে কালো মেঘ করে দিল তিষ্ঠ,
ধূলো আর ধূষর ঝড়ে ভরে উঠল দেশটা
কালবৈশাখী নিয়ে এলো প্রবল বৃষ্টি শেষটা |
শোঁ-শোঁ শব্দ আর মে
ঘের ঝিলকানি
ক্যালেন্ডার ছিঁড়বে আমি কি তা জানি
?
ফুলদানী আর কাগজপত্র যা ছিল ঘরে
এক দমকায় গেল চলে উড়ে |
আমিও ছুটে এসে করি জানালা দরজা বন্ধ
একি
? ঘরের হাল, কেটেছে যে ছন্দ |
ছাদ থেকে পড়ে গেল যাছিল ফুলের টব
নীচে আওয়াজ হলো শুধু ধপ-ধপ |
বৃষ্টির সাথে এল বড়-বড় শিলা
তারপর শুরু হল অদ্ভূত এক লীলা |
সে কী নাচ, যেন হাজারো ঘুঙুর
তালে-তালে পা ফেলে বাজছে নূপুর |
প্রবল জোড়ে হল এক কড়ক
ড়া
লোডশেডিং হয়ে গেল তৎক্ষণাৎ |
গাঢ় আরো গাঢ় হয় ঘোর অন্ধকার
মনে হয় যেন মহা প্রলয়ের হাহাকার |

******************
.                                                                                                       
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*
স্বাধীনতার প্রকার
তারকনাথ সরকার

তোমরা যে বড়াই কর,
স্বাধীন ভারতবাসী |
আমি বলি পরাধীন,
শতকরা আশি |
তবে তোমার প্রশ্ন হবে - কেন ?
আগে তাহলে স্বাধীনতা কত প্রকার ? জান |
শুধু মাত্র ব্রিটিশ মুক্তি, স্বাধীনতা নয়,
একে রক্ষা করতেও জানতে হয় |
যদি তুমি জেলে যাও, হবে পরাধীন,
জীবনে প্রতিষ্ঠিত না হলে--হবে নাকো স্বাধীন |
অসুস্থতা গ্রাস করে - পরাধীনতার শৃঙ্খল,
সত্যি কথা স্পষ্ট করে প্রকাশ্যের বল |
স্বাধীনতার আরেক নাম, পছন্দের নেতা নির্বাচন,
বাদ দিলে হবে নাকো - নিজ ধর্ম আচরণ |
চাহিদা পূরণের সক্ষমতা স্বাধীনতার ফসল,
সামাজিক নিরাপত্তা যদি না হয় অচল |

******************
.                                                                                                       
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*
বর্ষারাণী
তারকনাথ সরকার

ঋতুর রাণী দ্বিতীয়া, নবযৌবনা বর্ষা,
নিম্নচাপে মুখভার, আকাশ হবে নাকো ফর্সা |
ভোর থেকেই টিপটিপ, ঝিরঝির, লেগেছে যে বর্ষণ,
ব্যাঙের গ্যাঙর গান, ডুহুকের ডাক-- এ যে ভরা শ্রাবণ |
স্যাঁতস্যাঁতে, ভেজা ভেজা -- প্যাঁক প্যাঁকে কাদায়,
আন্ত্রিক আর আমাশা -- বড়ই ভোগায় |
মাঠ-ঘাট থৈ থৈ, যোগাযোগ ছিন্ন,
এ যে ঋতুর রাণী, সকলের ভিন্ন |
প্রবল ঝোড়ো হাওয়া আর বর্ষণ মুষলধারে,
ঝড়-জলের ঝাপ্ টা, ঢাকলো অন্ধকারে |
শোঁ-শোঁ শব্দ আর বিদ্যুৎ এর ঝলক,
কড়কড়াৎ শব্দে-- নড়ল যে টনক  |
গাছ পালার মাতামাতি, আওয়াজ বিকট,
ভেঙে গেল মোটা ডাল, তাই মট্ মট্ |
রাস্তায় হাঁটু জল, উথাল পাতাল ঢেউ,
গর্তে হোঁচট খেয়ে, পড়ল কেউ কেউ |
ছিঁড়েছে তার, ঢুকছে জল, ভাসছে ঘর-বাড়ি,
খিচুরি আর বেগুনভাঁজা, এ যে ঋতুর রাণী  |

******************
.                                                                                                       
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*
মাতৃভাষা
তারকনাথ সরকার

ওরে বুক পেতে সব দাঁড়া,
বাঁচার মতো বাঁচবো না যে, মাতৃভাষা ছাড়া |
বাংলা ভাষার বর্ণমালা - রক্তে ভেজায় যারা,
দলে দলে ঝাপিয়ে পড়ে -- ওদের কে সব তাড়া |


ভুলব নাকো রক্তঋণ -- অমর একুশ বা উনিশ,
বুকের গভীর ভালোবাসা -- শতকোটি কুর্নিশ |
মাম্মিভাষার চামচে ছেড়ে-বাধছে যারা বর্ণমালার গান,
মাতৃভূমি ধন্য -- তাদের হাজারো সালাম |


রক্তে ভেজা মিষ্টিভাষা -- মায়ের মুখের বুলি,
বুক পেতে দাঁড়া তোরা -- ফুরাবে ওদের গুলি |
দিকে দিকে আছো যতো -- শিল্পী,  সাহিত্যিক,  কবি,
একসাথে ঝাঁপাই চলো -- যেমন আলোর পথে রবি ||

******************
.                                                                                                       
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*